চেয়ারম্যানকে তালাক দিল কিশোরী

পটুয়াখালী জেলার বাউফলে কনকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের (৬০) আলোচিত বিয়ে কা-ের ৩৬ ঘণ্টা পরই বিচ্ছেদ ঘটল। কিশোরী বধূ নাজনিন (১৪) চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে ফিরে গেছে প্রেমিক রমজান আলীর ঘরে। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে রমজানের সঙ্গে নাজনিনের বিয়ে সম্পন্ন হয়। তার আগে শনিবার রাতে নাজনিন চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারকে তালাক দেয়। শুক্রবার সকালে চেয়ারম্যান তাকে বিয়ে করেছিল। গত দুইদিন যাবত এ বিয়ের ঘটনা নিয়ে বাউফলসহ দক্ষিণাঞ্চলে চলছে নানা মুখরোচক আলোচনা।

জানা গেছে, নাজনিন তার প্রেমিক স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম রমজান আলীর সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিচার দেয়া হয়েছিল চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের কাছে। শুক্রবার সকালে বিচারের এক পর্যায়ে দুই সন্তানের জনক ৬০ বছর বয়সী চেয়ারম্যান শাহীন নিজেই ৮ শ্রেণীর ছাত্রী নাজনিনকে ৫ লাখ টাকা কাবিননামায় বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যান। খুশিতে বাড়িতে আলোকসজ্জাও করেছিলেন চেয়ারম্যান। তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও পুত্রবধূ পটুয়াখালী শহরের বাসায় ছিলেন। শাহিন হাওলাদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় দফায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

সূত্রগুলো জানায়, তার এ বিয়ের ঘটনায় স্থানীয়ভাবে নেতিবাচক প্রভাব এবং প্রথম স্ত্রী-সন্তানদের শক্ত অবস্থানের মুখে শনিবার সন্ধ্যায় নাজনিন চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে এক স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। চেয়ারম্যান প্রথম স্ত্রীর নালিশের প্রেক্ষিতে স্থানীয় এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধিও শাহীন হাওলাদারকে চাপ দেন বলে জানা গেছে।

রোববার বেলা ২টায় প্রেমিক রমজানের সঙ্গে বিয়ের পর নাজনিন বলেন, ‘বাবার পছন্দে আমি চেয়ারম্যানকে স্বেচ্ছায় বিয়েতে রাজি হই।

তার বাড়িতে যাওয়ার পর তাকে আর ভাল লাগেনি। তার বাড়িতে একরাত থাকলেও তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করিনি। শনিবার সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান আমার (নাজনিনের) অভিভাবকদের ডেকে আনলে তাদের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানকে আমি তালাক দেই। পরে চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে আমাকে রমজানের ফুফাতো ভাই পলাশের বাড়িতে পৌঁছে দেয়।

নাজনিন আরও জানান, রমজান আলীর সঙ্গে তার দুই বছর প্রেমের সম্পর্ক।

ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাবা নজরুল ইসলাম তাকে ১৮ মে নাজিরপুর ইউনিয়নের সোহেল নামক এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেন। কিছুদিন আগে রমজান আলী এলাকায় ফিরলে আবার তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। একপর্যায়ে নাজনিন রমজানের সঙ্গে পালিয়ে যায়। নাজনিনের বক্তব্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় তার বাবা চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের কাছে বিচার দিয়েছিল। শুক্রবার সকাল ৯টায় ইউনিয়ন পরিষদে সালিশের এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান নিজেই কিশোরীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।

স্থানীয় কাজী মো. আবু সাদেক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। আবার তালাকনামাও রেজিস্ট্রি করেন তিনি। কাবিননামায় কিশোরীর জন্ম উল্লেখ করা হয়েছে ২০০৩ সালের ১১ এপ্রিল। তবে প্রাথমিক শিক্ষা সনদ অনুযায়ী নাজনিনের জন্ম তারিখ ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল। নাজনিন জানান, তিনি এ বছর কনকদিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। মে মাসে সোহেলের সঙ্গে বিয়ের পর লেখাপড়া বন্ধ করে দেন।

তবে কাজী আবু সাদেক বলেন, মেয়েটির জন্মনিবন্ধন দেখেই তিনি বিয়ে পড়িয়েছেন। নাজনিনের প্রথম স্বামী থাকার পরও চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিয়ে এবং চেয়ারম্যানকে তালাক দেয়ার ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই আরেকটি বিয়ের বৈধতা আছে কি-না জানতে চাইলে কাজী আবু সাদিক বলেন, প্রথম স্বামী সোহেলকে বিয়ের দুই দিন পর ২০ মে তালাক দিয়েছে নাজনিন।

চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিয়ে ও তালাক এবং রমজানের সঙ্গে বিয়ে প্রসঙ্গে বললেন, ‘আমি সবকিছুর পরিস্থিতির শিকার। এখানে আমার কিছু করার নেই’। তবে রমজানের সঙ্গে শরিয়ত অনুযায়ী বিয়ে পড়ালেও রেজিস্ট্রি করেননি বলে জানান কাজী আবু সাদিক।

নাজনিনের নতুন স্বামী রজমান আলী বলেন, পারিবারিক কারণে প্রায় দেড় বছর তিনি বাউফলে ছিলেন না। ফিরে এসে জানতে পারেন নাজনিনের বিয়ে হয়ে গেছে। নাজনিনও তাকে ফিরে পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠে। একপর্যায়ে তার কাছে চলে আসে। নাজনিনের বাবা নজরুল ইসলাম চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের কাছে বিচার দিলে তিনি নিজেই নাজনিনকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যান। নাজনিনকে ফিরে পেয়ে তিনি খুশি বলে জানান রমজান আলী। তবে এ বিয়েতে রাজি না থাকায় নাজনিনের বাবা নজরুল ইসলাম অনুপস্থিত ছিলেন। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্যও জানা যায়নি।

চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বলেন, নাজনিন রাজী হওয়ায় আমি তাকে বিয়ে করেছিলাম। কয়েক ঘন্টা পরই আবার ভাল না লাগায় আমাকে তালাক দিয়ে চলে গেছে। কেন ভাল লাগলনা তা সে আমাকে বলেনি। শাহিন হাওলাদার বলেন, পছন্দের ছেলের সঙ্গে নাজনিকে বিয়ে দিতে রাজী ছিলনা তার বাবা। তারও বিয়ের প্রয়োজন থাকায় তিনিই নাজনিনকে বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী দুই বছর আগে তাকে বিয়ে করার অনুমতি দেন। জন্ম সনদ অনুযায়ী নাজনিন প্রাপ্ত বয়স্কা বলে বলে দাবী করেন তিনি।

সোমবার, ২৮ জুন ২০২১ , ১৪ আষাঢ় ১৪২৮ ১৬ জিলক্বদ ১৪৪২

বাউফল : ফলোআপ

চেয়ারম্যানকে তালাক দিল কিশোরী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

পটুয়াখালী জেলার বাউফলে কনকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের (৬০) আলোচিত বিয়ে কা-ের ৩৬ ঘণ্টা পরই বিচ্ছেদ ঘটল। কিশোরী বধূ নাজনিন (১৪) চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে ফিরে গেছে প্রেমিক রমজান আলীর ঘরে। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে রমজানের সঙ্গে নাজনিনের বিয়ে সম্পন্ন হয়। তার আগে শনিবার রাতে নাজনিন চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারকে তালাক দেয়। শুক্রবার সকালে চেয়ারম্যান তাকে বিয়ে করেছিল। গত দুইদিন যাবত এ বিয়ের ঘটনা নিয়ে বাউফলসহ দক্ষিণাঞ্চলে চলছে নানা মুখরোচক আলোচনা।

জানা গেছে, নাজনিন তার প্রেমিক স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম রমজান আলীর সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিচার দেয়া হয়েছিল চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের কাছে। শুক্রবার সকালে বিচারের এক পর্যায়ে দুই সন্তানের জনক ৬০ বছর বয়সী চেয়ারম্যান শাহীন নিজেই ৮ শ্রেণীর ছাত্রী নাজনিনকে ৫ লাখ টাকা কাবিননামায় বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যান। খুশিতে বাড়িতে আলোকসজ্জাও করেছিলেন চেয়ারম্যান। তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও পুত্রবধূ পটুয়াখালী শহরের বাসায় ছিলেন। শাহিন হাওলাদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় দফায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

সূত্রগুলো জানায়, তার এ বিয়ের ঘটনায় স্থানীয়ভাবে নেতিবাচক প্রভাব এবং প্রথম স্ত্রী-সন্তানদের শক্ত অবস্থানের মুখে শনিবার সন্ধ্যায় নাজনিন চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে এক স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। চেয়ারম্যান প্রথম স্ত্রীর নালিশের প্রেক্ষিতে স্থানীয় এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধিও শাহীন হাওলাদারকে চাপ দেন বলে জানা গেছে।

রোববার বেলা ২টায় প্রেমিক রমজানের সঙ্গে বিয়ের পর নাজনিন বলেন, ‘বাবার পছন্দে আমি চেয়ারম্যানকে স্বেচ্ছায় বিয়েতে রাজি হই।

তার বাড়িতে যাওয়ার পর তাকে আর ভাল লাগেনি। তার বাড়িতে একরাত থাকলেও তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করিনি। শনিবার সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান আমার (নাজনিনের) অভিভাবকদের ডেকে আনলে তাদের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানকে আমি তালাক দেই। পরে চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে আমাকে রমজানের ফুফাতো ভাই পলাশের বাড়িতে পৌঁছে দেয়।

নাজনিন আরও জানান, রমজান আলীর সঙ্গে তার দুই বছর প্রেমের সম্পর্ক।

ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাবা নজরুল ইসলাম তাকে ১৮ মে নাজিরপুর ইউনিয়নের সোহেল নামক এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেন। কিছুদিন আগে রমজান আলী এলাকায় ফিরলে আবার তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। একপর্যায়ে নাজনিন রমজানের সঙ্গে পালিয়ে যায়। নাজনিনের বক্তব্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় তার বাবা চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের কাছে বিচার দিয়েছিল। শুক্রবার সকাল ৯টায় ইউনিয়ন পরিষদে সালিশের এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান নিজেই কিশোরীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।

স্থানীয় কাজী মো. আবু সাদেক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। আবার তালাকনামাও রেজিস্ট্রি করেন তিনি। কাবিননামায় কিশোরীর জন্ম উল্লেখ করা হয়েছে ২০০৩ সালের ১১ এপ্রিল। তবে প্রাথমিক শিক্ষা সনদ অনুযায়ী নাজনিনের জন্ম তারিখ ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল। নাজনিন জানান, তিনি এ বছর কনকদিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। মে মাসে সোহেলের সঙ্গে বিয়ের পর লেখাপড়া বন্ধ করে দেন।

তবে কাজী আবু সাদেক বলেন, মেয়েটির জন্মনিবন্ধন দেখেই তিনি বিয়ে পড়িয়েছেন। নাজনিনের প্রথম স্বামী থাকার পরও চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিয়ে এবং চেয়ারম্যানকে তালাক দেয়ার ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই আরেকটি বিয়ের বৈধতা আছে কি-না জানতে চাইলে কাজী আবু সাদিক বলেন, প্রথম স্বামী সোহেলকে বিয়ের দুই দিন পর ২০ মে তালাক দিয়েছে নাজনিন।

চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিয়ে ও তালাক এবং রমজানের সঙ্গে বিয়ে প্রসঙ্গে বললেন, ‘আমি সবকিছুর পরিস্থিতির শিকার। এখানে আমার কিছু করার নেই’। তবে রমজানের সঙ্গে শরিয়ত অনুযায়ী বিয়ে পড়ালেও রেজিস্ট্রি করেননি বলে জানান কাজী আবু সাদিক।

নাজনিনের নতুন স্বামী রজমান আলী বলেন, পারিবারিক কারণে প্রায় দেড় বছর তিনি বাউফলে ছিলেন না। ফিরে এসে জানতে পারেন নাজনিনের বিয়ে হয়ে গেছে। নাজনিনও তাকে ফিরে পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠে। একপর্যায়ে তার কাছে চলে আসে। নাজনিনের বাবা নজরুল ইসলাম চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের কাছে বিচার দিলে তিনি নিজেই নাজনিনকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যান। নাজনিনকে ফিরে পেয়ে তিনি খুশি বলে জানান রমজান আলী। তবে এ বিয়েতে রাজি না থাকায় নাজনিনের বাবা নজরুল ইসলাম অনুপস্থিত ছিলেন। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্যও জানা যায়নি।

চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বলেন, নাজনিন রাজী হওয়ায় আমি তাকে বিয়ে করেছিলাম। কয়েক ঘন্টা পরই আবার ভাল না লাগায় আমাকে তালাক দিয়ে চলে গেছে। কেন ভাল লাগলনা তা সে আমাকে বলেনি। শাহিন হাওলাদার বলেন, পছন্দের ছেলের সঙ্গে নাজনিকে বিয়ে দিতে রাজী ছিলনা তার বাবা। তারও বিয়ের প্রয়োজন থাকায় তিনিই নাজনিনকে বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী দুই বছর আগে তাকে বিয়ে করার অনুমতি দেন। জন্ম সনদ অনুযায়ী নাজনিন প্রাপ্ত বয়স্কা বলে বলে দাবী করেন তিনি।