খাঁড়ার ঘা থেকে রক্ষা করুন

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যথেষ্ট মজুত রয়েছে, দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। অথচ গত শুক্রবার রাতে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের খবর প্রচারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেড়ে গেল বাজারের উত্তাপ, বেড়ে গেল নিত্যপণ্যের দাম।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আলু, পেঁয়াজ এবং ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত শনিবারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, ময়দা, চিনি, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বেড়েছে মাছ-মাংসের দামও। সবাজির বাজারও চড়া।

সারাদেশে লকডাউন থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন এর আওতামুক্ত থাকে। কাজেই পণ্য সরবরাহে কোন ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। দেশে কোন বন্যা হয়নি, অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির কারণে কোথাও ফসল হানিও হয়নি। তারপরেও কেন দাম বাড়ছে? লকডাউনের কারণে নিদেন পক্ষে সপ্তাহ খানেক ঘরের বাইরে বেড় হওয়া যাবে না। লকডাউন আরও বাড়তে পারে- মূলত এই শঙ্কা থেকেই বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে গেছে। ফলে নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী এটাকে পুঁজি করে বাড়তি দাম হাঁকছে।

দেশে অসৎ ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে যারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। কোন সুযোগ পেলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। উৎসব হোক চাই দুর্যোগ- সব ক্ষেত্রেই তারা এমন সুযোগ নেয়। লকডাউনও তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করেছে। অনেকেই পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ভোক্তার পকেট কাটছে।

ভোক্তা সাধারণের স্বার্থ সংরক্ষণে দেশে কোন কর্তৃপক্ষ আছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না। দাম বাড়লে মাঝে মাঝে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। লোক দেখানো কিছু ব্যবস্থাও নেয়া হয়। কিন্তু দাম আর কমে না বরং বাড়তেই থাকে।

পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে অসাধু মজুদারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তাদের মোটা অঙ্কের জরিমানা করতে হবে। মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে তাদের নামমাত্র যে অর্থদন্ড দেয়া হয় তা নেহায়েতই সামান্য। ভোক্তাদের পকেট কেটে বিপুল মুনাফা করে নিজেদের আখের গোছানো ব্যবসায়ীরা হাসিমুখেই জরিমানার টাকা দিয়ে দেয়। তাই সাজাটা হতে হবে কঠোর। যদি অর্থদন্ড দেয়া হয় তাহলে সেটা যেন তাদের মুনাফার চেয়ে বেশি হয়। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বাতিল করারা বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে। বাজারে পণ্যের সরবরাহে যেন কোন ঘাটতি না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে এমনিতেই মানুয়ের আয় কমেছে, ব্যয় বেড়েছে। লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়বে খেটে খাওয়া অনেক মানুষ। এই অবস্থায় নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘায়ের মতো। দেশের নাগরিকদের এ খাঁড়ার ঘা থেকে রক্ষা করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবেÑ এটা আমাদের প্রত্যাশা।

সোমবার, ২৮ জুন ২০২১ , ১৪ আষাঢ় ১৪২৮ ১৬ জিলক্বদ ১৪৪২

বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম

খাঁড়ার ঘা থেকে রক্ষা করুন

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যথেষ্ট মজুত রয়েছে, দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। অথচ গত শুক্রবার রাতে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের খবর প্রচারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেড়ে গেল বাজারের উত্তাপ, বেড়ে গেল নিত্যপণ্যের দাম।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আলু, পেঁয়াজ এবং ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত শনিবারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, ময়দা, চিনি, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বেড়েছে মাছ-মাংসের দামও। সবাজির বাজারও চড়া।

সারাদেশে লকডাউন থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন এর আওতামুক্ত থাকে। কাজেই পণ্য সরবরাহে কোন ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। দেশে কোন বন্যা হয়নি, অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির কারণে কোথাও ফসল হানিও হয়নি। তারপরেও কেন দাম বাড়ছে? লকডাউনের কারণে নিদেন পক্ষে সপ্তাহ খানেক ঘরের বাইরে বেড় হওয়া যাবে না। লকডাউন আরও বাড়তে পারে- মূলত এই শঙ্কা থেকেই বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে গেছে। ফলে নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী এটাকে পুঁজি করে বাড়তি দাম হাঁকছে।

দেশে অসৎ ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে যারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। কোন সুযোগ পেলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। উৎসব হোক চাই দুর্যোগ- সব ক্ষেত্রেই তারা এমন সুযোগ নেয়। লকডাউনও তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করেছে। অনেকেই পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ভোক্তার পকেট কাটছে।

ভোক্তা সাধারণের স্বার্থ সংরক্ষণে দেশে কোন কর্তৃপক্ষ আছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না। দাম বাড়লে মাঝে মাঝে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। লোক দেখানো কিছু ব্যবস্থাও নেয়া হয়। কিন্তু দাম আর কমে না বরং বাড়তেই থাকে।

পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে অসাধু মজুদারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তাদের মোটা অঙ্কের জরিমানা করতে হবে। মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে তাদের নামমাত্র যে অর্থদন্ড দেয়া হয় তা নেহায়েতই সামান্য। ভোক্তাদের পকেট কেটে বিপুল মুনাফা করে নিজেদের আখের গোছানো ব্যবসায়ীরা হাসিমুখেই জরিমানার টাকা দিয়ে দেয়। তাই সাজাটা হতে হবে কঠোর। যদি অর্থদন্ড দেয়া হয় তাহলে সেটা যেন তাদের মুনাফার চেয়ে বেশি হয়। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বাতিল করারা বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে। বাজারে পণ্যের সরবরাহে যেন কোন ঘাটতি না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে এমনিতেই মানুয়ের আয় কমেছে, ব্যয় বেড়েছে। লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়বে খেটে খাওয়া অনেক মানুষ। এই অবস্থায় নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘায়ের মতো। দেশের নাগরিকদের এ খাঁড়ার ঘা থেকে রক্ষা করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবেÑ এটা আমাদের প্রত্যাশা।