১০ মাসেও পায়নি বন্ধ কারখানার ১৩৮ ঠিকাদারের বকেয়া ৪০ কোটি

আদমজী ইপিজেডের কুনতুং এ্যাপারেলস লিঃ (ফ্যাশন সিটি) নামক পোশাক কারখানার ঠিকাদার ব্যবসায়ীরা বকেয়া বিল না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ প্রতিষ্ঠানে ১৩৮ ব্যবসায়ীর ৪০ কোটি টাকা বিল পাওনা রয়েছে। বন্ধের ১০ মাসেও তাদের বকেয়া বিল পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। ব্যবসায়ীরা জমি কিংবা গহনা বিক্রি করে, ব্যাংক ঋণ অথবা ধার দেনা করে বিনিয়োগ করেছে। করোনাকালীন সময়ে ব্যবসা হারিয়ে তারা আজ নিঃস্ব হয়ে বকেয়া বিলের জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, ২০০৬ সালে আদমজী ইপিজেড পোশাক কারখানা কুনতুং এ্যাপারেল চালুর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে এ কারখানাটির কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সুনামও অর্জন করে। সর্বশেষ এ কারখানায় ৬ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিল। করোনা মহামারীর কারণে কর্তৃপক্ষ গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে কারখানাটি লে-অব ঘোষণা করে। এরপর কর্তৃপক্ষ কারখানটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়। এ সময় শ্রমিক-কর্মচারী ও সরবরাহকারী ব্যবসায়ীদের কোন বকেয়া বিল পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। অত্র কারখানায় ১৩৮ জন ঠিকাদার ব্যবসায়ী মালামাল সরবরাহ করে আসছিল। যাদের মোট বকেয়া বিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এসব ব্যবসায়ীরা কেমিক্যাল, স্টেশনারী, নির্মাণ সামগ্রী, বয়লার, মেশিনারজি এসেসরিজ, মেকানিক্যাল যস্ত্রপাতি, শ্রমিক ও ওষুধ সরবরাহ করে আসছিল। এদের মধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বকেয়া প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা বকেয়া আদায়ের জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও আদমজী ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপকের নিকট আবেদন নিবেদন করেও বিল পাচ্ছে না। গত ১০ মাস ধরে বিল না পাওয়ায় আর্থিক কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছে ব্যবসায়ীরা।

করোনা মহামারীর মধ্যে ব্যবসা হারিয়ে তারা পরবার পরিজন নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে। কেমিক্যাল সরবরাহকারী এস আর এন্টারপ্রাইজের মালিক খায়রুদ্দিন জানান, আমি এ কারখানায় ১ কোটি টাকা বিল পাওনা আছি। এক কার্যাদেশের বিল পরিশোধ না করেই পুনরায় কার্যাদেশ দেয় মাল সরবরাহ করতে। না করলে পূর্বের বিল বাজেয়াফত হবে বলে ভয় দেখায়। এছাড়াও বিল পরিশোধে গড়িমসি করায় বকেয়া বিল ১ কোটি টাকা হয়েছে। এখন আমি নিঃস্ব। আমি ব্যাংক ঋণ ও জমি বিক্রি করে বিনিয়োগ করেছি। এরপরও টাকার যোগান দিতে না পারায় ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বাকিতে মাল এনে সরবরাহ করেছি। সেসব প্রতিষ্ঠান বকেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এখন আমার পক্ষে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তারপর পাওনাদারদের চাপ। আমি এখন মানসিকভাবে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে আছি। নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহকারী ইসলামী পরশ পাথরের মালিক ৭০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। সেও ব্যাংক ঋণ ও ধার দেনা করে বিনিয়োগ করেছেন। আরেক ব্যবসায়ী ফোকা এন্টারপ্রাইজের নয়ন ভূইয়াও পাওনা ৪৮ লাখ টাকা। এ রকম অবস্থা অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরও। এ সময় বন্ধ প্রতিষ্ঠানের কাছে বিল্লাল এন্টারপ্রাইজ পাওনা ৫৫ লাখ, গাজী এন্টারপ্রাইজ ২৮ লাখ, সীম টেক সলিউশন ২৫ লাখ টাকা, এ আর কর্পোরেশন ২৫ লাখ টাকা, ভূইয়া ট্রেডিং ২২ লাখ টাকা ও একটিভ ট্রেডিং ২০ লাখ টাকা পাওনা বলে জানায়। এছাড়াও আর এম ভি ডিজাইন, সুমি এন্টারপ্রাইজ, এমবিডি ট্রোডার্স, কাজী মেডিক্যাল, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ- এর বকেয়া বিল রয়েছে। ভুক্তভেঅগী ব্যবসায়ীরা জানায়, আমরা জমি, গহনা বিক্রি করে, ব্যাংক ঋণ ও ধার দেনা করে বিনিয়োগ করেছি। এ টাকা আমাদের শেষ সম্বল।

এ বকেয়া টাকা না পেলে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার আর কোন পথ নেই। তারা আরও জানায়, আমরা বকেয়া টাকার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বেপজার জিএম বরাবর লিখিত আবেদন করেছি। বিল পরিশোধের কোন সুরাহা হয়নি। আমরা বকেয়া টাকা না পেলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আদমজী ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক আহসান কবীরকে মুঠোফোনে একাধিক ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। বেপজার মহাব্যবস্থাপক (গণসংযোগ বিভাগ) নাজমা বিনতে আলমগীর জানান, বন্ধকৃত প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পদ নিলামে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ থেকে সকল দায় দেনা পরিশোধ করা হবে।

বুধবার, ৩০ জুন ২০২১ , ১৬ আষাঢ় ১৪২৮ ১৮ জিলক্বদ ১৪৪২

আদমজী ইপিজেড

১০ মাসেও পায়নি বন্ধ কারখানার ১৩৮ ঠিকাদারের বকেয়া ৪০ কোটি

প্রতিনিধি, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

আদমজী ইপিজেডের কুনতুং এ্যাপারেলস লিঃ (ফ্যাশন সিটি) নামক পোশাক কারখানার ঠিকাদার ব্যবসায়ীরা বকেয়া বিল না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ প্রতিষ্ঠানে ১৩৮ ব্যবসায়ীর ৪০ কোটি টাকা বিল পাওনা রয়েছে। বন্ধের ১০ মাসেও তাদের বকেয়া বিল পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। ব্যবসায়ীরা জমি কিংবা গহনা বিক্রি করে, ব্যাংক ঋণ অথবা ধার দেনা করে বিনিয়োগ করেছে। করোনাকালীন সময়ে ব্যবসা হারিয়ে তারা আজ নিঃস্ব হয়ে বকেয়া বিলের জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, ২০০৬ সালে আদমজী ইপিজেড পোশাক কারখানা কুনতুং এ্যাপারেল চালুর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে এ কারখানাটির কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সুনামও অর্জন করে। সর্বশেষ এ কারখানায় ৬ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিল। করোনা মহামারীর কারণে কর্তৃপক্ষ গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে কারখানাটি লে-অব ঘোষণা করে। এরপর কর্তৃপক্ষ কারখানটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়। এ সময় শ্রমিক-কর্মচারী ও সরবরাহকারী ব্যবসায়ীদের কোন বকেয়া বিল পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। অত্র কারখানায় ১৩৮ জন ঠিকাদার ব্যবসায়ী মালামাল সরবরাহ করে আসছিল। যাদের মোট বকেয়া বিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এসব ব্যবসায়ীরা কেমিক্যাল, স্টেশনারী, নির্মাণ সামগ্রী, বয়লার, মেশিনারজি এসেসরিজ, মেকানিক্যাল যস্ত্রপাতি, শ্রমিক ও ওষুধ সরবরাহ করে আসছিল। এদের মধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বকেয়া প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা বকেয়া আদায়ের জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও আদমজী ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপকের নিকট আবেদন নিবেদন করেও বিল পাচ্ছে না। গত ১০ মাস ধরে বিল না পাওয়ায় আর্থিক কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছে ব্যবসায়ীরা।

করোনা মহামারীর মধ্যে ব্যবসা হারিয়ে তারা পরবার পরিজন নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে। কেমিক্যাল সরবরাহকারী এস আর এন্টারপ্রাইজের মালিক খায়রুদ্দিন জানান, আমি এ কারখানায় ১ কোটি টাকা বিল পাওনা আছি। এক কার্যাদেশের বিল পরিশোধ না করেই পুনরায় কার্যাদেশ দেয় মাল সরবরাহ করতে। না করলে পূর্বের বিল বাজেয়াফত হবে বলে ভয় দেখায়। এছাড়াও বিল পরিশোধে গড়িমসি করায় বকেয়া বিল ১ কোটি টাকা হয়েছে। এখন আমি নিঃস্ব। আমি ব্যাংক ঋণ ও জমি বিক্রি করে বিনিয়োগ করেছি। এরপরও টাকার যোগান দিতে না পারায় ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বাকিতে মাল এনে সরবরাহ করেছি। সেসব প্রতিষ্ঠান বকেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এখন আমার পক্ষে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তারপর পাওনাদারদের চাপ। আমি এখন মানসিকভাবে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে আছি। নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহকারী ইসলামী পরশ পাথরের মালিক ৭০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। সেও ব্যাংক ঋণ ও ধার দেনা করে বিনিয়োগ করেছেন। আরেক ব্যবসায়ী ফোকা এন্টারপ্রাইজের নয়ন ভূইয়াও পাওনা ৪৮ লাখ টাকা। এ রকম অবস্থা অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরও। এ সময় বন্ধ প্রতিষ্ঠানের কাছে বিল্লাল এন্টারপ্রাইজ পাওনা ৫৫ লাখ, গাজী এন্টারপ্রাইজ ২৮ লাখ, সীম টেক সলিউশন ২৫ লাখ টাকা, এ আর কর্পোরেশন ২৫ লাখ টাকা, ভূইয়া ট্রেডিং ২২ লাখ টাকা ও একটিভ ট্রেডিং ২০ লাখ টাকা পাওনা বলে জানায়। এছাড়াও আর এম ভি ডিজাইন, সুমি এন্টারপ্রাইজ, এমবিডি ট্রোডার্স, কাজী মেডিক্যাল, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ- এর বকেয়া বিল রয়েছে। ভুক্তভেঅগী ব্যবসায়ীরা জানায়, আমরা জমি, গহনা বিক্রি করে, ব্যাংক ঋণ ও ধার দেনা করে বিনিয়োগ করেছি। এ টাকা আমাদের শেষ সম্বল।

এ বকেয়া টাকা না পেলে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার আর কোন পথ নেই। তারা আরও জানায়, আমরা বকেয়া টাকার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বেপজার জিএম বরাবর লিখিত আবেদন করেছি। বিল পরিশোধের কোন সুরাহা হয়নি। আমরা বকেয়া টাকা না পেলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আদমজী ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক আহসান কবীরকে মুঠোফোনে একাধিক ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। বেপজার মহাব্যবস্থাপক (গণসংযোগ বিভাগ) নাজমা বিনতে আলমগীর জানান, বন্ধকৃত প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পদ নিলামে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ থেকে সকল দায় দেনা পরিশোধ করা হবে।