ভ্যাকসিন সংকট কেটে গেছে প্রধানমন্ত্রী

ভারত করোনা টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় যে সংকট তৈরি হয়েছিল তা কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। জুলাই মাসে আরও ভ্যাকসিন আসবে আশা প্রকাশ করে তিনি জানান, তখন ব্যাপকভাবে টিকা (গণটিকা) দেয়া শুরু করা হবে।

গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। যারা বিদেশে যাবেন, তাদের আগে টিকা দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে গিয়ে যাতে তাদের কোয়ারেন্টিন করতে না হয়, কর্মস্থলে যাতে যোগ দিতে পারেন, তাই এই পদক্ষেপ।’

যত টাকাই প্রয়োজন হোক না কেন সরকার প্রয়োজনীয় টিকা সংগ্রহ করবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যায়ক্রমে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টিকাদান কার্যক্রম সম্পন্ন হলে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হবে।’

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশমত ভ্যাকসিন দেয়ার বয়সের একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তা বিবেচনায় রেখে স্কুল থেকে শুরু করে সবাই যাতে ভ্যাকসিন পায়। এর মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

করোনায় দেশের অর্থনীতিতে ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সময় অর্থনৈতিক অভিঘাত হতে উত্তরণে ১৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’

করোনায় বন্ধুপ্রতীম দেশ ও সংস্থাকে বাংলাদেশ পাশে পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ পাওয়া গেছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পেতে যাচ্ছে। পাশাপাশি টিকা কিনতে ভ্যাকসিন সাপোর্ট বাবদ আরও ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে।’

এ জন্য উন্নয়ন সহযোগী, বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সহায়তা পাওয়া সহজ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার বাজেট’ আখ্যায়িত করে এর মাধ্যমে চলমান করোনার মধ্যেও দেশকে এগিয়ে নেয়ার আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,‘ আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন চাই। আমরা প্রবৃদ্ধি চাই। আবার সমাজের দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ঘটাতে চাই। প্রবৃদ্ধির সুফলটা যেন তৃণমূলের মানুষ পায় সেটাই চাই।’

বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বাপেক্ষা অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত বছর করোনার প্রথম ঢেউ সফলভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ^ পরিস্থিতিতে আমাদের মৃত্যুহার কম তবুও আমরা চাই না আমাদের একজন মানুষও মৃত্যুবরণ করুক।’

দ্বিতীয় ঢেউ এখনও বিদ্যমান থাকায় যে কোন জরুরি চাহিদা মোকাবিলায় এবারের বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১০ হাজার চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য খাতে অভিঘাত থেকে মুক্তি পেতে সমন্বিত বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। বাজেটে এ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভাকসিন কেনার জন্য বাজেটে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন উৎস থেকে ইতোমধ্যে এক কোটি ১৪ লাখ ৬ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার বিষয়টিতে প্রাধান্য দিয়ে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের যে বাজেট অর্থমন্ত্রী সংসদে পেশ করেছেন, আমি মনেকরি সেই বাজেট বাস্তবায়ন করতে আমরা সক্ষম হব। বাংলাদেশ আরও একধাপ সামনে এগিয়ে যাবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।’

বুধবার, ৩০ জুন ২০২১ , ১৬ আষাঢ় ১৪২৮ ১৮ জিলক্বদ ১৪৪২

ভ্যাকসিন সংকট কেটে গেছে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ভারত করোনা টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় যে সংকট তৈরি হয়েছিল তা কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। জুলাই মাসে আরও ভ্যাকসিন আসবে আশা প্রকাশ করে তিনি জানান, তখন ব্যাপকভাবে টিকা (গণটিকা) দেয়া শুরু করা হবে।

গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। যারা বিদেশে যাবেন, তাদের আগে টিকা দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে গিয়ে যাতে তাদের কোয়ারেন্টিন করতে না হয়, কর্মস্থলে যাতে যোগ দিতে পারেন, তাই এই পদক্ষেপ।’

যত টাকাই প্রয়োজন হোক না কেন সরকার প্রয়োজনীয় টিকা সংগ্রহ করবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যায়ক্রমে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টিকাদান কার্যক্রম সম্পন্ন হলে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হবে।’

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশমত ভ্যাকসিন দেয়ার বয়সের একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তা বিবেচনায় রেখে স্কুল থেকে শুরু করে সবাই যাতে ভ্যাকসিন পায়। এর মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

করোনায় দেশের অর্থনীতিতে ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সময় অর্থনৈতিক অভিঘাত হতে উত্তরণে ১৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’

করোনায় বন্ধুপ্রতীম দেশ ও সংস্থাকে বাংলাদেশ পাশে পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ পাওয়া গেছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পেতে যাচ্ছে। পাশাপাশি টিকা কিনতে ভ্যাকসিন সাপোর্ট বাবদ আরও ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে।’

এ জন্য উন্নয়ন সহযোগী, বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সহায়তা পাওয়া সহজ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার বাজেট’ আখ্যায়িত করে এর মাধ্যমে চলমান করোনার মধ্যেও দেশকে এগিয়ে নেয়ার আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,‘ আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন চাই। আমরা প্রবৃদ্ধি চাই। আবার সমাজের দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ঘটাতে চাই। প্রবৃদ্ধির সুফলটা যেন তৃণমূলের মানুষ পায় সেটাই চাই।’

বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বাপেক্ষা অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত বছর করোনার প্রথম ঢেউ সফলভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ^ পরিস্থিতিতে আমাদের মৃত্যুহার কম তবুও আমরা চাই না আমাদের একজন মানুষও মৃত্যুবরণ করুক।’

দ্বিতীয় ঢেউ এখনও বিদ্যমান থাকায় যে কোন জরুরি চাহিদা মোকাবিলায় এবারের বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১০ হাজার চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য খাতে অভিঘাত থেকে মুক্তি পেতে সমন্বিত বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। বাজেটে এ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভাকসিন কেনার জন্য বাজেটে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন উৎস থেকে ইতোমধ্যে এক কোটি ১৪ লাখ ৬ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার বিষয়টিতে প্রাধান্য দিয়ে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের যে বাজেট অর্থমন্ত্রী সংসদে পেশ করেছেন, আমি মনেকরি সেই বাজেট বাস্তবায়ন করতে আমরা সক্ষম হব। বাংলাদেশ আরও একধাপ সামনে এগিয়ে যাবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।’