রংপুর-তারাগঞ্জের ওসি অবশেষে নির্যাতিতার মামলা নিলেন

রংপুরের তারাঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদের বিরুদ্ধে স্বামী কর্তৃক নির্যাতিতা হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীর অভিযোগ গ্রহণ না করে উল্টো তাকে চরিত্রহীনা বলে গালাগাল দিয়ে থানা থেকে বের করে দেবার অভিযোগ সম্পর্কিত খবর ২৭ জুন দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবশেষে ওসি নিজে দুই কর্মকর্তাসহ বাসায় গিয়ে অনুনয় বিনয় করে থানায় ডেকে এনে মামলা রেকর্ড করেছে। সেই সঙ্গে নির্যাতিতার স্বামী মিন্টু চন্দ্রকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় পুরো তারাগঞ্জ উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয় ভিডিও কলের মাধ্যমে শিতারানীর থানায় আসার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের দেখিয়েছেন ওসি।

মামলা রেকর্ড করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্যাতিতা গৃহবধূ শিতারানী।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদকে শিতারানী জানান, তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদ ও ওসি তদন্ত শুকুর আলীসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য রোববার রাতে তার বাসায় এসে তাকে অনুনয় বিনয় করে বলেন, তাদের ভুল হয়ে গেছে থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিলেই আমরা মামলা রেকর্ড করবো। কিন্তু প্রথমে তাদের কথায় রাজি না হলেও বার বার অনুরোধ করার পর সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তারাগঞ্জ থানায় যাই এরপর আমার লিখিত অভিযোগ নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা রেকর্ড করে পুলিশ।

গতকাল মামলার প্রধান আসামি তার স্বামী মিন্টু রায়কে গ্রেপ্তার করেছে বিষয়টি তারাগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত শুকুর আলী তাকে ফোন করে নিশ্চিত করেছেন। শিতারানী জানান, আমি চার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছি পুলিশ তিনজনকে এখনও গ্রেপ্তার করেনি। সেই সঙ্গে আমার ৫ বছরের শিশু কন্যা তৃষা মনিকে এখনও আটকিয়ে রাখা হয়েছে। আমি আমার এক মাত্র কন্যা সন্তানকে ফিরে পেতে চাই বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আবারও পুলিশের ডিআইজি অফিসের সামনে প্রতিবাদী অবস্থান নেবো।

উল্লেখ্য তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার হাজিরহাট গ্রামের জিতেন্দ্র নাথের মেয়ে শিতারানীর সঙ্গে কুর্শা দোলাপাড়া এলাকার অধির চন্দ্রের ছেলে মিন্টু রায়ের সঙ্গে দশ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের তৃষা মনি নামে ৫ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। শিতারানী অভিযোগ করেন তার স্বামী মিন্টু রায় অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত প্রায়শই সে গভীর রাতে বাসায় আসে।

এসব বিষয় প্রতিবাদ করায় তাকে প্রায়শই মারধর করতো তার স্বামী। এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে তার স্বামী মিন্টু রায় তার কাছে যৌতুক বাবাদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে, টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় শিতারানীকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। অসুস্থ অবস্থায় বেশ কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় তার এক মাত্র কন্যা তৃষামনিকে জোর করে আটকে রেখেছে তার স্বামী ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজন।

শিতারানি আরও অভিযোগ করেন এ ব্যাপারে তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদের কাছে মামলা করতে গেলে তিনি মামলা গ্রহণ করতে অস্বিকৃতি জানান। উল্টো ওসি ফারুখ আহাম্মেদ আমাকে চরিত্রহীনা নারী বলে গালাগাল দেন এবং স্বামীর হাতে মাঝে মাঝে মার খেতে হয়। এ কথা বলে তার মামলা না নিয়ে থানা থেকে বের করে দিয়েছে ওসি বলে জানান ।

শিতারানী জানান, অবশেষে থানায় বিচার না পেয়ে গত ২৬ জুন শনিবার সকাল থেকে প্রথমে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেই এবং তার সঙ্গে দেখা করে তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখের বিরুদ্ধে মামলা না নেবার কথা বলি সেই সঙ্গে তাকে চরিত্রহীনা বলা এবং মাঝে মাঝে স্বামীর হাতে মার খেতে বলে ফতোয়া দেবার কথা জানাই। এর পর রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমারের সঙ্গে করে একই অভিযোগ করলে তারা ফোন করে ওসিকে মামলা না নেবার ব্যাপারে ভৎসনা করে মামলা নেবার আদেশ দেন। এ সংক্রান্ত খবর দৈনিক সংবাদে ২৭ জুন শেষের পাতায় প্রকাশিত হলে তারাগঞ্জ থানার ওসি শেষ পর্যন্ত শিতারানীর বাসায় গিয়ে অনুনয় বিনয় করে থানায় ডেকে এনে মামলা রেকর্ড করেছেন।

এ ব্যাপারে তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বুধবার, ৩০ জুন ২০২১ , ১৬ আষাঢ় ১৪২৮ ১৮ জিলক্বদ ১৪৪২

সংবাদে খবর প্রকাশের পর

রংপুর-তারাগঞ্জের ওসি অবশেষে নির্যাতিতার মামলা নিলেন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

রংপুরের তারাঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদের বিরুদ্ধে স্বামী কর্তৃক নির্যাতিতা হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীর অভিযোগ গ্রহণ না করে উল্টো তাকে চরিত্রহীনা বলে গালাগাল দিয়ে থানা থেকে বের করে দেবার অভিযোগ সম্পর্কিত খবর ২৭ জুন দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবশেষে ওসি নিজে দুই কর্মকর্তাসহ বাসায় গিয়ে অনুনয় বিনয় করে থানায় ডেকে এনে মামলা রেকর্ড করেছে। সেই সঙ্গে নির্যাতিতার স্বামী মিন্টু চন্দ্রকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় পুরো তারাগঞ্জ উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয় ভিডিও কলের মাধ্যমে শিতারানীর থানায় আসার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের দেখিয়েছেন ওসি।

মামলা রেকর্ড করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্যাতিতা গৃহবধূ শিতারানী।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদকে শিতারানী জানান, তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদ ও ওসি তদন্ত শুকুর আলীসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য রোববার রাতে তার বাসায় এসে তাকে অনুনয় বিনয় করে বলেন, তাদের ভুল হয়ে গেছে থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিলেই আমরা মামলা রেকর্ড করবো। কিন্তু প্রথমে তাদের কথায় রাজি না হলেও বার বার অনুরোধ করার পর সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তারাগঞ্জ থানায় যাই এরপর আমার লিখিত অভিযোগ নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা রেকর্ড করে পুলিশ।

গতকাল মামলার প্রধান আসামি তার স্বামী মিন্টু রায়কে গ্রেপ্তার করেছে বিষয়টি তারাগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত শুকুর আলী তাকে ফোন করে নিশ্চিত করেছেন। শিতারানী জানান, আমি চার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছি পুলিশ তিনজনকে এখনও গ্রেপ্তার করেনি। সেই সঙ্গে আমার ৫ বছরের শিশু কন্যা তৃষা মনিকে এখনও আটকিয়ে রাখা হয়েছে। আমি আমার এক মাত্র কন্যা সন্তানকে ফিরে পেতে চাই বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আবারও পুলিশের ডিআইজি অফিসের সামনে প্রতিবাদী অবস্থান নেবো।

উল্লেখ্য তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার হাজিরহাট গ্রামের জিতেন্দ্র নাথের মেয়ে শিতারানীর সঙ্গে কুর্শা দোলাপাড়া এলাকার অধির চন্দ্রের ছেলে মিন্টু রায়ের সঙ্গে দশ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের তৃষা মনি নামে ৫ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। শিতারানী অভিযোগ করেন তার স্বামী মিন্টু রায় অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত প্রায়শই সে গভীর রাতে বাসায় আসে।

এসব বিষয় প্রতিবাদ করায় তাকে প্রায়শই মারধর করতো তার স্বামী। এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে তার স্বামী মিন্টু রায় তার কাছে যৌতুক বাবাদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে, টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় শিতারানীকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। অসুস্থ অবস্থায় বেশ কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় তার এক মাত্র কন্যা তৃষামনিকে জোর করে আটকে রেখেছে তার স্বামী ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজন।

শিতারানি আরও অভিযোগ করেন এ ব্যাপারে তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদের কাছে মামলা করতে গেলে তিনি মামলা গ্রহণ করতে অস্বিকৃতি জানান। উল্টো ওসি ফারুখ আহাম্মেদ আমাকে চরিত্রহীনা নারী বলে গালাগাল দেন এবং স্বামীর হাতে মাঝে মাঝে মার খেতে হয়। এ কথা বলে তার মামলা না নিয়ে থানা থেকে বের করে দিয়েছে ওসি বলে জানান ।

শিতারানী জানান, অবশেষে থানায় বিচার না পেয়ে গত ২৬ জুন শনিবার সকাল থেকে প্রথমে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেই এবং তার সঙ্গে দেখা করে তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখের বিরুদ্ধে মামলা না নেবার কথা বলি সেই সঙ্গে তাকে চরিত্রহীনা বলা এবং মাঝে মাঝে স্বামীর হাতে মার খেতে বলে ফতোয়া দেবার কথা জানাই। এর পর রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমারের সঙ্গে করে একই অভিযোগ করলে তারা ফোন করে ওসিকে মামলা না নেবার ব্যাপারে ভৎসনা করে মামলা নেবার আদেশ দেন। এ সংক্রান্ত খবর দৈনিক সংবাদে ২৭ জুন শেষের পাতায় প্রকাশিত হলে তারাগঞ্জ থানার ওসি শেষ পর্যন্ত শিতারানীর বাসায় গিয়ে অনুনয় বিনয় করে থানায় ডেকে এনে মামলা রেকর্ড করেছেন।

এ ব্যাপারে তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।