পিপিপি বা লিজ না দিয়ে পাটকলগুলো চালু করার দাবি

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় কিংবা লিজ না দিয়ে আধুনিকায়ন করে চালু করার দাবি জানিয়েছে পাট-সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ। গতকাল ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের আহ্বায়ক শহিদুল্লাহ চৌধুরী এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘পাটকলে লোকসান কেন? এটা নিয়ে কোন গবেষণা হয়নি। এই সংকটের অন্যতম কারণ হলো উন্নত প্রযুক্তির মেশিনের অভাব। আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিন সংযোজন করা গেলে এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুললে পাটশিল্পে লোকসান নয়, লাভজনক হবে।’

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আগের দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ী ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এই শ্রমিক নেতা। অবিলম্বে পাট-সুতা-বস্ত্রকলের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাট ও বস্ত্রকল শিল্প খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণারও দাবি জানান তিনি। এছাড়া শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ, বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালু করতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ এবং পাট ও পাটশিল্পের দুর্নীতি সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে শহিদুল্লাহ চৌধুরী।

স্বাধীনতার পর বিশ্বের কাছে ‘সোনালি আঁশের’ দেশ হিসেবে পরিচিতির কথা উল্লেখ করে সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান বলেন, ‘পাট শিল্প শুধু অর্থনীতিই নয়, এটি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। সেই শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের পাটকল বন্ধ এবং ব্যক্তি খাতের ও অনেক পাটকল বন্ধ হওয়ায় পাটের যে চাহিদা তৈরি হয়েছিল তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে দেয়া লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গত বছরের ২৮ জুন আকস্মিক এক ঘোষণায় অবশিষ্ট ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে সরকার। এই জুনে তা এক বছরে গড়ালো। এতে সেদিন স্থায়ী ২৪ হাজার, বদলি ২০ হাজার ও ক্যাজুয়াল ৬ হাজারসহ প্রায় ৫১ হাজার পাটকল শ্রমিককে বেকার করে দেয়া হয়েছিল। করোনা অতিমারীর সেই দুঃসময়ে পাটকল শ্রমিকরা অথৈ সংকটে পড়েছিল।’

বাজারে পাট পণ্যের চাহিদা রয়েছে, এবং তা দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চটের বস্তা ও ব্যাগের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে পরিবেশ বিনাশি পলিথিন ব্যবহার কমেছিল, এখন পাটের বস্তার অভাবে পুনরায় পলিথিন ফিরে এসেছে।’

অন্যদের মধ্যে পাট-সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, কিশোর রায়, আসলাম খান, আবদুর রাজ্জাক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, সরকারি পাটকলগুলো ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৭ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত। সে সময় যেসব যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছিল, তা দিয়েই চালানো হচ্ছিল। ফলে উৎপাদনশীলতা অর্ধেকে নেমে আসে। ২০০৯ সালে পাটকল লাভজনক করার উদ্যোগ নেয়া হলেও যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নে নজর দেয়া হয়নি। এমনকি যে বিজেএমসিকে নিয়ে বর্তমানে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে, সেখানেও সংস্কারের কোন হাত পড়েনি। ফলে লোকসানের গল্পের পুনরাবৃত্তি হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরেই কেবল একবার সরকারি পাটকলগুলো ১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা মুনাফা করে। পরের বছরই ৬৬ কোটি টাকা লোকসান করে। তারপর ধারাবাহিকভাবে লোকসান বেড়েছে। এর মধ্যে সব মিলিয়ে গত ১০ বছরেই ৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল।

বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১ , ১৭ আষাঢ় ১৪২৮ ১৯ জিলক্বদ ১৪৪২

পিপিপি বা লিজ না দিয়ে পাটকলগুলো চালু করার দাবি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় কিংবা লিজ না দিয়ে আধুনিকায়ন করে চালু করার দাবি জানিয়েছে পাট-সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ। গতকাল ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের আহ্বায়ক শহিদুল্লাহ চৌধুরী এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘পাটকলে লোকসান কেন? এটা নিয়ে কোন গবেষণা হয়নি। এই সংকটের অন্যতম কারণ হলো উন্নত প্রযুক্তির মেশিনের অভাব। আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিন সংযোজন করা গেলে এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুললে পাটশিল্পে লোকসান নয়, লাভজনক হবে।’

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আগের দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ী ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এই শ্রমিক নেতা। অবিলম্বে পাট-সুতা-বস্ত্রকলের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাট ও বস্ত্রকল শিল্প খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণারও দাবি জানান তিনি। এছাড়া শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ, বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালু করতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ এবং পাট ও পাটশিল্পের দুর্নীতি সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে শহিদুল্লাহ চৌধুরী।

স্বাধীনতার পর বিশ্বের কাছে ‘সোনালি আঁশের’ দেশ হিসেবে পরিচিতির কথা উল্লেখ করে সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান বলেন, ‘পাট শিল্প শুধু অর্থনীতিই নয়, এটি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। সেই শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের পাটকল বন্ধ এবং ব্যক্তি খাতের ও অনেক পাটকল বন্ধ হওয়ায় পাটের যে চাহিদা তৈরি হয়েছিল তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে দেয়া লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গত বছরের ২৮ জুন আকস্মিক এক ঘোষণায় অবশিষ্ট ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে সরকার। এই জুনে তা এক বছরে গড়ালো। এতে সেদিন স্থায়ী ২৪ হাজার, বদলি ২০ হাজার ও ক্যাজুয়াল ৬ হাজারসহ প্রায় ৫১ হাজার পাটকল শ্রমিককে বেকার করে দেয়া হয়েছিল। করোনা অতিমারীর সেই দুঃসময়ে পাটকল শ্রমিকরা অথৈ সংকটে পড়েছিল।’

বাজারে পাট পণ্যের চাহিদা রয়েছে, এবং তা দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চটের বস্তা ও ব্যাগের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে পরিবেশ বিনাশি পলিথিন ব্যবহার কমেছিল, এখন পাটের বস্তার অভাবে পুনরায় পলিথিন ফিরে এসেছে।’

অন্যদের মধ্যে পাট-সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, কিশোর রায়, আসলাম খান, আবদুর রাজ্জাক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, সরকারি পাটকলগুলো ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৭ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত। সে সময় যেসব যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছিল, তা দিয়েই চালানো হচ্ছিল। ফলে উৎপাদনশীলতা অর্ধেকে নেমে আসে। ২০০৯ সালে পাটকল লাভজনক করার উদ্যোগ নেয়া হলেও যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নে নজর দেয়া হয়নি। এমনকি যে বিজেএমসিকে নিয়ে বর্তমানে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে, সেখানেও সংস্কারের কোন হাত পড়েনি। ফলে লোকসানের গল্পের পুনরাবৃত্তি হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরেই কেবল একবার সরকারি পাটকলগুলো ১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা মুনাফা করে। পরের বছরই ৬৬ কোটি টাকা লোকসান করে। তারপর ধারাবাহিকভাবে লোকসান বেড়েছে। এর মধ্যে সব মিলিয়ে গত ১০ বছরেই ৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল।