কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বিগুণ ভাড়ায় গাদাগাদি করে কারখানায় গেছেন অনেক শ্রমিক। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোর অনেকেই হেঁটে নিজ নিজ কারখানায় গেছেন।
সকালে আশুলিয়া-টঙ্গী, ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা ও ইপিজেড সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গণপরিবহনের জন্য শ্রমিকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। রিকশা কিংবা ভ্যান পেলেই বেশি ভাড়া দিয়ে গাদাগাদি করে কারখানায় যাচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও পরিবহন না পেয়ে হেঁটে কারখানায় গেছেন অনেক শ্রমিক।
শ্রমিকরা জানিয়েছেন, লকডাউন ঘোষণার পর সকাল থেকে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। প্রতিবারই লকডাউনে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। রাস্তায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে কারখানা খোলা রেখে এ কেমন লকডাউন দেয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে রেহাই চান কারখানার শ্রমিকরা।
এদিকে লকডাউন বাস্তবায়নে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে টহল দিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের। সকাল থেকে তারা সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় টহল অব্যাহত রেখেছে। পোশাক শ্রমিকদের জন্য কিছু পরিবহন সড়কে দেখা গেলেও সকাল ১০টার পর থেকে দেখা যায়নি। রাস্তায় ছিল না কোন বাস, মিনিবাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি। অপরদিকে, কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জেও একই অবস্থা দেখা গেছে। যানবাহন না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। গতকাল সকালে জেলা শহর ও. শহরতলীর ফতুল্লার বিভিন্ন সড়কে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রিকশা ও ব্যক্তিগত কিছু গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে গার্মেন্টস কর্মীরা রিকশায় না চড়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
লকডাউনের প্রথম দিনে কঠোর ভূমিকায় রয়েছে প্রশাসন। সড়ক-মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এদিকে পরিবহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন কারখানামুখী শ্রমিকরা। সরকারঘোষিত কড়া বিধিনিষেধের মধ্যেও পোশাক কারখানা খোলা রেখে পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
সকালে সরেজমিনে শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের ম-লপাড়া, ২ নম্বর গেট, চাষাড়া চত্বর, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ সাইনবোর্ডসহ কয়েকটি স্থানে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। এছাড়া অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কগুলোতেও রয়েছে পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। সার্নসহ কয়েকটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জটলা। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে শ্রমিক পরিবহন না করায় শ্রমিকবাহী বাস থেকে থামিয়ে তাদের নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার সৈয়দপুরের ফকিরবাড়ি থাকেন জাকির হোসেন। চাকরি করেন সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলির পোশাক কারখানা নীট কনসার্নে। তিনি বলেন, ফকিরবাড়ি থেকে দ্বিগুণ ভাড়ায় শহরের ডিআইটি আসতে ইজিবাইকে উঠেন। পুলিশি বাধায় অর্ধেক রাস্তায় নেমে যেতে হয়। বাকি পথ হেঁটে এসে ডিআইটি থেকে কারখানার বাসে উঠেন। তবে সেই বাস থামিয়ে দেয়া হয় চাষাড়ায়। একই স্থানে সেন্সিবল গার্মেন্টসের যাত্রীবাহী তিনটি বাস থামিয়ে প্রায় দেড়শ’ শ্রমিককে নামিয়ে দেয়া হয়।
ক্ষুব্ধ-বিরক্ত পোশাক শ্রমিক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাদের ফ্যাক্টরি খোলা রাখছে কিন্তু গাড়িগুলো কেন বন্ধ রাখলো? সব যখন বন্ধ তাহলে ফ্যাক্টরিও বন্ধ দিক। আমাদের এভাবে হয়রানি করার কোন মানে নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, লকডাউনের নামে আমাগো মতো গরীবের যেন কষ্ট না দেয়।’
এছাড়া লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ রেখে পোশাক কারখানা খোলা রাখার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বৃষ্টির মধ্যেই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। গত বুধবার সকালে নগরের টাইগারপাস মোড় এলাকায় কয়েকশ’ শ্রমিক এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত নগরের টাইগারপাস, চৌমুহনী মোড় ও আগ্রাবাদে শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণপরিবহন বন্ধ রেখে পোশাক কারখানা খোলা রাখায় চাকরি বাঁচাতে তাদের রিকশা, ছোট যানবাহনে চড়তে হচ্ছে চড়া ভাড়ায়। অনেককে কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে কাজে যোগ দিতে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, অফিসের কর্মকর্তাদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা থাকলেও শ্রমিকদের হেঁটে বা কয়েক গুণ বাড়তি ভাড়ায় রিকশায় চড়ে অফিসে যেতে হচ্ছে।
তারা জানান, লকডাউনে সব প্রতিষ্ঠান কর্মী আনা-নেয়ার জন্য পরিবহন সুবিধা দেয়ার কথা। কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কোন সুবিধা দেয়া হয়নি। তাই তাদের কর্মস্থলে পৌঁছতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এরপরও তারা কর্মস্থলে পৌঁছতে দেরি করলে বেতন কাটা হয়। এর প্রতিবাদে গতকাল তারা রাস্তায় বিক্ষোভ করেন।
শুক্রবার, ০২ জুলাই ২০২১ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৮ ২০ জিলক্বদ ১৪৪২
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বিগুণ ভাড়ায় গাদাগাদি করে কারখানায় গেছেন অনেক শ্রমিক। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোর অনেকেই হেঁটে নিজ নিজ কারখানায় গেছেন।
সকালে আশুলিয়া-টঙ্গী, ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা ও ইপিজেড সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গণপরিবহনের জন্য শ্রমিকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। রিকশা কিংবা ভ্যান পেলেই বেশি ভাড়া দিয়ে গাদাগাদি করে কারখানায় যাচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও পরিবহন না পেয়ে হেঁটে কারখানায় গেছেন অনেক শ্রমিক।
শ্রমিকরা জানিয়েছেন, লকডাউন ঘোষণার পর সকাল থেকে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। প্রতিবারই লকডাউনে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। রাস্তায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে কারখানা খোলা রেখে এ কেমন লকডাউন দেয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে রেহাই চান কারখানার শ্রমিকরা।
এদিকে লকডাউন বাস্তবায়নে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে টহল দিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের। সকাল থেকে তারা সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় টহল অব্যাহত রেখেছে। পোশাক শ্রমিকদের জন্য কিছু পরিবহন সড়কে দেখা গেলেও সকাল ১০টার পর থেকে দেখা যায়নি। রাস্তায় ছিল না কোন বাস, মিনিবাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি। অপরদিকে, কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জেও একই অবস্থা দেখা গেছে। যানবাহন না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। গতকাল সকালে জেলা শহর ও. শহরতলীর ফতুল্লার বিভিন্ন সড়কে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রিকশা ও ব্যক্তিগত কিছু গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে গার্মেন্টস কর্মীরা রিকশায় না চড়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
লকডাউনের প্রথম দিনে কঠোর ভূমিকায় রয়েছে প্রশাসন। সড়ক-মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এদিকে পরিবহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন কারখানামুখী শ্রমিকরা। সরকারঘোষিত কড়া বিধিনিষেধের মধ্যেও পোশাক কারখানা খোলা রেখে পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
সকালে সরেজমিনে শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের ম-লপাড়া, ২ নম্বর গেট, চাষাড়া চত্বর, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ সাইনবোর্ডসহ কয়েকটি স্থানে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। এছাড়া অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কগুলোতেও রয়েছে পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। সার্নসহ কয়েকটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জটলা। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে শ্রমিক পরিবহন না করায় শ্রমিকবাহী বাস থেকে থামিয়ে তাদের নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার সৈয়দপুরের ফকিরবাড়ি থাকেন জাকির হোসেন। চাকরি করেন সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলির পোশাক কারখানা নীট কনসার্নে। তিনি বলেন, ফকিরবাড়ি থেকে দ্বিগুণ ভাড়ায় শহরের ডিআইটি আসতে ইজিবাইকে উঠেন। পুলিশি বাধায় অর্ধেক রাস্তায় নেমে যেতে হয়। বাকি পথ হেঁটে এসে ডিআইটি থেকে কারখানার বাসে উঠেন। তবে সেই বাস থামিয়ে দেয়া হয় চাষাড়ায়। একই স্থানে সেন্সিবল গার্মেন্টসের যাত্রীবাহী তিনটি বাস থামিয়ে প্রায় দেড়শ’ শ্রমিককে নামিয়ে দেয়া হয়।
ক্ষুব্ধ-বিরক্ত পোশাক শ্রমিক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাদের ফ্যাক্টরি খোলা রাখছে কিন্তু গাড়িগুলো কেন বন্ধ রাখলো? সব যখন বন্ধ তাহলে ফ্যাক্টরিও বন্ধ দিক। আমাদের এভাবে হয়রানি করার কোন মানে নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, লকডাউনের নামে আমাগো মতো গরীবের যেন কষ্ট না দেয়।’
এছাড়া লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ রেখে পোশাক কারখানা খোলা রাখার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বৃষ্টির মধ্যেই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। গত বুধবার সকালে নগরের টাইগারপাস মোড় এলাকায় কয়েকশ’ শ্রমিক এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত নগরের টাইগারপাস, চৌমুহনী মোড় ও আগ্রাবাদে শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণপরিবহন বন্ধ রেখে পোশাক কারখানা খোলা রাখায় চাকরি বাঁচাতে তাদের রিকশা, ছোট যানবাহনে চড়তে হচ্ছে চড়া ভাড়ায়। অনেককে কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে কাজে যোগ দিতে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, অফিসের কর্মকর্তাদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা থাকলেও শ্রমিকদের হেঁটে বা কয়েক গুণ বাড়তি ভাড়ায় রিকশায় চড়ে অফিসে যেতে হচ্ছে।
তারা জানান, লকডাউনে সব প্রতিষ্ঠান কর্মী আনা-নেয়ার জন্য পরিবহন সুবিধা দেয়ার কথা। কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কোন সুবিধা দেয়া হয়নি। তাই তাদের কর্মস্থলে পৌঁছতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এরপরও তারা কর্মস্থলে পৌঁছতে দেরি করলে বেতন কাটা হয়। এর প্রতিবাদে গতকাল তারা রাস্তায় বিক্ষোভ করেন।