ব্যাংকে নজরদারি বাড়াতে প্রশাসন পুনর্গঠন করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংক খাতে অনিয়ম ঠেকাতে নজরদারি বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে তদারকির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলো পুনর্গঠন করা হয়েছে। ব্যাংক পরিদর্শনের চারটি বিভাগকে ভেঙে করা আটটি বিভাগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে চারটি বিভাগে কাজ করতেন ৬ জন জিএম, এখন আটটি বিভাগে কাজ করবেন ৮ জন মহাব্যবস্থাপক। এই বিভাগগুলোর প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, এই উদ্যোগে ব্যাংক খাতে অনিয়মের চেষ্টা শুরুতেই থামিয়ে দেয়া যাবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংক পরিদর্শন ও পরিপালন কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের বিদ্যমান ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১, ২, ৩ ও ৪ অবলুপ্ত করে নতুনভাবে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ নামে ৮টি বিভাগ গঠন করা হয়েছে। এর কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভাগগুলো ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর অনিয়মের ব্যাপারে নিয়মিত পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে কর্মী ও বিভাগের সংখ্যা কম থাকায় অনিয়ম ঠেকাতে কার্যকর তদারকি নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ জন্যই বিভাগ বাড়িয়ে নতুন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সব লোকবল। এসব বিভাগের ব্যাংকগুলো পরিদর্শনের আওতাও আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।

এর আগে ৪ মে এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের ৮টি বিভাগে যারা মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করবেন তাদের নাম উল্লেখ করা হয়। নতুন এ ব্যবস্থা গত ২৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়। এর ফলে পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তারা ব্যাংকগুলো পরিদর্শনের আরও বেশি ক্ষমতা পাবেন। তদারকির নতুন কাঠামোর বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে অবহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে উপমহাব্যবস্থাপক, যুগ্ম পরিচালক, উপ পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের পদ।

ব্যাংক তদারকি ও নীতি প্রণয়নে দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি)। এ বিভাগের কার্যক্রম দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি অংশ নীতি প্রণয়ন করবে। অপর অংশ তদারকি করবে। আগে পুরো বিভাগের দায়িত্বে একজন মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। এখন থাকবেন দুইজন। অন্যান্য জনবলও বাড়ানো হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তদারকিতে বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রযুক্তির ব্যবহারও করছে। নতুন কাঠামোতে সংশ্লিস্ট বিভাগগুলোর প্রযুক্তির সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে।

গত এক দশকে যতগুলো বড় বড় ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপের ৪ হাজার কোটি টাকা, ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৫ হাজার কোটি টাকা, অ্যাননটেক্স গ্রুপের সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা, সানমুন স্টার গ্রুপের ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে।

এসব ঘটনার বেশ কিছু আগেভাবে ইঙ্গিত পেলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা ঠেকাতে পারেনি। আর প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পরেও দায়ীদের বিরুদ্ধে এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি, যাতে টাকা উদ্ধার করা যায়।

বাংলাদেশের আর্থিক খাত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করে ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড (আইএমএফ)। ‘ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর স্ট্যাবিলিটি রিভিউ ২০২০’-এ এটা উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভায় জানানো হয়, আইএমএফ মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অটোনোমাস ক্যাপাসিটি ও সুপারভাইজারি অ্যাকশনে ঘাটতি আছে। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর ওপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের খবরদারি সমালোচনা করে আইএমএফ এসব ব্যাংকের মালিকানা ও সুপারভিশন আলাদা করার তাগিদ দেয়। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোকে কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক- এই দুইভাগে ভাগ করতে বলেছে। ওই সভায় বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজ উদ্যোগে আর্থিক খাতের ঝুঁকি চিহ্নিত করে তা দূর করতে নেয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে আইএমএফকে বলবে, গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকগুলোর ব্যাপারে সবসময় সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার, ০৬ জুলাই ২০২১ , ২২ আষাঢ় ১৪২৮ ২৪ জিলক্বদ ১৪৪২

ব্যাংকে নজরদারি বাড়াতে প্রশাসন পুনর্গঠন করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

ব্যাংক খাতে অনিয়ম ঠেকাতে নজরদারি বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে তদারকির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলো পুনর্গঠন করা হয়েছে। ব্যাংক পরিদর্শনের চারটি বিভাগকে ভেঙে করা আটটি বিভাগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে চারটি বিভাগে কাজ করতেন ৬ জন জিএম, এখন আটটি বিভাগে কাজ করবেন ৮ জন মহাব্যবস্থাপক। এই বিভাগগুলোর প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, এই উদ্যোগে ব্যাংক খাতে অনিয়মের চেষ্টা শুরুতেই থামিয়ে দেয়া যাবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংক পরিদর্শন ও পরিপালন কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের বিদ্যমান ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১, ২, ৩ ও ৪ অবলুপ্ত করে নতুনভাবে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ নামে ৮টি বিভাগ গঠন করা হয়েছে। এর কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভাগগুলো ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর অনিয়মের ব্যাপারে নিয়মিত পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে কর্মী ও বিভাগের সংখ্যা কম থাকায় অনিয়ম ঠেকাতে কার্যকর তদারকি নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ জন্যই বিভাগ বাড়িয়ে নতুন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সব লোকবল। এসব বিভাগের ব্যাংকগুলো পরিদর্শনের আওতাও আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।

এর আগে ৪ মে এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের ৮টি বিভাগে যারা মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করবেন তাদের নাম উল্লেখ করা হয়। নতুন এ ব্যবস্থা গত ২৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়। এর ফলে পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তারা ব্যাংকগুলো পরিদর্শনের আরও বেশি ক্ষমতা পাবেন। তদারকির নতুন কাঠামোর বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে অবহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে উপমহাব্যবস্থাপক, যুগ্ম পরিচালক, উপ পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের পদ।

ব্যাংক তদারকি ও নীতি প্রণয়নে দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি)। এ বিভাগের কার্যক্রম দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি অংশ নীতি প্রণয়ন করবে। অপর অংশ তদারকি করবে। আগে পুরো বিভাগের দায়িত্বে একজন মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। এখন থাকবেন দুইজন। অন্যান্য জনবলও বাড়ানো হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তদারকিতে বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রযুক্তির ব্যবহারও করছে। নতুন কাঠামোতে সংশ্লিস্ট বিভাগগুলোর প্রযুক্তির সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে।

গত এক দশকে যতগুলো বড় বড় ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপের ৪ হাজার কোটি টাকা, ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৫ হাজার কোটি টাকা, অ্যাননটেক্স গ্রুপের সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা, সানমুন স্টার গ্রুপের ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে।

এসব ঘটনার বেশ কিছু আগেভাবে ইঙ্গিত পেলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা ঠেকাতে পারেনি। আর প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পরেও দায়ীদের বিরুদ্ধে এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি, যাতে টাকা উদ্ধার করা যায়।

বাংলাদেশের আর্থিক খাত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করে ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড (আইএমএফ)। ‘ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর স্ট্যাবিলিটি রিভিউ ২০২০’-এ এটা উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভায় জানানো হয়, আইএমএফ মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অটোনোমাস ক্যাপাসিটি ও সুপারভাইজারি অ্যাকশনে ঘাটতি আছে। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর ওপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের খবরদারি সমালোচনা করে আইএমএফ এসব ব্যাংকের মালিকানা ও সুপারভিশন আলাদা করার তাগিদ দেয়। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোকে কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক- এই দুইভাগে ভাগ করতে বলেছে। ওই সভায় বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজ উদ্যোগে আর্থিক খাতের ঝুঁকি চিহ্নিত করে তা দূর করতে নেয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে আইএমএফকে বলবে, গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকগুলোর ব্যাপারে সবসময় সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংক।