চলতি অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৫১ বিলিয়ন ডলার

চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫১ বিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পণ্য খাতে ৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন এবং সেবা খাতে ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নাম দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোতে বিশেষ নীতি সহায়তা, রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ বিবেচনায় নিয়ে এই লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। চলমান মহামারীর মধ্যেও রপ্তানিমুখী খাতগুলো যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে তাদের এই লক্ষ্যমাত্রা খুবই বাস্তবসম্মত এবং অর্জন করার মতো বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, দেশের ২০২১-২০২২ অর্থবছরের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সময় দেশের এবং আন্তর্জাতিক সব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এর মধ্যে ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হবে এবং ৭ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সেবা খাতে রপ্তানি হবে। এবার ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের দেশের রপ্তানির ধারা অব্যাহত থাকলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।

রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব করোনা পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের রপ্তানি খাত সচল রয়েছে এবং রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে আমাদের রপ্তানি খাতকে প্রণোদনা দেয়াসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। রপ্তানি পণ্য সংখ্যা বাড়ানো এবং বাজার সম্প্রসারণে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ এসেছে। রপ্তানি বাড়ানোর জন্য রপ্তানিকারক এবং রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। আমরা সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোন কঠিন কাজ হবে না।

তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবসা বান্ধব সরকার দেশের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার বেশকিছু সেক্টরকে পণ্য রপ্তানিতে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আমাদের দেশের তৈরি পোশাকের পাশাপাশি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, আইসিটি, লেদার ও লেদারগুডস, প্লাস্টিক এবং কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

এ খাতগুলোকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আশা করা যায়, এ খাতগুলোর রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। দেশের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পিটিএ বা এফটিএ এর মতো বাণিজ্য চুক্তি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত কমার্সিয়াল কাউন্সিলররা কাজ করছেন।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিসহ কয়েকটি ইতিবাচক সূচকের দেখা মিলেছে। তবে সামগ্রিক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনও সাড়ে ৫ শতাংশ পিছিয়ে। গত সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো- ইপিবি সর্বশেষ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে তাতে মহামারীর সঙ্কটের মধ্যেও রপ্তানি আয়ে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর তথ্যই দেখা গেছে।

এতে দেখা যায়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট তিন হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের (৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এর আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে যা ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। ওই বছর ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের (৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরের নয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর এপ্রিলে মহামারীর প্রথম ধাক্কা এসেছিল। অন্যদিকে সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছর জুড়ে সংক্রমণের মধ্যে সময় পার করতে হয়েছে। সর্বশেষ এপ্রিল মাসেও কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে আবার লকডাউন শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে রপ্তানি আয়ের এই প্রবৃদ্ধিকে মহামারীর সঙ্গে খাপ খাওয়ার প্রচেষ্টায় সাফল্য হিসেবে দেখছেন রপ্তানিকারকরা। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চার হাজার ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও সার্বিক চিত্র দেখে অনেকটা আশান্বিত হওয়ার কথা জানান শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারকরা।

বুধবার, ০৭ জুলাই ২০২১ , ২৩ আষাঢ় ১৪২৮ ২৫ জিলক্বদ ১৪৪২

চলতি অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৫১ বিলিয়ন ডলার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫১ বিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পণ্য খাতে ৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন এবং সেবা খাতে ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নাম দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোতে বিশেষ নীতি সহায়তা, রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ বিবেচনায় নিয়ে এই লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। চলমান মহামারীর মধ্যেও রপ্তানিমুখী খাতগুলো যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে তাদের এই লক্ষ্যমাত্রা খুবই বাস্তবসম্মত এবং অর্জন করার মতো বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, দেশের ২০২১-২০২২ অর্থবছরের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সময় দেশের এবং আন্তর্জাতিক সব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এর মধ্যে ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হবে এবং ৭ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সেবা খাতে রপ্তানি হবে। এবার ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের দেশের রপ্তানির ধারা অব্যাহত থাকলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।

রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব করোনা পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের রপ্তানি খাত সচল রয়েছে এবং রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে আমাদের রপ্তানি খাতকে প্রণোদনা দেয়াসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। রপ্তানি পণ্য সংখ্যা বাড়ানো এবং বাজার সম্প্রসারণে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ এসেছে। রপ্তানি বাড়ানোর জন্য রপ্তানিকারক এবং রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। আমরা সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোন কঠিন কাজ হবে না।

তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবসা বান্ধব সরকার দেশের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার বেশকিছু সেক্টরকে পণ্য রপ্তানিতে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আমাদের দেশের তৈরি পোশাকের পাশাপাশি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, আইসিটি, লেদার ও লেদারগুডস, প্লাস্টিক এবং কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

এ খাতগুলোকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আশা করা যায়, এ খাতগুলোর রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। দেশের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পিটিএ বা এফটিএ এর মতো বাণিজ্য চুক্তি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত কমার্সিয়াল কাউন্সিলররা কাজ করছেন।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিসহ কয়েকটি ইতিবাচক সূচকের দেখা মিলেছে। তবে সামগ্রিক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনও সাড়ে ৫ শতাংশ পিছিয়ে। গত সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো- ইপিবি সর্বশেষ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে তাতে মহামারীর সঙ্কটের মধ্যেও রপ্তানি আয়ে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর তথ্যই দেখা গেছে।

এতে দেখা যায়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট তিন হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের (৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এর আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে যা ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। ওই বছর ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের (৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরের নয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর এপ্রিলে মহামারীর প্রথম ধাক্কা এসেছিল। অন্যদিকে সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছর জুড়ে সংক্রমণের মধ্যে সময় পার করতে হয়েছে। সর্বশেষ এপ্রিল মাসেও কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে আবার লকডাউন শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে রপ্তানি আয়ের এই প্রবৃদ্ধিকে মহামারীর সঙ্গে খাপ খাওয়ার প্রচেষ্টায় সাফল্য হিসেবে দেখছেন রপ্তানিকারকরা। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চার হাজার ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও সার্বিক চিত্র দেখে অনেকটা আশান্বিত হওয়ার কথা জানান শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারকরা।