নওগাঁ-বদলগাছী সড়ক বেহাল : নিত্য দুর্ঘটনা

সংস্কারের অভাবে নওগাঁ-বদলগাছী সড়কটির এখন বেহাল অবস্থা। পিচ উঠে সড়কটির অসংখ্য স্থানে ভাঙাচোরা, খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ছোটখাট ও বড় ধরনের দুর্ঘটনার পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে ভোগান্তি পোহাচ্ছে জনসাধারণ। বালু, ইট, পাথর ও পণ্যবাহী ভারি ট্রাক চলাচল করায় সড়কটির অধিকাংশ স্থানই দেবে গেছে। আবার সড়কটির বেশিরভাগ স্থানেই তৈরি হয়েছে খানাখন্দ।

বিধ্বস্ত এই রাস্তটি দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না হওয়ায় প্রতিদিনই এসব ভাঙাচোরা, খানাখন্দ ও গর্তের পরিমাণ বেড়ে সড়কটির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে গর্ত ও খানাখন্দে জমা পানিতে আর শুষ্ক সময়ে ধুলাবালির দুর্ভোগের মধ্য দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় বিভিন্ন উপজেলার জনগণদের। বুধবার সকালে আবারও টিএডটি মোড়ে একটি পাথর বোঝায় ট্রাক দেবে যায়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) নওগাঁ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ থেকে বদলগাছী উপজেলা সদর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার। সর্বশেষ ২০১৫ সালে সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজ করা হয়। এরপর সড়কটিতে আর কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। নওগাঁ থেকে এই সড়ক দিয়েই বদলগাছীর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার যেতে হয়। এছাড়া নওগাঁ পতœীতলা, সাপাহার, মহাদেবপুর, ধামইরহাট উপজেলাবাসীর চলাচলের প্রধান রাস্তা এটি। অপরদিকে নওগাঁ থেকে জয়পুর হাট জেলাতে যাওয়ার রাস্তাটিও এটি। রাস্তাটি দিয়ে ২২ টনের বেশি যান চলাচলের উপযোগী নয়, কিন্তু এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ টন ওজনের পণ্যবাহী যান বাহনও চলাচল করছে। প্রতিদিন এই প্রধান সড়কটি দিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার যানবাহন চলাচল করে।

সরেজিমনেগিয়ে দেখা যায়, সড়কটির পুরো ১৮ কিলোমিটার অংশজুড়েই অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। রাস্তাটির বেশ কিছু স্থানে দেবে গিয়ে এবং পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পড়ে ভারি পণ্যবাহী ট্রাক প্রায়ই আটকে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও রাস্তায় বড় বড় ঢিবি তৈরি হয়েছে। পাহাড়পুর বাজার, কীর্ত্তিপুরবাজার, বালুভরা, খলসী মোড়, চাংলা, বদলগাছী খাদ্যগুদাম মোড়, হাসপাতাল, টিএডটি ও চৌরাস্তার মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে সড়কটির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। খানাখন্দে ভরা সড়কটিতে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

বদলগাছী এলাকার বাসিন্দা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মিলটন বলেন, পাঁচ বছর আগেই সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্ত করা হয়। এরপর মাঝে মাঝে গর্ত ভরাট কাজ ছাড়া সড়কটিতে তেমন কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। ফলে সড়কটিতে যানবাহন চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। খানাখন্দের কারণে প্রায়ই অটোরিক্সার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়।

বুধবার সকালে নওগাঁ-বদলগাছী সড়কের টিএডটি মোড় এলাকায় দেখা যায়, একটি পাথরবাহী ট্রাক রাস্তার গর্তে আটকা পড়েছে। ট্রাকটি সেখানে আটকা পড়ায় তৈরি হয়েছে যানজট। গর্তে আটকা পড়া ওই ট্রাকের চালক নজরুল হোসেন বলেন, ‘সড়কের পিচ ও খোয়া উঠে গিয়ে কাচা মাটি বের হয়ে পড়েছে। এর ফলে ট্রাকের চাকা দেবে গেছে। এখন বারবার চেষ্টা করেও গাড়ি আর তুলতে পারছি না। পাথরসহ ট্রাকের ওজন প্রায় ৪০ টনের ওপরে হবে। এখন মনে হচ্ছে এই ট্রাক গর্ত থেকে তোলার জন্য ট্রাকের পাথর নামিয়ে ফেলতে হবে।’

গত বেশকিছু দিন আগে চাংলা নামক এলাকায় রাস্তায় খানাখন্দের কারণে একটি যাত্রী বোঝায় অটোচার্জার পেছনে আসা একটি ট্রাককে সাইট দিতে গিয়ে উল্টে যায়।

মায়ের দোয় নামক ট্রাক চালক সুমন ইসলাম বলেন, ‘সারা রাস্তায় গর্ত আর ভাঙাচোরা। রাস্তার এই অবস্থার কারণে আগে যেখানে নওগাঁ থেকে বদলগাছী যাইতে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট সময় লাগতো এখন সেখানে ৬০ থেকে ৭০ মিনিট সময় লাগতেছে। খানাখন্দের কারণে গাড়ি প্রচুর ঝাঁকুনি খায়। গাড়ির ঝাঁকুনিতে শরীর বিষের মতো ব্যথা হইয়া যায়।

নওগাঁ সওজ আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বলেন, এই আঞ্চলিক সড়কে ছয় চাকার পণ্যবাহী ট্রাকের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা (গাড়ির ওজনসহ) ১৫ টন এবং ১০ চাকার ট্রাকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ২২ টন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা গেছে, ট্রাকগুলো ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করছে। পণ্যসহ কোন কোন ট্রাকের ওজন ৩০ থেকে ৪০ টন হয়ে পড়ে।

ভারি পণ্যবাহী যানবাহনের কারণে সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। নওগাঁ-বদলগাছী সড়কটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ভারি পণ্যবাহী ট্রাক। আর অধিকাংশ ট্রাকই বালু ও পাথরবাহী। তিনি আরও বলেন, নওগাঁর-বদলগাছী রাস্তাটি ২৪ ফিট প্রশস্তকরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে একনেকে পাস হলইে দৃশ্যমান কাজ শুরু করা হবে। তবে আপাতত গাড়ির চাকা যাতে চলতে পারে সেজন্য রাস্তাটির বেশি খারাপ অংশে ইট-খোয়া ফেলা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১ , ২৪ আষাঢ় ১৪২৮ ২৬ জিলক্বদ ১৪৪২

নওগাঁ-বদলগাছী সড়ক বেহাল : নিত্য দুর্ঘটনা

প্রতিনিধি, বদলগাছী (নওগাঁ)

image

বদলগাছী (নওগাঁ) : নওগাঁ-বাদলগাছী বিধ্বস্ত সড়ক -সংবাদ

সংস্কারের অভাবে নওগাঁ-বদলগাছী সড়কটির এখন বেহাল অবস্থা। পিচ উঠে সড়কটির অসংখ্য স্থানে ভাঙাচোরা, খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ছোটখাট ও বড় ধরনের দুর্ঘটনার পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে ভোগান্তি পোহাচ্ছে জনসাধারণ। বালু, ইট, পাথর ও পণ্যবাহী ভারি ট্রাক চলাচল করায় সড়কটির অধিকাংশ স্থানই দেবে গেছে। আবার সড়কটির বেশিরভাগ স্থানেই তৈরি হয়েছে খানাখন্দ।

বিধ্বস্ত এই রাস্তটি দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না হওয়ায় প্রতিদিনই এসব ভাঙাচোরা, খানাখন্দ ও গর্তের পরিমাণ বেড়ে সড়কটির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে গর্ত ও খানাখন্দে জমা পানিতে আর শুষ্ক সময়ে ধুলাবালির দুর্ভোগের মধ্য দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় বিভিন্ন উপজেলার জনগণদের। বুধবার সকালে আবারও টিএডটি মোড়ে একটি পাথর বোঝায় ট্রাক দেবে যায়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) নওগাঁ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ থেকে বদলগাছী উপজেলা সদর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার। সর্বশেষ ২০১৫ সালে সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজ করা হয়। এরপর সড়কটিতে আর কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। নওগাঁ থেকে এই সড়ক দিয়েই বদলগাছীর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার যেতে হয়। এছাড়া নওগাঁ পতœীতলা, সাপাহার, মহাদেবপুর, ধামইরহাট উপজেলাবাসীর চলাচলের প্রধান রাস্তা এটি। অপরদিকে নওগাঁ থেকে জয়পুর হাট জেলাতে যাওয়ার রাস্তাটিও এটি। রাস্তাটি দিয়ে ২২ টনের বেশি যান চলাচলের উপযোগী নয়, কিন্তু এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ টন ওজনের পণ্যবাহী যান বাহনও চলাচল করছে। প্রতিদিন এই প্রধান সড়কটি দিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার যানবাহন চলাচল করে।

সরেজিমনেগিয়ে দেখা যায়, সড়কটির পুরো ১৮ কিলোমিটার অংশজুড়েই অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। রাস্তাটির বেশ কিছু স্থানে দেবে গিয়ে এবং পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পড়ে ভারি পণ্যবাহী ট্রাক প্রায়ই আটকে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও রাস্তায় বড় বড় ঢিবি তৈরি হয়েছে। পাহাড়পুর বাজার, কীর্ত্তিপুরবাজার, বালুভরা, খলসী মোড়, চাংলা, বদলগাছী খাদ্যগুদাম মোড়, হাসপাতাল, টিএডটি ও চৌরাস্তার মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে সড়কটির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। খানাখন্দে ভরা সড়কটিতে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

বদলগাছী এলাকার বাসিন্দা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মিলটন বলেন, পাঁচ বছর আগেই সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্ত করা হয়। এরপর মাঝে মাঝে গর্ত ভরাট কাজ ছাড়া সড়কটিতে তেমন কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। ফলে সড়কটিতে যানবাহন চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। খানাখন্দের কারণে প্রায়ই অটোরিক্সার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়।

বুধবার সকালে নওগাঁ-বদলগাছী সড়কের টিএডটি মোড় এলাকায় দেখা যায়, একটি পাথরবাহী ট্রাক রাস্তার গর্তে আটকা পড়েছে। ট্রাকটি সেখানে আটকা পড়ায় তৈরি হয়েছে যানজট। গর্তে আটকা পড়া ওই ট্রাকের চালক নজরুল হোসেন বলেন, ‘সড়কের পিচ ও খোয়া উঠে গিয়ে কাচা মাটি বের হয়ে পড়েছে। এর ফলে ট্রাকের চাকা দেবে গেছে। এখন বারবার চেষ্টা করেও গাড়ি আর তুলতে পারছি না। পাথরসহ ট্রাকের ওজন প্রায় ৪০ টনের ওপরে হবে। এখন মনে হচ্ছে এই ট্রাক গর্ত থেকে তোলার জন্য ট্রাকের পাথর নামিয়ে ফেলতে হবে।’

গত বেশকিছু দিন আগে চাংলা নামক এলাকায় রাস্তায় খানাখন্দের কারণে একটি যাত্রী বোঝায় অটোচার্জার পেছনে আসা একটি ট্রাককে সাইট দিতে গিয়ে উল্টে যায়।

মায়ের দোয় নামক ট্রাক চালক সুমন ইসলাম বলেন, ‘সারা রাস্তায় গর্ত আর ভাঙাচোরা। রাস্তার এই অবস্থার কারণে আগে যেখানে নওগাঁ থেকে বদলগাছী যাইতে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট সময় লাগতো এখন সেখানে ৬০ থেকে ৭০ মিনিট সময় লাগতেছে। খানাখন্দের কারণে গাড়ি প্রচুর ঝাঁকুনি খায়। গাড়ির ঝাঁকুনিতে শরীর বিষের মতো ব্যথা হইয়া যায়।

নওগাঁ সওজ আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বলেন, এই আঞ্চলিক সড়কে ছয় চাকার পণ্যবাহী ট্রাকের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা (গাড়ির ওজনসহ) ১৫ টন এবং ১০ চাকার ট্রাকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ২২ টন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা গেছে, ট্রাকগুলো ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করছে। পণ্যসহ কোন কোন ট্রাকের ওজন ৩০ থেকে ৪০ টন হয়ে পড়ে।

ভারি পণ্যবাহী যানবাহনের কারণে সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। নওগাঁ-বদলগাছী সড়কটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ভারি পণ্যবাহী ট্রাক। আর অধিকাংশ ট্রাকই বালু ও পাথরবাহী। তিনি আরও বলেন, নওগাঁর-বদলগাছী রাস্তাটি ২৪ ফিট প্রশস্তকরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে একনেকে পাস হলইে দৃশ্যমান কাজ শুরু করা হবে। তবে আপাতত গাড়ির চাকা যাতে চলতে পারে সেজন্য রাস্তাটির বেশি খারাপ অংশে ইট-খোয়া ফেলা হচ্ছে।