করোনার মধ্যেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৪৯ শতাংশ বেড়েছে

করোনার সংক্রমণ রোধে দেশে লকডাউন অবস্থা বিরাজ করেছে সারা বছরই। এর মধ্যেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি অতিতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। এই বৃদ্ধি সর্বশেষ এক মাসের বিক্রির হিসাব বাদ দিয়ে। সেই এক মাসের হিসাব যোগ করলে এই অঙ্ক আরও বড় হবে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামীতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি আরও বাড়বে।

সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, এর আগে সবচেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯০ হাজার ৩৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। তার আগে ২০১৭-১৮ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিক্রি হয় যথাক্রমে ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ও ৭৫ হাজার ১৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।

বছর পেরিয়ে গেলেও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর গত বৃহস্পতিবার বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসের (জুলাই-মে) সঞ্চয়পত্র বিক্রির তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, এই ১১ মাসে সব মিলিয়ে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৬১৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৩৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

এছাড়াও তথ্যে আরও দেখা গেছে, সর্বশেষ মে মাসে ৮ হাজার ১২৫ কোটি ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয় ৫ হাজার ৪৬৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। তার আগের মাস এপ্রিলে বিক্রি হয় ৫ হাজার ৮৮৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয় ৪ হাজার ৩৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫২৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। মার্চে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয় ৬ হাজার ৮৭১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার এখন জাতীয় পরিচয়পত্র এবং টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করেছে। তাছাড়া ব্যাংক হিসাব ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। এখন আর কেউ ভুয়া নামে বা একই ব্যক্তি বিভিন্ন নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কম, ৩ থেকে ৫ শতাংশের মতো। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে সুদ মিলছে ১১ থেকে ১২ শতাংশ। পুঁজিবাজারে কিছুদিন ধরে তেজি ভাব দেখা দিলেও এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। সব মিলিয়ে বেশি মুনাফার কারণেই সবাই সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে। বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে ১ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ফলে কমতে শুরু করে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরের শুরু থেকেই তা আবার বাড়তে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল।

বিক্রি কমাতে সর্বশেষ গত মে মাসে ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’ নামের একটি সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার। এখন থেকে কোন ব্যাংকের শাখা বা ডাকঘর থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’ কেনা যাবে না। শুধু জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন সঞ্চয় ব্যুরো থেকে এই সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে আরও দেখা যায়, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৮ হাজার ৭০৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আগস্টে বিক্রি হয় ৮ হাজার ৮৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে ১০ হাজার ৩৮৭ কোটি ৬২ লাখ টাকায় ওঠে। এর পরের তিন মাস অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বিক্রি হয় যথাক্রমে ৯ হাজার ২৪৯ কোটি ৮৬ লাখ, ৯ হাজার ৫৪৭ কোটি ৬২ লাখ এবং ৮ হাজার ২৩৩ কোটি ১৭ লাখ টাকার। জানুয়ারিতে বিক্রি হয় ১০ হাজার ৬৪৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, এক মাসের হিসাবে যা ছিল সবচেয়ে বেশি বিক্রি। ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি হয় ৯ হাজার ৬০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। সর্বশেষ মার্চে তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় উঠেছে।

রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৮ ২৯ জিলক্বদ ১৪৪২

করোনার মধ্যেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৪৯ শতাংশ বেড়েছে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

করোনার সংক্রমণ রোধে দেশে লকডাউন অবস্থা বিরাজ করেছে সারা বছরই। এর মধ্যেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি অতিতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। এই বৃদ্ধি সর্বশেষ এক মাসের বিক্রির হিসাব বাদ দিয়ে। সেই এক মাসের হিসাব যোগ করলে এই অঙ্ক আরও বড় হবে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামীতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি আরও বাড়বে।

সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, এর আগে সবচেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯০ হাজার ৩৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। তার আগে ২০১৭-১৮ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিক্রি হয় যথাক্রমে ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ও ৭৫ হাজার ১৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।

বছর পেরিয়ে গেলেও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর গত বৃহস্পতিবার বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসের (জুলাই-মে) সঞ্চয়পত্র বিক্রির তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, এই ১১ মাসে সব মিলিয়ে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৬১৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৩৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

এছাড়াও তথ্যে আরও দেখা গেছে, সর্বশেষ মে মাসে ৮ হাজার ১২৫ কোটি ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয় ৫ হাজার ৪৬৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। তার আগের মাস এপ্রিলে বিক্রি হয় ৫ হাজার ৮৮৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয় ৪ হাজার ৩৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫২৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। মার্চে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয় ৬ হাজার ৮৭১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার এখন জাতীয় পরিচয়পত্র এবং টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করেছে। তাছাড়া ব্যাংক হিসাব ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। এখন আর কেউ ভুয়া নামে বা একই ব্যক্তি বিভিন্ন নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কম, ৩ থেকে ৫ শতাংশের মতো। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে সুদ মিলছে ১১ থেকে ১২ শতাংশ। পুঁজিবাজারে কিছুদিন ধরে তেজি ভাব দেখা দিলেও এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। সব মিলিয়ে বেশি মুনাফার কারণেই সবাই সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে। বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে ১ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ফলে কমতে শুরু করে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরের শুরু থেকেই তা আবার বাড়তে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল।

বিক্রি কমাতে সর্বশেষ গত মে মাসে ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’ নামের একটি সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার। এখন থেকে কোন ব্যাংকের শাখা বা ডাকঘর থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’ কেনা যাবে না। শুধু জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন সঞ্চয় ব্যুরো থেকে এই সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে আরও দেখা যায়, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৮ হাজার ৭০৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আগস্টে বিক্রি হয় ৮ হাজার ৮৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে ১০ হাজার ৩৮৭ কোটি ৬২ লাখ টাকায় ওঠে। এর পরের তিন মাস অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বিক্রি হয় যথাক্রমে ৯ হাজার ২৪৯ কোটি ৮৬ লাখ, ৯ হাজার ৫৪৭ কোটি ৬২ লাখ এবং ৮ হাজার ২৩৩ কোটি ১৭ লাখ টাকার। জানুয়ারিতে বিক্রি হয় ১০ হাজার ৬৪৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, এক মাসের হিসাবে যা ছিল সবচেয়ে বেশি বিক্রি। ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি হয় ৯ হাজার ৬০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। সর্বশেষ মার্চে তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় উঠেছে।