করোনা ইউনিটে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সংকট

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনবলসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্কট বিরাজ করছে। করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে চলছে করোনা ইউনিটের চিকিৎসা। ইউনিটে নেই অতি জরুরী উচ্চ চাপের অক্সিজেন সরবরাহ যন্ত্র হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা। ফলে সঙ্কটাপন্ন শ্বাসকষ্টের করোনা রোগীসহ অন্যান্যরা কাক্সিক্ষত চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

জানা যায়, হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট চালু থাকলেও করোনা ইউনিটে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সুবিধা যুক্ত করা হয়নি। দিন দিন করোনার প্রকোপ বাড়লেও ওই যন্ত্র স্থাপনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি এখনো। ফলে করোনা রোগীসহ অন্য রোগীদের জন্য অক্সিজেন প্লান্ট কোন কাজে আসছে না। এই সুবিধার অভাবে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন করোনা রোগীর স্বজনরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে গতবছর করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৫ শয্যার করোনা ইউনিট প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে যুক্ত করা হয় সেন্টাল অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধা। অথচ ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণকালে করোনা ইউনিটে বিশেষজ্ঞ মেডিসিন চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা যন্ত্র না থাকায় করোনা চিকিৎসার সব ব্যবস্থা থাকলেও সঙ্কটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। এমন সব রোগীদের চিকিৎসা নিতে ৪০ কিলোমিটার দূরে রংপুর কোভিড-১৯ হাসপাতালমুখী হতে হচ্ছে। এতে রোগীর স্বজনরা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

সূত্র মতে, কোভডি-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে হাসপাতালে করোনা উপসর্গ ও মৌসুমি ফ্লু রোগীর আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন আউটডোর, ইনডোর ও ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে হাজারের মতো রোগী সেবা নিতে ভিড় করছেন। এরমধ্যে ১ জন মেডিকেল অফিসার ও ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা উপসর্গ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন। বর্তমানে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সৈয়দপুরে করোনা শনাক্ত রোগী বাড়লেও অধিকাংশ রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনা ইউনিটে এখনও রোগী ভর্তির চাপ নেই। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ মেডিসিন চিকিৎসক না থাকায় রোগী ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হচ্ছে। আর করোনা উপসর্গের রোগীদের র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষাসহ অন্যান্য ল্যাব পরীক্ষায় মাত্র ১ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকায় ফলাফল পেতে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা করোনা রোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে হাসপাতালে।

সূত্র জানায়, হাসপাতালের রোগীর তুলনায় সব পর্যায়ে জনবল সঙ্কট বিরাজ করছে। ৩০ জন ডাক্তারের জায়গায় কাজ করছেন মাত্র ২৪ জন চিকিৎসক। এরমধ্যে ৮ জন রয়েছেন সংযুক্তি চিকিৎসক। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বিঘিœত হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেবায় ৯০ জন নার্সের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৬০ নার্স। এছাড়াও সঙ্কট রয়েছে অন্যান্য পদের কর্মী। এরমধ্যে করোনা ইউনিট আলাদা করায় জনবল সঙ্কট আরও প্রকট হয়েছে।

জানতে চাইলে, সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ওমেদুল হাসান সরকার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সঙ্কটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সঙ্কটের মধ্যে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। তবে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা এবং বিশেষজ্ঞ মেডিসিন চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় কিছু অসুবিধা হচ্ছে। বর্তমান করোনাকালে আমরা (চিকিৎসকরা) চিকিৎসার চেয়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা জরুরী করণীয় বলে মনে করছি। এজন্য সবাইকে মাস্ক পরিধান এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। শুধু চিকিৎসা দিয়ে করোনা নির্মূল করা যাবে না। বর্তমানে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকানো না গেলে চিকিৎসা সেবাই ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৮ ২৯ জিলক্বদ ১৪৪২

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতাল

করোনা ইউনিটে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সংকট

প্রতিনিধি, সৈয়দপুর (নীলফামারী)

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনবলসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্কট বিরাজ করছে। করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে চলছে করোনা ইউনিটের চিকিৎসা। ইউনিটে নেই অতি জরুরী উচ্চ চাপের অক্সিজেন সরবরাহ যন্ত্র হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা। ফলে সঙ্কটাপন্ন শ্বাসকষ্টের করোনা রোগীসহ অন্যান্যরা কাক্সিক্ষত চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

জানা যায়, হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট চালু থাকলেও করোনা ইউনিটে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সুবিধা যুক্ত করা হয়নি। দিন দিন করোনার প্রকোপ বাড়লেও ওই যন্ত্র স্থাপনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি এখনো। ফলে করোনা রোগীসহ অন্য রোগীদের জন্য অক্সিজেন প্লান্ট কোন কাজে আসছে না। এই সুবিধার অভাবে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন করোনা রোগীর স্বজনরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে গতবছর করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৫ শয্যার করোনা ইউনিট প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে যুক্ত করা হয় সেন্টাল অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধা। অথচ ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণকালে করোনা ইউনিটে বিশেষজ্ঞ মেডিসিন চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা যন্ত্র না থাকায় করোনা চিকিৎসার সব ব্যবস্থা থাকলেও সঙ্কটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। এমন সব রোগীদের চিকিৎসা নিতে ৪০ কিলোমিটার দূরে রংপুর কোভিড-১৯ হাসপাতালমুখী হতে হচ্ছে। এতে রোগীর স্বজনরা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

সূত্র মতে, কোভডি-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে হাসপাতালে করোনা উপসর্গ ও মৌসুমি ফ্লু রোগীর আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন আউটডোর, ইনডোর ও ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে হাজারের মতো রোগী সেবা নিতে ভিড় করছেন। এরমধ্যে ১ জন মেডিকেল অফিসার ও ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা উপসর্গ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন। বর্তমানে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সৈয়দপুরে করোনা শনাক্ত রোগী বাড়লেও অধিকাংশ রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনা ইউনিটে এখনও রোগী ভর্তির চাপ নেই। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ মেডিসিন চিকিৎসক না থাকায় রোগী ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হচ্ছে। আর করোনা উপসর্গের রোগীদের র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষাসহ অন্যান্য ল্যাব পরীক্ষায় মাত্র ১ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকায় ফলাফল পেতে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা করোনা রোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে হাসপাতালে।

সূত্র জানায়, হাসপাতালের রোগীর তুলনায় সব পর্যায়ে জনবল সঙ্কট বিরাজ করছে। ৩০ জন ডাক্তারের জায়গায় কাজ করছেন মাত্র ২৪ জন চিকিৎসক। এরমধ্যে ৮ জন রয়েছেন সংযুক্তি চিকিৎসক। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বিঘিœত হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেবায় ৯০ জন নার্সের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৬০ নার্স। এছাড়াও সঙ্কট রয়েছে অন্যান্য পদের কর্মী। এরমধ্যে করোনা ইউনিট আলাদা করায় জনবল সঙ্কট আরও প্রকট হয়েছে।

জানতে চাইলে, সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ওমেদুল হাসান সরকার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সঙ্কটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সঙ্কটের মধ্যে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। তবে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা এবং বিশেষজ্ঞ মেডিসিন চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় কিছু অসুবিধা হচ্ছে। বর্তমান করোনাকালে আমরা (চিকিৎসকরা) চিকিৎসার চেয়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা জরুরী করণীয় বলে মনে করছি। এজন্য সবাইকে মাস্ক পরিধান এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। শুধু চিকিৎসা দিয়ে করোনা নির্মূল করা যাবে না। বর্তমানে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকানো না গেলে চিকিৎসা সেবাই ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।