চামড়া শিল্প বিষয়ে অনলাইন আলোচনায় সালমান এফ রহমান

কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করবে সরকার

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ‘তৈরি পোশাক শিল্পের অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের মতো দেশেই বিশেষ তদারকি প্রতিষ্ঠান গঠন করে সব কারখানাকে কমপ্লায়েন্স করা হবে। কমপ্লায়েন্স হওয়ার ক্ষেত্রে কারখানাগুলোকে সরকার দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়ন করবে। ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।’ গতকাল চামড়া শিল্প নিয়ে এক অনলাইন আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ‘রিভাইভিং দ্যা লেদার সেক্টর ইন দ্যা আফটারম্যাথ অব কভিড-১৯’ বিষয়ক আয়োজন করে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), দ্যা এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্স অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)।

ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে তিনটি পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আবদুর রাজ্জাক ও র‌্যাপিড-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউছুফ।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির পরিচাক ড. মিজানুর রহমান, ডিটিআইইডবি্লউটিপিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম জাহিদ হাসান ও ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জিনাত আরা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের শিল্প কারখানার বড় সমস্যা কমপ্লায়েন্স। তাজরীন ফ্যাশন ও রানা প্লাজার ঘটনার পর বিদেশি ক্রেতাদের চাপে তৈরি পোশাক শিল্পে কমপ্লায়েন্স হয়েছে। ব্র্যান্ডগুলোও স্বীকার করছে, বাংলাদেশের পোশাক কারখানা অধিকাংশক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স। তবে বড় সমস্যা স্থানীয় বাজারের জন্য যারা পণ্য উৎপাদন করেন তাদের। সর্বশেষ সেজান জুস কারখানায় আগুনের ঘটনা তার প্রমাণ। সব আন্তর্জাতিক পত্রিকায় এর শিরোনাম হয়েছে যা আমাদের জন্য নেতিবাচক। এখন প্রশ্ন হলো স্থানীয় শিল্প কারখানাকে কিভাবে কমপায়েন্স করব। আমি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের মতো কিছু একটা করতে হবে। কমপায়েন্স করার জন্য কারখানাগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করতে হবে। সরকার সেক্ষেত্রে কারখানাগুলোকে দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়ন করবে। ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। যেসব স্থানীয় শিল্প-কারখানার কমপায়েন্স থাকবে না তাদের পণ্য বাজারে বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হবে।

সাভার চামড়া শিল্পনগরী প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা এখনও এটাকে কমপায়েন্স করতে পারিনি। সিইটিপির নকশা যারা করেছিল, তারা কাজটি সঠিকভাবে করেনি। আমরা অত্যাধিক মাত্রায় বুয়েটনির্ভর হয়েছি। কিন্তু বুয়েট আমাদের সাংঘাতিকভাবে ভুল পথে হাঁটিয়েছে। বারবার ভুল নকশা করেও তা স্বীকার করেনি। আমাদের ঘুরিয়েছে। তবে যেহেতু একটা অবকাঠামো হয়ে গেছে, তা ভেঙে ফেলা যাবে না। এখন এটাকে সংস্কার করে এগোতে হবে। আমাদের পরিকল্পনা বিদেশি কাউকে দিয়ে সিইটিপির প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করা। আমি এরই মধ্যে একটি উদ্যোগ নিয়েছি। একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে বলেছি এর দায়িত্ব নিতে। তাদের বলেছি, এটাকে কিভাবে এডবি্লউজি-এর সনদ পাওয়ার ব্যবস্থা করা যায় তা করো। তারা এরই মধ্যে সাভার সিইটিপি নিয়ে কাজ করছে। শীঘ্রই তারা আমাকে একটা প্রেজেন্টেশন দেবে। বাণিজ্য মন্ত্রণায়কে বলেছি তারা যেন বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে দেখে।’

গার্মেন্টসের মতোই সব খাতে সুবিধা দেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘গার্মেন্টস যে সুবিধা পায় তা পেলে অন্য খাতও ভালো করবে এটা আমরা সবাই বুঝি। এ বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী একমত। এটার ওপর আমরা শতভাগ সমর্থন দিয়ে কাজ করছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব তা নিয়ে যেন কাজ করা হয়।’

অনুষ্ঠানে ড. আবদুর রাজ্জাক তার প্রবন্ধে বলেন, ‘করোনার এই সময়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য ১০ শতাংশ কমলেও চামড়াজাত পণ্যের বাণিজ্য কমেছে ২২ শতাংশ। অর্থাৎ চামড়াজাত পণ্য খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। অন্যদিকে বৈশ্বিকভাবেই নন লেদার পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। পাশাপাশি কাঁচামালের দামও বাড়ছে। ফলে চামড়া শিল্পের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে।’

এসব চ্যালেঞ্জের কারণে চীন থেকে বড় বড় ব্র্যান্ডের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা দারুণ বলে মনে করেন তিনি। এজন্য ট্যানারি শিল্পনগরীকে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলা ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।

আবু ইউসুফ বলেন, ‘চামড়াজাত পণ্যের তিনটি আইটেমে (লেদার, লেদারগুডস ও ফুটওয়্যার) গত বছর প্রবৃদ্ধি ছিল। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য সর্বস্তরে কমপায়েন্স হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। পশু পালন, পশু জবাই, কাঁচা চামড়া প্রস্তুতকরণ ও ট্যানারি কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’

তিনি জানান, এশিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কমপক্ষে ১৫টি ট্যানারি কারখানাকে এলডবি্লউজির সনদ পাওয়ার ব্যাপার প্রয়াজনীয় কার্যক্রম চলছে।

আরেক প্রবন্ধে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘গত বছর চামড়াজাত পণ্যে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ২০১৯ সালের তুলনায় এটি ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম। তবে বৈশ্বিক বাজারে বিপুল চাহিদা রয়েছে। বিশ্বে প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়ন ডলারের জুতা বিক্রি হয়। এর চাহিদা কমবে না। ব্র্যান্ডগুলো এখনও টেকসই লেদার চায়। তবে লজিস্টিক ও শিপিং ব্যয় বৃদ্ধি আমাদের চামড়া শিল্পের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।’ শিল্প ব্যবস্থাপনা যথাযথ হলে চামড়া শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানির সময়ে চামড়া ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো করতে হবে। দেশের কারখানাগুলোকে এলডবি্লউজি সনদ পাইয়ে দিতে একটি রোডম্যাপ তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।

মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘গত বছর যে প্রবৃদ্ধি চামড়া শিল্প দেখেছে তা টেকসই করতে হবে। এজন্য একটা মহা পরিকল্পনা নেয়ার প্রয়োজন। কমপ্লায়েন্স ছাড়া ব্যবসা করা যাবে না, এটা নিশ্চিত করতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমাদের অনেক কাঁচামাল থাকার পরও চামড়া শিল্প পিছিয়ে থাকার কারণটা বের করতে হবে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তৈরি পোশাকের মতো এ শিল্পের ক্ষেত্রেও সমান সুযোগ দিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’

রপ্তানির ক্ষেত্রে এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি ও শুল্কমুক্ত প্রবশাধিকারের চুক্তির রয়েছে। ওষুধ শিল্পসহ কয়েকটি খাতে বিদ্যমান সুবিধা ২০২৬ সালের পরও যেন অব্যাহত থাকে সে আলোচনা চলছে। আলোচনায় চামড়া শিল্প খাতের উদ্যোক্তা, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার নীতি-নির্ধারক, শ্রমিক প্রতিনিধি, দাতা সংস্থা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৮ ৩ জিলহজ্জ ১৪৪২

চামড়া শিল্প বিষয়ে অনলাইন আলোচনায় সালমান এফ রহমান

কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করবে সরকার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ‘তৈরি পোশাক শিল্পের অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের মতো দেশেই বিশেষ তদারকি প্রতিষ্ঠান গঠন করে সব কারখানাকে কমপ্লায়েন্স করা হবে। কমপ্লায়েন্স হওয়ার ক্ষেত্রে কারখানাগুলোকে সরকার দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়ন করবে। ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।’ গতকাল চামড়া শিল্প নিয়ে এক অনলাইন আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ‘রিভাইভিং দ্যা লেদার সেক্টর ইন দ্যা আফটারম্যাথ অব কভিড-১৯’ বিষয়ক আয়োজন করে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), দ্যা এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্স অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)।

ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে তিনটি পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আবদুর রাজ্জাক ও র‌্যাপিড-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউছুফ।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির পরিচাক ড. মিজানুর রহমান, ডিটিআইইডবি্লউটিপিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম জাহিদ হাসান ও ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জিনাত আরা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের শিল্প কারখানার বড় সমস্যা কমপ্লায়েন্স। তাজরীন ফ্যাশন ও রানা প্লাজার ঘটনার পর বিদেশি ক্রেতাদের চাপে তৈরি পোশাক শিল্পে কমপ্লায়েন্স হয়েছে। ব্র্যান্ডগুলোও স্বীকার করছে, বাংলাদেশের পোশাক কারখানা অধিকাংশক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স। তবে বড় সমস্যা স্থানীয় বাজারের জন্য যারা পণ্য উৎপাদন করেন তাদের। সর্বশেষ সেজান জুস কারখানায় আগুনের ঘটনা তার প্রমাণ। সব আন্তর্জাতিক পত্রিকায় এর শিরোনাম হয়েছে যা আমাদের জন্য নেতিবাচক। এখন প্রশ্ন হলো স্থানীয় শিল্প কারখানাকে কিভাবে কমপায়েন্স করব। আমি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের মতো কিছু একটা করতে হবে। কমপায়েন্স করার জন্য কারখানাগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করতে হবে। সরকার সেক্ষেত্রে কারখানাগুলোকে দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়ন করবে। ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। যেসব স্থানীয় শিল্প-কারখানার কমপায়েন্স থাকবে না তাদের পণ্য বাজারে বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হবে।

সাভার চামড়া শিল্পনগরী প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা এখনও এটাকে কমপায়েন্স করতে পারিনি। সিইটিপির নকশা যারা করেছিল, তারা কাজটি সঠিকভাবে করেনি। আমরা অত্যাধিক মাত্রায় বুয়েটনির্ভর হয়েছি। কিন্তু বুয়েট আমাদের সাংঘাতিকভাবে ভুল পথে হাঁটিয়েছে। বারবার ভুল নকশা করেও তা স্বীকার করেনি। আমাদের ঘুরিয়েছে। তবে যেহেতু একটা অবকাঠামো হয়ে গেছে, তা ভেঙে ফেলা যাবে না। এখন এটাকে সংস্কার করে এগোতে হবে। আমাদের পরিকল্পনা বিদেশি কাউকে দিয়ে সিইটিপির প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করা। আমি এরই মধ্যে একটি উদ্যোগ নিয়েছি। একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে বলেছি এর দায়িত্ব নিতে। তাদের বলেছি, এটাকে কিভাবে এডবি্লউজি-এর সনদ পাওয়ার ব্যবস্থা করা যায় তা করো। তারা এরই মধ্যে সাভার সিইটিপি নিয়ে কাজ করছে। শীঘ্রই তারা আমাকে একটা প্রেজেন্টেশন দেবে। বাণিজ্য মন্ত্রণায়কে বলেছি তারা যেন বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে দেখে।’

গার্মেন্টসের মতোই সব খাতে সুবিধা দেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘গার্মেন্টস যে সুবিধা পায় তা পেলে অন্য খাতও ভালো করবে এটা আমরা সবাই বুঝি। এ বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী একমত। এটার ওপর আমরা শতভাগ সমর্থন দিয়ে কাজ করছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব তা নিয়ে যেন কাজ করা হয়।’

অনুষ্ঠানে ড. আবদুর রাজ্জাক তার প্রবন্ধে বলেন, ‘করোনার এই সময়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য ১০ শতাংশ কমলেও চামড়াজাত পণ্যের বাণিজ্য কমেছে ২২ শতাংশ। অর্থাৎ চামড়াজাত পণ্য খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। অন্যদিকে বৈশ্বিকভাবেই নন লেদার পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। পাশাপাশি কাঁচামালের দামও বাড়ছে। ফলে চামড়া শিল্পের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে।’

এসব চ্যালেঞ্জের কারণে চীন থেকে বড় বড় ব্র্যান্ডের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা দারুণ বলে মনে করেন তিনি। এজন্য ট্যানারি শিল্পনগরীকে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলা ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।

আবু ইউসুফ বলেন, ‘চামড়াজাত পণ্যের তিনটি আইটেমে (লেদার, লেদারগুডস ও ফুটওয়্যার) গত বছর প্রবৃদ্ধি ছিল। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য সর্বস্তরে কমপায়েন্স হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। পশু পালন, পশু জবাই, কাঁচা চামড়া প্রস্তুতকরণ ও ট্যানারি কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’

তিনি জানান, এশিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কমপক্ষে ১৫টি ট্যানারি কারখানাকে এলডবি্লউজির সনদ পাওয়ার ব্যাপার প্রয়াজনীয় কার্যক্রম চলছে।

আরেক প্রবন্ধে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘গত বছর চামড়াজাত পণ্যে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ২০১৯ সালের তুলনায় এটি ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম। তবে বৈশ্বিক বাজারে বিপুল চাহিদা রয়েছে। বিশ্বে প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়ন ডলারের জুতা বিক্রি হয়। এর চাহিদা কমবে না। ব্র্যান্ডগুলো এখনও টেকসই লেদার চায়। তবে লজিস্টিক ও শিপিং ব্যয় বৃদ্ধি আমাদের চামড়া শিল্পের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।’ শিল্প ব্যবস্থাপনা যথাযথ হলে চামড়া শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানির সময়ে চামড়া ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো করতে হবে। দেশের কারখানাগুলোকে এলডবি্লউজি সনদ পাইয়ে দিতে একটি রোডম্যাপ তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।

মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘গত বছর যে প্রবৃদ্ধি চামড়া শিল্প দেখেছে তা টেকসই করতে হবে। এজন্য একটা মহা পরিকল্পনা নেয়ার প্রয়োজন। কমপ্লায়েন্স ছাড়া ব্যবসা করা যাবে না, এটা নিশ্চিত করতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমাদের অনেক কাঁচামাল থাকার পরও চামড়া শিল্প পিছিয়ে থাকার কারণটা বের করতে হবে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তৈরি পোশাকের মতো এ শিল্পের ক্ষেত্রেও সমান সুযোগ দিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’

রপ্তানির ক্ষেত্রে এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি ও শুল্কমুক্ত প্রবশাধিকারের চুক্তির রয়েছে। ওষুধ শিল্পসহ কয়েকটি খাতে বিদ্যমান সুবিধা ২০২৬ সালের পরও যেন অব্যাহত থাকে সে আলোচনা চলছে। আলোচনায় চামড়া শিল্প খাতের উদ্যোক্তা, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার নীতি-নির্ধারক, শ্রমিক প্রতিনিধি, দাতা সংস্থা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।