স্কুলের ছাত্রাবাসের বরাদ্দ জমি ব্যবসায়ীদের বন্দোবস্তের পাঁয়তারা

বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী লক্ষীপুর উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৮৯ সালে তৎকালীন ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার আজিজুল হক এই বিদ্যালয়টির ছাত্রাবাসের জন্য বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী দুলালকান্দি বাজারের সরকারি ৬০ শতাংশ জমি প্রদানের সুপারিশ করেন। ওই ৬০ শতাংশ জমি বর্তমানে স্থানীয় ভূমি অফিস বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের জন্য না দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে একসনা বন্দোবস্ত দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে ৬০ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে বন্দোবস্ত দেয়ার দাবি জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নরসিংদীর বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল ভূঞা।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রেভিনিউ) শ্যামল চন্দ্র বসাক বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন। জানা যায়, ১৯৪৯ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়টি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯৬৬ সালে বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী দুলালকান্দি বাজারের ১ দশমিক ৫৪ একর জমি বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের নামে বন্দোবস্ত প্রদান করে বিদ্যালয়ের নামে একটি বন্দোবস্ত দলিল করে দেয় তৎকালীন প্রশাসন। যার দলিল নং-৬৩৯৮/৬.৭.১৯৬৬। দলিল সম্পাদন করার পর ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ওই জমি বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের নামে লিপিবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে বন্দোবস্ত দলিলে দাতার স্বাক্ষর সংক্রান্ত ত্রুটি থাকা ও তৎকালীন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এবং ওই জমির নিয়মিত খাজনা পরিশোধ না করায় ১৯৮৯ সালের দলিলটি বাতিলের সুপারিশ করে তৎকালীন ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার আজিজুল হক বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের জন্য ১ দশমিক ৫৪ একর জমির পরিবর্তে ৬০ শতাংশ জমি প্রদানের জন্য সুপারিশ করেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ বর্তমানে বিদ্যালয়ের সুপারিশকৃত ৬০ শতাংশ জমি স্থানীয় ভূমি অফিস বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের জন্য প্রদান না করে এলাকার প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্দোবস্ত দিচ্ছেন। তবে উপজেলা ভূমি অফিস বলছে, দুলালকান্দি বাজার ও কাচারি বাড়ি শ্রেণির ১ দশমিক ৫৪ একর ভূমি সিএস ও এসএ জরিপে সরকারের নামে কিন্তু আরএস রেকর্ডে ভুলবশত লক্ষ্মীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছিল। পরবর্তীকালে আদালতে রেকর্ড বাতিলের মামলা দায়ের করা হলে আদালত ওই জমি সরকারের নামে রেকর্ডভুক্ত করার আদেশ প্রদান করেন। বিদ্যালয়ের নামে যে বন্দোবস্ত দলিল ছিল সেটি আগেই নানা ত্রুটির কারণে গ্রহণযোগ্য হয়নি। রেকর্ড বাতিল আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ১ দশমিক ৫৪ একর জমি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক ওই জমির রেকর্ড সংশোধন করে ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং পেরিফেরিভুক্ত বাজার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভূমি অফিসের মতে, ওই জমিতে লক্ষ্মীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কোন দখল বা স্বত্ব বিদ্যমান নেই। এ কারণে বর্তমানে সরকারি দখল বজায় রাখা এবং সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে চান্দিনা ভিটি বন্দোবস্ত নীতিমালা অনুসারে ওই জমি চান্দিনা ভিটি বন্দোবস্ত কার্যক্রম চলমান। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, বিদ্যালয়ের আগের কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে নিয়মিত খাজনা কর প্রদান করা হয়নি। ছাত্রাবাসের জন্য এবং গরিব শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ওই জমি বিদ্যালয়ের নামে বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বেলাল হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের চিঠি পেয়েছি। মামলার কাগজপত্র তুলে এবং তদন্ত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন দিয়ে দেব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, জমির শ্রেণি কাচারীবাড়ি ও বাজার- এ কারণে বিদ্যালয়কে বন্দোবস্ত দেয়া যাচ্ছে না। তবে ব্যবসায়ীদের মাঝে একসনা বন্দোবস্ত দেয়া যায়।

বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৮ ৩ জিলহজ্জ ১৪৪২

স্কুলের ছাত্রাবাসের বরাদ্দ জমি ব্যবসায়ীদের বন্দোবস্তের পাঁয়তারা

প্রদীপ কুমার দেবনাথ, বেলাব (নরসিংদী)

বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী লক্ষীপুর উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৮৯ সালে তৎকালীন ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার আজিজুল হক এই বিদ্যালয়টির ছাত্রাবাসের জন্য বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী দুলালকান্দি বাজারের সরকারি ৬০ শতাংশ জমি প্রদানের সুপারিশ করেন। ওই ৬০ শতাংশ জমি বর্তমানে স্থানীয় ভূমি অফিস বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের জন্য না দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে একসনা বন্দোবস্ত দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে ৬০ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে বন্দোবস্ত দেয়ার দাবি জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নরসিংদীর বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল ভূঞা।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রেভিনিউ) শ্যামল চন্দ্র বসাক বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন। জানা যায়, ১৯৪৯ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়টি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯৬৬ সালে বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী দুলালকান্দি বাজারের ১ দশমিক ৫৪ একর জমি বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের নামে বন্দোবস্ত প্রদান করে বিদ্যালয়ের নামে একটি বন্দোবস্ত দলিল করে দেয় তৎকালীন প্রশাসন। যার দলিল নং-৬৩৯৮/৬.৭.১৯৬৬। দলিল সম্পাদন করার পর ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ওই জমি বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের নামে লিপিবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে বন্দোবস্ত দলিলে দাতার স্বাক্ষর সংক্রান্ত ত্রুটি থাকা ও তৎকালীন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এবং ওই জমির নিয়মিত খাজনা পরিশোধ না করায় ১৯৮৯ সালের দলিলটি বাতিলের সুপারিশ করে তৎকালীন ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার আজিজুল হক বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের জন্য ১ দশমিক ৫৪ একর জমির পরিবর্তে ৬০ শতাংশ জমি প্রদানের জন্য সুপারিশ করেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ বর্তমানে বিদ্যালয়ের সুপারিশকৃত ৬০ শতাংশ জমি স্থানীয় ভূমি অফিস বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের জন্য প্রদান না করে এলাকার প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্দোবস্ত দিচ্ছেন। তবে উপজেলা ভূমি অফিস বলছে, দুলালকান্দি বাজার ও কাচারি বাড়ি শ্রেণির ১ দশমিক ৫৪ একর ভূমি সিএস ও এসএ জরিপে সরকারের নামে কিন্তু আরএস রেকর্ডে ভুলবশত লক্ষ্মীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছিল। পরবর্তীকালে আদালতে রেকর্ড বাতিলের মামলা দায়ের করা হলে আদালত ওই জমি সরকারের নামে রেকর্ডভুক্ত করার আদেশ প্রদান করেন। বিদ্যালয়ের নামে যে বন্দোবস্ত দলিল ছিল সেটি আগেই নানা ত্রুটির কারণে গ্রহণযোগ্য হয়নি। রেকর্ড বাতিল আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ১ দশমিক ৫৪ একর জমি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক ওই জমির রেকর্ড সংশোধন করে ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং পেরিফেরিভুক্ত বাজার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভূমি অফিসের মতে, ওই জমিতে লক্ষ্মীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কোন দখল বা স্বত্ব বিদ্যমান নেই। এ কারণে বর্তমানে সরকারি দখল বজায় রাখা এবং সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে চান্দিনা ভিটি বন্দোবস্ত নীতিমালা অনুসারে ওই জমি চান্দিনা ভিটি বন্দোবস্ত কার্যক্রম চলমান। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, বিদ্যালয়ের আগের কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে নিয়মিত খাজনা কর প্রদান করা হয়নি। ছাত্রাবাসের জন্য এবং গরিব শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ওই জমি বিদ্যালয়ের নামে বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বেলাল হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের চিঠি পেয়েছি। মামলার কাগজপত্র তুলে এবং তদন্ত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন দিয়ে দেব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, জমির শ্রেণি কাচারীবাড়ি ও বাজার- এ কারণে বিদ্যালয়কে বন্দোবস্ত দেয়া যাচ্ছে না। তবে ব্যবসায়ীদের মাঝে একসনা বন্দোবস্ত দেয়া যায়।