মসলার বাজার ক্রেতাশূন্য

ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ঈদের আগে মাংস রান্নার অপরিহার্য উপকরণ বিভিন্ন মসলার চাহিদা বেড়ে যায় বলে দামও বেড়ে যায়। কিন্তু এবার মাত্র চারদিন বাকি থাকলেও রাজধানীর বাজারে মসলার দরে তেমন একটা উঠানামা দেখা যাচ্ছে না। আবার মসলার বাজারে ক্রেতা তুলনামূলক কম।

বিক্রেতারা বলছেন, গরম মসলাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলার একটা বড় অংশ কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আমদানি করা হয়। এবার করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের মধ্যেও আমদানি হয়েছে। কিন্তু মানুষ চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মসলা তেমন একটা বিক্রি হয়নি। চাহিদা কম কিন্তু সরবরাহ বেশি। তাই দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

তবে ভোক্তাদের দাবি, গত কয়েক দিনে আদা ও রসুনের দাম বেশ বেড়েছে, অন্যান্য গরম মসলার দামও বাজারে কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।

মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা রফিক বলেন, ‘গত তিন থেকে চার মাস ধরে দেখছি, বাজারে গরম মসলার দাম একটা জায়গাতে রয়েছে। এবার বড় কথা হলো- কোরবানির ঈদ এগিয়ে এলেও মসলার দাম সেই অর্থে বাড়েনি।’

তবে বাজারে হঠাৎ করে আদা-রসুনের দাম বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোরবানি এলে মাংসে যেহেতু পেঁয়াজ, রসুন, আদা একটু বেশি লাগে, সে মুহূর্তে এগুলোর দাম বাড়ানো মানে আমাদের হিসাবের বাইরে আরেকটু ব্যয় বেড়ে যাওয়া।’

গত শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি আদা ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় এবং চীনা আদা ২০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। আর রসুন দেশি জাতের দাম কিছুটা কম থাকলেও আমদানি করা চীনা রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যান্য মসলার দাম নিয়ে মহাখালীর বাসস্টেশন এলাকার মার্জিয়া ডিপার্মেন্ট স্টোরের বিক্রেতা খোরশেদ আলম জানান, তারা খুচরা পর্যায়ে জিরা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, চারুচিনি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, লবঙ্গ এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, এলাচ আড়াই হাজার টাকা থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।

এছাড়া শুকনো মরিচের কেজি ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা, হলুদ ১৫০ থেকে ২৮০ টাকা, ধনে ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ঈদে মসলার বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এই দোকানের মালিক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে যে পরিমাণ মসলা মজুদ আছে, সে অনুযায়ী বিক্রি তেমন নেই। লকডাউনে আমদানি বন্ধ হয়নি, কিন্তু বিক্রি ছিল না বললেই চলে। এখনও বহু আমদানিকারকের কাছে মসলা মজুদ আছে। ঈদ ঘনিয়ে এলে আগে অনেক মানুষ সারা বছরের মসলা একসঙ্গে কিনত, এখন আর সে অবস্থা দেখা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘যেসব খুচরা দোকানি ৫-১০ কেজি করে মসলা নিয়ে যেত, তারাই এখন এক বা দুই কেজির বেশি নিচ্ছেন না। তারাও তাদের বিক্রি কম বলে জানাচ্ছেন।’

পাইকারিতে কেজিপ্রতি ভারতীয় জিরা ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, ইরানি জিরা ৩৬০ টাকা, দারুচিনি ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকা, লবঙ্গ ৯৫০ থেকে এক হাজার, এলাচ এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘লকডাউনের কারণে সব ধরনের মসলার দাম এখন কম। গত দুই সপ্তাহের লকডাউনের কারণে মসলা অল্প-স্বল্প বিক্রি হয়েছে। লকডাউন শিথিল হলেও এই দুই দিনে মফস্বল থেকে এখনও ব্যবসায়ীরা সেভাবে আসছেন না বা অর্ডারও করছেন না।’

চারদিন পর কোরবানির ঈদ হলেও বিক্রি নেই বলে পাইকারি বাজারে অধিকাংশ মসলার দাম কিছুটা কমেছে বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী নেতা।

এদিকে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার পাইকারি বিক্রেতা আবদুল কুদ্দুস জানান, তারা পাইকারি দরে দেশি পেঁয়াজ ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, বার্মিজ আদা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চায়না আদা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। চায়না রসুন ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

রবিবার, ১৮ জুলাই ২০২১ , ৩ শ্রাবন ১৪২৮ ৭ জিলহজ ১৪৪২

মসলার বাজার ক্রেতাশূন্য

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ঈদের আগে মাংস রান্নার অপরিহার্য উপকরণ বিভিন্ন মসলার চাহিদা বেড়ে যায় বলে দামও বেড়ে যায়। কিন্তু এবার মাত্র চারদিন বাকি থাকলেও রাজধানীর বাজারে মসলার দরে তেমন একটা উঠানামা দেখা যাচ্ছে না। আবার মসলার বাজারে ক্রেতা তুলনামূলক কম।

বিক্রেতারা বলছেন, গরম মসলাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলার একটা বড় অংশ কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আমদানি করা হয়। এবার করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের মধ্যেও আমদানি হয়েছে। কিন্তু মানুষ চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মসলা তেমন একটা বিক্রি হয়নি। চাহিদা কম কিন্তু সরবরাহ বেশি। তাই দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

তবে ভোক্তাদের দাবি, গত কয়েক দিনে আদা ও রসুনের দাম বেশ বেড়েছে, অন্যান্য গরম মসলার দামও বাজারে কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।

মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা রফিক বলেন, ‘গত তিন থেকে চার মাস ধরে দেখছি, বাজারে গরম মসলার দাম একটা জায়গাতে রয়েছে। এবার বড় কথা হলো- কোরবানির ঈদ এগিয়ে এলেও মসলার দাম সেই অর্থে বাড়েনি।’

তবে বাজারে হঠাৎ করে আদা-রসুনের দাম বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোরবানি এলে মাংসে যেহেতু পেঁয়াজ, রসুন, আদা একটু বেশি লাগে, সে মুহূর্তে এগুলোর দাম বাড়ানো মানে আমাদের হিসাবের বাইরে আরেকটু ব্যয় বেড়ে যাওয়া।’

গত শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি আদা ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় এবং চীনা আদা ২০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। আর রসুন দেশি জাতের দাম কিছুটা কম থাকলেও আমদানি করা চীনা রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যান্য মসলার দাম নিয়ে মহাখালীর বাসস্টেশন এলাকার মার্জিয়া ডিপার্মেন্ট স্টোরের বিক্রেতা খোরশেদ আলম জানান, তারা খুচরা পর্যায়ে জিরা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, চারুচিনি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, লবঙ্গ এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, এলাচ আড়াই হাজার টাকা থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।

এছাড়া শুকনো মরিচের কেজি ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা, হলুদ ১৫০ থেকে ২৮০ টাকা, ধনে ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ঈদে মসলার বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এই দোকানের মালিক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে যে পরিমাণ মসলা মজুদ আছে, সে অনুযায়ী বিক্রি তেমন নেই। লকডাউনে আমদানি বন্ধ হয়নি, কিন্তু বিক্রি ছিল না বললেই চলে। এখনও বহু আমদানিকারকের কাছে মসলা মজুদ আছে। ঈদ ঘনিয়ে এলে আগে অনেক মানুষ সারা বছরের মসলা একসঙ্গে কিনত, এখন আর সে অবস্থা দেখা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘যেসব খুচরা দোকানি ৫-১০ কেজি করে মসলা নিয়ে যেত, তারাই এখন এক বা দুই কেজির বেশি নিচ্ছেন না। তারাও তাদের বিক্রি কম বলে জানাচ্ছেন।’

পাইকারিতে কেজিপ্রতি ভারতীয় জিরা ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, ইরানি জিরা ৩৬০ টাকা, দারুচিনি ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকা, লবঙ্গ ৯৫০ থেকে এক হাজার, এলাচ এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘লকডাউনের কারণে সব ধরনের মসলার দাম এখন কম। গত দুই সপ্তাহের লকডাউনের কারণে মসলা অল্প-স্বল্প বিক্রি হয়েছে। লকডাউন শিথিল হলেও এই দুই দিনে মফস্বল থেকে এখনও ব্যবসায়ীরা সেভাবে আসছেন না বা অর্ডারও করছেন না।’

চারদিন পর কোরবানির ঈদ হলেও বিক্রি নেই বলে পাইকারি বাজারে অধিকাংশ মসলার দাম কিছুটা কমেছে বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী নেতা।

এদিকে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার পাইকারি বিক্রেতা আবদুল কুদ্দুস জানান, তারা পাইকারি দরে দেশি পেঁয়াজ ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, বার্মিজ আদা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চায়না আদা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। চায়না রসুন ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।