শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

৫ ডাক্তার দিয়ে চলছে দুই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা!

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১২ সালে হাসপাতালটি ৫০ বেডে উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। ইতোমধ্যে হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড চালু করে ৫টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু করোনা রোগীরা এখানে ভর্তি না হয়ে চিকিৎসার জন্য খুলনায় চলে যাচ্ছেন।

অপরদিকে, উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসক রয়েছে মাত্র পাঁচজন।

এক্স-রে মেশিন, ইসিজি, অপারেশন থিয়েটার দীর্ঘদিন বন্ধ। টেকনিশিয়ানের অভাবে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা হচ্ছে না। শিশু ওয়ার্ড তালাবদ্ধ। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল নেই। নানা সঙ্কটের মধ্যে এক প্রকার জোড়া তালি দিয়ে চলছে শরণখোলা উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এক মাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। করোনা মহামারীতে নানা শূন্যতার মাঝেও রোগীরা সেবা পেলেও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি এবং স্থানীয় কতিপয় দালালদের দাপটে রোগীরা অনেকটা অসহায়। দালালসহ ওষুধ প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যের কারণে, বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। তবে, বছরের পর বছর ধরে হাসপাতালটি বহু সমস্যা-সঙ্কটে জর্জরিত থাকলেও তা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তেমন কোন উদ্যোগ নেয়নি। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে ক্লিনিক ও এলাকার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮০ দশকে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র রায়েন্দা এলাকায় ১৬ বিঘা জমির ওপর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি স্থাপন করেন তৎকালীন সরকার। তবে, ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়া এ হাসপাতালটিতে কনসালটেন্ট গাইনি ও শিশু বিশেষজ্ঞসহ ১৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ মাত্র ৬ জন চিকিৎসক রয়েছেন। বাকি ৮ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, আয়া ও প্যাথলজিষ্ট সঙ্কট রয়েছে । এক্স-রে ১৪ বছর এবং ইসিজি মেশিন ৭ বছর ধরে নষ্ট। অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) যন্ত্রপাতি থাকলেও সেখানে কোন অপারেশন হয় না। থিয়েটারটি ব্যবহার না হওয়ায় সরকারের কোটি টকা মূল্যমানের যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে বসেছে। নাম গোপন রাখার শর্তে, বহিরাগত রোগীদের কয়েকজন বলেন, ডাক্তার আসার পর কোম্পানির লোকগুলো যেভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ে তাতে আমরা আঁতকে উঠি। ডাক্তার দেখানোর সময় বাইরের লোক পাশে থাকলে লজ্জায় গোপন সব রোগের কথা বলা যায় না। এছাড়া স্থানীয় এক সমাজ সেবক বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের আগে হাসপাতালে ঢুকে অযথা রোগীদের হয়রানি করা তাদের প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে রাখা নিয়ম বহির্ভূত। করোনা দুর্যোগের মধ্যে রোগী ও তার স্বজনদের ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিরা যেভাবে হয়রানি করেন তা এক ধরনের অপরাধ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফরিদা ইয়াসমিন জানান, হাসপাতালটি ৫০ বেডে উন্নিত হওয়ার পর নার্স ও রোগীদের খাবারের বরাদ্দ পাওয়া গেলেও এ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় জনবল পাওয়া যায়নি। এছাড়া ডাক্তারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দুপুর ২টার পরে সময় দেয়া হয়েছে। তবে, কেউ রোগী দেখার টাইমের মধ্যে সাক্ষাৎ করতে আসলে সে ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া, জনবলসহ নানা সঙ্কটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

রবিবার, ১৮ জুলাই ২০২১ , ৩ শ্রাবন ১৪২৮ ৭ জিলহজ ১৪৪২

শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

৫ ডাক্তার দিয়ে চলছে দুই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা!

প্রতিনিধি, শরণখোলা (বাগেরহাট)

image

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১২ সালে হাসপাতালটি ৫০ বেডে উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। ইতোমধ্যে হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড চালু করে ৫টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু করোনা রোগীরা এখানে ভর্তি না হয়ে চিকিৎসার জন্য খুলনায় চলে যাচ্ছেন।

অপরদিকে, উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসক রয়েছে মাত্র পাঁচজন।

এক্স-রে মেশিন, ইসিজি, অপারেশন থিয়েটার দীর্ঘদিন বন্ধ। টেকনিশিয়ানের অভাবে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা হচ্ছে না। শিশু ওয়ার্ড তালাবদ্ধ। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল নেই। নানা সঙ্কটের মধ্যে এক প্রকার জোড়া তালি দিয়ে চলছে শরণখোলা উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এক মাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। করোনা মহামারীতে নানা শূন্যতার মাঝেও রোগীরা সেবা পেলেও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি এবং স্থানীয় কতিপয় দালালদের দাপটে রোগীরা অনেকটা অসহায়। দালালসহ ওষুধ প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যের কারণে, বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। তবে, বছরের পর বছর ধরে হাসপাতালটি বহু সমস্যা-সঙ্কটে জর্জরিত থাকলেও তা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তেমন কোন উদ্যোগ নেয়নি। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে ক্লিনিক ও এলাকার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮০ দশকে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র রায়েন্দা এলাকায় ১৬ বিঘা জমির ওপর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি স্থাপন করেন তৎকালীন সরকার। তবে, ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়া এ হাসপাতালটিতে কনসালটেন্ট গাইনি ও শিশু বিশেষজ্ঞসহ ১৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ মাত্র ৬ জন চিকিৎসক রয়েছেন। বাকি ৮ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, আয়া ও প্যাথলজিষ্ট সঙ্কট রয়েছে । এক্স-রে ১৪ বছর এবং ইসিজি মেশিন ৭ বছর ধরে নষ্ট। অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) যন্ত্রপাতি থাকলেও সেখানে কোন অপারেশন হয় না। থিয়েটারটি ব্যবহার না হওয়ায় সরকারের কোটি টকা মূল্যমানের যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে বসেছে। নাম গোপন রাখার শর্তে, বহিরাগত রোগীদের কয়েকজন বলেন, ডাক্তার আসার পর কোম্পানির লোকগুলো যেভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ে তাতে আমরা আঁতকে উঠি। ডাক্তার দেখানোর সময় বাইরের লোক পাশে থাকলে লজ্জায় গোপন সব রোগের কথা বলা যায় না। এছাড়া স্থানীয় এক সমাজ সেবক বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের আগে হাসপাতালে ঢুকে অযথা রোগীদের হয়রানি করা তাদের প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে রাখা নিয়ম বহির্ভূত। করোনা দুর্যোগের মধ্যে রোগী ও তার স্বজনদের ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিরা যেভাবে হয়রানি করেন তা এক ধরনের অপরাধ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফরিদা ইয়াসমিন জানান, হাসপাতালটি ৫০ বেডে উন্নিত হওয়ার পর নার্স ও রোগীদের খাবারের বরাদ্দ পাওয়া গেলেও এ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় জনবল পাওয়া যায়নি। এছাড়া ডাক্তারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দুপুর ২টার পরে সময় দেয়া হয়েছে। তবে, কেউ রোগী দেখার টাইমের মধ্যে সাক্ষাৎ করতে আসলে সে ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া, জনবলসহ নানা সঙ্কটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।