কারিগরি ত্রুটিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা লেনদেন বন্ধ, তারপরও ৮ বছরে সর্বোচ্চ সূচক

অর্থনীতির প্রতি সেক্টরে ইতিবাচক উন্নতি, রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থিতিশীলতা থাকলেও ২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দেশের শেয়ারবাজার। কিন্তু ২০২০ সালের মে মাসে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পুনর্গঠনের ১ বছর দুই মাসের ব্যবধানে করোনা মহামারীর মধ্যেই ইতিহাস গড়লো দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ডিএসইএক্স। গতকাল সার্ভারে কারিগরি ত্রুটিতে ১ ঘণ্টা ২১ মিনিট লেনদেন বন্ধ থাকলেও দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচকটি যাত্রা শুরুর পর সাড়ে ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চতে উঠে এসেছে। পাশাপাশি ডিএসইর বাজার মূলধনও রেকর্ড গড়ে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান পর্ষদের সাহসী পদক্ষপের কারণে শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস চাঙ্গা হয়েছে। মূলত লোকসানি কোম্পানিগুলোর পর্ষদ পুর্নগঠন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন ইস্যু লেনদেনে ইতিবাচক প্রবণতা ফেলেছে।

তারা বলেন, শেয়ারবাজারে দর বাড়া-কমার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের মানুষিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্য বাজারে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের প্রয়োজন হয়। বিএসইসির বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বে বাজারের বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি হয়েছে, সূচকের রেকর্ড তারই বার্তা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল বিনিয়োগকারীদের ক্রয় প্রবণতায় ডিএসইএক্স সূচকটি ৫৭.৭৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৬৫.১১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। যা সূচকটি ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়ার পরে সর্বোচ্চ। এর আগে সূচকটি ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করছিল। ওই দিন সূচকটি ৬ হাজার ৩৩৬.৮৮ পয়েন্টে অবস্থান ছিল। দিনশেষে ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ২০.২৪ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩১.১২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৭৯.৩৮ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩০৬.০২ পয়েন্টে স্থিতি পায়।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়ায় ৩৭৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২১০টির, কমেছে ১৫০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩টির কোম্পানির শেয়ারের দর। দিনশেষে ডিএসইতে ১ হাজার ৭৯৩ কোটি ২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এর আগের কার্যদিবস অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭৮৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার। সূচক লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ায় ডিএসইর বাজার মূলধন সাত হাজার ৩৯ কোটি টাকা বেড়ে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৩১১ কোটি ৫৭ লাখ ১৪ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা পুঁজিবাজারে ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) শীর্ষে থাকা কো¤পানিগুলো হলো- বেক্সিমকো লি., এসএস স্টিল, ফু-ওয়াং সিরামিক, সাইফ পাওয়ার, শাইন পুকুর সিরামিক্স, এফবিএফআইএফ, লাফার্জহোলসিম, অ্যাক্টিভ ফাইন, ফরচুন সুজ ও পাওয়ার গ্রিড।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কো¤পানিগুলো হলো- মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, লিগাসী ফুটওয়ার, ইনডেক্স এগ্রো, সমতা লেদার, আফতাব অটোস, আজিজ পাইপস, বিপিপিএল, জেমিনী সী ফুড, আইএসএন ও জাহিন স্পিনিং।

অন্যদিকে দর কমার শীর্ষে থাকা কো¤পানিগুলো হলো- তমিজুদ্দীন টেক্সটাইল, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ফ্যামিলিটেক্স, তুংহাই নিটিং, রূপালী ব্যাংক লি., আরএন স্পিনিং, আইটিসি, সাফকো স্পিনিং, সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স ও আর্গন ডেনিমস। অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএসইএক্স ৪০.০৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১১ হাজার ৩০.৪৫ পয়েন্টে। আর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬০.৯৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৩৭৯.৫৪ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২০টি প্রতিষ্ঠানের দর বেড়েছে, কমেছে ১৩৭টির আর ১৩টির দর অপরিবর্তিত ছিল। দিন শেষে সিএসইতে ৭১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আর সিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা, যা সিএসইর ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

সোমবার, ১৯ জুলাই ২০২১ , ৪ শ্রাবন ১৪২৮ ৮ জিলহজ ১৪৪২

কারিগরি ত্রুটিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা লেনদেন বন্ধ, তারপরও ৮ বছরে সর্বোচ্চ সূচক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

অর্থনীতির প্রতি সেক্টরে ইতিবাচক উন্নতি, রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থিতিশীলতা থাকলেও ২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দেশের শেয়ারবাজার। কিন্তু ২০২০ সালের মে মাসে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পুনর্গঠনের ১ বছর দুই মাসের ব্যবধানে করোনা মহামারীর মধ্যেই ইতিহাস গড়লো দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ডিএসইএক্স। গতকাল সার্ভারে কারিগরি ত্রুটিতে ১ ঘণ্টা ২১ মিনিট লেনদেন বন্ধ থাকলেও দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচকটি যাত্রা শুরুর পর সাড়ে ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চতে উঠে এসেছে। পাশাপাশি ডিএসইর বাজার মূলধনও রেকর্ড গড়ে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান পর্ষদের সাহসী পদক্ষপের কারণে শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস চাঙ্গা হয়েছে। মূলত লোকসানি কোম্পানিগুলোর পর্ষদ পুর্নগঠন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন ইস্যু লেনদেনে ইতিবাচক প্রবণতা ফেলেছে।

তারা বলেন, শেয়ারবাজারে দর বাড়া-কমার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের মানুষিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্য বাজারে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের প্রয়োজন হয়। বিএসইসির বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বে বাজারের বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি হয়েছে, সূচকের রেকর্ড তারই বার্তা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল বিনিয়োগকারীদের ক্রয় প্রবণতায় ডিএসইএক্স সূচকটি ৫৭.৭৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৬৫.১১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। যা সূচকটি ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়ার পরে সর্বোচ্চ। এর আগে সূচকটি ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করছিল। ওই দিন সূচকটি ৬ হাজার ৩৩৬.৮৮ পয়েন্টে অবস্থান ছিল। দিনশেষে ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ২০.২৪ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩১.১২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৭৯.৩৮ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩০৬.০২ পয়েন্টে স্থিতি পায়।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়ায় ৩৭৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২১০টির, কমেছে ১৫০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩টির কোম্পানির শেয়ারের দর। দিনশেষে ডিএসইতে ১ হাজার ৭৯৩ কোটি ২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এর আগের কার্যদিবস অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭৮৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার। সূচক লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ায় ডিএসইর বাজার মূলধন সাত হাজার ৩৯ কোটি টাকা বেড়ে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৩১১ কোটি ৫৭ লাখ ১৪ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা পুঁজিবাজারে ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) শীর্ষে থাকা কো¤পানিগুলো হলো- বেক্সিমকো লি., এসএস স্টিল, ফু-ওয়াং সিরামিক, সাইফ পাওয়ার, শাইন পুকুর সিরামিক্স, এফবিএফআইএফ, লাফার্জহোলসিম, অ্যাক্টিভ ফাইন, ফরচুন সুজ ও পাওয়ার গ্রিড।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কো¤পানিগুলো হলো- মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, লিগাসী ফুটওয়ার, ইনডেক্স এগ্রো, সমতা লেদার, আফতাব অটোস, আজিজ পাইপস, বিপিপিএল, জেমিনী সী ফুড, আইএসএন ও জাহিন স্পিনিং।

অন্যদিকে দর কমার শীর্ষে থাকা কো¤পানিগুলো হলো- তমিজুদ্দীন টেক্সটাইল, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ফ্যামিলিটেক্স, তুংহাই নিটিং, রূপালী ব্যাংক লি., আরএন স্পিনিং, আইটিসি, সাফকো স্পিনিং, সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স ও আর্গন ডেনিমস। অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএসইএক্স ৪০.০৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১১ হাজার ৩০.৪৫ পয়েন্টে। আর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬০.৯৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৩৭৯.৫৪ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২০টি প্রতিষ্ঠানের দর বেড়েছে, কমেছে ১৩৭টির আর ১৩টির দর অপরিবর্তিত ছিল। দিন শেষে সিএসইতে ৭১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আর সিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা, যা সিএসইর ইতিহাসে সর্বোচ্চ।