ভারতে পণ্য রপ্তানিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি

মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যে ভারতে পণ্য রপ্তানিতে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে ১২৭ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার (প্রায় ১.২৮ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। এটি বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে চলে এসেছে ভারত। অথচ, তিন বছর আগেও শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় ভারতের স্থান ছিল না।

তবে রপ্তানি বাড়লেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি এখনও বিশাল। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া না গেলেও আগের কয়েক বছর সেটি পাঁচ থেকে ছয়শ কোটি ডলারের ঘরে ছিল। মহামারীর ছোবল না লাগলে দেশটিতে পণ্য রপ্তানি থেকে আরও বেশি বিদেশি মুদ্রা আসত বলে রপ্তানিকারক ও অর্থনীতির গবেষকরা জানিয়েছেন।

তারা বলেছেন, দুই সপ্তাহ আগেও ভারতের করোনা পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। বাংলাদেশেও একই অবস্থা। সে কারণে গত অর্থবছরের শেষ দিকে দুই দেশেরই আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। তবে এখন একটা বেশ ভালো পরিবেশ দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের সরকারের মধ্যেও বেশ ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে। আমরা কিছু উদ্যোগ নিলে এখন ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, যা ছিল এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। করোনার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতে তা কমে ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারে নেমে আসে।

এই আর্থিক বছরে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে ৪২ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ২৫ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। আর নিট থেকে এসেছে ১৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।

পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ১৩ কোটি ৪ লাখ ২০ হাজার ডলার, সুতা ও সুতা জাতীয় পণ্য থেকে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার ডলার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ ডলার এবং প্লাস্টিক দ্রব্য থেকে ১ কোটি ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দক্ষিণ এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ভারতের স্পর্শকাতর পণ্যতালিকা ৪৮০টি থেকে কমিয়ে মাত্র ২৫টিতে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেন। এর মধ্যে দিয়েই কার্যত বাংলাদেশকে ভারতের বাজারে প্রায় শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা প্রদান করা হয়। প্রতিবেশী হওয়ায় বিশ্বের যেকোন দেশের তুলনায় এখানে কম খরচে পণ্য রপ্তানি হওয়ার কথা। স্বাভাবিক নিয়মেই এই বিপুল পরিমাণ শুল্ক সুবিধায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ার কথা।

এই সম্ভাবনা দেখে ২০১৮ সালের এক গবেষণায় বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল, বাণিজ্য সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা বাড়ছে না, উল্টো আমদানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রপ্তানির গতি ও চাহিদা প্রত্যাশিত হারে না বাড়াসহ নানারকম অশুল্ক বাধার বেড়াজালে এখনও দুই দেশের বাণিজ্যে যোজন-যোজন দূরত্ব। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও ৯ বিলিয়ন ডলারের বৃত্ত অতিক্রম করতে পারছে না।

রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির ফারাক এখনো বেশ বড়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানির তথ্য পাওয়া গেলেও দেশটি থেকে কী পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়েছে তার পুরো তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি দুই দেশের কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ। ফলে চলতি বছর বাণিজ্য ঘাটতি কত, সেটি এখনও জানা যাচ্ছে না। আগের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ১০৯ কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। আর বিপরীতে আমদানি করা হয় ৫৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের পণ্য।

এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৬৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৬৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। বিপরীতে রপ্তানি করেছিল ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য। বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৬৪০ কোটি ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৪৫ কোটি ২৯ হাজার ডলার। রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৬৯ লাখ ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪৭৬ কোটি টাকা।

এক সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ভারত কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি (সিভিডি) আরোপ করেছিল। ২০১৪ সালে তা প্রত্যাহার করা হয়। এখন পাটজাত পণ্যে ধার্য করা হয়েছে অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি। ফলে ভারতের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না বাংলাদেশ।

শনিবার, ২৪ জুলাই ২০২১ , ৮ শ্রাবন ১৪২৮ ১২ জিলহজ ১৪৪২

ভারতে পণ্য রপ্তানিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যে ভারতে পণ্য রপ্তানিতে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে ১২৭ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার (প্রায় ১.২৮ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। এটি বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে চলে এসেছে ভারত। অথচ, তিন বছর আগেও শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় ভারতের স্থান ছিল না।

তবে রপ্তানি বাড়লেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি এখনও বিশাল। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া না গেলেও আগের কয়েক বছর সেটি পাঁচ থেকে ছয়শ কোটি ডলারের ঘরে ছিল। মহামারীর ছোবল না লাগলে দেশটিতে পণ্য রপ্তানি থেকে আরও বেশি বিদেশি মুদ্রা আসত বলে রপ্তানিকারক ও অর্থনীতির গবেষকরা জানিয়েছেন।

তারা বলেছেন, দুই সপ্তাহ আগেও ভারতের করোনা পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। বাংলাদেশেও একই অবস্থা। সে কারণে গত অর্থবছরের শেষ দিকে দুই দেশেরই আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। তবে এখন একটা বেশ ভালো পরিবেশ দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের সরকারের মধ্যেও বেশ ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে। আমরা কিছু উদ্যোগ নিলে এখন ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, যা ছিল এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। করোনার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতে তা কমে ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারে নেমে আসে।

এই আর্থিক বছরে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে ৪২ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ২৫ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। আর নিট থেকে এসেছে ১৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।

পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ১৩ কোটি ৪ লাখ ২০ হাজার ডলার, সুতা ও সুতা জাতীয় পণ্য থেকে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার ডলার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ ডলার এবং প্লাস্টিক দ্রব্য থেকে ১ কোটি ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দক্ষিণ এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ভারতের স্পর্শকাতর পণ্যতালিকা ৪৮০টি থেকে কমিয়ে মাত্র ২৫টিতে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেন। এর মধ্যে দিয়েই কার্যত বাংলাদেশকে ভারতের বাজারে প্রায় শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা প্রদান করা হয়। প্রতিবেশী হওয়ায় বিশ্বের যেকোন দেশের তুলনায় এখানে কম খরচে পণ্য রপ্তানি হওয়ার কথা। স্বাভাবিক নিয়মেই এই বিপুল পরিমাণ শুল্ক সুবিধায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ার কথা।

এই সম্ভাবনা দেখে ২০১৮ সালের এক গবেষণায় বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল, বাণিজ্য সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা বাড়ছে না, উল্টো আমদানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রপ্তানির গতি ও চাহিদা প্রত্যাশিত হারে না বাড়াসহ নানারকম অশুল্ক বাধার বেড়াজালে এখনও দুই দেশের বাণিজ্যে যোজন-যোজন দূরত্ব। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও ৯ বিলিয়ন ডলারের বৃত্ত অতিক্রম করতে পারছে না।

রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির ফারাক এখনো বেশ বড়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানির তথ্য পাওয়া গেলেও দেশটি থেকে কী পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়েছে তার পুরো তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি দুই দেশের কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ। ফলে চলতি বছর বাণিজ্য ঘাটতি কত, সেটি এখনও জানা যাচ্ছে না। আগের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ১০৯ কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। আর বিপরীতে আমদানি করা হয় ৫৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের পণ্য।

এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৬৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৬৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। বিপরীতে রপ্তানি করেছিল ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য। বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৬৪০ কোটি ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৪৫ কোটি ২৯ হাজার ডলার। রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৬৯ লাখ ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪৭৬ কোটি টাকা।

এক সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ভারত কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি (সিভিডি) আরোপ করেছিল। ২০১৪ সালে তা প্রত্যাহার করা হয়। এখন পাটজাত পণ্যে ধার্য করা হয়েছে অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি। ফলে ভারতের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না বাংলাদেশ।