সাত জেলায় কঠোর লকডাউন থেমে নেই চলাচল : জরিমানা

নওগাঁ

জেলা বার্তা পরিবেশক, নওগাঁ

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশের ন্যায় নওগাঁতেও চলছে সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এই বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে নওগাঁয় মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও বিজিবি। কঠোর বিধিনিষেধ সফল করতে জেলা প্রশাসনের ৩৪জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ব্যাটারিচালিত অটোচার্জার, চার্জার ভ্যান সীমিত পরিমাণে চলাচল করতে দেখা গেছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে করোনাভাইরাসের শুরু থেকে নওগাঁয় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে ১১৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। মোট আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৬শত ২৬ জন। তবে গত ১ সপ্তাহ নওগাঁতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুও সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৮ দিন লকডাউন শিথিলের পর করোনা সংক্রমণ রোধে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন)। চলবে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নওগাঁয় কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে লকডাউন। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পুলিশি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত, পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার বিভিন্ন এলাকায় থাকলেও দ্বিতীয় দিনেও সকাল থেকেই বিভিন্ন সড়কে ছোট যানবাহনের পাশাপাশি কিছু মানুষের চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে অনেকেই পুলিশের জেরার মুখে পরতে হয়েছে। দোকানপাট ও গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় রিকশা, মোটরসাইকেল, কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে অনেককে যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের বেশিরভাগই ঈদ উদযাপন শেষে সকালে শহরে পৌঁছেছেন। বিভিন্ন স্থানে চলাচলরত গাড়িকে থামিয়ে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে। আবার ঈদেও আমেজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ার কারণে অনেকেই আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন। অনেকেই বিভিন্ন বাহানায় বাহিরে বের হতে গিয়ে গুণতে হচ্ছে জরিমানা।

পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া জানান, সরকার যতদিন চাইবে লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ কাজ করে যাবে। জনগণের কথা ভেবেই সরকার আবারও কঠোর লকডাউন দিয়েছেন। রাষ্ট্র জনগণের জন্য কাজ করেন, জনগণের ভালোর জন্যই কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পুরো জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জেলার সকল থানার ওসিদের দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে। জেলায় পুলিশের ১১০০ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছে লকডাউন বাস্তবায়নে। এছাড়া ১৫০ জন পুলিশ রিজার্ভ রয়েছে। আগামী ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন পালনে পুলিশ মাঠে থাকবে। লকডাউন বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন পুলিশ সুপার।

জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর-রশীদ সবাইকে যতটুকু সম্ভব ঘরে থেকেই ঈদের আমেজ উপভোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। অযথা বাহিরে বের না হওয়ার জন্য তিনি পুরো জেলাবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, কঠোর বিধিনিষেধ সফল করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ দল কাজ করছে। কঠোর বিধিনিষেধ অমান্য করা কাউকে কোন প্রকারের ছাড় দেয়া হবে না। সরকারের জারি করা কঠোর বিধি নিষেধকে সম্মান জানিয়ে তা মেনে চলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বগুড়া

প্রতিনিধি, বগুড়া

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারাদেশের ন্যায় বগুড়ায়ও গত শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। এই লকডাউনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিজিপি, সেনাবাহিনীও মাঠে রয়েছে।

সকাল ১১টায় শহরের সাতমাথায় পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিপি ও র‌্যাব সদস্যরা মহড়ায় অংশগ্রহণ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক, পুলিশ সুপার আলী আশরাফ। সকাল সাড়ে ১১টায় পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিপি ও র‌্যাব সদস্যদের গাড়ির বহর সাতমাথা থেকে রওনা হয়ে মাটিডালী বিমান মোড় হয়ে ঘুরে আবারো সাতমাথায় এসে শেষ করে। এর পর পরই শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ এর কার্যক্রম।

সকাল থেকেই শহরে রিক্সা, ভ্যানসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। অফিস আদালত বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে শহরের রাস্তায় দু’একজন যা দেখা যাচ্ছে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সসদ্যদের দেখলে ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। দু’একটি মোটরসাইকেল দেখা গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের জিজ্ঞসাবাদ করছেন। তবে পাড়া মহল্লায় দু’একটি পান সিগারেটের দোকানসহ মুদিখানার দোকানগুলো খোলা দেখা গেছে। সেখানে সাধারণ মানুষের ভিড়ও লক্ষ্য করা গেছে।

নেত্রকোনা

প্রতিনিধি নেত্রকোনা

নেত্রকোনায় চলছে কঠোর লকডাউন। শনিবার সকাল থেকেই নেত্রকোনা শহরের প্রধান সড়কে চলেনি তেমন কোন যানবাহন। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পৌরসভার এক একজন কাউন্সিলরের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকরা সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ।

জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যারা বাইরে বের হওয়া মানুষদের বাড়ি ফিরিয়ে দেয়া হয়। শহরের তেরিবাজার, আখড়ার মোড়, বারহাট্টা রোডসহ পুরো শহরকে ১৩টি পয়েন্টে ভাগ করে সমন্বিত অবস্থানে নিয়েছে প্রশাসন।

রংপুর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

রংপুরে লকডাউনের দ্বিতীয় দিন শনিবার কঠোরভাবে পালিত হয়েছে বিভাগীয় নগরী রংপুরে। সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শপিংমল এমনকি অলিগলির দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। রিক্সা দু’চারটি মোটরসাইকেল চলাচল করলেও নগরীর বিভিন্ন চেক পোস্টে পুলিশের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। সকাল থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রিক্সা মোটরসাইকেল আটকিয়ে বের হবার কারণ জানতে চেয়েছে। যারা সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। সেনাবহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে বিভাগীয় নগরী রংপুরে কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে লকডাউন। বেলা ১১টার দিকে নগরীর পায়রা চত্বরে সেনাবাহিনীর পক্ষে ক্যাপ্টেন সৈকত সাংবাদিকদের জানান জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পুরো নগরীতে লকডাউন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মাস্ক পরিধান করা হচ্ছে কিনা দোকানপাট অবৈধভাবে খোলা হচ্ছে না সেসব তদারকি করা হচ্ছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নগরীর ১৫টি স্থানে চেক পোস্ট বসিয়ে মোটরসাইকেল অটোরিক্সা আটকিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করছে। দুপুর পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ও অটোরিক্সা আটক করে জরিমানা করেছে পুলিশ।

হরিরামপুর

প্রতিনিধি, হরিরামপুর, (মানিকগঞ্জ)

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না করায় ১২ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২৬০০ টাকা জরিমানা করেছেন উপজেলা প্রশাসন। গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ঝিটকা বাজারে দোকান খোলা রাখা, মাস্ক পরিধান না করা এবং লেছড়াগঞ্জ বাজারে চায়ের দোকান খোলা রাখা এবং মাস্ক পরিধান না করার দায়ে ১২ জনকে ২৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জনগণকে সরকারি বিধিনিষেধ প্রতিপালন করাতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। ঝিটকা এবং লেছড়াগঞ্জ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১২ জনকে জরিমানা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মির্জাগঞ্জ

প্রতিনিধি, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ অমান্য করে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় আয়োজকদের (কনে পক্ষ) ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া গ্রামের শাহজাহান খানের বাড়িতে বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজনের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. তানিয়া ফেরদৌস ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হান উজ্জামান সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় তারা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ওই অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন এবং আয়োজকদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছয় মাস আগে লেবুবুনিয়া গ্রামের শাজাহান খানের মেয়ের সঙ্গে একই উপজেলার বাজিতা গ্রামের নাসির উদ্দিন বাচ্চুর ছেলের বিয়ে হয়। গত শুক্রবার দুপুরে বরপক্ষ কনের বাড়ি লেবুবুনিয়া গ্রামে আসে। তবে করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ অমান্য করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করার খবর পেয়ে মির্জাগঞ্জ ইউএনও তানিয়া ফেরদৌস এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হান উজ্জামান ঘটনাস্থলে এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন এবং আয়োজকদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

ঘটনাটি নিশ্চিত করে ইউএনও মোসা. তানিয়া ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার পর শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। লেবুবুনিয়া গ্রামে বিধিনিষেধ অমান্য করে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয় এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও ওইদিন বিকাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় বিভিন্ন স্থানে ১৬টি মামলায় আরও ২৭ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ত্রিশাল

প্রতিনিধি, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)

ময়মনসিংহের ত্রিশালে লকডউন না মানায় ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যামাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলাম । ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে, রাগামারা বাজার, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড এবং ত্রিশাল বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গত শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে চলে রাত পর্যন্ত। এ সময় মাস্ক পরিধান না করে বাইরে বের হওয়া, কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া বাইরে বের হওয়া, অননুমোদিত দোকান খোলা রাখা, বাসে যাত্রী পরিবহন, ট্রাকে করে যাত্রী পরিবহন করার অপরাধে ১৬টি মামলায় ১৭ হাজার টাকা অর্থদ- প্রদান করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ত্রিশাল থানা পুলিশ ও বাংলাদেশ আনসার সহায়তা প্রদান করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তফিজুর রহমান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলাম জানান জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ও বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে।

এদিকে গত শুক্রবার লকডাউন অমান্য করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ভালুকা পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মোট ৪৬ জনকে ৩৩ হাজার ৮শত টাকা জরিমানা করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা খাতুন ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. মাইন উদ্দীন পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন।

করোনা সংক্রমণ রোধে জনগণকে সচেতন করতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা অলি গলিতে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

image

নওগাঁ : কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে শহরের রাস্তায় চলাফেরা করছেন লোকজন -সংবাদ

আরও খবর
৭ জেলায় করোনায় মৃত্যু ৪২ শনাক্ত ৬০০
বুড়াইল নদীর ২.৫ কিমি. খনন ছাড়াই কাজ সমাপ্ত!

রবিবার, ২৫ জুলাই ২০২১ , ৯ শ্রাবন ১৪২৮ ১৩ জিলহজ ১৪৪২

সাত জেলায় কঠোর লকডাউন থেমে নেই চলাচল : জরিমানা

image

নওগাঁ : কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে শহরের রাস্তায় চলাফেরা করছেন লোকজন -সংবাদ

নওগাঁ

জেলা বার্তা পরিবেশক, নওগাঁ

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশের ন্যায় নওগাঁতেও চলছে সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এই বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে নওগাঁয় মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও বিজিবি। কঠোর বিধিনিষেধ সফল করতে জেলা প্রশাসনের ৩৪জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ব্যাটারিচালিত অটোচার্জার, চার্জার ভ্যান সীমিত পরিমাণে চলাচল করতে দেখা গেছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে করোনাভাইরাসের শুরু থেকে নওগাঁয় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে ১১৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। মোট আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৬শত ২৬ জন। তবে গত ১ সপ্তাহ নওগাঁতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুও সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৮ দিন লকডাউন শিথিলের পর করোনা সংক্রমণ রোধে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন)। চলবে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নওগাঁয় কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে লকডাউন। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পুলিশি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত, পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার বিভিন্ন এলাকায় থাকলেও দ্বিতীয় দিনেও সকাল থেকেই বিভিন্ন সড়কে ছোট যানবাহনের পাশাপাশি কিছু মানুষের চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে অনেকেই পুলিশের জেরার মুখে পরতে হয়েছে। দোকানপাট ও গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় রিকশা, মোটরসাইকেল, কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে অনেককে যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের বেশিরভাগই ঈদ উদযাপন শেষে সকালে শহরে পৌঁছেছেন। বিভিন্ন স্থানে চলাচলরত গাড়িকে থামিয়ে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে। আবার ঈদেও আমেজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ার কারণে অনেকেই আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন। অনেকেই বিভিন্ন বাহানায় বাহিরে বের হতে গিয়ে গুণতে হচ্ছে জরিমানা।

পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া জানান, সরকার যতদিন চাইবে লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ কাজ করে যাবে। জনগণের কথা ভেবেই সরকার আবারও কঠোর লকডাউন দিয়েছেন। রাষ্ট্র জনগণের জন্য কাজ করেন, জনগণের ভালোর জন্যই কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পুরো জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জেলার সকল থানার ওসিদের দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে। জেলায় পুলিশের ১১০০ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছে লকডাউন বাস্তবায়নে। এছাড়া ১৫০ জন পুলিশ রিজার্ভ রয়েছে। আগামী ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন পালনে পুলিশ মাঠে থাকবে। লকডাউন বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন পুলিশ সুপার।

জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর-রশীদ সবাইকে যতটুকু সম্ভব ঘরে থেকেই ঈদের আমেজ উপভোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। অযথা বাহিরে বের না হওয়ার জন্য তিনি পুরো জেলাবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, কঠোর বিধিনিষেধ সফল করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ দল কাজ করছে। কঠোর বিধিনিষেধ অমান্য করা কাউকে কোন প্রকারের ছাড় দেয়া হবে না। সরকারের জারি করা কঠোর বিধি নিষেধকে সম্মান জানিয়ে তা মেনে চলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বগুড়া

প্রতিনিধি, বগুড়া

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারাদেশের ন্যায় বগুড়ায়ও গত শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। এই লকডাউনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিজিপি, সেনাবাহিনীও মাঠে রয়েছে।

সকাল ১১টায় শহরের সাতমাথায় পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিপি ও র‌্যাব সদস্যরা মহড়ায় অংশগ্রহণ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক, পুলিশ সুপার আলী আশরাফ। সকাল সাড়ে ১১টায় পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিপি ও র‌্যাব সদস্যদের গাড়ির বহর সাতমাথা থেকে রওনা হয়ে মাটিডালী বিমান মোড় হয়ে ঘুরে আবারো সাতমাথায় এসে শেষ করে। এর পর পরই শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ এর কার্যক্রম।

সকাল থেকেই শহরে রিক্সা, ভ্যানসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। অফিস আদালত বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে শহরের রাস্তায় দু’একজন যা দেখা যাচ্ছে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সসদ্যদের দেখলে ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। দু’একটি মোটরসাইকেল দেখা গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের জিজ্ঞসাবাদ করছেন। তবে পাড়া মহল্লায় দু’একটি পান সিগারেটের দোকানসহ মুদিখানার দোকানগুলো খোলা দেখা গেছে। সেখানে সাধারণ মানুষের ভিড়ও লক্ষ্য করা গেছে।

নেত্রকোনা

প্রতিনিধি নেত্রকোনা

নেত্রকোনায় চলছে কঠোর লকডাউন। শনিবার সকাল থেকেই নেত্রকোনা শহরের প্রধান সড়কে চলেনি তেমন কোন যানবাহন। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পৌরসভার এক একজন কাউন্সিলরের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকরা সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ।

জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যারা বাইরে বের হওয়া মানুষদের বাড়ি ফিরিয়ে দেয়া হয়। শহরের তেরিবাজার, আখড়ার মোড়, বারহাট্টা রোডসহ পুরো শহরকে ১৩টি পয়েন্টে ভাগ করে সমন্বিত অবস্থানে নিয়েছে প্রশাসন।

রংপুর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

রংপুরে লকডাউনের দ্বিতীয় দিন শনিবার কঠোরভাবে পালিত হয়েছে বিভাগীয় নগরী রংপুরে। সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শপিংমল এমনকি অলিগলির দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। রিক্সা দু’চারটি মোটরসাইকেল চলাচল করলেও নগরীর বিভিন্ন চেক পোস্টে পুলিশের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। সকাল থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রিক্সা মোটরসাইকেল আটকিয়ে বের হবার কারণ জানতে চেয়েছে। যারা সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। সেনাবহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে বিভাগীয় নগরী রংপুরে কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে লকডাউন। বেলা ১১টার দিকে নগরীর পায়রা চত্বরে সেনাবাহিনীর পক্ষে ক্যাপ্টেন সৈকত সাংবাদিকদের জানান জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পুরো নগরীতে লকডাউন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মাস্ক পরিধান করা হচ্ছে কিনা দোকানপাট অবৈধভাবে খোলা হচ্ছে না সেসব তদারকি করা হচ্ছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নগরীর ১৫টি স্থানে চেক পোস্ট বসিয়ে মোটরসাইকেল অটোরিক্সা আটকিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করছে। দুপুর পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ও অটোরিক্সা আটক করে জরিমানা করেছে পুলিশ।

হরিরামপুর

প্রতিনিধি, হরিরামপুর, (মানিকগঞ্জ)

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না করায় ১২ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২৬০০ টাকা জরিমানা করেছেন উপজেলা প্রশাসন। গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ঝিটকা বাজারে দোকান খোলা রাখা, মাস্ক পরিধান না করা এবং লেছড়াগঞ্জ বাজারে চায়ের দোকান খোলা রাখা এবং মাস্ক পরিধান না করার দায়ে ১২ জনকে ২৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জনগণকে সরকারি বিধিনিষেধ প্রতিপালন করাতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। ঝিটকা এবং লেছড়াগঞ্জ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১২ জনকে জরিমানা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মির্জাগঞ্জ

প্রতিনিধি, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ অমান্য করে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় আয়োজকদের (কনে পক্ষ) ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া গ্রামের শাহজাহান খানের বাড়িতে বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজনের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. তানিয়া ফেরদৌস ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হান উজ্জামান সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় তারা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ওই অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন এবং আয়োজকদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছয় মাস আগে লেবুবুনিয়া গ্রামের শাজাহান খানের মেয়ের সঙ্গে একই উপজেলার বাজিতা গ্রামের নাসির উদ্দিন বাচ্চুর ছেলের বিয়ে হয়। গত শুক্রবার দুপুরে বরপক্ষ কনের বাড়ি লেবুবুনিয়া গ্রামে আসে। তবে করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ অমান্য করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করার খবর পেয়ে মির্জাগঞ্জ ইউএনও তানিয়া ফেরদৌস এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হান উজ্জামান ঘটনাস্থলে এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন এবং আয়োজকদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

ঘটনাটি নিশ্চিত করে ইউএনও মোসা. তানিয়া ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার পর শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। লেবুবুনিয়া গ্রামে বিধিনিষেধ অমান্য করে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয় এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও ওইদিন বিকাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় বিভিন্ন স্থানে ১৬টি মামলায় আরও ২৭ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ত্রিশাল

প্রতিনিধি, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)

ময়মনসিংহের ত্রিশালে লকডউন না মানায় ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যামাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলাম । ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে, রাগামারা বাজার, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড এবং ত্রিশাল বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গত শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে চলে রাত পর্যন্ত। এ সময় মাস্ক পরিধান না করে বাইরে বের হওয়া, কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া বাইরে বের হওয়া, অননুমোদিত দোকান খোলা রাখা, বাসে যাত্রী পরিবহন, ট্রাকে করে যাত্রী পরিবহন করার অপরাধে ১৬টি মামলায় ১৭ হাজার টাকা অর্থদ- প্রদান করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ত্রিশাল থানা পুলিশ ও বাংলাদেশ আনসার সহায়তা প্রদান করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তফিজুর রহমান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলাম জানান জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ও বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে।

এদিকে গত শুক্রবার লকডাউন অমান্য করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ভালুকা পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মোট ৪৬ জনকে ৩৩ হাজার ৮শত টাকা জরিমানা করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা খাতুন ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. মাইন উদ্দীন পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন।

করোনা সংক্রমণ রোধে জনগণকে সচেতন করতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা অলি গলিতে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করেন।