বুড়াইল নদীর ২.৫ কিমি. খনন ছাড়াই কাজ সমাপ্ত!

প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের তদারকি ও দায়িত্বে অবহেলায় নদী খননের কাজ শেষ করার পূর্বেই কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার। সঠিকভাবে কাজ না করায় হুমকির মুখে বুড়াইল নদীর ওপর কালির পাটের ব্রিজ। বিলীন হতে যাচ্ছে বেশ কিছু পাকা আধা পাকা বসতবাড়ি ও সদ্য স্থাপিত বিএমডি -এর গভীর নলকূপ। এলাকাবাসীর মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ।

ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়ন ও গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়ন দিয়ে বহমান বুড়াইল নদী খননে। দুই জেলার দুই উপজেলার দুই ইউনিয়নে বুড়াইল নদীতে ১০ কিলোমিটার খনন করার কথা ছিল। তাম্বুলপুর ও তারাপুর ইউনিয়ন লাগোয়া রহমত চর ও ইমামগঞ্জ এলাকায় প্রায় ১ কিলোমিটার, কালিরপাট ব্রিজের দক্ষিণে প্রায় ১ শত মিটার, শেখ পাড়া স্কুলের কাছে প্রায় ৩ শত মিটার তাম্বুলপুরে তোফায়েল আহমদর (থোফা) বাড়ির কাছে প্রায় ২শত মিটার, মরহুম সাহেব উদ্দিন চেয়ারম্যানের বাড়ির কাছে প্রায় ২ শত মিটারসহ বিভিন্ন স্পট মিলে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার নদী খনন না করে খনন সমাপ্ত দেখানো হয়েছে। নদীর যে অংশ খনন করেছেন সেই অংশেও খননের মাটি ড্রেসিং না করে গাছ লাগানো হচ্ছে। নক্সা অনুযায়ী খনন না হওয়ায় নদীর কোথাও প্রশস্ত বেশি কোথাও কম। প্রশস্ত কম বেশি হওয়ায় কোথাও কোথাও নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, রাস্তা ও ব্রিজ। কালিরপাট ব্রিজের দক্ষিণে খনন না করায় পানি ওভার ফ্লো হয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর, রাস্তা ও ব্রিজটি চরম হুমকিতে পড়েছে। পানির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বক্র পথে যাওয়ায় ব্রিজের পার্শ্ববর্তী মিজান ও রেজওয়ানুলসহ ৭-৮ জনের বাড়িসহ সদ্য স্থাপিত বি এম ডি এর কৃষি সেচ কাজে ব্যবহৃত গভীর নলকূপটি চরম হুমকির মুখে পড়েছে। ব্রিজের উজানে ও ভাটিতে খননকৃত নদীর প্রস্থ প্রায় ৪০ ফুট। অথচ মিজান ও রেজওয়ানদের বাড়ির কাছ দিয়ে স্থানীয় আবুবকর (সুটকু)র নিজের স্বার্থ রক্ষার স্বার্থে তার জমির পূর্ব দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে খনন করা ১০ ফুট প্রস্তের সঙ্কুচিত একটি নালা। ৪০ ফুট প্রস্থের নদীর পানি সঙ্কুচিত ১০ ফুট নালা দিয়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি বাড়ির উঠান, মূল্যবান অনেক গাছ, বাঁশ ঝাড় কৃষি জমির আংশিক নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীনের পথে ব্রিজ, রাস্তা ও কয়েকটি বসত বাড়ি। ব্রিজের দক্ষিণে জরুরী ভিত্তিতে নদী খনন না করলে বসত বাড়ি গুলি ও বি এম ডি এর গভীর নলকূপ নদী গর্ভে বিলীন হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

স্থানীয় বাসিন্দা জহুরুল হক বলেন, ব্রিজের ভাটিতে খননকারী যন্ত্র এস্কেভেটর(ভেকু) ঠিকাদার নিয়েই আসেননি।

এস্কেভেটর (ভেকু) ঠিকাদার আলম মাঝি বলেন, ঠিকাদার ফিরোজ কাউছার মামুন ও কামাল হাজীর নির্দেশে আমি নদীর বিভিন্ন স্পটে প্রায় ১ কিলো. খনন করি নাই। তাম্বুলপুরে তোফায়েল আহম্মেদ থোপার বাড়ির কাছে অজ্ঞাত কারণে খনন না করায় পানির গতিপথ সঙ্কুচিত হওয়ায় উজানে কয়েকশ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়ে অপূরণীয়ভাবে কৃষির ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রহমত চর ও ইমামগঞ্জ লাগোয়া প্রায় ১ কিলোমিটার নদী খনন না করায় ওই এলাকায় বর্তমান বর্ষাকালেও মানুষ পায়ে হেটে ও মালামাল ঘোড়াগাড়িতে করে এপার ওপার পারাপার করছেন। নদীর মধ্যবর্তী উচু শুকনো জায়গায় স্থানীয় মহিলারা কলমি শাক তুলছেন। স্থানীয় ঠিকাদার কামাল হাজী বলেন ১০ কিলো. নদী খনন সমাপ্ত হয়েছে। অন্য প্রশ্নে তিনি বলেন আমরা তো সামান্য খনন করি নাই অন্য এক সাইডে যে মোটেও খনন হয়নি সেটা কি করবেন।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, খনন কাজ সমাপ্ত হয়েছে। পরক্ষণে তিনি আরও বলেন, খননে ত্রুটি হলে ঠিকাদারের জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হবে। অন্য প্রশ্নে বলেন অনেক সময় দেখেও না দেখে সঠিক মর্মে প্রত্যয়ন দিতে হয়।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি একাধিকবার ফোন কেটে দেয়ায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

image

পীরগাছা (রংপুর) : নকশা অনুযায়ী খনন না করায় বর্ষা মৌসুমেও ঘোড়াইল নদী সহজেই পার হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি -সংবাদ

আরও খবর
সাত জেলায় কঠোর লকডাউন থেমে নেই চলাচল : জরিমানা
৭ জেলায় করোনায় মৃত্যু ৪২ শনাক্ত ৬০০

রবিবার, ২৫ জুলাই ২০২১ , ৯ শ্রাবন ১৪২৮ ১৩ জিলহজ ১৪৪২

বুড়াইল নদীর ২.৫ কিমি. খনন ছাড়াই কাজ সমাপ্ত!

প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ

প্রতিনিধি, পীরগাছা, (রংপুর)

image

পীরগাছা (রংপুর) : নকশা অনুযায়ী খনন না করায় বর্ষা মৌসুমেও ঘোড়াইল নদী সহজেই পার হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি -সংবাদ

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের তদারকি ও দায়িত্বে অবহেলায় নদী খননের কাজ শেষ করার পূর্বেই কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার। সঠিকভাবে কাজ না করায় হুমকির মুখে বুড়াইল নদীর ওপর কালির পাটের ব্রিজ। বিলীন হতে যাচ্ছে বেশ কিছু পাকা আধা পাকা বসতবাড়ি ও সদ্য স্থাপিত বিএমডি -এর গভীর নলকূপ। এলাকাবাসীর মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ।

ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়ন ও গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়ন দিয়ে বহমান বুড়াইল নদী খননে। দুই জেলার দুই উপজেলার দুই ইউনিয়নে বুড়াইল নদীতে ১০ কিলোমিটার খনন করার কথা ছিল। তাম্বুলপুর ও তারাপুর ইউনিয়ন লাগোয়া রহমত চর ও ইমামগঞ্জ এলাকায় প্রায় ১ কিলোমিটার, কালিরপাট ব্রিজের দক্ষিণে প্রায় ১ শত মিটার, শেখ পাড়া স্কুলের কাছে প্রায় ৩ শত মিটার তাম্বুলপুরে তোফায়েল আহমদর (থোফা) বাড়ির কাছে প্রায় ২শত মিটার, মরহুম সাহেব উদ্দিন চেয়ারম্যানের বাড়ির কাছে প্রায় ২ শত মিটারসহ বিভিন্ন স্পট মিলে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার নদী খনন না করে খনন সমাপ্ত দেখানো হয়েছে। নদীর যে অংশ খনন করেছেন সেই অংশেও খননের মাটি ড্রেসিং না করে গাছ লাগানো হচ্ছে। নক্সা অনুযায়ী খনন না হওয়ায় নদীর কোথাও প্রশস্ত বেশি কোথাও কম। প্রশস্ত কম বেশি হওয়ায় কোথাও কোথাও নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, রাস্তা ও ব্রিজ। কালিরপাট ব্রিজের দক্ষিণে খনন না করায় পানি ওভার ফ্লো হয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর, রাস্তা ও ব্রিজটি চরম হুমকিতে পড়েছে। পানির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বক্র পথে যাওয়ায় ব্রিজের পার্শ্ববর্তী মিজান ও রেজওয়ানুলসহ ৭-৮ জনের বাড়িসহ সদ্য স্থাপিত বি এম ডি এর কৃষি সেচ কাজে ব্যবহৃত গভীর নলকূপটি চরম হুমকির মুখে পড়েছে। ব্রিজের উজানে ও ভাটিতে খননকৃত নদীর প্রস্থ প্রায় ৪০ ফুট। অথচ মিজান ও রেজওয়ানদের বাড়ির কাছ দিয়ে স্থানীয় আবুবকর (সুটকু)র নিজের স্বার্থ রক্ষার স্বার্থে তার জমির পূর্ব দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে খনন করা ১০ ফুট প্রস্তের সঙ্কুচিত একটি নালা। ৪০ ফুট প্রস্থের নদীর পানি সঙ্কুচিত ১০ ফুট নালা দিয়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি বাড়ির উঠান, মূল্যবান অনেক গাছ, বাঁশ ঝাড় কৃষি জমির আংশিক নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীনের পথে ব্রিজ, রাস্তা ও কয়েকটি বসত বাড়ি। ব্রিজের দক্ষিণে জরুরী ভিত্তিতে নদী খনন না করলে বসত বাড়ি গুলি ও বি এম ডি এর গভীর নলকূপ নদী গর্ভে বিলীন হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

স্থানীয় বাসিন্দা জহুরুল হক বলেন, ব্রিজের ভাটিতে খননকারী যন্ত্র এস্কেভেটর(ভেকু) ঠিকাদার নিয়েই আসেননি।

এস্কেভেটর (ভেকু) ঠিকাদার আলম মাঝি বলেন, ঠিকাদার ফিরোজ কাউছার মামুন ও কামাল হাজীর নির্দেশে আমি নদীর বিভিন্ন স্পটে প্রায় ১ কিলো. খনন করি নাই। তাম্বুলপুরে তোফায়েল আহম্মেদ থোপার বাড়ির কাছে অজ্ঞাত কারণে খনন না করায় পানির গতিপথ সঙ্কুচিত হওয়ায় উজানে কয়েকশ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়ে অপূরণীয়ভাবে কৃষির ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রহমত চর ও ইমামগঞ্জ লাগোয়া প্রায় ১ কিলোমিটার নদী খনন না করায় ওই এলাকায় বর্তমান বর্ষাকালেও মানুষ পায়ে হেটে ও মালামাল ঘোড়াগাড়িতে করে এপার ওপার পারাপার করছেন। নদীর মধ্যবর্তী উচু শুকনো জায়গায় স্থানীয় মহিলারা কলমি শাক তুলছেন। স্থানীয় ঠিকাদার কামাল হাজী বলেন ১০ কিলো. নদী খনন সমাপ্ত হয়েছে। অন্য প্রশ্নে তিনি বলেন আমরা তো সামান্য খনন করি নাই অন্য এক সাইডে যে মোটেও খনন হয়নি সেটা কি করবেন।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, খনন কাজ সমাপ্ত হয়েছে। পরক্ষণে তিনি আরও বলেন, খননে ত্রুটি হলে ঠিকাদারের জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হবে। অন্য প্রশ্নে বলেন অনেক সময় দেখেও না দেখে সঠিক মর্মে প্রত্যয়ন দিতে হয়।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি একাধিকবার ফোন কেটে দেয়ায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।