নাগরপুরে বেড়েছে জ্বর সর্দি-কাশি : আগ্রহ নেই করোনা পরীক্ষায়

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন উপজেলার সদর এলাকাসহ ১২টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের মানুষ। এ সকল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু-বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষজন। এই অবস্থায় তাদের মধ্যে ভীতি থাকলেও করোনা পরীক্ষায় তেমন আগ্রহ নেই। এদিকে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণেই এ সময় সর্দি-জ্বর বেড়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তবে করোনা মহামারীর এই সময়ে যে কারণেই সর্দি-কাশি-জ্বর দেখা দিক না কেন, অবহেলা না করে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এদিকে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবনে কিছুটা উন্নতি হলেও পুরোপুরি সুস্থ হননি কেউ। দুর্বল শরীরে জ্বর নিয়েও অনেকে বাজারঘাটসহ জনসমাগমের এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টিকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকেরা।

জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয় থাকলেও ঝামেলা ও বিড়ম্বনার ভয়ে করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তারা। তাই রোগীরা দ্বারস্থ হচ্ছেন স্থানীয় বাজারের পল্ল­ী চিকিৎসকদের। তাদের অনেকেই পল্ল­ী চিকিৎসকের দেয়া ওষুধে ভাল হচ্ছেন বলে হাসপাতালের দ্বারস্থ হচ্ছে না। আবার অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে বহির্বিভাগ। এদিকে বাজারের ফার্মেসিগুলোতেও কদর বেড়েছে বিভিন্ন কোম্পানির প্যারাসিটামল জাতীয় নাপা, নাপা-এক্সটা ও দামী এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের। ফলে তাদের ব্যবসাও বেশ জমজমাট। অনেকেই আবার হাসপাতালে যেতে চাইলেও লকডাউনের কারণে যেতে পারছেন না। বিভিন্ন বাজারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওষুধের দোকানিদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন বলে অনেকেই ওষুধ নিচ্ছেন। অনেককে নরমাল ওষুধ দিয়েছেন কিন্তু না কমায় দামী এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়েছেন। এতে করে বেচাকেনাও বেশ ভাল হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোগী বলেন, হাসপাতালে গেলেই করোনা টেস্ট দেবে। তাই ভয়েই যাই না। এজন্য কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই গ্রামের পল্লী চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ এনে খাচ্ছি। দেখি কি হয়, অনেকেরই কমছে। না কমলে ডাক্তারের পরামর্শ নেব। নাগরপুর উপজেলার চার থেকে পাঁচটি ওষুধের দোকানের বিক্রেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়। তারা জানান, সর্দি-কাশি-জ্বরের ওষুধ বিক্রি ব্যাপক বেড়ে গেছে। যা অবস্থা, তাতে মনে হয় এখন ঘরে ঘরে জ্বর। এ ধরনের বেশিরভাগ রোগী বা রোগীর স্বজন চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে তাদের কাছে এসে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, বর্তমান সময়ে এলাকায় সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এর থেকে মুক্তি পেতে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে বেশিরভাগ ফার্মেসিতে গিয়ে সমস্যার কথা বলে ওষুধ কিনে নিচ্ছে। ফলে সর্দি, কাশি ও জ্বর সংশ্লি­ষ্ট ওষুধের চাহিদা বেড়েছে।

নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে­ক্স সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে নাগরপুর উপজেলায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১৭৬ জন, চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে ১৪৫ জন এবং মারা গিয়েছেন ২ জন।

এ ব্যাপারে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত-ই-জাহান বলেন, এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে এবং অসুস্থদের করোনা টেস্টের আওতায় আনতে উৎসাহিত করতে হবে। করোনা প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে নাগরপুর উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সাধারণ মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান খান জানান, গরিব অসহায় মানুষের জন্য করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি, জ্বর ঠাণ্ডা কাশির তুলনায় করোনা পরীক্ষা অপ্রতুল, যথেষ্ট নয়। ডাক্তাররা উপদেশ দেয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ জ্বর ঠাণ্ডা ভেবে করোনা টেস্ট করতে চায় না। জ্বর ঠাণ্ডা কাশি হলে ডাক্তার দেখান উচিত। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র শুক্রবার ও সরকারি বন্ধের দিন ছাড়া প্রতিদিনই করোনা পরীক্ষা করা হয়। নাগরপুর করোনা রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। করোনার ভয়ে অনেকেই নমুনা দিচ্ছে না। দিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পরিমাণ আরও বাড়বে।

মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১ , ১১ শ্রাবন ১৪২৮ ১৫ জিলহজ ১৪৪২

নাগরপুরে বেড়েছে জ্বর সর্দি-কাশি : আগ্রহ নেই করোনা পরীক্ষায়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন উপজেলার সদর এলাকাসহ ১২টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের মানুষ। এ সকল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু-বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষজন। এই অবস্থায় তাদের মধ্যে ভীতি থাকলেও করোনা পরীক্ষায় তেমন আগ্রহ নেই। এদিকে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণেই এ সময় সর্দি-জ্বর বেড়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তবে করোনা মহামারীর এই সময়ে যে কারণেই সর্দি-কাশি-জ্বর দেখা দিক না কেন, অবহেলা না করে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এদিকে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবনে কিছুটা উন্নতি হলেও পুরোপুরি সুস্থ হননি কেউ। দুর্বল শরীরে জ্বর নিয়েও অনেকে বাজারঘাটসহ জনসমাগমের এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টিকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকেরা।

জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয় থাকলেও ঝামেলা ও বিড়ম্বনার ভয়ে করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তারা। তাই রোগীরা দ্বারস্থ হচ্ছেন স্থানীয় বাজারের পল্ল­ী চিকিৎসকদের। তাদের অনেকেই পল্ল­ী চিকিৎসকের দেয়া ওষুধে ভাল হচ্ছেন বলে হাসপাতালের দ্বারস্থ হচ্ছে না। আবার অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে বহির্বিভাগ। এদিকে বাজারের ফার্মেসিগুলোতেও কদর বেড়েছে বিভিন্ন কোম্পানির প্যারাসিটামল জাতীয় নাপা, নাপা-এক্সটা ও দামী এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের। ফলে তাদের ব্যবসাও বেশ জমজমাট। অনেকেই আবার হাসপাতালে যেতে চাইলেও লকডাউনের কারণে যেতে পারছেন না। বিভিন্ন বাজারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওষুধের দোকানিদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন বলে অনেকেই ওষুধ নিচ্ছেন। অনেককে নরমাল ওষুধ দিয়েছেন কিন্তু না কমায় দামী এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়েছেন। এতে করে বেচাকেনাও বেশ ভাল হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোগী বলেন, হাসপাতালে গেলেই করোনা টেস্ট দেবে। তাই ভয়েই যাই না। এজন্য কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই গ্রামের পল্লী চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ এনে খাচ্ছি। দেখি কি হয়, অনেকেরই কমছে। না কমলে ডাক্তারের পরামর্শ নেব। নাগরপুর উপজেলার চার থেকে পাঁচটি ওষুধের দোকানের বিক্রেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়। তারা জানান, সর্দি-কাশি-জ্বরের ওষুধ বিক্রি ব্যাপক বেড়ে গেছে। যা অবস্থা, তাতে মনে হয় এখন ঘরে ঘরে জ্বর। এ ধরনের বেশিরভাগ রোগী বা রোগীর স্বজন চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে তাদের কাছে এসে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, বর্তমান সময়ে এলাকায় সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এর থেকে মুক্তি পেতে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে বেশিরভাগ ফার্মেসিতে গিয়ে সমস্যার কথা বলে ওষুধ কিনে নিচ্ছে। ফলে সর্দি, কাশি ও জ্বর সংশ্লি­ষ্ট ওষুধের চাহিদা বেড়েছে।

নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে­ক্স সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে নাগরপুর উপজেলায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১৭৬ জন, চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে ১৪৫ জন এবং মারা গিয়েছেন ২ জন।

এ ব্যাপারে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত-ই-জাহান বলেন, এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে এবং অসুস্থদের করোনা টেস্টের আওতায় আনতে উৎসাহিত করতে হবে। করোনা প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে নাগরপুর উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সাধারণ মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান খান জানান, গরিব অসহায় মানুষের জন্য করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি, জ্বর ঠাণ্ডা কাশির তুলনায় করোনা পরীক্ষা অপ্রতুল, যথেষ্ট নয়। ডাক্তাররা উপদেশ দেয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ জ্বর ঠাণ্ডা ভেবে করোনা টেস্ট করতে চায় না। জ্বর ঠাণ্ডা কাশি হলে ডাক্তার দেখান উচিত। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র শুক্রবার ও সরকারি বন্ধের দিন ছাড়া প্রতিদিনই করোনা পরীক্ষা করা হয়। নাগরপুর করোনা রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। করোনার ভয়ে অনেকেই নমুনা দিচ্ছে না। দিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পরিমাণ আরও বাড়বে।