তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা

পুরনো ক্রয়াদেশ শিপমেন্ট না হলে নতুনগুলো অন্য দেশে চলে যাবে

করোনা সংক্রমণ রোধে ঘোষিত কঠোর লকডাউনে রপ্তানিমুখী সব তৈরি পোশাক কারখানাও বন্ধ রয়েছে। তাই আগের ক্রয়াদেশ পাওয়া কাজগুলো আটকে রয়েছে। আর যেসব ক্রয়াদেশের কাজ শেষ হয়েছে অর্থাৎ পুরোনো ক্রয়াদেশগুলোও লকডাউনের কারণে শিফমেন্ট হচ্ছে না। সঠিক সময় মতো শিপমেন্ট না হলে দেশের পোশাক খাত ও অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এমন দাবি করেন।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘লকডাউনের কারণে নতুন অর্ডার কমেছে। আর পুরোনো যেসব অর্ডার ছিল সেগুলোর শিফমেন্টও করতে পারছি না। সময় মতো শিপমেন্ট না করতে পারলে বায়াররা আমাদের নতুন অর্ডার দিবে না। আর অনেকে হয়তো পুরোনো অর্ডারগুলোও বাতিল করে দিতে পারে। যদি এমন হয় তাহলে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ধস নামবে।’

সারা বছর যে পরিমাণ ক্রয়াদেশ আসে সেই ক্রয়াদেশের বেশিরভাগই আসে জুন, জুলাই, আগস্ট মাসে। তাই এই সময় কারখানা বন্ধ থাকার অর্থ হচ্ছে পোশাক খাতের জন্য বড় ক্ষতি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার গত ২৩ জুলাই থেকে তৈরি পোশাকসহ দেশের বেশির ভাগ কলকারখানা বন্ধ রেখেছে। এমন অবস্থা চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। জানা গেছে, চলমান এই বিধিনিষেধে বায়াররা এখন পর্যন্ত কোন ক্রয়াদেশ বাতিল করেননি।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে করোনার প্রকোপ এখনও ঊর্ধ্বমুখী। বায়াররা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন যে, সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্তই থাকবে, নাকি আরও বাড়বে? সময় বাড়লে ওই সময়ে যদি পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে তবে পণ্য সঠিক সময়ে পাওয়া যাবে না। বিধিনিষেধ বাড়লেও যদি পোশাক কারখানা এর আওতার বাইরে রাখা হয়, তাহলে কোন সমস্যা থাকে না।

ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘বায়ররা ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছি, আগামী ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোকে বিধিনিষেধের বাইরে রাখার জন্য। আশা করি, সরকার বিবেচনায় নেবে।’

এই অবস্থায় সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীদের গণটিকাদানের প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি শেষ পর্যায়ে থাকা ক্রয় আদেশের কাজগুলো সারতে সীমিত সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কারখানা খোলার প্রস্তাব দেন তারা।

বিজিএমইএ’র পরিচালক আরশাদ জামাল বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিধিনিষেধের পর তৈরি করা পোশাক উড়োজাহাজে পাঠাতে হবে, না হলে ক্রয়াদেশ বাতিল হবে। কারণ, তাদের দ্রুত পণ্য দরকার। তাদের কিছু করার নেই, তাদের হাত-পা বাঁধা। সব মিলিয়ে আমার মনে হচ্ছে, এবারের বিধিনিষেধের ফলে আমাদের ১০-১৫ শতাংশ ক্রয়াদেশ কমে যাবে। করোনার শুরু থেকেই পোশাক শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি বেশ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি আমরা। আমাদের শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণের হার কখনোই ৩ শতাংশের বেশি হয়নি। ইতোমধ্যে শ্রমিকদের টিকা দেয়ার কাজও শুরু করেছে সরকার।’

এ বিষয়ে নিটওয়্যার কারখানা মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, ‘শ্রমিক ও দেশের অর্থনীতিকে ভালো রাখতে হলে কারখানা চালু রাখতে হবে। তা না হলে, দেশ থেকে বিদেশিরা ক্রয়াদেশ তুলে নেবেন। অর্ডারগুলো অন্যদেশে চলে যাবে। বিকেএমইএর পক্ষ থেকে প্রত্যাশা করছি, সরকার আমাদের আগের অর্ডারের পণ্য সঠিক সময়ে পাঠানোর সুযোগ দিক। আমাদের শিপমেন্টের কাজগুলো করতে দিক।

বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বেশকিছু কারখানায় বায়ারদের অর্ডারের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। সেগুলো আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে শিপমেন্ট দেয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ে পণ্য দিতে না পারলে অর্ডার বাতিল করার হুমকি দিচ্ছেন বায়াররা। অন্তত ওই কারখানাগুলো সীমিত পরিসরে খোলার অনুমতি দেয়া হোক।’

বুধবার, ২৮ জুলাই ২০২১ , ১২ শ্রাবন ১৪২৮ ১৬ জিলহজ ১৪৪২

তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা

পুরনো ক্রয়াদেশ শিপমেন্ট না হলে নতুনগুলো অন্য দেশে চলে যাবে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

করোনা সংক্রমণ রোধে ঘোষিত কঠোর লকডাউনে রপ্তানিমুখী সব তৈরি পোশাক কারখানাও বন্ধ রয়েছে। তাই আগের ক্রয়াদেশ পাওয়া কাজগুলো আটকে রয়েছে। আর যেসব ক্রয়াদেশের কাজ শেষ হয়েছে অর্থাৎ পুরোনো ক্রয়াদেশগুলোও লকডাউনের কারণে শিফমেন্ট হচ্ছে না। সঠিক সময় মতো শিপমেন্ট না হলে দেশের পোশাক খাত ও অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এমন দাবি করেন।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘লকডাউনের কারণে নতুন অর্ডার কমেছে। আর পুরোনো যেসব অর্ডার ছিল সেগুলোর শিফমেন্টও করতে পারছি না। সময় মতো শিপমেন্ট না করতে পারলে বায়াররা আমাদের নতুন অর্ডার দিবে না। আর অনেকে হয়তো পুরোনো অর্ডারগুলোও বাতিল করে দিতে পারে। যদি এমন হয় তাহলে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ধস নামবে।’

সারা বছর যে পরিমাণ ক্রয়াদেশ আসে সেই ক্রয়াদেশের বেশিরভাগই আসে জুন, জুলাই, আগস্ট মাসে। তাই এই সময় কারখানা বন্ধ থাকার অর্থ হচ্ছে পোশাক খাতের জন্য বড় ক্ষতি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার গত ২৩ জুলাই থেকে তৈরি পোশাকসহ দেশের বেশির ভাগ কলকারখানা বন্ধ রেখেছে। এমন অবস্থা চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। জানা গেছে, চলমান এই বিধিনিষেধে বায়াররা এখন পর্যন্ত কোন ক্রয়াদেশ বাতিল করেননি।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে করোনার প্রকোপ এখনও ঊর্ধ্বমুখী। বায়াররা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন যে, সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্তই থাকবে, নাকি আরও বাড়বে? সময় বাড়লে ওই সময়ে যদি পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে তবে পণ্য সঠিক সময়ে পাওয়া যাবে না। বিধিনিষেধ বাড়লেও যদি পোশাক কারখানা এর আওতার বাইরে রাখা হয়, তাহলে কোন সমস্যা থাকে না।

ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘বায়ররা ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছি, আগামী ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোকে বিধিনিষেধের বাইরে রাখার জন্য। আশা করি, সরকার বিবেচনায় নেবে।’

এই অবস্থায় সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীদের গণটিকাদানের প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি শেষ পর্যায়ে থাকা ক্রয় আদেশের কাজগুলো সারতে সীমিত সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কারখানা খোলার প্রস্তাব দেন তারা।

বিজিএমইএ’র পরিচালক আরশাদ জামাল বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিধিনিষেধের পর তৈরি করা পোশাক উড়োজাহাজে পাঠাতে হবে, না হলে ক্রয়াদেশ বাতিল হবে। কারণ, তাদের দ্রুত পণ্য দরকার। তাদের কিছু করার নেই, তাদের হাত-পা বাঁধা। সব মিলিয়ে আমার মনে হচ্ছে, এবারের বিধিনিষেধের ফলে আমাদের ১০-১৫ শতাংশ ক্রয়াদেশ কমে যাবে। করোনার শুরু থেকেই পোশাক শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি বেশ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি আমরা। আমাদের শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণের হার কখনোই ৩ শতাংশের বেশি হয়নি। ইতোমধ্যে শ্রমিকদের টিকা দেয়ার কাজও শুরু করেছে সরকার।’

এ বিষয়ে নিটওয়্যার কারখানা মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, ‘শ্রমিক ও দেশের অর্থনীতিকে ভালো রাখতে হলে কারখানা চালু রাখতে হবে। তা না হলে, দেশ থেকে বিদেশিরা ক্রয়াদেশ তুলে নেবেন। অর্ডারগুলো অন্যদেশে চলে যাবে। বিকেএমইএর পক্ষ থেকে প্রত্যাশা করছি, সরকার আমাদের আগের অর্ডারের পণ্য সঠিক সময়ে পাঠানোর সুযোগ দিক। আমাদের শিপমেন্টের কাজগুলো করতে দিক।

বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বেশকিছু কারখানায় বায়ারদের অর্ডারের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। সেগুলো আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে শিপমেন্ট দেয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ে পণ্য দিতে না পারলে অর্ডার বাতিল করার হুমকি দিচ্ছেন বায়াররা। অন্তত ওই কারখানাগুলো সীমিত পরিসরে খোলার অনুমতি দেয়া হোক।’