একবার প্রণোদনার ঋণ পাওয়া ব্যবসায়ীদের নতুন ঋণ নয়

করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি কাটাতে শিল্প ও সেবা খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ যেসব ব্যবসায়ী পাননি নতুন প্রণোদনার ঋণগুলো তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এখন থেকে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে শিল্প ও সেবা খাতের ক্ষতিগ্রস্ত যেসব প্রতিষ্ঠান এ প্যাকেজের আওতায় কোন সুবিধা পায়নি সেসব প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রদান করতে হবে। এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন গতকাল সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১২ এপ্রিল ও ২৫ জুন ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় আর্থিক প্রণোদনা’ শীর্ষক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রথম প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের যেসব প্রতিষ্ঠান করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শুধুমাত্র সেসব প্রতিষ্ঠান এ প্যাকেজের আওতায় সুবিধা পাবে। এই প্যাকেজের আওতায় অতিরিক্ত চাহিদার বিপরীতে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত বেশি প্রতিষ্ঠান যাতে এ প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা পায় সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়। দ্বিতীয় অর্থাৎ ২৫ জুনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, এই প্যাকেজের ঋণ প্রাপ্যতার সমপরিমাণ অর্থ কোন গ্রাহকের অনুকূলে এক বছরে প্রদান করা সম্ভব না হলে অবশিষ্ট অর্থ প্যাকেজের বাকি মেয়াদের মধ্যে প্রদান করতে হবে।

গতকালের নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্যাকেজের আওতায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য প্রদত্ত ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা স্বল্প সংখ্যক গ্রাহকদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত না করে ক্ষতিগ্রস্ত অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের ক্ষতিগ্রস্ত যেসব প্রতিষ্ঠান এ প্যাকেজের আওতায় এখনও সুবিধা পায়নি সেসব প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ এরই মধ্যে এই প্যাকেজের আওতায় যারা ঋণ পেয়েছেন তাদের নতুন করে আর কোন ঋণ না দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে আগে জারি করা প্রজ্ঞাপনগুলোর অন্য নির্দেশনা বলবৎ থাকবে বলে নতুন প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বছরের ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন যা ছিল জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

ওই প্যাকেজের আওতায় শিল্প ও সেবা খাতের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিতে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ তহবিল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে ১২ এপ্রিল ওই প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় বলা হয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ দেবে। এই ঋণে সুদের হার হবে ৯ শতাংশ।

এর মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ পরিশোধ করবে ঋণ গ্রহীতা শিল্প বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাকি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। ব্যাপক চাহিদার কারণে পরে এই প্যাকেজের আকার ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন পর্যন্ত এই প্যাকেজের আওতায় মোট ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১ , ১৩ শ্রাবন ১৪২৮ ১৭ জিলহজ ১৪৪২

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ

একবার প্রণোদনার ঋণ পাওয়া ব্যবসায়ীদের নতুন ঋণ নয়

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি কাটাতে শিল্প ও সেবা খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ যেসব ব্যবসায়ী পাননি নতুন প্রণোদনার ঋণগুলো তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এখন থেকে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে শিল্প ও সেবা খাতের ক্ষতিগ্রস্ত যেসব প্রতিষ্ঠান এ প্যাকেজের আওতায় কোন সুবিধা পায়নি সেসব প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রদান করতে হবে। এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন গতকাল সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১২ এপ্রিল ও ২৫ জুন ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় আর্থিক প্রণোদনা’ শীর্ষক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রথম প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের যেসব প্রতিষ্ঠান করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শুধুমাত্র সেসব প্রতিষ্ঠান এ প্যাকেজের আওতায় সুবিধা পাবে। এই প্যাকেজের আওতায় অতিরিক্ত চাহিদার বিপরীতে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত বেশি প্রতিষ্ঠান যাতে এ প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা পায় সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়। দ্বিতীয় অর্থাৎ ২৫ জুনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, এই প্যাকেজের ঋণ প্রাপ্যতার সমপরিমাণ অর্থ কোন গ্রাহকের অনুকূলে এক বছরে প্রদান করা সম্ভব না হলে অবশিষ্ট অর্থ প্যাকেজের বাকি মেয়াদের মধ্যে প্রদান করতে হবে।

গতকালের নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্যাকেজের আওতায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য প্রদত্ত ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা স্বল্প সংখ্যক গ্রাহকদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত না করে ক্ষতিগ্রস্ত অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের ক্ষতিগ্রস্ত যেসব প্রতিষ্ঠান এ প্যাকেজের আওতায় এখনও সুবিধা পায়নি সেসব প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ এরই মধ্যে এই প্যাকেজের আওতায় যারা ঋণ পেয়েছেন তাদের নতুন করে আর কোন ঋণ না দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে আগে জারি করা প্রজ্ঞাপনগুলোর অন্য নির্দেশনা বলবৎ থাকবে বলে নতুন প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বছরের ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন যা ছিল জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

ওই প্যাকেজের আওতায় শিল্প ও সেবা খাতের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিতে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ তহবিল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে ১২ এপ্রিল ওই প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় বলা হয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ দেবে। এই ঋণে সুদের হার হবে ৯ শতাংশ।

এর মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ পরিশোধ করবে ঋণ গ্রহীতা শিল্প বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাকি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। ব্যাপক চাহিদার কারণে পরে এই প্যাকেজের আকার ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন পর্যন্ত এই প্যাকেজের আওতায় মোট ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।