ঘরে ঘরে সর্দি ঠা-া জ্বরেও পরীক্ষায় অনীহা : মিলছে না প্যারাসিটামল!

টাঙ্গাইলের সখীপুরে ফার্মেসিগুলোতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। ভোক্তারা বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরেও এ জাতীয় ট্যাবলেট পাচ্ছেন না। জ্বর-সর্দি-কাশির সাধারণ এ ওষুধ না থাকার কারণ হিসেবে দোকানিরা বলছেন সরবরাহ নেই। এদিকে গ্রামাঞ্চলের সামাজিক বিড়ম্বনার ভয়ে উপসর্গ থাকার পরও অনেকে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। গ্রামের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক ব্যবহারেও উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ প্রবণতাকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন করতে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

পৌর শহর ছাড়াও উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোথাও কোনও ফার্মেসিতে এই জাতীয় ওষুধগুলো পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। উপজেলার কীর্তনখোলা গ্রামের ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান জানান, আমার হঠাৎ করে জ্বর শুরু হয়েছে। তিনি নাপা কিংবা নাপা এক্সট্রেন্ড ট্যাবলেট কেনার জন্য বাজারের কয়েকটি ফার্মেসিতে ঘুরেছি। কোথাও এ জাতীয় ট্যাবলেট পাওয়া যায়নি। পৌরসভার কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরে আমার জ্বর। সেই সঙ্গে শরীর ব্যথা। বাজারের কোনও দোকানে নাপা কিংবা নাপা এক্সট্রেন্ড পাইনি। পরে ফার্মেসির দোকানির পরামর্শে অন্য ওষুধ কিনে খাচ্ছি। এখন জ্বর কিছুটা কমেছে। আল-মক্কা মডেল মেডিসিন শপের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হামিদ বলেন, এই মৌসুমে ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর হওয়ায় প্রতিবছরই এসব ট্যাবলেটের চাহিদা বেশি থাকে। এ বছর করোনার কারণে চাহিদা আরও বেড়েছে। কিন্তু কোম্পানির প্রতিনিধিরা নাপা, নাপা এক্সট্রা, নাপা এক্সটেন্ড, নাপা সিরাপসহ এই জাতীয় ওষুধ সরবরাহ করছে না।

এসব কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলছেন, কোম্পানি থেকে সাপ্লাই বন্ধ আছে। আর এইচএক্সআর ট্যাবলেটও খুব সীমিত পরিমাণে সরবরাহ করছে। এজন্য এই জাতীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। ইছাদিঘী বাজার মারুফ ফার্মেসির মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, এই ওষুধগুলো পরিচিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ বেশি খোঁজেন। প্রায় ১৫ দিন ধরে এই ওষুধগুলোর সাপ্লাই নেই। একই কথা বলছেন বাজারের অধিকাংশ ফার্মেসি ব্যবসায়ী।

সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, বেক্সিমকো কোম্পানির নাপা জাতীয় ওষুধ ফার্মেসিতে পাওয়া যাচ্ছে না বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বারবার উপদেশ দেয়ার পরও জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত লোকজন করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তারা পরীক্ষা না করে বিভিন্ন ফার্মেসিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে করোনার সংক্রমণ বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) চিত্রা শিকারী বলেন, করোনা মহামারীতে কোন ফার্মেসি ওষুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেতে পারবেন না। এজন্য বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ওষুধের অতিরিক্ত দাম নেয়ার অভিযোগ পেলে ওই ফার্মেসি মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুক্রবার, ৩০ জুলাই ২০২১ , ১৪ শ্রাবন ১৪২৮ ১৮ জিলহজ ১৪৪২

ঘরে ঘরে সর্দি ঠা-া জ্বরেও পরীক্ষায় অনীহা : মিলছে না প্যারাসিটামল!

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, সখীপুর (টাঙ্গাইল)

টাঙ্গাইলের সখীপুরে ফার্মেসিগুলোতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। ভোক্তারা বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরেও এ জাতীয় ট্যাবলেট পাচ্ছেন না। জ্বর-সর্দি-কাশির সাধারণ এ ওষুধ না থাকার কারণ হিসেবে দোকানিরা বলছেন সরবরাহ নেই। এদিকে গ্রামাঞ্চলের সামাজিক বিড়ম্বনার ভয়ে উপসর্গ থাকার পরও অনেকে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। গ্রামের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক ব্যবহারেও উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ প্রবণতাকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন করতে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

পৌর শহর ছাড়াও উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোথাও কোনও ফার্মেসিতে এই জাতীয় ওষুধগুলো পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। উপজেলার কীর্তনখোলা গ্রামের ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান জানান, আমার হঠাৎ করে জ্বর শুরু হয়েছে। তিনি নাপা কিংবা নাপা এক্সট্রেন্ড ট্যাবলেট কেনার জন্য বাজারের কয়েকটি ফার্মেসিতে ঘুরেছি। কোথাও এ জাতীয় ট্যাবলেট পাওয়া যায়নি। পৌরসভার কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরে আমার জ্বর। সেই সঙ্গে শরীর ব্যথা। বাজারের কোনও দোকানে নাপা কিংবা নাপা এক্সট্রেন্ড পাইনি। পরে ফার্মেসির দোকানির পরামর্শে অন্য ওষুধ কিনে খাচ্ছি। এখন জ্বর কিছুটা কমেছে। আল-মক্কা মডেল মেডিসিন শপের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হামিদ বলেন, এই মৌসুমে ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর হওয়ায় প্রতিবছরই এসব ট্যাবলেটের চাহিদা বেশি থাকে। এ বছর করোনার কারণে চাহিদা আরও বেড়েছে। কিন্তু কোম্পানির প্রতিনিধিরা নাপা, নাপা এক্সট্রা, নাপা এক্সটেন্ড, নাপা সিরাপসহ এই জাতীয় ওষুধ সরবরাহ করছে না।

এসব কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলছেন, কোম্পানি থেকে সাপ্লাই বন্ধ আছে। আর এইচএক্সআর ট্যাবলেটও খুব সীমিত পরিমাণে সরবরাহ করছে। এজন্য এই জাতীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। ইছাদিঘী বাজার মারুফ ফার্মেসির মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, এই ওষুধগুলো পরিচিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ বেশি খোঁজেন। প্রায় ১৫ দিন ধরে এই ওষুধগুলোর সাপ্লাই নেই। একই কথা বলছেন বাজারের অধিকাংশ ফার্মেসি ব্যবসায়ী।

সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, বেক্সিমকো কোম্পানির নাপা জাতীয় ওষুধ ফার্মেসিতে পাওয়া যাচ্ছে না বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বারবার উপদেশ দেয়ার পরও জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত লোকজন করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তারা পরীক্ষা না করে বিভিন্ন ফার্মেসিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে করোনার সংক্রমণ বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) চিত্রা শিকারী বলেন, করোনা মহামারীতে কোন ফার্মেসি ওষুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেতে পারবেন না। এজন্য বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ওষুধের অতিরিক্ত দাম নেয়ার অভিযোগ পেলে ওই ফার্মেসি মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।