তিস্তা চরের শিক্ষার্থীদের পিছু ছাড়ছে না রাস্তার দুর্ভোগ

দীর্ঘ ১৮ মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর তিস্তার চরের শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে উচ্ছ্বাস থাকলেও রয়েছে ক্লান্তির ছাপ। তারা দুর্গম চর এলাকার শিক্ষার্থীরা ৪-৫ কিলোমিটার হাঁটুজল পেরিয়ে স্কুলে এসে স্কুল শেষে আবারও হাঁটুজল পেরিয়ে বাড়িতে ফিরছে। বন্যা কিংবা খরা দু’সময়েই নানা বাধা অতিক্রম করে বিদ্যালয়ে যেতে হয় চরের শিক্ষার্থীদের। একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, কষ্টই আমাদের জীবন, বন্যার সময় কাপড় ভিজিয়ে স্কুল করতে হয়। খরার সময় প্রচ- রোদে পুড়তে হয় । কেউই আমাদের দেখে না ।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের পারুলিয়া তফসিল দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও পূর্ব হলদিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এভাবেই স্কুলে আসতে ও যেতে দেখা গেছে। তিস্তার দুর্গম চরের ৫০ থেকে ৬০ শিক্ষার্থীকে কাঁদা পানি মেখে স্কুলে আসতে ও যেতে দেখা যায় । শরৎকালে তিস্তার পানি কমলেও নৌকা না থাকায় শিক্ষার্থীদের এই দুর্ভোগে পড়তে হয়। দীর্ঘপথ কাঁদাপনি পেরিয়ে স্কুলে আসতে শিক্ষার্থীদের পোশাক ভিজে যায়। ভেজা পোশাকে শ্রেণী কক্ষে বসে কষ্ট করে পড়া শুনা করতে হয়।

সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আঁখি আক্তার জানায়, কষ্ট করে কাঁদা পানি পেরিয়ে হলেও স্কুলে এসেছি। অনেকদিন পর স্কুলে আসতে পেরে আমরা আনন্দিত।

নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সজিব হোসেন বলেন, আমরা ৫ কিলোমিটার দূর থেকে স্কুলে আসি। অনেকটা পথ কাঁদা পানি ও অনেকটা পথ বালুচর পেরিয়ে স্কুলে এসেছি। দীর্ঘক্ষণ কাপড় ভিজা থাকলেও সাথীদের কাছে ফিরে আসতে পেরে আমরা আনন্দিত।

এদিকে পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব হলদিবাড়ি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তিস্তার গর্ভে বিলীন হওয়ায় পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের দুটি কক্ষে ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে। পার্টিকাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর আলম বলেন, তিস্তার গর্ভে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলীন হলে আমার ইউনিয়ন পরিষদের দুটি কক্ষে নিয়ে স্কুল চালু করা হয়েছে।

পারুলীয়া তফসিল দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষক অনিল চন্দ্র রায় বলেন, তিস্তা চরের শিক্ষার্থীদরা প্রতিবছর এভাবে কষ্ট করে এসে পড়াশুনা করতে হচ্ছে। নৌকার ব্যবস্থা করা গেলে তাদের এত কষ্ট হতো না ।

লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী বাদশা জানান, চরের শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলেছি। আশা করছি নৌকার ব্যবস্থা হবে। তবে এবার বন্যায় জেলায় দুই প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হলে একটি ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি চরে তাবু টানিয়ে অস্থায়ীভাবে ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে।

সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৫ আশ্বিন ১৪২৮ ১১ সফর ১৪৪৩

তিস্তা চরের শিক্ষার্থীদের পিছু ছাড়ছে না রাস্তার দুর্ভোগ

প্রতিনিধি, লালমনিরহাট

image

লালমনিরহাট : প্রতিদিন এভাবেই ৪-৫ কিমি. হাঁটুজল ভেঙে স্কুলে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের -সংবাদ

দীর্ঘ ১৮ মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর তিস্তার চরের শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে উচ্ছ্বাস থাকলেও রয়েছে ক্লান্তির ছাপ। তারা দুর্গম চর এলাকার শিক্ষার্থীরা ৪-৫ কিলোমিটার হাঁটুজল পেরিয়ে স্কুলে এসে স্কুল শেষে আবারও হাঁটুজল পেরিয়ে বাড়িতে ফিরছে। বন্যা কিংবা খরা দু’সময়েই নানা বাধা অতিক্রম করে বিদ্যালয়ে যেতে হয় চরের শিক্ষার্থীদের। একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, কষ্টই আমাদের জীবন, বন্যার সময় কাপড় ভিজিয়ে স্কুল করতে হয়। খরার সময় প্রচ- রোদে পুড়তে হয় । কেউই আমাদের দেখে না ।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের পারুলিয়া তফসিল দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও পূর্ব হলদিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এভাবেই স্কুলে আসতে ও যেতে দেখা গেছে। তিস্তার দুর্গম চরের ৫০ থেকে ৬০ শিক্ষার্থীকে কাঁদা পানি মেখে স্কুলে আসতে ও যেতে দেখা যায় । শরৎকালে তিস্তার পানি কমলেও নৌকা না থাকায় শিক্ষার্থীদের এই দুর্ভোগে পড়তে হয়। দীর্ঘপথ কাঁদাপনি পেরিয়ে স্কুলে আসতে শিক্ষার্থীদের পোশাক ভিজে যায়। ভেজা পোশাকে শ্রেণী কক্ষে বসে কষ্ট করে পড়া শুনা করতে হয়।

সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আঁখি আক্তার জানায়, কষ্ট করে কাঁদা পানি পেরিয়ে হলেও স্কুলে এসেছি। অনেকদিন পর স্কুলে আসতে পেরে আমরা আনন্দিত।

নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সজিব হোসেন বলেন, আমরা ৫ কিলোমিটার দূর থেকে স্কুলে আসি। অনেকটা পথ কাঁদা পানি ও অনেকটা পথ বালুচর পেরিয়ে স্কুলে এসেছি। দীর্ঘক্ষণ কাপড় ভিজা থাকলেও সাথীদের কাছে ফিরে আসতে পেরে আমরা আনন্দিত।

এদিকে পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব হলদিবাড়ি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তিস্তার গর্ভে বিলীন হওয়ায় পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের দুটি কক্ষে ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে। পার্টিকাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর আলম বলেন, তিস্তার গর্ভে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলীন হলে আমার ইউনিয়ন পরিষদের দুটি কক্ষে নিয়ে স্কুল চালু করা হয়েছে।

পারুলীয়া তফসিল দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষক অনিল চন্দ্র রায় বলেন, তিস্তা চরের শিক্ষার্থীদরা প্রতিবছর এভাবে কষ্ট করে এসে পড়াশুনা করতে হচ্ছে। নৌকার ব্যবস্থা করা গেলে তাদের এত কষ্ট হতো না ।

লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী বাদশা জানান, চরের শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলেছি। আশা করছি নৌকার ব্যবস্থা হবে। তবে এবার বন্যায় জেলায় দুই প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হলে একটি ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি চরে তাবু টানিয়ে অস্থায়ীভাবে ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে।