ইউপি নির্বাচনে বিনাপ্র্রতিদ্বন্দ্বিতার হার বাড়ছে

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়লাভ আগের তুলনায় বেড়েছে। প্রথম ধাপে দ্বিতীয় দফায় আজ সোমবার দেশের ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন। এর মধ্যে ৪৩টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নৌকা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এসব ইউপিতে ভোট হবে সদস্য (মেম্বার) ও সংরক্ষিত সদস্য পদে। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করায় অন্যান্য অধিকাংশ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

গত জুনে প্রথম ধাপের প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ২৮ জন প্রার্থী বিনাভোটে নির্বাচিত হন। সে সময় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের হার ছিল ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। এবার (দ্বিতীয় দফায়) বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভের হার ২৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি ইউপি নির্বাচন বর্জন করায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের জয়লাভের হার বাড়ছে। তারা বলছেন, ‘দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে আগের মতো ভোট উৎসবও এখন নেই। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও জানেন, নৌকা ছাড়া পাস করার কোন উপায় নেই।’ একাধিক বিশ্লেষক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের টানা এক যুগ ক্ষমতায় বিরোধী দলের রাজনীতি কোণঠাঁসা হয়ে গেছে। গত এক দশকে সব পর্যায়ের নির্বাচনে ভোটে অনিয়ম, কারচুপিসহ নানান অভিযোগ উঠলেও নির্বাচন কমিশন কোন প্রতিকার করতে পারেনি। তাই ভোটের প্রতিও মানুষের তেমন আস্থা নেই।’

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় ৩৪টি, বাগেরহাটে ৬৬টি, সাতক্ষীরায় ২১টি, নোয়াখালীতে ১৩টি, চট্টগ্রামে ১২টি এবং কক্সবাজারে ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে আজ ভোট হবে।

সংবাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানোর তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটে ৬৬ ইউপির মধ্যে ৩৮ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নৌকা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এদিকে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বাগেরহাটে মোট ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে, মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ১৭ জন, চিতলমারী উপজেলার ৪ জন, শরনখোলার ২ জন ও কচুয়ার ১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নোটিশ দিয়ে নোটিশ দিয়ে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাগেরহাটের বাইরে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ৪টি এবং খুলনার ১টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

কক্সবাজারের চকরিয়া ও মহেশখালী পৌরসভা এবং চার উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রথম ধাপের নির্বাচন আজ। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কক্সবাজার নির্বাচন অফিস। কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ২ পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৩৩ জন।

সাতক্ষীরার তালা-কলারোয়া উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ আজ। এর মধ্যে ইভিএমে ৪ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ করা হবে। বিএনপি ভোট বয়কট করলেও বেশ কিছু জায়গায় অংশগ্রহণ করছেন দলটির স্থানীয় নেতারা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা কয়েকটি ইউনিয়নে ডজনেরও অধিক। এসব নিয়ে চলছে টানটান উত্তেজনা। তবে পুলিশ সুপারের অভিমত, যেকোন মূল্যে নিরপেক্ষ করা হবে এবারের ভোট।

দুই উপজেলার ভোটার ও প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে (নৌকা প্রতীক) বরাদ্দ দিলেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলের একাধিক নেতা স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হয়ে নির্বাচনি মাঠ দখলে রেখেছেন। আর একই দলের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় উৎসবের নির্বাচন সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

২০১৬ সাল থেকে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। তবে এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা আগেই জানিয়ে দেয়। তাই আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহলের আশঙ্কা ছিল, দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গেই ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এতে সংঘাত ও প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হবে। তাই বিদ্রোহ করলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, হুঁশিয়ারিতে কাজ হয়েছে। আগে একটি আসনেই ৫-৭ জন বিদ্রোহী থাকত। এখন ১৬০ ইউপিতে খুঁজলে ৫০ জন বিদ্রোহী পাওয়া যাবে না। কিছু আসনে দুই-তিনজন করে বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। তবে ৪৩ ইউপিতে বিদ্রোহ দমন হয়েছে, এটা তো স্পষ্ট। তাই এসব ইউপিতে ভোট হয়নি।

এবার দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউপিতে কয়েক ধাপে ভোট হবে। গত ৩ মার্চ প্রথম ধাপের ৩৭১টি ইউপির ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ভোট স্থগিত করা হয়। ২১ জুন ২০৪টি ইউপিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সীমান্তবর্তী এলাকায় কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ১৬৭টি ইউপির ভোট স্থগিত করা হয়। প্রথম ধাপে স্থগিত ১৬৭টি ইউপির মধ্যে ১৬০টিতে কাল সোমবার ভোট হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, অবশিষ্ট ইউপিগুলোতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোটের আয়োজন করা হবে।

সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৫ আশ্বিন ১৪২৮ ১১ সফর ১৪৪৩

ইউপি নির্বাচনে বিনাপ্র্রতিদ্বন্দ্বিতার হার বাড়ছে

সংবাদ ডেস্ক

image

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়লাভ আগের তুলনায় বেড়েছে। প্রথম ধাপে দ্বিতীয় দফায় আজ সোমবার দেশের ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন। এর মধ্যে ৪৩টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নৌকা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এসব ইউপিতে ভোট হবে সদস্য (মেম্বার) ও সংরক্ষিত সদস্য পদে। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করায় অন্যান্য অধিকাংশ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

গত জুনে প্রথম ধাপের প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ২৮ জন প্রার্থী বিনাভোটে নির্বাচিত হন। সে সময় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের হার ছিল ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। এবার (দ্বিতীয় দফায়) বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভের হার ২৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি ইউপি নির্বাচন বর্জন করায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের জয়লাভের হার বাড়ছে। তারা বলছেন, ‘দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে আগের মতো ভোট উৎসবও এখন নেই। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও জানেন, নৌকা ছাড়া পাস করার কোন উপায় নেই।’ একাধিক বিশ্লেষক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের টানা এক যুগ ক্ষমতায় বিরোধী দলের রাজনীতি কোণঠাঁসা হয়ে গেছে। গত এক দশকে সব পর্যায়ের নির্বাচনে ভোটে অনিয়ম, কারচুপিসহ নানান অভিযোগ উঠলেও নির্বাচন কমিশন কোন প্রতিকার করতে পারেনি। তাই ভোটের প্রতিও মানুষের তেমন আস্থা নেই।’

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় ৩৪টি, বাগেরহাটে ৬৬টি, সাতক্ষীরায় ২১টি, নোয়াখালীতে ১৩টি, চট্টগ্রামে ১২টি এবং কক্সবাজারে ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে আজ ভোট হবে।

সংবাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানোর তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটে ৬৬ ইউপির মধ্যে ৩৮ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নৌকা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এদিকে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বাগেরহাটে মোট ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে, মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ১৭ জন, চিতলমারী উপজেলার ৪ জন, শরনখোলার ২ জন ও কচুয়ার ১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নোটিশ দিয়ে নোটিশ দিয়ে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাগেরহাটের বাইরে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ৪টি এবং খুলনার ১টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

কক্সবাজারের চকরিয়া ও মহেশখালী পৌরসভা এবং চার উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রথম ধাপের নির্বাচন আজ। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কক্সবাজার নির্বাচন অফিস। কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ২ পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৩৩ জন।

সাতক্ষীরার তালা-কলারোয়া উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ আজ। এর মধ্যে ইভিএমে ৪ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ করা হবে। বিএনপি ভোট বয়কট করলেও বেশ কিছু জায়গায় অংশগ্রহণ করছেন দলটির স্থানীয় নেতারা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা কয়েকটি ইউনিয়নে ডজনেরও অধিক। এসব নিয়ে চলছে টানটান উত্তেজনা। তবে পুলিশ সুপারের অভিমত, যেকোন মূল্যে নিরপেক্ষ করা হবে এবারের ভোট।

দুই উপজেলার ভোটার ও প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে (নৌকা প্রতীক) বরাদ্দ দিলেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলের একাধিক নেতা স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হয়ে নির্বাচনি মাঠ দখলে রেখেছেন। আর একই দলের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় উৎসবের নির্বাচন সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

২০১৬ সাল থেকে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। তবে এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা আগেই জানিয়ে দেয়। তাই আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহলের আশঙ্কা ছিল, দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গেই ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এতে সংঘাত ও প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হবে। তাই বিদ্রোহ করলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, হুঁশিয়ারিতে কাজ হয়েছে। আগে একটি আসনেই ৫-৭ জন বিদ্রোহী থাকত। এখন ১৬০ ইউপিতে খুঁজলে ৫০ জন বিদ্রোহী পাওয়া যাবে না। কিছু আসনে দুই-তিনজন করে বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। তবে ৪৩ ইউপিতে বিদ্রোহ দমন হয়েছে, এটা তো স্পষ্ট। তাই এসব ইউপিতে ভোট হয়নি।

এবার দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউপিতে কয়েক ধাপে ভোট হবে। গত ৩ মার্চ প্রথম ধাপের ৩৭১টি ইউপির ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ভোট স্থগিত করা হয়। ২১ জুন ২০৪টি ইউপিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সীমান্তবর্তী এলাকায় কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ১৬৭টি ইউপির ভোট স্থগিত করা হয়। প্রথম ধাপে স্থগিত ১৬৭টি ইউপির মধ্যে ১৬০টিতে কাল সোমবার ভোট হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, অবশিষ্ট ইউপিগুলোতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোটের আয়োজন করা হবে।