ইভ্যালিতে বিনিয়োগকারীর অর্থ কোথায় গেল, জানতে গোয়েন্দারা মাঠে

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে ক্রেতাদের বিনিয়োগ করা অর্থ কোথায় গেল তা অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ইভ্যালির অর্থ অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়েছে কি না বা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে কি না সে বিষয়েও খোঁজ নেয়া শুরু করেছে গোয়েন্দারা। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী ইভ্যালি ‘বিনিয়োগকারীদের ১ হাজার কোটি টাকা’ আত্মসাৎ করেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের দেনা অনুযায়ী ইভ্যালির সম্পদ নেই। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে বা ইভ্যালির সঙ্গে যুক্তরা জেলে থাকলে গ্রাহকদের টাকা কে পরিশোধ করবে তার কোন পথ দেখছে না ক্ষতিগ্রস্তরা।

এদিকে ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনসহ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ১২ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার ধানমন্ডি থানায় মামলাটি করেন কামরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। যিনি ইভ্যালির পণ্য সরবরাহ করতেন।

অপরদিকে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা ছাড়াও ই-কর্মাসভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকা-, তাদের ব্যবসায়িক কৌশল, প্রতারণা হচ্ছে কি না এসব বিষয়ে তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সিআইডি ছাড়াও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা ইউনিটের গোয়েন্দা টিমগুলো তদন্তে নেমেছে।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তের বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার আসাদুজ্জামান টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, গুলশান থানার মামলায় ইভ্যালির এমডি রাসেলও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে জিজ্ঞাসাবাদের দ্বিতীয় দিন ছিল গতকাল। তাদের বিরুদ্ধে মামলায় যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে নতুন কোন তথ্য নেই। কোন পাওনাদার তাদের কাছে নতুনভাবে কোন অভিযোগ করেননি।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, প্রতারণার অভিযোগ এবং ইভ্যালির বিষয়ে মানুষকে জানাতেই তারা অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাসেলও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করেছেন। গ্রেপ্তার করার পর তাদের র‌্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবদে ইভ্যালিতে যেসব ক্রেতারা টাকা বিনিয়োগ করেছেন পণ্য পাওয়ার আশায় সেইসব টাকা কোথায় গেছে তা জানতে পারেননি। ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করা অর্থ প্রতিষ্ঠানের এমডি ও চেয়ারম্যান অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন কি না বা দেশের বাইরে পাচার করেছেন কি না সে বিষয়েও তারা জানতে পারেননি।

কমান্ডার আল মঈন জানান, এ বিষয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তারা শুধু এমডি ও চেয়ারম্যানকে আটক করেছে। এখন মামলাগুলো যারা তদন্ত করছে তারা বাকি বিষয়গুলো তদন্ত করবেন। আপাতত ইভ্যালির বিষয়ে তারা আর কোন কাজ করছে না।

র‌্যাবের ভাষ্য, ইভ্যালির গ্রাহক সংখ্যা ৪০ লাখ। ৪০ লাখ গ্রাহকের কমবেশি বিনিয়োগ আছে ইভ্যালিতে। শুরু থেকে পণ্য পাওয়ার জন্য টাকা দিয়ে অনেকে পণ্য পেলেও বেশিরভাগ পণ্য পাননি। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীও ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করেছেন। সব মিলিয়ে ইভ্যালিতে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের। ‘একটি প্রতিবেদনে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির দেনা ৪০৩ কোটি টাকা বলা হলেও র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইভ্যালির এমডি বলেছেন, তার এক হাজার কোটি টাকা দায় রয়েছে। ইভ্যালিতে দুই হাজার স্থায়ী এবং ১৩০০ অস্থায়ী কর্মী, অফিস খরচ, ভাড়াসহ মাসে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা খরচ হতো বলে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন রাসেল’।

রাসেল ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন। পরে তিনি একটি ব্যাংকে চাকরি নেন। ২০১৭ সালে চাকরি ছেড়ে ডায়াপারের ব্যবসা শুরু করেন। ‘ওই ব্যবসা বিক্রি করে তিনি এক কোটি টাকা পান। এই সামান্য টাকা দিয়ে ইভ্যালির কার্যক্রম চালু করেন।’

র‌্যাবের কর্মকর্তা কমান্ডার আল মঈন বলেন, বিনিয়োগকারীরা চাইছে ইভ্যালির এমডি রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমার মুক্তি। তারা আন্দোলন করছে, এর নেপথ্যে কিছু আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর নেপথ্যে কারা ইন্দন দিচ্ছে যারা আন্দোলনকারী তারা সত্যিই বিনিয়োগকারী কি না এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে, গোয়েন্দারা কাজ করছে। এমডি রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের প্রতারণার প্রমাণ পেয়েই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন তাদের মুক্তি চেয়ে আন্দোলনের অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সিআইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, ইভ্যালির মামলা থানা পুলিশের কাছে। তবে তারা ছায়া তদন্ত করছে। ইভ্যালির বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ, প্রতারণার যে অভিযোগ ইভ্যালির এমডি ও চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে উঠেছে সে বিষয়ে তারা কাজ করছে। শুধু ইভ্যালিই নয়, ই-কমার্স যত প্রতিষ্ঠান রয়েছে সবগুলোর বিষয়ে তদন্ত করছে সিআইডি। ইতোমধ্যে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে করা মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। ধামাকার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ইভ্যালির মামলা তাদের কাছে দেয়া হলে তারা তদন্ত করবে। অন্য যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে শুরু করেছে তাদের বিষয়েও ছায়া তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি।

তাই যে অর্থ বর্তমানে দেনা হিসেবে আছে, তা অতি স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য পরিমাণ। এর আগে ১৩ আগস্ট ইভ্যালিকে চিঠি দিয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত কোম্পানির সম্পদ ও দায়ের বিবরণ, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে দেনার বিবরণ জানতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর উত্তরায় র‌্যাব সদরদপ্তরে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে এক ব্যক্তি প্রতারণা ও হুমকির অভিযোগ এনে ইভ্যালির এমডি ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করে গুলশান থানায়। পরদিন শুক্রবার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাসেল ও তার স্ত্রীকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় গুলশান থানা পুলিশ। এরপর যশোরে আরও একটি মামলা হয় এমডি ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত শুক্রবার ধানমন্ডি থানায় আরও একটি মামলা হয়। এ মামলায় ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডি ছাড়াও আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়। সব মিলিয়ে ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৩টি।

রাসেল ও ইভ্যালি চেয়ারম্যান শামীমা ছাড়া মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরা হলেন- ভাইস প্রেসিডেন্ট আকাশ (৩৫), ম্যানেজার জাহেদুল ইসলাম হিময় (৩৫), জ্যেষ্ঠ অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার তানভীর আলম (২৫), সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (কমার্শিয়াল) জাওয়াদুল হক চৌধুরী (৩৫), হেড অব অ্যাকাউন্টস সেলিম রেজা (৩৫), অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার জুবায়ের আল মাহমুদ (৩৫), হিসাব বিভাগের সোহেল (২৫), আকিবুর রহমান তূর্য (২৫), সিইও রাসেলের পিএস মো. রেজওয়ান (২৮) ও বাইক ডিপার্টমেন্টের সাকিব রহমান (৩০)। মামলার এজাহারে কামরুল ইসলাম বলেছেন, তিনি মেট্রো কভারেজ, স্মার্ট ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, ফ্রিডম এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট বিডি ও ফিউচার আইটি নামে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি ইভ্যালির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গ্রাহকদের মোট ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার পণ্য সরবরাহ করেছেন। পণ্য সরবরাহের বিপরীতে ইভ্যালি তাদের একটি চেক দিলেও সেই একাউন্টে কোন টাকা ছিল না। এ ঘটনায় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি তারা ইভ্যালির বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি জিডিও (নং-৭০৬) দায়ের করেন। তবু ইভ্যালি তাদের কোন অর্থ পরিশোধ করেনি।

আরও খবর
দুর্নীতিবাজরা যাতে শাস্তি পায় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ রাষ্ট্রপতির
এসআই মামুন হত্যা, ফারিয়ার আত্মসমর্পণ
স্কুল-কলেজ খোলার পর সংক্রমণের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি : শিক্ষামন্ত্রী
কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বিএনপির বৈঠক
জঙ্গি উদ্বুদ্ধকারী বই প্রকাশ ‘এটিবি সদস্য’ গ্রেপ্তার
পাবনায় সরকারি জমি দখল ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় ইউপি চেয়ারম্যানকে সাবেক এমপির হত্যার হুমকি
সামঞ্জস্যপূর্ণ সাজার চর্চা নিশ্চিতে নীতিমালা প্রণয়নে হাইকোর্টের রুল
মিটফোর্ডে নকল-ভেজাল ওষুধের ছড়াছড়ি, অভিযানেও থামছে না
পাবনায় হালাল উপার্জনের প্রলোভনে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, স্কুল শিক্ষিকা গ্রেপ্তার
সৈকতের আলোকচিত্রী, পর্যটকদের অপেক্ষায়

সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৫ আশ্বিন ১৪২৮ ১১ সফর ১৪৪৩

ইভ্যালিতে বিনিয়োগকারীর অর্থ কোথায় গেল, জানতে গোয়েন্দারা মাঠে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে ক্রেতাদের বিনিয়োগ করা অর্থ কোথায় গেল তা অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ইভ্যালির অর্থ অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়েছে কি না বা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে কি না সে বিষয়েও খোঁজ নেয়া শুরু করেছে গোয়েন্দারা। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী ইভ্যালি ‘বিনিয়োগকারীদের ১ হাজার কোটি টাকা’ আত্মসাৎ করেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের দেনা অনুযায়ী ইভ্যালির সম্পদ নেই। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে বা ইভ্যালির সঙ্গে যুক্তরা জেলে থাকলে গ্রাহকদের টাকা কে পরিশোধ করবে তার কোন পথ দেখছে না ক্ষতিগ্রস্তরা।

এদিকে ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনসহ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ১২ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার ধানমন্ডি থানায় মামলাটি করেন কামরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। যিনি ইভ্যালির পণ্য সরবরাহ করতেন।

অপরদিকে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা ছাড়াও ই-কর্মাসভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকা-, তাদের ব্যবসায়িক কৌশল, প্রতারণা হচ্ছে কি না এসব বিষয়ে তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সিআইডি ছাড়াও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা ইউনিটের গোয়েন্দা টিমগুলো তদন্তে নেমেছে।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তের বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার আসাদুজ্জামান টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, গুলশান থানার মামলায় ইভ্যালির এমডি রাসেলও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে জিজ্ঞাসাবাদের দ্বিতীয় দিন ছিল গতকাল। তাদের বিরুদ্ধে মামলায় যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে নতুন কোন তথ্য নেই। কোন পাওনাদার তাদের কাছে নতুনভাবে কোন অভিযোগ করেননি।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, প্রতারণার অভিযোগ এবং ইভ্যালির বিষয়ে মানুষকে জানাতেই তারা অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাসেলও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করেছেন। গ্রেপ্তার করার পর তাদের র‌্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবদে ইভ্যালিতে যেসব ক্রেতারা টাকা বিনিয়োগ করেছেন পণ্য পাওয়ার আশায় সেইসব টাকা কোথায় গেছে তা জানতে পারেননি। ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করা অর্থ প্রতিষ্ঠানের এমডি ও চেয়ারম্যান অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন কি না বা দেশের বাইরে পাচার করেছেন কি না সে বিষয়েও তারা জানতে পারেননি।

কমান্ডার আল মঈন জানান, এ বিষয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তারা শুধু এমডি ও চেয়ারম্যানকে আটক করেছে। এখন মামলাগুলো যারা তদন্ত করছে তারা বাকি বিষয়গুলো তদন্ত করবেন। আপাতত ইভ্যালির বিষয়ে তারা আর কোন কাজ করছে না।

র‌্যাবের ভাষ্য, ইভ্যালির গ্রাহক সংখ্যা ৪০ লাখ। ৪০ লাখ গ্রাহকের কমবেশি বিনিয়োগ আছে ইভ্যালিতে। শুরু থেকে পণ্য পাওয়ার জন্য টাকা দিয়ে অনেকে পণ্য পেলেও বেশিরভাগ পণ্য পাননি। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীও ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করেছেন। সব মিলিয়ে ইভ্যালিতে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের। ‘একটি প্রতিবেদনে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির দেনা ৪০৩ কোটি টাকা বলা হলেও র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইভ্যালির এমডি বলেছেন, তার এক হাজার কোটি টাকা দায় রয়েছে। ইভ্যালিতে দুই হাজার স্থায়ী এবং ১৩০০ অস্থায়ী কর্মী, অফিস খরচ, ভাড়াসহ মাসে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা খরচ হতো বলে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন রাসেল’।

রাসেল ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন। পরে তিনি একটি ব্যাংকে চাকরি নেন। ২০১৭ সালে চাকরি ছেড়ে ডায়াপারের ব্যবসা শুরু করেন। ‘ওই ব্যবসা বিক্রি করে তিনি এক কোটি টাকা পান। এই সামান্য টাকা দিয়ে ইভ্যালির কার্যক্রম চালু করেন।’

র‌্যাবের কর্মকর্তা কমান্ডার আল মঈন বলেন, বিনিয়োগকারীরা চাইছে ইভ্যালির এমডি রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমার মুক্তি। তারা আন্দোলন করছে, এর নেপথ্যে কিছু আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর নেপথ্যে কারা ইন্দন দিচ্ছে যারা আন্দোলনকারী তারা সত্যিই বিনিয়োগকারী কি না এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে, গোয়েন্দারা কাজ করছে। এমডি রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের প্রতারণার প্রমাণ পেয়েই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন তাদের মুক্তি চেয়ে আন্দোলনের অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সিআইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, ইভ্যালির মামলা থানা পুলিশের কাছে। তবে তারা ছায়া তদন্ত করছে। ইভ্যালির বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ, প্রতারণার যে অভিযোগ ইভ্যালির এমডি ও চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে উঠেছে সে বিষয়ে তারা কাজ করছে। শুধু ইভ্যালিই নয়, ই-কমার্স যত প্রতিষ্ঠান রয়েছে সবগুলোর বিষয়ে তদন্ত করছে সিআইডি। ইতোমধ্যে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে করা মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। ধামাকার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ইভ্যালির মামলা তাদের কাছে দেয়া হলে তারা তদন্ত করবে। অন্য যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে শুরু করেছে তাদের বিষয়েও ছায়া তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি।

তাই যে অর্থ বর্তমানে দেনা হিসেবে আছে, তা অতি স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য পরিমাণ। এর আগে ১৩ আগস্ট ইভ্যালিকে চিঠি দিয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত কোম্পানির সম্পদ ও দায়ের বিবরণ, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে দেনার বিবরণ জানতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর উত্তরায় র‌্যাব সদরদপ্তরে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে এক ব্যক্তি প্রতারণা ও হুমকির অভিযোগ এনে ইভ্যালির এমডি ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করে গুলশান থানায়। পরদিন শুক্রবার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাসেল ও তার স্ত্রীকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় গুলশান থানা পুলিশ। এরপর যশোরে আরও একটি মামলা হয় এমডি ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত শুক্রবার ধানমন্ডি থানায় আরও একটি মামলা হয়। এ মামলায় ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডি ছাড়াও আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়। সব মিলিয়ে ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৩টি।

রাসেল ও ইভ্যালি চেয়ারম্যান শামীমা ছাড়া মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরা হলেন- ভাইস প্রেসিডেন্ট আকাশ (৩৫), ম্যানেজার জাহেদুল ইসলাম হিময় (৩৫), জ্যেষ্ঠ অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার তানভীর আলম (২৫), সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (কমার্শিয়াল) জাওয়াদুল হক চৌধুরী (৩৫), হেড অব অ্যাকাউন্টস সেলিম রেজা (৩৫), অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার জুবায়ের আল মাহমুদ (৩৫), হিসাব বিভাগের সোহেল (২৫), আকিবুর রহমান তূর্য (২৫), সিইও রাসেলের পিএস মো. রেজওয়ান (২৮) ও বাইক ডিপার্টমেন্টের সাকিব রহমান (৩০)। মামলার এজাহারে কামরুল ইসলাম বলেছেন, তিনি মেট্রো কভারেজ, স্মার্ট ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, ফ্রিডম এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট বিডি ও ফিউচার আইটি নামে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি ইভ্যালির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গ্রাহকদের মোট ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার পণ্য সরবরাহ করেছেন। পণ্য সরবরাহের বিপরীতে ইভ্যালি তাদের একটি চেক দিলেও সেই একাউন্টে কোন টাকা ছিল না। এ ঘটনায় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি তারা ইভ্যালির বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি জিডিও (নং-৭০৬) দায়ের করেন। তবু ইভ্যালি তাদের কোন অর্থ পরিশোধ করেনি।