রাজধানীর মিটফোর্ড পাইকারি ওষুধ মার্কেটে নকল ভেজাল ওষুধের মহোৎসব চলছে। দুর্নীতিবাজ ওষুধ ব্যবসায়ীরা জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধ নকল তৈরি করে পাইকারি ও খুচরা দোকানে বিক্রি করছে। আবার কেউ কেউ গোডাউনে নকল ওষুধ মজুত করে গোপনে বিক্রি করছে।
বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা একের পর এক অভিযান চালিয়ে ট্রাকভর্তি নকল ভেজাল ওষুধ উদ্ধার করেছে। তারপরও থামছে না নকল ভেজাল ওষুধের ছড়াছড়ি। এ ওষুধ কিনে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। আর রোগীরা এসব ভেজাল ওষুধ খেয়ে আরও বেশি অসুস্থ হচ্ছে।
গত শনিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত গোয়েন্দা পুলিশ ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে মিটফোর্ড পাইকারি ওষুধ মার্কেটে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৮ ধরনের নকল, আনরেজিস্ট্রার্ড ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ওষুধ জব্দ করেছে।
উদ্ধারকৃত ওষুধের মধ্যে ১০০ পিস আই পিল, ১৬০ পিস সুপার গোল্ড কষ্টরি, রেবটনোভিট-সি ২০ এমজি, ৩ হাজার পিস ন্যাপরক্সিন প্লাস-৫০০ ও ২০০ এমজি, ১ হাজার ডাব্লিউসিএম পটোবিট, ১১৫ বক্স ইনো, ৪০০ স্যানাগরা, ১৫শ’ পিস পেরিয়েট্রিন, ৩০০ রিংগার্ড, ৫০০ কোটা হোয়াইট ঢিলড, ৩০০ ভিক্স গোল্ড প্লাস, গ্যাকোজিমা ৪২০ কোটাসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানিয়েছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা মিটফোর্ডে পাইকারি ওষুধ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে নিষিদ্ধ ও জীবন রক্ষাকারী দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ ও ক্রিম বিক্রয় করছে মর্মে তথ্য পায় গোয়েন্দা পুলিশ লালবাগ বিভাগ। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ওষুধ অধিদপ্তরের সহায়তায় সুরেশ্বরী মেডিসিন প্লাজার নিচ তলার মেডিসিন ওয়ার্ল্ড ও অলোকনাথ ড্রাগ হাউস এবং হাজি রানি মেডিসিন মার্কেটের নিচ তলায় রাফসান ফার্মেসিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
রাজধানীর মিটফোর্ড মার্কেটটি ওষুধের পাইকারি বাজার হওয়ায় নকল ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী চক্র সমগ্র দেশব্যাপী নকল ওষুধ ছড়িয়ে দিতে মিটফোর্ড ওষুধ মার্কেটকে ব্যবহার করে আসছে। ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তরা মিটফোর্ড মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী হিসেবে দেশব্যাপী নকল ওষুধ ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অধিক লাভের জন্য এসব দেশি ও বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের ওষুধ ও ক্রিম তাদের সহযোগীদের নিকট হতে সংগ্রহ করে মিটফোর্ড এলাকায় বাজারজাত করে আসছিল। নকল ওষুধ প্রতিরোধে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে। ওষুধ কেনার আগে সেটি রেজিস্টার্ড কি না, তা দেখতে হবে। নকল ওষুধ উৎপাদন, মজুদ ও বাজারজাতকারীদের শনাক্ত করে তাদেরকে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
অভিযানের সময় গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্ত ফয়সাল আহমেদ, সুমন চন্দ্র মল্লিক ও লিটন গাজীর বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত অব্যাহত আছে।
অভিযানের সময় উপস্থিত থাকা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এটিএম কিবরিয়া জানান, অভিযানে প্রায় ১৮ ধরনের ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, গোয়েন্দা পুলিশ বিভিন্ন সময় মিটফোর্ড পাইকারি ওষুধ মার্কেট ঘেরাও করে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে। সেখানে ট্রাকে ট্রাকে ভেজাল ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনা নিয়ে ওষুধ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরপরও ওষুধ প্রশাসন প্রায়ই নকল ও ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এরপরও নকল ওষুধ মিটফোর্ডে অহরহ বিক্রি হচ্ছে।
ওষুধ ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্র জানা গেছে, একটি চক্র পরস্পর যোগসাজশে ওষুধের ভেজাল বা নিম্নমানের কেমিক্যাল বা কাচামাল কিনে যেকোন ওষুধ তারা গোপনে পছন্দের কারখানায় নকল করে তা মিটফোর্ডে নিয়ে যায়। সেখান থেকে সারাদেশের গ্রাম পর্যন্ত খুচরা ওষুধের দোকানের মালিকদের কাছে বিক্রি করে। তারা গ্রামে অসহায় বিপদেপড়া মানুষকে ঠকিয়ে বিক্রি করে। যা খেলে রোগ তো ভালই হয় না। বরং অসুস্থ রোগী আরও বেশি অসুস্থ যায়।
অভিযোগ রয়েছে, মিটফোর্ডে অনেক মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে তিন থেকে চার তলায় গোপন গোডাউনে ভেজাল ওষুধ মজুদ রাখে। অনেক সময় দোকানের ক্যাশ বাক্সে নকল ওষুধ মজুদ রেখে পরিচিত নকল ওষুধ বিক্রয়কারীদের কাছে বিক্রি করে। তারা অন্য ওষুধের সঙ্গে প্যাকেট করে জেলা পর্যায়ে নিয়ে বিক্রি করে। আবার অনেক সময় কুরিয়ার সার্ভিসে এক স্থান থেকে অন্যস্থাতে পাঠিয়ে দেয়।
বিশিষ্ট ওষুধ ব্যবসায়ী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ শেখ ইউনুছ আহমেদ মুঠোফোনে সংবাদকে বলেন, সারা বাংলাদেশ থেকে সব নকলবাজকে উৎখাত করতে হবে। গুটি কয়েক নকলবাজের দায়বার ওষুধ ব্যবসায়ীরা বহন করবে না। শুধু নকলবাজই নয়, তাদের পৃষ্ঠপোষকদের কঠোর শাস্তির দাবি করছেন এই ব্যবসায়ী।
এ নিয়ে গতকাল রাতে ডিবির যুগ্ম কমিশনার সংবাদকে জানান, গ্রেপ্তারকৃত নকলবাজরা আরও কয়েকজনের নাম বলেছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। আর পলাতক নকলবাজদেরকে ধরতে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৫ আশ্বিন ১৪২৮ ১১ সফর ১৪৪৩
বাকী বিল্লাহ
রাজধানীর মিটফোর্ড পাইকারি ওষুধ মার্কেটে নকল ভেজাল ওষুধের মহোৎসব চলছে। দুর্নীতিবাজ ওষুধ ব্যবসায়ীরা জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধ নকল তৈরি করে পাইকারি ও খুচরা দোকানে বিক্রি করছে। আবার কেউ কেউ গোডাউনে নকল ওষুধ মজুত করে গোপনে বিক্রি করছে।
বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা একের পর এক অভিযান চালিয়ে ট্রাকভর্তি নকল ভেজাল ওষুধ উদ্ধার করেছে। তারপরও থামছে না নকল ভেজাল ওষুধের ছড়াছড়ি। এ ওষুধ কিনে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। আর রোগীরা এসব ভেজাল ওষুধ খেয়ে আরও বেশি অসুস্থ হচ্ছে।
গত শনিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত গোয়েন্দা পুলিশ ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে মিটফোর্ড পাইকারি ওষুধ মার্কেটে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৮ ধরনের নকল, আনরেজিস্ট্রার্ড ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ওষুধ জব্দ করেছে।
উদ্ধারকৃত ওষুধের মধ্যে ১০০ পিস আই পিল, ১৬০ পিস সুপার গোল্ড কষ্টরি, রেবটনোভিট-সি ২০ এমজি, ৩ হাজার পিস ন্যাপরক্সিন প্লাস-৫০০ ও ২০০ এমজি, ১ হাজার ডাব্লিউসিএম পটোবিট, ১১৫ বক্স ইনো, ৪০০ স্যানাগরা, ১৫শ’ পিস পেরিয়েট্রিন, ৩০০ রিংগার্ড, ৫০০ কোটা হোয়াইট ঢিলড, ৩০০ ভিক্স গোল্ড প্লাস, গ্যাকোজিমা ৪২০ কোটাসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানিয়েছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা মিটফোর্ডে পাইকারি ওষুধ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে নিষিদ্ধ ও জীবন রক্ষাকারী দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ ও ক্রিম বিক্রয় করছে মর্মে তথ্য পায় গোয়েন্দা পুলিশ লালবাগ বিভাগ। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ওষুধ অধিদপ্তরের সহায়তায় সুরেশ্বরী মেডিসিন প্লাজার নিচ তলার মেডিসিন ওয়ার্ল্ড ও অলোকনাথ ড্রাগ হাউস এবং হাজি রানি মেডিসিন মার্কেটের নিচ তলায় রাফসান ফার্মেসিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
রাজধানীর মিটফোর্ড মার্কেটটি ওষুধের পাইকারি বাজার হওয়ায় নকল ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী চক্র সমগ্র দেশব্যাপী নকল ওষুধ ছড়িয়ে দিতে মিটফোর্ড ওষুধ মার্কেটকে ব্যবহার করে আসছে। ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তরা মিটফোর্ড মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী হিসেবে দেশব্যাপী নকল ওষুধ ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অধিক লাভের জন্য এসব দেশি ও বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের ওষুধ ও ক্রিম তাদের সহযোগীদের নিকট হতে সংগ্রহ করে মিটফোর্ড এলাকায় বাজারজাত করে আসছিল। নকল ওষুধ প্রতিরোধে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে। ওষুধ কেনার আগে সেটি রেজিস্টার্ড কি না, তা দেখতে হবে। নকল ওষুধ উৎপাদন, মজুদ ও বাজারজাতকারীদের শনাক্ত করে তাদেরকে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
অভিযানের সময় গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্ত ফয়সাল আহমেদ, সুমন চন্দ্র মল্লিক ও লিটন গাজীর বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত অব্যাহত আছে।
অভিযানের সময় উপস্থিত থাকা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এটিএম কিবরিয়া জানান, অভিযানে প্রায় ১৮ ধরনের ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, গোয়েন্দা পুলিশ বিভিন্ন সময় মিটফোর্ড পাইকারি ওষুধ মার্কেট ঘেরাও করে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে। সেখানে ট্রাকে ট্রাকে ভেজাল ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনা নিয়ে ওষুধ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরপরও ওষুধ প্রশাসন প্রায়ই নকল ও ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এরপরও নকল ওষুধ মিটফোর্ডে অহরহ বিক্রি হচ্ছে।
ওষুধ ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্র জানা গেছে, একটি চক্র পরস্পর যোগসাজশে ওষুধের ভেজাল বা নিম্নমানের কেমিক্যাল বা কাচামাল কিনে যেকোন ওষুধ তারা গোপনে পছন্দের কারখানায় নকল করে তা মিটফোর্ডে নিয়ে যায়। সেখান থেকে সারাদেশের গ্রাম পর্যন্ত খুচরা ওষুধের দোকানের মালিকদের কাছে বিক্রি করে। তারা গ্রামে অসহায় বিপদেপড়া মানুষকে ঠকিয়ে বিক্রি করে। যা খেলে রোগ তো ভালই হয় না। বরং অসুস্থ রোগী আরও বেশি অসুস্থ যায়।
অভিযোগ রয়েছে, মিটফোর্ডে অনেক মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে তিন থেকে চার তলায় গোপন গোডাউনে ভেজাল ওষুধ মজুদ রাখে। অনেক সময় দোকানের ক্যাশ বাক্সে নকল ওষুধ মজুদ রেখে পরিচিত নকল ওষুধ বিক্রয়কারীদের কাছে বিক্রি করে। তারা অন্য ওষুধের সঙ্গে প্যাকেট করে জেলা পর্যায়ে নিয়ে বিক্রি করে। আবার অনেক সময় কুরিয়ার সার্ভিসে এক স্থান থেকে অন্যস্থাতে পাঠিয়ে দেয়।
বিশিষ্ট ওষুধ ব্যবসায়ী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ শেখ ইউনুছ আহমেদ মুঠোফোনে সংবাদকে বলেন, সারা বাংলাদেশ থেকে সব নকলবাজকে উৎখাত করতে হবে। গুটি কয়েক নকলবাজের দায়বার ওষুধ ব্যবসায়ীরা বহন করবে না। শুধু নকলবাজই নয়, তাদের পৃষ্ঠপোষকদের কঠোর শাস্তির দাবি করছেন এই ব্যবসায়ী।
এ নিয়ে গতকাল রাতে ডিবির যুগ্ম কমিশনার সংবাদকে জানান, গ্রেপ্তারকৃত নকলবাজরা আরও কয়েকজনের নাম বলেছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। আর পলাতক নকলবাজদেরকে ধরতে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।