শিক্ষা হোক বৈষম্যহীন

করোনা মহামারীতে সারা দেশের মানুষ বিপর্যস্ত। আমাদের দেশে সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীদের জীবন হুমকির মুখে। করোনার শুরু থেকেই হাট-বাজার, অফিস-আদালত, পরিবহন ও কল-কারখানা সবকিছু খোলা ছিল। কিন্তু নজিরবিহীনভাবে পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় দীর্ঘতম সময় ধরে বন্ধ রেখে, গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল ও কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসের দাবিতে আন্দোলন করছে। আজ থেকে ৫৯ বছর আগে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক শাসক আইয়ুব খানের চাপিয়ে দেওয়া ‘শরীফ কমিশন’র শিক্ষানীতি প্রতিহত করতে গড়ে উঠেছিল ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন। সর্বপ্রথম স্নাতক শ্রেণীর ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করে এ কমিশনের বিরুদ্ধে। ১৯৬২ সালে পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ নাম না জানা অনেকে। বাঙালি জাতির জন্য নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয় ১৭ সেপ্টেম্বর মহান শিক্ষা দিবস। তবে শিক্ষার সংকট নিরসনের এখনও আন্দোলন চলছে। শিক্ষা দিবস সম্পর্কে আমাদের শিক্ষার্থীরা কতজনই বা জানে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী শিক্ষা সংকোচনমূলক নীতির প্রতিবাদে এবং একটি গণমুখী শিক্ষানীতি প্রবর্তনের দাবিতে ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত দিন এটি। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আমাদের দেশে যতগুলো সরকার ক্ষমতায় এসেছে তাদের ছাত্রসংগঠন শিক্ষা দিবস পালনে বাধা দিয়েছে। এমন কি রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হয় না। যে জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যে যত বেশি দুর্বল সেই জাতি শিক্ষায় তত বেশি অনুন্নত। তাই একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তার শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিলেই হয়। আমাদের জাতিকে সেই পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি না তো? এই ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রকে শিশু শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সরকারি উদ্যোগে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে মাস্ক দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে প্রবেশ করে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের টিকাদান নিশ্চিত করতে হবে। দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে ছুটির দিনে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা, বাল্যবিবাহ রোধে প্রশাসনের নজরদারি করা, গরিব পরিবারগুলোকে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে ড্রপআউট ও শিশু অপুষ্টি দূর করতে হবে। বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি মওকুফ করতে হবে। আগামী দশকে বাংলাদেশকে বিশ্বমানে পৌঁছাতে হলে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসাবে রাষ্ট্রকে বাস্তবায়ন করতে হবে।

রাশেদ ইসলাম

শিক্ষার্থী, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ

আরও খবর

সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৫ আশ্বিন ১৪২৮ ১১ সফর ১৪৪৩

শিক্ষা হোক বৈষম্যহীন

করোনা মহামারীতে সারা দেশের মানুষ বিপর্যস্ত। আমাদের দেশে সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীদের জীবন হুমকির মুখে। করোনার শুরু থেকেই হাট-বাজার, অফিস-আদালত, পরিবহন ও কল-কারখানা সবকিছু খোলা ছিল। কিন্তু নজিরবিহীনভাবে পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় দীর্ঘতম সময় ধরে বন্ধ রেখে, গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল ও কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসের দাবিতে আন্দোলন করছে। আজ থেকে ৫৯ বছর আগে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক শাসক আইয়ুব খানের চাপিয়ে দেওয়া ‘শরীফ কমিশন’র শিক্ষানীতি প্রতিহত করতে গড়ে উঠেছিল ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন। সর্বপ্রথম স্নাতক শ্রেণীর ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করে এ কমিশনের বিরুদ্ধে। ১৯৬২ সালে পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ নাম না জানা অনেকে। বাঙালি জাতির জন্য নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয় ১৭ সেপ্টেম্বর মহান শিক্ষা দিবস। তবে শিক্ষার সংকট নিরসনের এখনও আন্দোলন চলছে। শিক্ষা দিবস সম্পর্কে আমাদের শিক্ষার্থীরা কতজনই বা জানে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী শিক্ষা সংকোচনমূলক নীতির প্রতিবাদে এবং একটি গণমুখী শিক্ষানীতি প্রবর্তনের দাবিতে ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত দিন এটি। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আমাদের দেশে যতগুলো সরকার ক্ষমতায় এসেছে তাদের ছাত্রসংগঠন শিক্ষা দিবস পালনে বাধা দিয়েছে। এমন কি রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হয় না। যে জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যে যত বেশি দুর্বল সেই জাতি শিক্ষায় তত বেশি অনুন্নত। তাই একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তার শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিলেই হয়। আমাদের জাতিকে সেই পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি না তো? এই ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রকে শিশু শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সরকারি উদ্যোগে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে মাস্ক দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে প্রবেশ করে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের টিকাদান নিশ্চিত করতে হবে। দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে ছুটির দিনে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা, বাল্যবিবাহ রোধে প্রশাসনের নজরদারি করা, গরিব পরিবারগুলোকে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে ড্রপআউট ও শিশু অপুষ্টি দূর করতে হবে। বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি মওকুফ করতে হবে। আগামী দশকে বাংলাদেশকে বিশ্বমানে পৌঁছাতে হলে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসাবে রাষ্ট্রকে বাস্তবায়ন করতে হবে।

রাশেদ ইসলাম

শিক্ষার্থী, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ