মামলা হলো ১০ বছর পর কেন? প্রশ্ন বিশিষ্টজনদের
দীর্ঘ ১০ বছর ধরে অনুসন্ধানের পর অবশেষে রংপুর মেডিকেল কলেজের জন্য পাঁচটি ডেন্টাল চেয়ার কেনার নামে প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। গত মঙ্গলবার দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। বিকেলে মামলা দায়ের করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।
তবে রংপুর মেডিকেল কলেজে ডেন্টাল চেয়ার কেনার নামে দূর্নীতীর অনুসন্ধান ১০ বছর আগেই শুরু করেছিল দুদক কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছর পর কেন মামলাটি রুজু করা হলো দুদকের এ কর্মকান্ড নিয়ে রংপুরের বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তুলেছে। মূলত পুরো ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার অনেক অপচেষ্টা করা হয়েছিল বলেই দুদক বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মামলাটি তদন্ত করার ব্যাপারে আগ্রহ ছিল না। ফলে দুদক কেন একটি অভিযোগের মামলা রুজু করতে দীর্ঘ ১০ বছর দেরি করলো, আর এ ঘটনার সঙ্গে দুদকের কারা কারা জড়িত পুরো বিষয়টি তদন্ত করার দাবি উঠেছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, মামলার আসামিরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বহুল আলোচিত ডন মোতাজ্জিরুল ইসলাম মিঠুর বড় ভাই মার্চেন্টাইজড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ মোকসেদুল ইসলাম ও রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবদুর রউফ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকায় পাঁচটি ডেন্টাল চেয়ার ও চেয়ারের এক্সেসরিজ ক্রয় করে রংপুর মেডিকেল কলেজ। কিন্তু বাজারদর বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞদের তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা বেশি দামে এ কেনাকাটা করা হয়েছিল। তৎকালীন অধ্যক্ষ ডা. আবদুর রউফ ও ঠিকাদার মোহাম্মদ মোকসেদুল ইসলাম ডেন্টাল চেয়ার কেনার নামে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন। যেখানে ক্রয় পরিকল্পনা, বাজারদর যাচাই, অফিসিয়াল প্রাক্কলন প্রস্তুত, টেন্ডার ওপেনিং কমিটি ও কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গঠনসহ কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা এবং কোন শর্তই পালন করা হয়নি বলে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে। সে কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইনের ৪০৯/১০৯/৪২০/৪৬৫/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে দুদক রংপুর সমন্বিত কার্যালয়ের প্রধান উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল একটি দুর্নীতির ঘটনা কাগজপত্রে সব প্রমাণ থাকার পরও কেন অনুসন্ধানের নামে দীর্ঘ ১০ বছর বিলম্ব করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করেছে দুদকের ঢাকার টিম। তারা কেন বিলম্ব করেছে এর উত্তর আমার জানা নেই।
এদিকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে অনুসন্ধানের নামে দুদকের বিলম্ব করার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দুদকের সহযোগী সংগঠন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছিল। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হলে অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুত অনুসন্ধান করে মামলা দায়ের করে অভিযুক্তদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দুদকের দায়িত্ব। তাই বলে দীর্ঘ দিন পর মামলা রুজু করা খতিয়ে দেখা দরকার। সেই সঙ্গে রংপুরে আরও অনেক দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে দুদক দ্রুততার সঙ্গে সেগুলোর তদন্ত শেষ করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে- এ দাবি জানান তিনি।
এদিকে সুজন রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম বেজ্ঞু জানান, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। সময়মতো তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন না দিলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। কেন একটি ঘটনার অনুসন্ধান করার নামে দীর্ঘ ১০ বছর বিলম্ব হলো দুদককেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে জানান তিনি।
শুক্রবার, ০৮ অক্টোবর ২০২১ , ২৩ আশ্বিন ১৪২৮ ৩০ সফর ১৪৪৩
মামলা হলো ১০ বছর পর কেন? প্রশ্ন বিশিষ্টজনদের
লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
দীর্ঘ ১০ বছর ধরে অনুসন্ধানের পর অবশেষে রংপুর মেডিকেল কলেজের জন্য পাঁচটি ডেন্টাল চেয়ার কেনার নামে প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। গত মঙ্গলবার দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। বিকেলে মামলা দায়ের করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।
তবে রংপুর মেডিকেল কলেজে ডেন্টাল চেয়ার কেনার নামে দূর্নীতীর অনুসন্ধান ১০ বছর আগেই শুরু করেছিল দুদক কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছর পর কেন মামলাটি রুজু করা হলো দুদকের এ কর্মকান্ড নিয়ে রংপুরের বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তুলেছে। মূলত পুরো ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার অনেক অপচেষ্টা করা হয়েছিল বলেই দুদক বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মামলাটি তদন্ত করার ব্যাপারে আগ্রহ ছিল না। ফলে দুদক কেন একটি অভিযোগের মামলা রুজু করতে দীর্ঘ ১০ বছর দেরি করলো, আর এ ঘটনার সঙ্গে দুদকের কারা কারা জড়িত পুরো বিষয়টি তদন্ত করার দাবি উঠেছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, মামলার আসামিরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বহুল আলোচিত ডন মোতাজ্জিরুল ইসলাম মিঠুর বড় ভাই মার্চেন্টাইজড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ মোকসেদুল ইসলাম ও রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবদুর রউফ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকায় পাঁচটি ডেন্টাল চেয়ার ও চেয়ারের এক্সেসরিজ ক্রয় করে রংপুর মেডিকেল কলেজ। কিন্তু বাজারদর বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞদের তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা বেশি দামে এ কেনাকাটা করা হয়েছিল। তৎকালীন অধ্যক্ষ ডা. আবদুর রউফ ও ঠিকাদার মোহাম্মদ মোকসেদুল ইসলাম ডেন্টাল চেয়ার কেনার নামে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন। যেখানে ক্রয় পরিকল্পনা, বাজারদর যাচাই, অফিসিয়াল প্রাক্কলন প্রস্তুত, টেন্ডার ওপেনিং কমিটি ও কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গঠনসহ কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা এবং কোন শর্তই পালন করা হয়নি বলে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে। সে কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইনের ৪০৯/১০৯/৪২০/৪৬৫/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে দুদক রংপুর সমন্বিত কার্যালয়ের প্রধান উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল একটি দুর্নীতির ঘটনা কাগজপত্রে সব প্রমাণ থাকার পরও কেন অনুসন্ধানের নামে দীর্ঘ ১০ বছর বিলম্ব করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করেছে দুদকের ঢাকার টিম। তারা কেন বিলম্ব করেছে এর উত্তর আমার জানা নেই।
এদিকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে অনুসন্ধানের নামে দুদকের বিলম্ব করার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দুদকের সহযোগী সংগঠন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছিল। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হলে অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুত অনুসন্ধান করে মামলা দায়ের করে অভিযুক্তদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দুদকের দায়িত্ব। তাই বলে দীর্ঘ দিন পর মামলা রুজু করা খতিয়ে দেখা দরকার। সেই সঙ্গে রংপুরে আরও অনেক দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে দুদক দ্রুততার সঙ্গে সেগুলোর তদন্ত শেষ করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে- এ দাবি জানান তিনি।
এদিকে সুজন রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম বেজ্ঞু জানান, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। সময়মতো তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন না দিলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। কেন একটি ঘটনার অনুসন্ধান করার নামে দীর্ঘ ১০ বছর বিলম্ব হলো দুদককেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে জানান তিনি।