চান্দিনায় কিশোরী সালমা হত্যা

সম্পত্তির লোভে ভাতিজাকে ফাঁসাতে বাবা খুন করে মেয়েকে

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামে সম্পত্তির লোভে ভাতিজাদের ফাঁসাতে নিজের ১৪ বছর বয়সী মাদ্রাসা পড়ুয়া কিশোরী সালমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে এক পাষন্ড পিতা। পরে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ ও সন্দেহের তীর প্রতিপক্ষের দিকে ঘুরাতে নিজের গলায় ছুরিকাঘাত করে। পাষন্ড ওই পিতার নাম মো. সোলেমান। সে বসন্তপুর গ্রামের মৃত আদম আলীর ছেলে। সোলেমান বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

১ অক্টোবর সন্ধ্যায় হত্যা করা হয় সালমাকে

সালমা হত্যাকান্ডে সোলেমানের সঙ্গে তার দুই ভাইসহ মোট ৭ জন অংশ নেয়। এদের মধ্যে বসন্তপুর গ্রামের মৃত শরবত আলীর ছেলে আবদুর রহমান (৬০) ও মৃত অলি মিয়ার ছেলে মো. খলিলকে (৪২) চান্দিনা থানা পুলিশ বুধবার বসন্তপুর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে। ওই রাতেই কুমিল্লার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় গ্রেপ্তার হওয়া আবদুর রহমান ও খলিল। হত্যাকান্ডের এক সপ্তাহের মধ্যেই হত্যার রহস্য উদঘাটন করে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ওই দুইজনকে আটক করে পুলিশ। রহস্য উন্মোচন করে গতকাল সকাল ১১টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর। এ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন হওয়ার পর স্তম্ভিত হয়ে পড়ে চান্দিনার গল্লাই ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামসহ গোটা উপজেলাবাসী।

জানা যায়, বসন্তপুর গ্রামের মো. সোলেমানের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল তার আপন ভাতিজা শাহজালাল ও শাহ কামাল-এর সঙ্গে। তাদের ওই সম্পত্তি একাধিকবার দখলে নেয়ার চেষ্টা করেন সোলেমান। ওই ঘটনায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এতে সোলেমানের স্ত্রী সামান্য আহত হওয়ায় থানায় মামলা করেন সোলেমান। কিন্তু ওই মামলায় হত্যা চেষ্টার ধারা-৩২৬ যুক্ত না হওয়ায় ভাতিজাদের ফাঁসাতে হত্যা মামলার পরিকল্পনা করেন।

সোলেমানকে সহযোগিতাকারী সাতজনের পরিকল্পনায় গত ১ অক্টোবর বিকেলে সোলেমান তার স্ত্রী ও বড় মেয়েকে হাসপাতাল থেকে শ্বশুরবাড়ি চান্দিনার রাণীচরা গ্রামে পৌঁছে দিয়ে আসেন। দুই ছেলে ঢাকার একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার সুবাদে সেই রাতে বাড়িতে ছিলেন সোলেমান ও তার ছোট মেয়ে সালমা আক্তার (১৪)।

সন্ধ্যার পর পিতা সোলেমান ও তার মেয়ে সালমা রাতের খাবার শেষে মেয়েকে ঘরে রেখে বাহির হয়ে যান। ওই রাতে উকিল শ্বশুর আবদুর রহমানের ঘরে হত্যার পরিকল্পনা করে গভীর রাতে মেয়েকে প্রথমে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। পরে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গলা কেটে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতারি কুপিয়ে জখম করে। মরদেহ পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেয়। ওই ঘটনার পরদিন ভাতিজাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন সোলেমান ব্যাপারি। ওই মামলার পর থেকে এলাকা ছাড়া মামলার আসামিরা।

এদিকে, হত্যাকান্ডের ঘটনার পর থেকেই রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পুলিশ। তদন্তের তীর যখন পিতা সোলেমানের দিকে তখন পুলিশের সন্দেহের বিষয়টি আঁচ করতে পারেন সোলেমান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুজন দত্ত গত ৪ অক্টোবর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ইসমাইল হোসেনকে ফোন করে মামলার বাদী সোলেমানকে নিয়ে সন্ধ্যায় থানায় আসার জন্য বললে ওইদিন সন্ধ্যার পর থেকে নিখোঁজ হন সোলেমান। সোলেমানের পরিবারও থানায় ফোন করে নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সোলেমান নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন।

পরদিন মঙ্গলবার ভোরে বাড়ির পাশের একটি বাগানে গলায় ও দুই পায়ে ছুরিকাঘাত অবস্থায় পাওয়া যায় সোলেমানকে। জিজ্ঞাসাবাদে আহত সোলেমান পুলিশকে জানায়, তার ভাতিজরাসহ অন্যান্য আসামিরা তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু ওই ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ আরও ঘনিভূত হয়। সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে চলে তদন্তের গভীরতা। এক পর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়ে বুধবার আবদুর রহমান ও খলিলকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কিশোরী সালমা হত্যাকান্ড এবং পুলিশের সন্দেহ এড়াতে সোলেমানের গলায় ছুরিকাঘাত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তারা। পরে রাতেই বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আটক আবদুর রহমান ও খলিল মিয়া।

চান্দিনা থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, সোলেমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে আমাদের পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।

মামলার বিষয়টি জানতে চাইলে ওসি আরও বলেন, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা গ্রহণ করা হবে। নিহত সালমা আক্তারের পিতা সোলেমান বাদী হয়ে যে হত্যা মামলা করেছেন সেই মামলায় প্রতিপক্ষ কাউকে হয়রানি করা হবে না এবং ওই মামলার বিষয়ে সিনিয়র অফিসার ও বিজ্ঞ আদালতের পরামর্শক্রমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আফজাল হোসেন ও চান্দিনা থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফুর রহমান।

image

চান্দিনায় কিশোরী সালমা হত্যা মামলায় আটক আবদুর রহমান ও খলিল। হাসপাতালে ভর্তি পাষ- পিতা সোলেমান -সংবাদ

আরও খবর
জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বাড়ছে ডেঙ্গুসহ সংক্রমণ রোগ
এসএসসি পরীক্ষা, মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম শুরু ১৭ অক্টোবর
থামছে না ডেঙ্গু ৭ দিনে আক্রান্ত ১৩৪৭ জন, মৃত্যু ৪
সাহিত্যে নোবেল পেলেন আবদুর রাজাক গুরনাহ
সাহেদের সঙ্গে আপনার এত ‘মহব্বত’ কীভাবে : প্রশ্ন বিচারকের
এসকে সিনহার বিরুদ্ধে এবার অবৈধ টাকায় বাড়ি করার মামলা
৫টি চেয়ার কেনার নামে দুই কোটি টাকার দুর্নীতি
১৭ অক্টোবর থেকে ক্লাসে ফিরছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা
দেশে টিকা তৈরির পর বিদেশেও রপ্তানি করা হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

শুক্রবার, ০৮ অক্টোবর ২০২১ , ২৩ আশ্বিন ১৪২৮ ৩০ সফর ১৪৪৩

চান্দিনায় কিশোরী সালমা হত্যা

সম্পত্তির লোভে ভাতিজাকে ফাঁসাতে বাবা খুন করে মেয়েকে

প্রতিনিধি, চান্দিনা (কুমিল্লা)

image

চান্দিনায় কিশোরী সালমা হত্যা মামলায় আটক আবদুর রহমান ও খলিল। হাসপাতালে ভর্তি পাষ- পিতা সোলেমান -সংবাদ

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামে সম্পত্তির লোভে ভাতিজাদের ফাঁসাতে নিজের ১৪ বছর বয়সী মাদ্রাসা পড়ুয়া কিশোরী সালমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে এক পাষন্ড পিতা। পরে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ ও সন্দেহের তীর প্রতিপক্ষের দিকে ঘুরাতে নিজের গলায় ছুরিকাঘাত করে। পাষন্ড ওই পিতার নাম মো. সোলেমান। সে বসন্তপুর গ্রামের মৃত আদম আলীর ছেলে। সোলেমান বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

১ অক্টোবর সন্ধ্যায় হত্যা করা হয় সালমাকে

সালমা হত্যাকান্ডে সোলেমানের সঙ্গে তার দুই ভাইসহ মোট ৭ জন অংশ নেয়। এদের মধ্যে বসন্তপুর গ্রামের মৃত শরবত আলীর ছেলে আবদুর রহমান (৬০) ও মৃত অলি মিয়ার ছেলে মো. খলিলকে (৪২) চান্দিনা থানা পুলিশ বুধবার বসন্তপুর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে। ওই রাতেই কুমিল্লার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় গ্রেপ্তার হওয়া আবদুর রহমান ও খলিল। হত্যাকান্ডের এক সপ্তাহের মধ্যেই হত্যার রহস্য উদঘাটন করে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ওই দুইজনকে আটক করে পুলিশ। রহস্য উন্মোচন করে গতকাল সকাল ১১টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর। এ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন হওয়ার পর স্তম্ভিত হয়ে পড়ে চান্দিনার গল্লাই ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামসহ গোটা উপজেলাবাসী।

জানা যায়, বসন্তপুর গ্রামের মো. সোলেমানের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল তার আপন ভাতিজা শাহজালাল ও শাহ কামাল-এর সঙ্গে। তাদের ওই সম্পত্তি একাধিকবার দখলে নেয়ার চেষ্টা করেন সোলেমান। ওই ঘটনায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এতে সোলেমানের স্ত্রী সামান্য আহত হওয়ায় থানায় মামলা করেন সোলেমান। কিন্তু ওই মামলায় হত্যা চেষ্টার ধারা-৩২৬ যুক্ত না হওয়ায় ভাতিজাদের ফাঁসাতে হত্যা মামলার পরিকল্পনা করেন।

সোলেমানকে সহযোগিতাকারী সাতজনের পরিকল্পনায় গত ১ অক্টোবর বিকেলে সোলেমান তার স্ত্রী ও বড় মেয়েকে হাসপাতাল থেকে শ্বশুরবাড়ি চান্দিনার রাণীচরা গ্রামে পৌঁছে দিয়ে আসেন। দুই ছেলে ঢাকার একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার সুবাদে সেই রাতে বাড়িতে ছিলেন সোলেমান ও তার ছোট মেয়ে সালমা আক্তার (১৪)।

সন্ধ্যার পর পিতা সোলেমান ও তার মেয়ে সালমা রাতের খাবার শেষে মেয়েকে ঘরে রেখে বাহির হয়ে যান। ওই রাতে উকিল শ্বশুর আবদুর রহমানের ঘরে হত্যার পরিকল্পনা করে গভীর রাতে মেয়েকে প্রথমে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। পরে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গলা কেটে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতারি কুপিয়ে জখম করে। মরদেহ পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেয়। ওই ঘটনার পরদিন ভাতিজাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন সোলেমান ব্যাপারি। ওই মামলার পর থেকে এলাকা ছাড়া মামলার আসামিরা।

এদিকে, হত্যাকান্ডের ঘটনার পর থেকেই রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পুলিশ। তদন্তের তীর যখন পিতা সোলেমানের দিকে তখন পুলিশের সন্দেহের বিষয়টি আঁচ করতে পারেন সোলেমান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুজন দত্ত গত ৪ অক্টোবর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ইসমাইল হোসেনকে ফোন করে মামলার বাদী সোলেমানকে নিয়ে সন্ধ্যায় থানায় আসার জন্য বললে ওইদিন সন্ধ্যার পর থেকে নিখোঁজ হন সোলেমান। সোলেমানের পরিবারও থানায় ফোন করে নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সোলেমান নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন।

পরদিন মঙ্গলবার ভোরে বাড়ির পাশের একটি বাগানে গলায় ও দুই পায়ে ছুরিকাঘাত অবস্থায় পাওয়া যায় সোলেমানকে। জিজ্ঞাসাবাদে আহত সোলেমান পুলিশকে জানায়, তার ভাতিজরাসহ অন্যান্য আসামিরা তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু ওই ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ আরও ঘনিভূত হয়। সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে চলে তদন্তের গভীরতা। এক পর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়ে বুধবার আবদুর রহমান ও খলিলকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কিশোরী সালমা হত্যাকান্ড এবং পুলিশের সন্দেহ এড়াতে সোলেমানের গলায় ছুরিকাঘাত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তারা। পরে রাতেই বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আটক আবদুর রহমান ও খলিল মিয়া।

চান্দিনা থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, সোলেমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে আমাদের পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।

মামলার বিষয়টি জানতে চাইলে ওসি আরও বলেন, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা গ্রহণ করা হবে। নিহত সালমা আক্তারের পিতা সোলেমান বাদী হয়ে যে হত্যা মামলা করেছেন সেই মামলায় প্রতিপক্ষ কাউকে হয়রানি করা হবে না এবং ওই মামলার বিষয়ে সিনিয়র অফিসার ও বিজ্ঞ আদালতের পরামর্শক্রমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আফজাল হোসেন ও চান্দিনা থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফুর রহমান।