মাদকাসক্ত সন্তানকে দ্রুত চিকিৎসা দিন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কারও সন্তান মাদকাসক্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, আপনাদের সন্তান যখন মাদকাসক্ত হয়, তখন আপনারা প্রকাশ করতে চান না। ভাবেন সমাজের মানুষ কী বলবে। কিন্তু যখন একটা ক্ষতি হয়ে যাবে, তখন কেঁদেও কূল পাবেন না। যখন আপনার সন্তান মাদকাসক্ত হয়, তখন তাকে চিকিৎসার দোরগোড়ায় নিয়ে আসুন। গতকাল ঢাকার কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি ৮০ লাখ মাদকাসক্ত থেকে আট লাখেও আনতে পারিÑএটাও আমাদের একটা সফলতা বয়ে আনবে। তবে দেশে ৮০ লাখের বেশি মাদক সেবী থাকলেও মাদক নিরাময়কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ৩৭৪টি। যেখানে মাত্র পাঁচ হাজার রোগী একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে পারে। এই নগণ্য সংখ্যক নিরাময়কেন্দ্রগুলোতেও সমস্যার শেষ নেই। সেই জায়গায় ওয়েসিস নিরাময়কেন্দ্র অন্য মাত্রা যোগ করবে। মাদকের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর ও ঐশীসহ বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে মাদকের চাহিদা, সরবরাহ ও ক্ষতি কমাতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমাদের জেলখানায় যে আসামি রয়েছে তার দ্বিগুণেরও বেশি মাদক মামলার আসামি। জঙ্গি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পুলিশ বাহিনীর প্রচেষ্টায় আমরা সফল হয়েছি। মাদকের বিরুদ্ধেও প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেই যুদ্ধেই আমরা অবতীর্ণ। এ যুদ্ধে আমাদের জয় হতেই হবে। না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা রক্ষা করতে পারব না। এখন কেউ প্রকাশ্যে ধূমপান করেন না। আমাদের দেশে মাদক তৈরি হয় না। কিন্তু আমরা এর ভয়াবহতার শিকার। মাদকের সরবরাহ, চাহিদা এবং এর ক্ষতি হ্রাস করার জন্য আমরা কাজ করছি। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। চাহিদা হ্রাসে এলাকার যারা জনপ্রতিনিধি আছেন তাদের কাছে আহ্বান রাখব, আপনার সবাইকে উদ্বুদ্ধ করুন, জানান। এটা যদি আমরা কন্ট্রোল করতে না পারি, নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তাহলে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম শেষ হয়ে যাবে। আমরা ২০৪১ যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি সেখানে হোঁচট খাব। সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, পুলিশ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন এবং সমাজে নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখছে। করোনা মোকাবিলায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। ওয়েসিস নিরাময়কেন্দ্রটি যাতে ভালোভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যত ধরনের সাপোর্ট দরকার করা হবেÑ অ্যাম্বুলেন্স লাগলে দেয়া হবে। একই সঙ্গে দেশের লাখ লাখ মাদকসেবীকে সঠিক পথে ফেরাতে অন্যরা যেন ওয়াসিসের মতো আরও নিরাময়কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়, সেই আহ্বান জানাচ্ছি।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদারতার কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার ভ্যাকসিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছেন এবং বলেছেন, প্রত্যেক নাগরিকের ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে যত টাকা লাগে দেয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগে বলেছিল, মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ টিকা ফ্রি দেয়া হবে। পরে ৪০ শতাংশ টিকা ফ্রি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে করোনার টিকা তৈরির সরঞ্জাম ও কাঁচামাল দেয়ার কথা জানিয়েছে। এতে বাংলাদেশ টিকা রপ্তানিও করতে পারবে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপু বলেন, মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় ওয়েসিসের মতো একটি আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করায় বর্তমান আইজিপির প্রশংসা করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, মাদকাসক্তদের রোগের নিরাময় করলেই হবে না। এর সঙ্গে সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করা পুলিশের দায়িত্ব নয়। তবুও পুলিশ ওয়েসিসের মতো একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করায় আইজিপিকে ধন্যবাদ জানান।

সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ধনী-গরিব নির্বিশেষে মাদকাসক্ত সদস্যদের নিয়ে পরিবারের দুর্ভোগের ভয়াবহ করুণ চিত্র আমি দেখেছি। সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের গোপনে চোখের পানি ফেলতে দেখেছি। আবার অনেকের মতে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮০ লাখ।

শুক্রবার, ০৮ অক্টোবর ২০২১ , ২৩ আশ্বিন ১৪২৮ ৩০ সফর ১৪৪৩

মাদকাসক্ত সন্তানকে দ্রুত চিকিৎসা দিন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

image

কারও সন্তান মাদকাসক্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, আপনাদের সন্তান যখন মাদকাসক্ত হয়, তখন আপনারা প্রকাশ করতে চান না। ভাবেন সমাজের মানুষ কী বলবে। কিন্তু যখন একটা ক্ষতি হয়ে যাবে, তখন কেঁদেও কূল পাবেন না। যখন আপনার সন্তান মাদকাসক্ত হয়, তখন তাকে চিকিৎসার দোরগোড়ায় নিয়ে আসুন। গতকাল ঢাকার কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি ৮০ লাখ মাদকাসক্ত থেকে আট লাখেও আনতে পারিÑএটাও আমাদের একটা সফলতা বয়ে আনবে। তবে দেশে ৮০ লাখের বেশি মাদক সেবী থাকলেও মাদক নিরাময়কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ৩৭৪টি। যেখানে মাত্র পাঁচ হাজার রোগী একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে পারে। এই নগণ্য সংখ্যক নিরাময়কেন্দ্রগুলোতেও সমস্যার শেষ নেই। সেই জায়গায় ওয়েসিস নিরাময়কেন্দ্র অন্য মাত্রা যোগ করবে। মাদকের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর ও ঐশীসহ বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে মাদকের চাহিদা, সরবরাহ ও ক্ষতি কমাতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমাদের জেলখানায় যে আসামি রয়েছে তার দ্বিগুণেরও বেশি মাদক মামলার আসামি। জঙ্গি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পুলিশ বাহিনীর প্রচেষ্টায় আমরা সফল হয়েছি। মাদকের বিরুদ্ধেও প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেই যুদ্ধেই আমরা অবতীর্ণ। এ যুদ্ধে আমাদের জয় হতেই হবে। না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা রক্ষা করতে পারব না। এখন কেউ প্রকাশ্যে ধূমপান করেন না। আমাদের দেশে মাদক তৈরি হয় না। কিন্তু আমরা এর ভয়াবহতার শিকার। মাদকের সরবরাহ, চাহিদা এবং এর ক্ষতি হ্রাস করার জন্য আমরা কাজ করছি। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। চাহিদা হ্রাসে এলাকার যারা জনপ্রতিনিধি আছেন তাদের কাছে আহ্বান রাখব, আপনার সবাইকে উদ্বুদ্ধ করুন, জানান। এটা যদি আমরা কন্ট্রোল করতে না পারি, নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তাহলে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম শেষ হয়ে যাবে। আমরা ২০৪১ যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি সেখানে হোঁচট খাব। সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, পুলিশ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন এবং সমাজে নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখছে। করোনা মোকাবিলায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। ওয়েসিস নিরাময়কেন্দ্রটি যাতে ভালোভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যত ধরনের সাপোর্ট দরকার করা হবেÑ অ্যাম্বুলেন্স লাগলে দেয়া হবে। একই সঙ্গে দেশের লাখ লাখ মাদকসেবীকে সঠিক পথে ফেরাতে অন্যরা যেন ওয়াসিসের মতো আরও নিরাময়কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়, সেই আহ্বান জানাচ্ছি।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদারতার কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার ভ্যাকসিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছেন এবং বলেছেন, প্রত্যেক নাগরিকের ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে যত টাকা লাগে দেয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগে বলেছিল, মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ টিকা ফ্রি দেয়া হবে। পরে ৪০ শতাংশ টিকা ফ্রি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে করোনার টিকা তৈরির সরঞ্জাম ও কাঁচামাল দেয়ার কথা জানিয়েছে। এতে বাংলাদেশ টিকা রপ্তানিও করতে পারবে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপু বলেন, মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় ওয়েসিসের মতো একটি আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করায় বর্তমান আইজিপির প্রশংসা করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, মাদকাসক্তদের রোগের নিরাময় করলেই হবে না। এর সঙ্গে সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করা পুলিশের দায়িত্ব নয়। তবুও পুলিশ ওয়েসিসের মতো একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করায় আইজিপিকে ধন্যবাদ জানান।

সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ধনী-গরিব নির্বিশেষে মাদকাসক্ত সদস্যদের নিয়ে পরিবারের দুর্ভোগের ভয়াবহ করুণ চিত্র আমি দেখেছি। সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের গোপনে চোখের পানি ফেলতে দেখেছি। আবার অনেকের মতে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮০ লাখ।