বরকলের দুর্গম পাহাড়ে রাতভর অভিযানে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

রাঙ্গামাটি শহর থেকে ৬৩ কিলোমিটার দূরে দুর্গম অঞ্চল বরকল থানা এলাকা। গত বুধবার রাতভর বিজিবি দুর্গম অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ৮টি অস্ত্র, গুলি ও মাদক উদ্ধার করছে। এর মধ্যে ৪টি একনালা বন্দুক রয়েছে। আর ৯৭০ গ্রাম মাদক উদ্ধার করছে। এ মাদক কোকেন না ক্রিস্টাল মেথ আইস তা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর অস্ত্র মজুদের নেপথ্য উদঘাটনে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

বর্ডারগার্ড বিজিবির ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে রাঙ্গামাটি বরকল উপজেলার বড় হরিণা চেকপোস্টে তল্লাশি কালে ৫ ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ রাউন্ড ছড়াগুলি, ২২ বোরের ১০টি খালি খোসা, ২ জোড়া মিলিটারি সদৃশ্য বুট, ৯৭০ গ্রাম কোকেন বা কিস্ট্রাল মেথ আইস বস্তু জব্দ করে।

তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি, রাঙ্গামাটি আর্মি জোন ও পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালিয়ে ৪টি একনালা বন্দুক উদ্ধার করে। অভিযানের সময় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো, হোয়াং পুইয়া, থান জুয়াল, এলভিদ, আদি, লাল লমাংস, লিয়ান্ন, জৌরম। তাদের বিরুদ্ধে বরকল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙ্গামাটি এসপি মীর মোদাচ্ছের হোসেন। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে ৪টি অবৈধ অস্ত্র ও ৪টি বৈধ অস্ত্র রয়েছে।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতরা মিজোররাম সীমান্ত থেকে অস্ত্র এনে রাঙ্গাটির গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে রাখে। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা অস্ত্রবহনকারী। অস্ত্রের উৎসের সন্ধান তদন্ত চলছে। আর অপরাধী চক্রে কারা জড়িত ও গডফাদার হিসেবে কারা কাজ করেন তাদের খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত আছে।

নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী এলাকা হলো মিজোরাম। সেখানে পাহাড় ও সীমান্তের চোরাকারবারিদের মধ্যে অস্ত্র ও মাদক লেনদেন হয়। গভীর জঙ্গল দিয়ে ওই সব অস্ত্র দেশে ঢুকে। এরপর সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছে যায়।

অভিযোগ রয়েছে, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবন এলাকার সীমান্তবর্তী কিছু কিছু এলাকা অরক্ষিত। সেখানে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের আনাগোনা রয়েছে। তারা মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িত। সম্প্রতি বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে। পথে পথে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাতে গিয়ে মাদক ও অস্ত্রসহ অপরাধীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কোকেন ও ক্রিস্টার মেথ আইস উৎপাদন হয় না। সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীরা মায়ানমার সীমান্ত থেকে মাদক এনে দেশে বিক্রি করছে। সম্প্রতি মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করার অনেক অপরাধী ধরা পড়ছে। দেশে ইয়াবাসহ যত ধরনের নতুন নতুন মাদক ধরা পড়ছে সবই মাদক ব্যবসায়ীদের কাজ।

রাঙ্গামাটির বরকল থানার ওসি জসিম উদ্দিন সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, বরকল থানার দুর্গম পাহাড়ের জঙ্গলে যৌথ অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও গুলি মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এলাকাটি দুর্গম পাহাড়ি। এখানে টেলিফোন নেটওয়ার্ক ঠিকমত থাকে না। বিদ্যুৎ ঠিকমত থাকে না। অধিকাংশ রাস্তা এখনও পাকা হয়নি। এরই মধ্যে এলাকার নিরাপত্তা দেয়া ও সন্ত্রাসী ধরপাকড় অভিযান চালানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এর আগেও নৌবাহিনী বিভিন্ন সময় রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, গুলি ও মাদক উদ্ধার করছে। ধরা পড়ছে বহু অপরাধী। এরপরও সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা নানাভাবে অপরাধ করার চেষ্টা করছে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি অনুসরণ করে অভিযান চলছে। পথে পথে চেকপোস্ট ও তল্লাশি অব্যাহত আছে।

শুক্রবার, ০৮ অক্টোবর ২০২১ , ২৩ আশ্বিন ১৪২৮ ৩০ সফর ১৪৪৩

বরকলের দুর্গম পাহাড়ে রাতভর অভিযানে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

বাকী বিল্লাহ

রাঙ্গামাটি শহর থেকে ৬৩ কিলোমিটার দূরে দুর্গম অঞ্চল বরকল থানা এলাকা। গত বুধবার রাতভর বিজিবি দুর্গম অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ৮টি অস্ত্র, গুলি ও মাদক উদ্ধার করছে। এর মধ্যে ৪টি একনালা বন্দুক রয়েছে। আর ৯৭০ গ্রাম মাদক উদ্ধার করছে। এ মাদক কোকেন না ক্রিস্টাল মেথ আইস তা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর অস্ত্র মজুদের নেপথ্য উদঘাটনে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

বর্ডারগার্ড বিজিবির ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে রাঙ্গামাটি বরকল উপজেলার বড় হরিণা চেকপোস্টে তল্লাশি কালে ৫ ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ রাউন্ড ছড়াগুলি, ২২ বোরের ১০টি খালি খোসা, ২ জোড়া মিলিটারি সদৃশ্য বুট, ৯৭০ গ্রাম কোকেন বা কিস্ট্রাল মেথ আইস বস্তু জব্দ করে।

তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি, রাঙ্গামাটি আর্মি জোন ও পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালিয়ে ৪টি একনালা বন্দুক উদ্ধার করে। অভিযানের সময় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো, হোয়াং পুইয়া, থান জুয়াল, এলভিদ, আদি, লাল লমাংস, লিয়ান্ন, জৌরম। তাদের বিরুদ্ধে বরকল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙ্গামাটি এসপি মীর মোদাচ্ছের হোসেন। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে ৪টি অবৈধ অস্ত্র ও ৪টি বৈধ অস্ত্র রয়েছে।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতরা মিজোররাম সীমান্ত থেকে অস্ত্র এনে রাঙ্গাটির গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে রাখে। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা অস্ত্রবহনকারী। অস্ত্রের উৎসের সন্ধান তদন্ত চলছে। আর অপরাধী চক্রে কারা জড়িত ও গডফাদার হিসেবে কারা কাজ করেন তাদের খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত আছে।

নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী এলাকা হলো মিজোরাম। সেখানে পাহাড় ও সীমান্তের চোরাকারবারিদের মধ্যে অস্ত্র ও মাদক লেনদেন হয়। গভীর জঙ্গল দিয়ে ওই সব অস্ত্র দেশে ঢুকে। এরপর সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছে যায়।

অভিযোগ রয়েছে, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবন এলাকার সীমান্তবর্তী কিছু কিছু এলাকা অরক্ষিত। সেখানে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের আনাগোনা রয়েছে। তারা মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িত। সম্প্রতি বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে। পথে পথে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাতে গিয়ে মাদক ও অস্ত্রসহ অপরাধীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কোকেন ও ক্রিস্টার মেথ আইস উৎপাদন হয় না। সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীরা মায়ানমার সীমান্ত থেকে মাদক এনে দেশে বিক্রি করছে। সম্প্রতি মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করার অনেক অপরাধী ধরা পড়ছে। দেশে ইয়াবাসহ যত ধরনের নতুন নতুন মাদক ধরা পড়ছে সবই মাদক ব্যবসায়ীদের কাজ।

রাঙ্গামাটির বরকল থানার ওসি জসিম উদ্দিন সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, বরকল থানার দুর্গম পাহাড়ের জঙ্গলে যৌথ অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও গুলি মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এলাকাটি দুর্গম পাহাড়ি। এখানে টেলিফোন নেটওয়ার্ক ঠিকমত থাকে না। বিদ্যুৎ ঠিকমত থাকে না। অধিকাংশ রাস্তা এখনও পাকা হয়নি। এরই মধ্যে এলাকার নিরাপত্তা দেয়া ও সন্ত্রাসী ধরপাকড় অভিযান চালানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এর আগেও নৌবাহিনী বিভিন্ন সময় রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, গুলি ও মাদক উদ্ধার করছে। ধরা পড়ছে বহু অপরাধী। এরপরও সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা নানাভাবে অপরাধ করার চেষ্টা করছে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি অনুসরণ করে অভিযান চলছে। পথে পথে চেকপোস্ট ও তল্লাশি অব্যাহত আছে।