মুন্সীগঞ্জের টংগীবাড়িতে চাঞ্চল্যকর শাহাবুদ্দিন শেখকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি রাকিবকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এনজিও থেকে নেয়া ২৫ হাজার টাকা জুয়া খেলে নষ্ট করে রাকিব ও তার মামা। পরে লোন পরিশোধ করার জন্য ইজিবাইক ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে তারা। এর জেরেই হত্যা করে শাহাবুদ্দিনকে। গতকাল কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, গত বছরের ২৭ মে মুন্সীগঞ্জের টংগীবাড়ি থানাধীন আড়িয়ল ইউনিয়নের উত্তর কুড়িমরা নামক এলাকায় একটি পরিত্যক্ত বাড়ির জঙ্গলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া যায়। পরে মো. আবুল শেখ নামক এক ব্যক্তি গলাকাটা অর্ধগলিত মরদেহটি তার ছেলে শাহাবুদ্দিনের বলে শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে টংগীবাড়ি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন মো. আবুল শেখ। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহসহ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন ও ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর র্যাব-১১ এর একটি দল লোমহর্ষক হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সহযোগী ও অন্যতম আসামি মো. ইলিয়াস শেখকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
র?্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ইলিয়াস শেখের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মো. রাকিব ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিল। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকা-ের দীর্ঘ ১ বছর ৪ মাস পর র?্যাব-১১ এর আরেকটি দল গত বুধবার রাতে গাজীপুরের কাপাসিয়া থানাধীন দুর্গম এলাকার শালবনে অভিযান চালিয়ে মো. রাকিবকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেপ্তারকৃত রাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাকিবের মামা ইলিয়াস শেখ ব্যবসার জন্য একটি এনজিও থেকে ২৫ হাজার টাকা লোন নেয় এবং লোভে পড়ে জুয়া খেলে সব টাকা হারায়। তারপর রাকিব ও ইলিয়াস ওই লোন পরিশোধ করার জন্য ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছর ২৭ মে সকাল ৮টার দিকে তারা তালের শাঁস ক্রয় করার কথা বলে শাহাবুদ্দিনের ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ভাড়া করে। এরপর রাকিব ও ইলিয়াস পরস্পর যোগসাজশে ছিনতাই ও হত্যার উদ্দেশ্যে শাহাবুদ্দিনকে কৌশলে টংগীবাড়ি থানাধীন আড়িয়ল ইউনিয়নের জনৈক হাজী হাসেম হালদারের পরিত্যক্ত বাড়ির জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে রাকিব ও ইলিয়াস শেখ গামছা দিয়ে শাহাবুদ্দিনের গলায় ফাঁস লাগিয়ে দুই দিক থেকে টেনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তালের শাঁস কাটার ধারালো দা দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
লে. কর্নেল তানভীর জানান, ইলিয়াস শেখকে গ্রেপ্তারের করার পর তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী র?্যাব-১১ ওই হত্যায় ব্যবহৃত দা, ভিকটিমের মোবাইল ফোন ও ইজিবাইক উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
হত্যাকা-ের পর হত্যাকারী রাকিব গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য গাজীপুরে আত্মগোপন করে। এই সময়ে সে ইজিবাইক চালানো, রাজমিস্ত্রির কাজ, ট্রাকের হেলপারসহ বিভিন্ন ধরনের পেশা বদল করে ও গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ি, এনায়েতপুর, কাপাসিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থান পরিবর্তন করে। সে গত ১৪ জুলাই বিয়ে করে এবং সর্বশেষ সে স্ত্রীকে নিয়ে কাপাসিয়া থানার সূর্যনারায়ণপুরে শালবনের দুর্গম এলাকায় একটি ঘরে বসবাস করছিল।
হত্যাকারীদের সঙ্গে নিহত শাহাবুদ্দিনের পূর্বপরিচয় ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে কোন পরিচয় ছিল না। জুয়ায় টাকা হারিয়ে এনজিওর দেনা পরিশোধের জন্যই তারা এই হত্যাকা- ঘটায়। এতদিন পর কেন এই ঘটনার মীমাংসা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার কোন ক্লু ছিল না। আমরা অনেক তদন্ত ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। গ্রেপ্তারকৃত রাকিবকে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
শুক্রবার, ০৮ অক্টোবর ২০২১ , ২৩ আশ্বিন ১৪২৮ ৩০ সফর ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
মুন্সীগঞ্জের টংগীবাড়িতে চাঞ্চল্যকর শাহাবুদ্দিন শেখকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি রাকিবকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এনজিও থেকে নেয়া ২৫ হাজার টাকা জুয়া খেলে নষ্ট করে রাকিব ও তার মামা। পরে লোন পরিশোধ করার জন্য ইজিবাইক ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে তারা। এর জেরেই হত্যা করে শাহাবুদ্দিনকে। গতকাল কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, গত বছরের ২৭ মে মুন্সীগঞ্জের টংগীবাড়ি থানাধীন আড়িয়ল ইউনিয়নের উত্তর কুড়িমরা নামক এলাকায় একটি পরিত্যক্ত বাড়ির জঙ্গলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া যায়। পরে মো. আবুল শেখ নামক এক ব্যক্তি গলাকাটা অর্ধগলিত মরদেহটি তার ছেলে শাহাবুদ্দিনের বলে শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে টংগীবাড়ি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন মো. আবুল শেখ। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহসহ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন ও ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর র্যাব-১১ এর একটি দল লোমহর্ষক হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সহযোগী ও অন্যতম আসামি মো. ইলিয়াস শেখকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
র?্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ইলিয়াস শেখের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মো. রাকিব ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিল। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকা-ের দীর্ঘ ১ বছর ৪ মাস পর র?্যাব-১১ এর আরেকটি দল গত বুধবার রাতে গাজীপুরের কাপাসিয়া থানাধীন দুর্গম এলাকার শালবনে অভিযান চালিয়ে মো. রাকিবকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেপ্তারকৃত রাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাকিবের মামা ইলিয়াস শেখ ব্যবসার জন্য একটি এনজিও থেকে ২৫ হাজার টাকা লোন নেয় এবং লোভে পড়ে জুয়া খেলে সব টাকা হারায়। তারপর রাকিব ও ইলিয়াস ওই লোন পরিশোধ করার জন্য ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছর ২৭ মে সকাল ৮টার দিকে তারা তালের শাঁস ক্রয় করার কথা বলে শাহাবুদ্দিনের ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ভাড়া করে। এরপর রাকিব ও ইলিয়াস পরস্পর যোগসাজশে ছিনতাই ও হত্যার উদ্দেশ্যে শাহাবুদ্দিনকে কৌশলে টংগীবাড়ি থানাধীন আড়িয়ল ইউনিয়নের জনৈক হাজী হাসেম হালদারের পরিত্যক্ত বাড়ির জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে রাকিব ও ইলিয়াস শেখ গামছা দিয়ে শাহাবুদ্দিনের গলায় ফাঁস লাগিয়ে দুই দিক থেকে টেনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তালের শাঁস কাটার ধারালো দা দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
লে. কর্নেল তানভীর জানান, ইলিয়াস শেখকে গ্রেপ্তারের করার পর তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী র?্যাব-১১ ওই হত্যায় ব্যবহৃত দা, ভিকটিমের মোবাইল ফোন ও ইজিবাইক উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
হত্যাকা-ের পর হত্যাকারী রাকিব গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য গাজীপুরে আত্মগোপন করে। এই সময়ে সে ইজিবাইক চালানো, রাজমিস্ত্রির কাজ, ট্রাকের হেলপারসহ বিভিন্ন ধরনের পেশা বদল করে ও গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ি, এনায়েতপুর, কাপাসিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থান পরিবর্তন করে। সে গত ১৪ জুলাই বিয়ে করে এবং সর্বশেষ সে স্ত্রীকে নিয়ে কাপাসিয়া থানার সূর্যনারায়ণপুরে শালবনের দুর্গম এলাকায় একটি ঘরে বসবাস করছিল।
হত্যাকারীদের সঙ্গে নিহত শাহাবুদ্দিনের পূর্বপরিচয় ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে কোন পরিচয় ছিল না। জুয়ায় টাকা হারিয়ে এনজিওর দেনা পরিশোধের জন্যই তারা এই হত্যাকা- ঘটায়। এতদিন পর কেন এই ঘটনার মীমাংসা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার কোন ক্লু ছিল না। আমরা অনেক তদন্ত ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। গ্রেপ্তারকৃত রাকিবকে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।