নানা স্থাপনায় জল নিকাশি বন্ধ জলাবদ্ধ ৪৪৫ হেক্টর আমন

সম্পূর্ণ নষ্ট ২৫০ হেক্টর : দিশেহারা কৃষক

বসতি ও স্থাপনা নির্মাণের ফলে নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পানিতে তলিয়ে গেছে রৌমারী উপজেলার চাক্তাবাড়ি-যাদুরচর মাস্টারপাড়া পর্যন্ত ৪৪৫ হেক্টর ফসলি জমি। এর মধ্যে ২৫০ হেক্টর ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এলাকার ৭২৫ জন কৃষক। দ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগি কৃষকসহ এলাকাবাসী।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চাক্তাবাড়ি হতে যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারী মাস্টারপাড়া এলাকা পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে। চাক্তাবাড়ি-ধনারচর বেড়িবাঁধের একাংশ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় গোটা এলাকা তলিয়ে গেছে। পানি নিস্কাশনের পথ হিসাবে ধনারচর নতুনগ্রাম নামক এলাকায় একটি ব্রিজ থাকলেও তা বন্ধ করে নির্মাণ করা হয়েছে বসতি। এ ছাড়াও কর্তিমারী বাজার এলাকায় পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। পানি বের হওয়ার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিশাল এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই এলাকার ৭২৫ জন কৃষকের ২৫০ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

জাদুরচর নতুনগ্রামের কৃষক শামছুল হক বলেন, জলাবদ্ধতা থাকায় তার দেড় বিঘা জমির সব ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে তার ক্ষতি হয়েছে ১০-১১ হাজার টাকা। এভাবে পানি জমে থাকলে আগামীতে সরিষাসহ আর কোনো ফসল চাষাবাদ করা সম্ভব হবে না বলেও জানান ওই কৃষক।

কৃষক আনিছুর রহমান, নুর ইসলাম, মাসুদ রানা, সাইদুর রহমান, বদিউজ্জামানসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, গত বছর বন্যায় চাক্তাবাড়ী-ধনারচর বেড়িবাঁধের একাংশ ভেঙে গেলেও তা আর মেরামত করা হয়নি। ফলে এবার বন্যার পানি সহজেই ওই ভাঙা স্থান দিয়ে এলাকায় ঢুকে পড়ে। কিন্তু পানি নিস্কাশনের পথগুলো বন্ধ করে বসতিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় বন্যার পানি আর বের হতে পারে না। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জমির সব ফসল নষ্ট হয়েছে। তারা বলেন, আবাদ করতে না পারলে কী খেয়ে বাঁচবো এ চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না। দ্রুত ওই এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান কৃষকসহ এলাকাবাসী।

জাদুরচর ইউনিয়নের ১নং ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আফসার আলী বলেন, বন্যার সময় উপজেলার চাক্তাবাড়ি-ধনারচর বেড়িবাঁধের চাক্তাবাড়ি নামক এলাকায় বাঁধের একাংশ ভেঙে গিয়ে জাদুরচর ইউনিয়নের চাক্তাবাড়ি, জাদুরচর নতুনগ্রাম, জাদুরচর চাক্তাবাড়ি ও রৌমারী সদর ইউনিয়নের চাক্তাবাড়ি নামক এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ৭২৫ জন কৃষকের ৪৪৫ হেক্টর আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে আংশিক ক্ষতি হয় ১৯৫ হেক্টর জমির ফসল। জলাবদ্ধতায় বাকি ২৫০ হেক্টর জমির সব ফসল নষ্ট হয়েছে। দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন না হলে নভেম্বর মাসে বীজতলা তৈরি ও রবি মৌসুমে আবাদ করা সম্ভব হবে না বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, রবি মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে। তবে জলাবদ্ধতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকার কৃষকদের জন্য কিছুই করার নেই বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, ভুক্তভোগীদের লিখিত দরখাস্ত পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হবে।

শনিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২১ , ২৪ আশ্বিন ১৪২৮ ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

নানা স্থাপনায় জল নিকাশি বন্ধ জলাবদ্ধ ৪৪৫ হেক্টর আমন

সম্পূর্ণ নষ্ট ২৫০ হেক্টর : দিশেহারা কৃষক

রুহুল আমিন, রৌমারী (কুড়িগ্রাম)

image

বসতি ও স্থাপনা নির্মাণের ফলে নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পানিতে তলিয়ে গেছে রৌমারী উপজেলার চাক্তাবাড়ি-যাদুরচর মাস্টারপাড়া পর্যন্ত ৪৪৫ হেক্টর ফসলি জমি। এর মধ্যে ২৫০ হেক্টর ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এলাকার ৭২৫ জন কৃষক। দ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগি কৃষকসহ এলাকাবাসী।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চাক্তাবাড়ি হতে যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারী মাস্টারপাড়া এলাকা পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে। চাক্তাবাড়ি-ধনারচর বেড়িবাঁধের একাংশ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় গোটা এলাকা তলিয়ে গেছে। পানি নিস্কাশনের পথ হিসাবে ধনারচর নতুনগ্রাম নামক এলাকায় একটি ব্রিজ থাকলেও তা বন্ধ করে নির্মাণ করা হয়েছে বসতি। এ ছাড়াও কর্তিমারী বাজার এলাকায় পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। পানি বের হওয়ার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিশাল এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই এলাকার ৭২৫ জন কৃষকের ২৫০ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

জাদুরচর নতুনগ্রামের কৃষক শামছুল হক বলেন, জলাবদ্ধতা থাকায় তার দেড় বিঘা জমির সব ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে তার ক্ষতি হয়েছে ১০-১১ হাজার টাকা। এভাবে পানি জমে থাকলে আগামীতে সরিষাসহ আর কোনো ফসল চাষাবাদ করা সম্ভব হবে না বলেও জানান ওই কৃষক।

কৃষক আনিছুর রহমান, নুর ইসলাম, মাসুদ রানা, সাইদুর রহমান, বদিউজ্জামানসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, গত বছর বন্যায় চাক্তাবাড়ী-ধনারচর বেড়িবাঁধের একাংশ ভেঙে গেলেও তা আর মেরামত করা হয়নি। ফলে এবার বন্যার পানি সহজেই ওই ভাঙা স্থান দিয়ে এলাকায় ঢুকে পড়ে। কিন্তু পানি নিস্কাশনের পথগুলো বন্ধ করে বসতিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় বন্যার পানি আর বের হতে পারে না। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জমির সব ফসল নষ্ট হয়েছে। তারা বলেন, আবাদ করতে না পারলে কী খেয়ে বাঁচবো এ চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না। দ্রুত ওই এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান কৃষকসহ এলাকাবাসী।

জাদুরচর ইউনিয়নের ১নং ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আফসার আলী বলেন, বন্যার সময় উপজেলার চাক্তাবাড়ি-ধনারচর বেড়িবাঁধের চাক্তাবাড়ি নামক এলাকায় বাঁধের একাংশ ভেঙে গিয়ে জাদুরচর ইউনিয়নের চাক্তাবাড়ি, জাদুরচর নতুনগ্রাম, জাদুরচর চাক্তাবাড়ি ও রৌমারী সদর ইউনিয়নের চাক্তাবাড়ি নামক এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ৭২৫ জন কৃষকের ৪৪৫ হেক্টর আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে আংশিক ক্ষতি হয় ১৯৫ হেক্টর জমির ফসল। জলাবদ্ধতায় বাকি ২৫০ হেক্টর জমির সব ফসল নষ্ট হয়েছে। দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন না হলে নভেম্বর মাসে বীজতলা তৈরি ও রবি মৌসুমে আবাদ করা সম্ভব হবে না বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, রবি মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে। তবে জলাবদ্ধতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকার কৃষকদের জন্য কিছুই করার নেই বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, ভুক্তভোগীদের লিখিত দরখাস্ত পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হবে।