গোপনে তাইওয়ানকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গোপনে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সামরিক বাহিনীর স্পেশাল অপারেশনস ফোর্সেস এবং মেরিন সেনারা অত্যন্ত গোপনে এই প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজটি করছেন। যা চীনের ক্ষোভ বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করেছে। প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ তথ্য প্রকাশ করেছে। পত্রিকাটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই ডজন সেনা কর্মকর্তা তাইওয়ানের স্থল ও নৌসেনাদের এক বছর ধরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

প্রতিবেদনে প্রভাবশালী মার্কিন এই সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, চীনের ক্রমবর্ধমান হুমকির মধ্যেই তাইওয়ানের মাটিতেই তাদের সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে প্রায় দুই ডজন মার্কিন সেনা। অন্তত গত এক বছর ধরে অত্যন্ত গোপনে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো প্রশিক্ষণ কতদিন ধরে চলছে তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে তারা বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই চলছে এই কার্যক্রম। এ বিষয়ে জানতে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। তবে এতে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। শুধু বলা হয়েছে, সব সামরিক কার্যক্রম বার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটির তথ্য নিশ্চিত বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন। তবে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন সাপল বলছেন, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রয়োজনীয়তা পরিমাপ করেই দেশটির সামরিক বাহিনীকে সহায়তা দিয়ে থাকে

যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে সাপল বলছেন, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চীনের বর্তমান হুমকি মোকাবিলায় দেশটিতে আমাদের সহায়তা ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। আর তাই সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় করা প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান দেখাতে আমরা বেইজিংয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

তাইওয়ানকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ফেলো জ্যাকব স্ট্রোকস বলেন, এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীর প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নত হবে। এদিকে তাইওয়ানকে সামরিক সহযোগিতা দেয়া বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখ-তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে চীন।

অবশ্য তাইওয়ানের স্থল ও নৌবাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণের বিষয়টি গত বছরের নভেম্বরে ছোট এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির সংবাদ মাধ্যমেও উঠে এসেছিল। প্রশিক্ষণ চলাকালীন স্বশাসিত দ্বীপ রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে চীনের সামরিক কর্মকা- ও রাজনৈতিক হুমকি বৃদ্ধি পায়। সেসময় তাইওয়ানের নেভাল কমান্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানকার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল যে, তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীর স্পেশাল ফোর্স এবং নৌবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে ছোট ছোট নৌকা ও উভচর বাহনে করে দেশটিতে পৌঁছেছে মার্কিন সেনারা। তবে এসব রিপোর্ট সে সময় প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের কর্মকর্তারা।

এদিকে, গত ৬ অক্টোবর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছে ফোন করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এসময় তাদের মধ্যে তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে কথা হয়েছে। হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাইওয়ান চুক্তির সঙ্গে আমরা একমত। আমার বিশ্বাস তিনি (জিনপিং) চুক্তির বাইরে কিছুই করবেন না। সম্প্রতি তাইওয়ানের আকাশসীমায় রেকর্ডসংখ্যক চীনা যুদ্ধবিমান মহড়া চালায়। এটিকে দায়িত্বজ্ঞানহীন উসকানি হিসেবে উল্লেখ করে চীনকে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে তাইওয়ান। চলতি মাসে চীনের প্রায় ১৫০টি যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই অঞ্চলে তীব্র উত্তেজনা শুরু হয়েছে। তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে চীন।

চীন ও তাইয়ানের সাম্প্রতিক উত্তেজনা গত ৪০ বছরে দেখা যায়নি বলেও মন্তব্য করেন তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চিউ। পাশাপাশি ২০২৫ সালের ভেতর চীন তাইওয়ানে সর্বাত্মক আক্রমণ চালাতে পারে বলে মনে করেন তিনি। তাইওয়ানকে নিজেদের প্রদেশ দাবি করা চীন ফের এটি দখলে বিভিন্ন সময়ে অঙ্গীকার করে। এ ছাড়া তাইওয়ানের নির্বাচিত সরকারকে শুরু থেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে আসছে চীন। অন্যদিকে নিজেদের সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেখে তাইওয়ান।

image

গত এক বছর ধরে মার্কিন বাহিনীর স্পেশাল অপারেশনস ফোর্সেস এবং মেরিন সেনারা গোপনে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষখ দিচ্ছে -এপি

আরও খবর
টাইম ম্যাগাজিন প্রচ্ছদে ডিলিট ফেইসবুক
মঙ্গল গ্রহে ডেল্টার অস্তিত্ব পেল নাসার অধ্যবসায়
ভারতে করোনায় মৃত্যু ছাড়ালো সাড়ে ৪ লাখ

শনিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২১ , ২৪ আশ্বিন ১৪২৮ ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

গোপনে তাইওয়ানকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

image

গত এক বছর ধরে মার্কিন বাহিনীর স্পেশাল অপারেশনস ফোর্সেস এবং মেরিন সেনারা গোপনে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষখ দিচ্ছে -এপি

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গোপনে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সামরিক বাহিনীর স্পেশাল অপারেশনস ফোর্সেস এবং মেরিন সেনারা অত্যন্ত গোপনে এই প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজটি করছেন। যা চীনের ক্ষোভ বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করেছে। প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ তথ্য প্রকাশ করেছে। পত্রিকাটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই ডজন সেনা কর্মকর্তা তাইওয়ানের স্থল ও নৌসেনাদের এক বছর ধরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

প্রতিবেদনে প্রভাবশালী মার্কিন এই সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, চীনের ক্রমবর্ধমান হুমকির মধ্যেই তাইওয়ানের মাটিতেই তাদের সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে প্রায় দুই ডজন মার্কিন সেনা। অন্তত গত এক বছর ধরে অত্যন্ত গোপনে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো প্রশিক্ষণ কতদিন ধরে চলছে তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে তারা বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই চলছে এই কার্যক্রম। এ বিষয়ে জানতে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। তবে এতে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। শুধু বলা হয়েছে, সব সামরিক কার্যক্রম বার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটির তথ্য নিশ্চিত বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন। তবে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন সাপল বলছেন, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রয়োজনীয়তা পরিমাপ করেই দেশটির সামরিক বাহিনীকে সহায়তা দিয়ে থাকে

যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে সাপল বলছেন, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চীনের বর্তমান হুমকি মোকাবিলায় দেশটিতে আমাদের সহায়তা ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। আর তাই সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় করা প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান দেখাতে আমরা বেইজিংয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

তাইওয়ানকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ফেলো জ্যাকব স্ট্রোকস বলেন, এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীর প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নত হবে। এদিকে তাইওয়ানকে সামরিক সহযোগিতা দেয়া বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখ-তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে চীন।

অবশ্য তাইওয়ানের স্থল ও নৌবাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণের বিষয়টি গত বছরের নভেম্বরে ছোট এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির সংবাদ মাধ্যমেও উঠে এসেছিল। প্রশিক্ষণ চলাকালীন স্বশাসিত দ্বীপ রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে চীনের সামরিক কর্মকা- ও রাজনৈতিক হুমকি বৃদ্ধি পায়। সেসময় তাইওয়ানের নেভাল কমান্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানকার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল যে, তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীর স্পেশাল ফোর্স এবং নৌবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে ছোট ছোট নৌকা ও উভচর বাহনে করে দেশটিতে পৌঁছেছে মার্কিন সেনারা। তবে এসব রিপোর্ট সে সময় প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের কর্মকর্তারা।

এদিকে, গত ৬ অক্টোবর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছে ফোন করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এসময় তাদের মধ্যে তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে কথা হয়েছে। হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাইওয়ান চুক্তির সঙ্গে আমরা একমত। আমার বিশ্বাস তিনি (জিনপিং) চুক্তির বাইরে কিছুই করবেন না। সম্প্রতি তাইওয়ানের আকাশসীমায় রেকর্ডসংখ্যক চীনা যুদ্ধবিমান মহড়া চালায়। এটিকে দায়িত্বজ্ঞানহীন উসকানি হিসেবে উল্লেখ করে চীনকে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে তাইওয়ান। চলতি মাসে চীনের প্রায় ১৫০টি যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই অঞ্চলে তীব্র উত্তেজনা শুরু হয়েছে। তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে চীন।

চীন ও তাইয়ানের সাম্প্রতিক উত্তেজনা গত ৪০ বছরে দেখা যায়নি বলেও মন্তব্য করেন তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চিউ। পাশাপাশি ২০২৫ সালের ভেতর চীন তাইওয়ানে সর্বাত্মক আক্রমণ চালাতে পারে বলে মনে করেন তিনি। তাইওয়ানকে নিজেদের প্রদেশ দাবি করা চীন ফের এটি দখলে বিভিন্ন সময়ে অঙ্গীকার করে। এ ছাড়া তাইওয়ানের নির্বাচিত সরকারকে শুরু থেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে আসছে চীন। অন্যদিকে নিজেদের সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেখে তাইওয়ান।