নদী থাকলেও ঢাকা থেকে নৌপথে যাতায়াত সুবিধাবঞ্চিত উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরবাসীরা। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা থেকে লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়ে আসছে স্থানীয়রা। কিন্তু যাত্রীবাহী লঞ্চ আর চালু হয় না। অথচ লক্ষ্মীপুর থেকে ভোলা ও চাঁদপুর হয়ে অনেকেই লঞ্চে ঢাকায় যাতায়াত করে থাকে।
বাসমালিকদের চাপের কারণে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর লঞ্চ সার্ভিস চালু হয় হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা জানান। এর আগে ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরে তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল এ রুটে লঞ্চ সার্ভিস উদ্বোধন করার কথা ছিল। অদৃশ্য কারণে তা বাতিল করা হয়। গত সাড়ে তিন বছরেও চালু হয়নি ঢাকা-লক্ষ্মীপুর লঞ্চ সার্ভিস। লঞ্চ সার্ভিস চালু হলে সড়কপথের যাত্রী কমে যাবে এই আশঙ্কায় বাসমালিকদের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে জানান বাসিন্দারা।
বিআইডব্লিউটিএর সূত্র জানায়, লঞ্চ সার্ভিস চালুর জন্য মেঘনা নদী খননের মাধ্যমে ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুরের নৌপথের দূরত্ব ১২ কমিয়ে আনা হয়েছে। মেঘনা নদীর ১ দশমিক ৩০ কিলোমিটার চর খননের মাধ্যমে নতুন একটি চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। আগের ঢাকা-লক্ষ্মীপুরের দূরত্ব ছিল ১৩৭ কিলোমিটার। এখন ঢাকা-চাঁদপুর-ইলিশা-লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী হাটের দূরত্ব কমে হয়েছে ১২৫ কিলোমিটার। এছাড়া ইলিশা-মজু চৌধুরী হাট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দূরত্ব হ্রাস পেয়েছে। নৌপথটি খননে ৪৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে সংস্থাটির সূত্র জানায়।
এম ভি রাসেল-৩ নামের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর (বিআইডব্লিউটিএ), যা আগামী ১৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লঞ্চটির কিছু সংস্কারের জন্য নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর থেকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। এজন্য মেরামত শেষে এক-দুই মাসের মধ্যে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল শুরু হবে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ-নিটা) মো. রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘ঢাকা-লক্ষ্মীপুর রুটে কখনও যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করেনি। চাঁদপুর ও ভোলার রুটে লঞ্চ থাকায় আগে এই রুটে কেউ লঞ্চ চালুর আবেদন করেননি। লক্ষ্মীপুরের বেশিরভাগ মানুষ বাসেই চলাচল করে। সে জন্য লঞ্চ সার্ভিস চালু করতে চায় না লঞ্চ মালিকরা। কিছু আগে একজন লঞ্চ মালিককে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর রুটে লঞ্চ চালুর জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে।’ লঞ্চে ঢাকা-লক্ষ্মীপুরে যাতায়াতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, ঢাকা-লক্ষ্মীপুর সড়কপথে দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। বাসে যাতায়াত করতে সময় লাগে ৬-৭ ঘণ্টা। যানজট হলে যা ১০-১২ সময় অতিক্রম হয়। ঢাকা-লক্ষ্মীপুর পথে লঞ্চ চলাচলে প্রধান বাধা ছিল মেঘনা নদীর নাব্যতাসংকট। তবে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা যাবে। ঢাকার সদরঘাট থেকে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও মেঘনার ওপর দিয়ে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর নৌপথ চালু করা সম্ভব। যাত্রীরা সড়কপথের তুলনায় কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। মেঘনা নদীর ওপর দিয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর, লক্ষ্মীপুর-ঢাকা নৌপথ সচল থাকলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চল ও রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে বলে স্থানীয়রা জানান।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা সাংবাদিক বাকি বিল্লাহ সংবাদকে বলেন, ‘নদীপথ থাকা সত্ত্বেও ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। এতে সড়কপথে যাতায়াতে মানুষের বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। গত ২৫ বছর নদী খনন না করায় লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় নাব্যতাসংকট দেখা দিয়েছে। ঢাকা-লক্ষ্মীপুর লঞ্চ সার্ভিস চালু হলে সড়কপথ থেকে নৌপথে বেশি যাত্রী যাতায়াত করবে বলে জানান তিনি।
শনিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২১ , ২৪ আশ্বিন ১৪২৮ ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩
ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ
নদী থাকলেও ঢাকা থেকে নৌপথে যাতায়াত সুবিধাবঞ্চিত উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরবাসীরা। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা থেকে লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়ে আসছে স্থানীয়রা। কিন্তু যাত্রীবাহী লঞ্চ আর চালু হয় না। অথচ লক্ষ্মীপুর থেকে ভোলা ও চাঁদপুর হয়ে অনেকেই লঞ্চে ঢাকায় যাতায়াত করে থাকে।
বাসমালিকদের চাপের কারণে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর লঞ্চ সার্ভিস চালু হয় হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা জানান। এর আগে ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরে তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল এ রুটে লঞ্চ সার্ভিস উদ্বোধন করার কথা ছিল। অদৃশ্য কারণে তা বাতিল করা হয়। গত সাড়ে তিন বছরেও চালু হয়নি ঢাকা-লক্ষ্মীপুর লঞ্চ সার্ভিস। লঞ্চ সার্ভিস চালু হলে সড়কপথের যাত্রী কমে যাবে এই আশঙ্কায় বাসমালিকদের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে জানান বাসিন্দারা।
বিআইডব্লিউটিএর সূত্র জানায়, লঞ্চ সার্ভিস চালুর জন্য মেঘনা নদী খননের মাধ্যমে ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুরের নৌপথের দূরত্ব ১২ কমিয়ে আনা হয়েছে। মেঘনা নদীর ১ দশমিক ৩০ কিলোমিটার চর খননের মাধ্যমে নতুন একটি চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। আগের ঢাকা-লক্ষ্মীপুরের দূরত্ব ছিল ১৩৭ কিলোমিটার। এখন ঢাকা-চাঁদপুর-ইলিশা-লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী হাটের দূরত্ব কমে হয়েছে ১২৫ কিলোমিটার। এছাড়া ইলিশা-মজু চৌধুরী হাট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দূরত্ব হ্রাস পেয়েছে। নৌপথটি খননে ৪৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে সংস্থাটির সূত্র জানায়।
এম ভি রাসেল-৩ নামের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর (বিআইডব্লিউটিএ), যা আগামী ১৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লঞ্চটির কিছু সংস্কারের জন্য নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর থেকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। এজন্য মেরামত শেষে এক-দুই মাসের মধ্যে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল শুরু হবে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ-নিটা) মো. রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘ঢাকা-লক্ষ্মীপুর রুটে কখনও যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করেনি। চাঁদপুর ও ভোলার রুটে লঞ্চ থাকায় আগে এই রুটে কেউ লঞ্চ চালুর আবেদন করেননি। লক্ষ্মীপুরের বেশিরভাগ মানুষ বাসেই চলাচল করে। সে জন্য লঞ্চ সার্ভিস চালু করতে চায় না লঞ্চ মালিকরা। কিছু আগে একজন লঞ্চ মালিককে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর রুটে লঞ্চ চালুর জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে।’ লঞ্চে ঢাকা-লক্ষ্মীপুরে যাতায়াতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, ঢাকা-লক্ষ্মীপুর সড়কপথে দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। বাসে যাতায়াত করতে সময় লাগে ৬-৭ ঘণ্টা। যানজট হলে যা ১০-১২ সময় অতিক্রম হয়। ঢাকা-লক্ষ্মীপুর পথে লঞ্চ চলাচলে প্রধান বাধা ছিল মেঘনা নদীর নাব্যতাসংকট। তবে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা যাবে। ঢাকার সদরঘাট থেকে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও মেঘনার ওপর দিয়ে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর নৌপথ চালু করা সম্ভব। যাত্রীরা সড়কপথের তুলনায় কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। মেঘনা নদীর ওপর দিয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর, লক্ষ্মীপুর-ঢাকা নৌপথ সচল থাকলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চল ও রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে বলে স্থানীয়রা জানান।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা সাংবাদিক বাকি বিল্লাহ সংবাদকে বলেন, ‘নদীপথ থাকা সত্ত্বেও ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। এতে সড়কপথে যাতায়াতে মানুষের বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। গত ২৫ বছর নদী খনন না করায় লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় নাব্যতাসংকট দেখা দিয়েছে। ঢাকা-লক্ষ্মীপুর লঞ্চ সার্ভিস চালু হলে সড়কপথ থেকে নৌপথে বেশি যাত্রী যাতায়াত করবে বলে জানান তিনি।