রূপপুরে পারমাণবিক চুল্লি বসছে আজ

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আজ ‘রিয়েক্টর প্রেসার ভ্যাসেল (পারমাণবিক চুল্লি পাত্র)’ স্থাপন করা হবে। এই চুল্লিটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র, যেখানে মূল জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) থাকবে। এটিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হৃৎপি-ও বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পারমাণবিক চুল্লিপাত্র স্থাপন কাজের উদ্বোধন করবেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) মূল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম-এর মহাপরিচালক এলেক্সি লিখাচেভ, রোসাটমের প্রকৌশল শাখা এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট জেএসসি (এএসই জেএসসি)’র প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লকসিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আরএনপিপি’র প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবরসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রোসাটম ও এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা ফিরে রোসাটম-এর মহাপরিচালকের নেতৃত্বে রাশিয়ার একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে বলে জানা গেছে। রিয়েক্টর ভবন:

প্রকল্প এলাকায় গোলাকৃতি যে দুটি ভবন (কন্টেইনমেন্ট ডোম) দেখা যায় সেগুলোই রিয়েক্টর ভবন। এদের মধ্যে একটিতে আজ বসানো হবে রিয়েক্টর প্রেসার ভেসেল। এই ভবনের বিভিন্ন ধাপে বসানো হয়েছে নিউক্লিয়ার যন্ত্রপাতি। পাঁচ ধরনের যন্ত্রের মধ্যে ইতিমধ্যে প্রেসারাইজার, কুল্যান্ট পাম্প এবং হাইড্রো এক্যুমুলেটর বসানো সম্পন্ন হয়েছে।

প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর ভবনে পারমাণবিক চুল্লি পাত্র স্থাপনের বিষয়টি বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আরেকটি মাইলফলক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে প্রকল্প পরিদর্শনে বেশ কয়েক দিন যাবৎ রূপপুর অবস্থান করছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে সংবাদকে তিনি বলেন, ‘অগ্রগতি তো দৃশ্যমান। করোনাকালেও গাইড লাইন অনুযায়ী প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজের অগ্রগতির পাশপাশি দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও যথাযথভাবে এগিয়ে চলেছে। একদিনের জন্যও কাজ বন্ধ রাখতে হয়নি।’ চুল্লি স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর ফলে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যাবে।’

প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, ‘সব যন্ত্র সর্বোচ্চ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে নকশা অনুযায়ী বসানো হচ্ছে। এজন্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সনদ নিতে হয়েছে। তারা কাজের মান দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, রিয়েক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের পর পরই আগামী নভেম্বরে স্থাপন করা হবে স্টিম জেনারেটর। এর মাধ্যমে প্রথম ইউনিটে সব ধরনের নিউক্লিয়ার যন্ত্রপাতি বসানো শেষ হবে।’

রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় দেশে নির্মাণাধীন প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি ২০২৩ সালে এবং একই ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট পরের বছর উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।

নির্মাণাধীন এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিশ্বের সর্বাধিক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ‘থার্ড জেনারেশন প্লাস ভিভিইআর ১২০০’ প্রযুক্তির রিয়েক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রোসাটম। একই প্রযুক্তিতে রাশিয়ার নভোভরোনেঝ প্রদেশে নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন চলমান আছে। এই প্রযুক্তির রিয়েক্টরের মেয়াদ ৬০ বছর, যা পরে আরও ২০ বছর বাড়ানো যায়।

এককভাবে আর্থিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি। প্রকল্প ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ঋণ হিসেবে রাশিয়া দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকিটা দিচ্ছে বাংলাদেশ।

দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (এনপিপি) দেশের জন্য বিশেষ অবদান রাখবে বলে আশা করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

রবিবার, ১০ অক্টোবর ২০২১ , ২৫ আশ্বিন ১৪২৮ ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

রূপপুরে পারমাণবিক চুল্লি বসছে আজ

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী 

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আজ ‘রিয়েক্টর প্রেসার ভ্যাসেল (পারমাণবিক চুল্লি পাত্র)’ স্থাপন করা হবে। এই চুল্লিটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র, যেখানে মূল জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) থাকবে। এটিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হৃৎপি-ও বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পারমাণবিক চুল্লিপাত্র স্থাপন কাজের উদ্বোধন করবেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) মূল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম-এর মহাপরিচালক এলেক্সি লিখাচেভ, রোসাটমের প্রকৌশল শাখা এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট জেএসসি (এএসই জেএসসি)’র প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লকসিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আরএনপিপি’র প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবরসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রোসাটম ও এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা ফিরে রোসাটম-এর মহাপরিচালকের নেতৃত্বে রাশিয়ার একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে বলে জানা গেছে। রিয়েক্টর ভবন:

প্রকল্প এলাকায় গোলাকৃতি যে দুটি ভবন (কন্টেইনমেন্ট ডোম) দেখা যায় সেগুলোই রিয়েক্টর ভবন। এদের মধ্যে একটিতে আজ বসানো হবে রিয়েক্টর প্রেসার ভেসেল। এই ভবনের বিভিন্ন ধাপে বসানো হয়েছে নিউক্লিয়ার যন্ত্রপাতি। পাঁচ ধরনের যন্ত্রের মধ্যে ইতিমধ্যে প্রেসারাইজার, কুল্যান্ট পাম্প এবং হাইড্রো এক্যুমুলেটর বসানো সম্পন্ন হয়েছে।

প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর ভবনে পারমাণবিক চুল্লি পাত্র স্থাপনের বিষয়টি বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আরেকটি মাইলফলক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে প্রকল্প পরিদর্শনে বেশ কয়েক দিন যাবৎ রূপপুর অবস্থান করছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে সংবাদকে তিনি বলেন, ‘অগ্রগতি তো দৃশ্যমান। করোনাকালেও গাইড লাইন অনুযায়ী প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজের অগ্রগতির পাশপাশি দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও যথাযথভাবে এগিয়ে চলেছে। একদিনের জন্যও কাজ বন্ধ রাখতে হয়নি।’ চুল্লি স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর ফলে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যাবে।’

প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, ‘সব যন্ত্র সর্বোচ্চ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে নকশা অনুযায়ী বসানো হচ্ছে। এজন্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সনদ নিতে হয়েছে। তারা কাজের মান দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, রিয়েক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের পর পরই আগামী নভেম্বরে স্থাপন করা হবে স্টিম জেনারেটর। এর মাধ্যমে প্রথম ইউনিটে সব ধরনের নিউক্লিয়ার যন্ত্রপাতি বসানো শেষ হবে।’

রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় দেশে নির্মাণাধীন প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি ২০২৩ সালে এবং একই ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট পরের বছর উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।

নির্মাণাধীন এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিশ্বের সর্বাধিক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ‘থার্ড জেনারেশন প্লাস ভিভিইআর ১২০০’ প্রযুক্তির রিয়েক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রোসাটম। একই প্রযুক্তিতে রাশিয়ার নভোভরোনেঝ প্রদেশে নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন চলমান আছে। এই প্রযুক্তির রিয়েক্টরের মেয়াদ ৬০ বছর, যা পরে আরও ২০ বছর বাড়ানো যায়।

এককভাবে আর্থিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি। প্রকল্প ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ঋণ হিসেবে রাশিয়া দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকিটা দিচ্ছে বাংলাদেশ।

দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (এনপিপি) দেশের জন্য বিশেষ অবদান রাখবে বলে আশা করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।