তথ্য প্রাপ্তির অধিকার

সাঈদ চৌধুরী

সরকার তথ্য ছড়িয়ে দিতে অনেক কাজ করছে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। উপজেলাগুলোতে একজন করে তথ্য অফিসারও রয়েছেন। মানুষ তথ্য জানার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন। কিন্তু হিসাবটা যখন পুরো জনগোষ্ঠীকে আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় তখন এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জর।

তথ্য জানতে এবং জানাতে পারলে দুর্নীতি কমে যাবে। মানুষ তাদের অধিকারগুলো সঠিকভাবে পাবে। কিন্তু এরপরও গ্রামে অনেক বিধবা, প্রতিবন্ধী মানুষ ও বৃদ্ধ মানুষ কখনও কারও নজরেই আসে না এমন উদাহরণ অনেক।

এর কারণ অনেক থাকলেও আরেকটি বড় কারণ হলো তথ্য প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা। একজন গ্রামের সাধারণ পোশাক পড়া কৃষক যখন কোনো বড় কর্মকর্তার রুমে ঢোকেন তখন কি তিনি কর্মকর্তার কাছে থেকে স্বাভাবিক ব্যবহার পান? থানায় গিয়েই যদি কেউ বিভিন্ন সেবা ও তথ্য সম্পর্কে জানতে চান তবে কি সেটা তিনি নির্ভয়েই পেয়ে যান?

অনেক সময়ই বিভিন্ন থানায় কোনো তথ্য জানার ক্ষেত্রে বা ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যে ভয় ও অনীহা দেখা যায়। যে বা যিনি সেবা পেতে আসেন তাদের প্রথম বিষয়টিই থাকে আমি কি সঠিকভাবে সমস্যার কথা বোঝাতে পারবো? তার মধ্যে রুমে যাওয়ার পর যদি সামান্য ভালো ব্যবহারও না পায় কেউ তবে তথ্য জানার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।

তথ্য প্রদান ও তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি কমপ্লায়েন্স হওয়া প্রয়োজন। সরকারি দপ্তরের কত সুযোগ সুবিধা মানুষ জানে না। বড় ধরনের রোগ হলে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়টি জানেনা অনেকেই। এখন এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যে তথ্যকে পৌঁছানো দরকার সবার কাছে সমান হারে। সরকারি সেবার তথ্যগুলো মানুষের মধ্যে পৌঁছানোর জন্য ইউনিয়ন পর্যায় থেকে কাজ শুরু করতে হবে। মানুষকে আইন স¤পর্কে জানাতে হবে এবং কেউ তথ্য দিতে না চাইলে বা খারাপ ব্যবহার করলে শাস্তি নিশ্চিতে সরকার যে বদ্ধপরিকর সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে।

সব প্রতিবন্ধকতার পরও বলতে হয় ডিজিটালাইজেশন একটি আলোর দিন শুরু হয়ে গিয়েছে আমাদের। এখন এ সুবিধা প্রান্তিক পর্যায়ে তো পৌঁছাতে হবেই; সাথে সাথে প্রয়োজন কিভাবে এগুলো সহজ পদ্ধতিতে আনা যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা। যারা তথ্য দেয়ার সাথে জড়িত তাদের আন্তরিকতার ব্যপারে কমপ্লায়েন্স ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সেবাগুলো মানুষের মধ্যে জানাতে গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সকল নাগরিকদের নিয়ে বৈঠকও করা যেতে পারে।

মানুষ সব কিছু সম্পর্কে জানলে, তথ্য পরিষ্কার হলে কাউকে টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলবে না আমার এ কাজটা একটু করে দেন! কেউ কোনো অফিসার বা কর্তব্যরত ব্যক্তির মুখবয়ব দেখে তথ্য না জেনেই বের হয়ে আসবে না। তথ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ও সামাজিকভাবে সে অধিকারগুলো ভোগের ক্ষেত্রে আরও গতিশীল হতে হবে। এ বিষয়গুলোর ওপরই নির্ভর করবে পরবর্তী বাংলাদেশ কতটা সমৃদ্ধ হবে সবার সমান অধিকারে। দুর্নীতি কমিয়ে আনাও বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্য বিস্তারে ও অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানার যে দ্বার উন্মোচিত হয়েছে তাকে টেকসই করতে হলে তথ্যগুলোকে মানুষের কাছে ঘরের ভেতর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারলেই আমাদের পুরো সার্থকতা আসবে। সেবা মানুষ সহজে পাবে এবং দুর্নীতিও কমে যাবে। আশা করি তথ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আরও যুগোপযোগী ভাবনা ভাববে।

[লেখক : সদস্য,

উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি]

রবিবার, ১০ অক্টোবর ২০২১ , ২৫ আশ্বিন ১৪২৮ ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

তথ্য প্রাপ্তির অধিকার

সাঈদ চৌধুরী

সরকার তথ্য ছড়িয়ে দিতে অনেক কাজ করছে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। উপজেলাগুলোতে একজন করে তথ্য অফিসারও রয়েছেন। মানুষ তথ্য জানার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন। কিন্তু হিসাবটা যখন পুরো জনগোষ্ঠীকে আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় তখন এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জর।

তথ্য জানতে এবং জানাতে পারলে দুর্নীতি কমে যাবে। মানুষ তাদের অধিকারগুলো সঠিকভাবে পাবে। কিন্তু এরপরও গ্রামে অনেক বিধবা, প্রতিবন্ধী মানুষ ও বৃদ্ধ মানুষ কখনও কারও নজরেই আসে না এমন উদাহরণ অনেক।

এর কারণ অনেক থাকলেও আরেকটি বড় কারণ হলো তথ্য প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা। একজন গ্রামের সাধারণ পোশাক পড়া কৃষক যখন কোনো বড় কর্মকর্তার রুমে ঢোকেন তখন কি তিনি কর্মকর্তার কাছে থেকে স্বাভাবিক ব্যবহার পান? থানায় গিয়েই যদি কেউ বিভিন্ন সেবা ও তথ্য সম্পর্কে জানতে চান তবে কি সেটা তিনি নির্ভয়েই পেয়ে যান?

অনেক সময়ই বিভিন্ন থানায় কোনো তথ্য জানার ক্ষেত্রে বা ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যে ভয় ও অনীহা দেখা যায়। যে বা যিনি সেবা পেতে আসেন তাদের প্রথম বিষয়টিই থাকে আমি কি সঠিকভাবে সমস্যার কথা বোঝাতে পারবো? তার মধ্যে রুমে যাওয়ার পর যদি সামান্য ভালো ব্যবহারও না পায় কেউ তবে তথ্য জানার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।

তথ্য প্রদান ও তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি কমপ্লায়েন্স হওয়া প্রয়োজন। সরকারি দপ্তরের কত সুযোগ সুবিধা মানুষ জানে না। বড় ধরনের রোগ হলে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়টি জানেনা অনেকেই। এখন এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যে তথ্যকে পৌঁছানো দরকার সবার কাছে সমান হারে। সরকারি সেবার তথ্যগুলো মানুষের মধ্যে পৌঁছানোর জন্য ইউনিয়ন পর্যায় থেকে কাজ শুরু করতে হবে। মানুষকে আইন স¤পর্কে জানাতে হবে এবং কেউ তথ্য দিতে না চাইলে বা খারাপ ব্যবহার করলে শাস্তি নিশ্চিতে সরকার যে বদ্ধপরিকর সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে।

সব প্রতিবন্ধকতার পরও বলতে হয় ডিজিটালাইজেশন একটি আলোর দিন শুরু হয়ে গিয়েছে আমাদের। এখন এ সুবিধা প্রান্তিক পর্যায়ে তো পৌঁছাতে হবেই; সাথে সাথে প্রয়োজন কিভাবে এগুলো সহজ পদ্ধতিতে আনা যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা। যারা তথ্য দেয়ার সাথে জড়িত তাদের আন্তরিকতার ব্যপারে কমপ্লায়েন্স ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সেবাগুলো মানুষের মধ্যে জানাতে গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সকল নাগরিকদের নিয়ে বৈঠকও করা যেতে পারে।

মানুষ সব কিছু সম্পর্কে জানলে, তথ্য পরিষ্কার হলে কাউকে টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলবে না আমার এ কাজটা একটু করে দেন! কেউ কোনো অফিসার বা কর্তব্যরত ব্যক্তির মুখবয়ব দেখে তথ্য না জেনেই বের হয়ে আসবে না। তথ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ও সামাজিকভাবে সে অধিকারগুলো ভোগের ক্ষেত্রে আরও গতিশীল হতে হবে। এ বিষয়গুলোর ওপরই নির্ভর করবে পরবর্তী বাংলাদেশ কতটা সমৃদ্ধ হবে সবার সমান অধিকারে। দুর্নীতি কমিয়ে আনাও বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্য বিস্তারে ও অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানার যে দ্বার উন্মোচিত হয়েছে তাকে টেকসই করতে হলে তথ্যগুলোকে মানুষের কাছে ঘরের ভেতর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারলেই আমাদের পুরো সার্থকতা আসবে। সেবা মানুষ সহজে পাবে এবং দুর্নীতিও কমে যাবে। আশা করি তথ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আরও যুগোপযোগী ভাবনা ভাববে।

[লেখক : সদস্য,

উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি]