ভবদহের ২৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দী

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য অভিভাবকের চোখে ঘুম নেই

চরম উৎকণ্ঠা আর কষ্টে দিন কাটছে ভবদহ অঞ্চলের পানিবন্দী বাসিন্দাদের। খাদ্য, বাসস্থান, বিশুদ্ধ পানি সংকটে ভুগছেন তারা। বর্তমানে ৮০টি গ্রামের বসতবাড়িতে পানি জমে থাকায় কোমলমতি শিশুদের নিয়ে পরিবারের চোখে ঘুম নেই। অপরদিকে ২৫টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত রয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কাদা-পানি মাড়িয়ে স্কুলে যাচ্ছে। আবার অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীদের বাঁশের সাঁকো এবং নৌকাই হচ্ছে একমাত্র ভরসা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভবদহের স্থায়ী সমাধানসহ সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

যশোর-খুলনার দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহের সেই সøুইসগেট। যে গেট দিয়েই ভবদহের উত্তরের ২৭টি বিলের পানি বের হয়। বর্তমানে ৮০টির বেশি গ্রাম এখন স্থায়ী জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ভবদহের উত্তরের এ দুটি নদীতে আদৌ কোন স্রোত না থাকায় উজানের পানিতে মানুষের বসতবাড়ি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। যার ফলে ওইসব অঞ্চলের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, ভবদহের সমস্যার কারণে ওই অঞ্চলের ৮০টি গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের দায়ী করে বলেন, মানুষকে জিম্মি করে তারা ভবদহের সমস্যা সমাধানের নামে বড় বড় প্রকল্প তৈরি করে লুটপাট করে চলেছেন। যে কারণে যুগের পর যুগ ভবদহ পাড়ের মানুষের চোখের পানি ও নাকের পোটা পড়লেও ভবদহের মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ইতোমধ্যে সেচ প্রকল্পের নামে প্রকল্প তৈরি করে পানি অপসারণের কাজ চালিয়েছেন। অপরদিকে, লিকেজ দিয়েই আবার সেই পানি প্রবেশ করছে। ফলে ভবদহের স্থায়ী সমাধানের কোন সম্ভাবনাই দেখছেন না তিনি। তবে এই মুহূর্তে এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির মশিয়াহাটি আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষক উৎপল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ভবদহের সমস্যার স্থায়ী কোন সমাধান হচ্ছে না। সম্প্রতি অতি বৃষ্টিপাতের ফলে এলাকায় জল বেড়ে যাওয়ায় গ্রামের ভিতরে উজানের পানি ঢুকে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও মণিরামপুর অংশে ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দী হয়ে থাকায় সেখানে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। পানির সঙ্গে যেসব পরিবার যুদ্ধ করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন তাদের অধিকাংশ বাড়ি এবং রাস্তার সঙ্গে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে নিয়েছেন। স্থায়ী জলাবদ্ধ হয়ে পড়ার কারণে গবাদি পশুর যেমন গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে, তেমনি ভুক্তভোগী মানুষ চরম কষ্টে রয়েছেন খাদ্য এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে। অনেকের রান্নাঘরে পানি থাকায় শুকনা খাদ্য খেয়ে জীবনধারণ করতে হচ্ছে। তবে এ অবস্থায় জীবনযাপন করলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছেন না কেউ।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, পানিতে প্লাবিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে স্কুলের পাঠদানসহ সব কার্যক্রম চালাতে। এছাড়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন না হয় সেদিকে বেশি বেশি করে খোঁজখবর নিতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত অভিভাবক পরিবারের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১ , ২৭ আশ্বিন ১৪২৮ ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ভবদহের ২৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দী

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য অভিভাবকের চোখে ঘুম নেই

প্রতিনিধি, মণিরামপুর (যশোর)

image

ভবদহে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে হাঁটুপানিতে মানববন্ধন। নিচে জলাবদ্ধ স্কুল

চরম উৎকণ্ঠা আর কষ্টে দিন কাটছে ভবদহ অঞ্চলের পানিবন্দী বাসিন্দাদের। খাদ্য, বাসস্থান, বিশুদ্ধ পানি সংকটে ভুগছেন তারা। বর্তমানে ৮০টি গ্রামের বসতবাড়িতে পানি জমে থাকায় কোমলমতি শিশুদের নিয়ে পরিবারের চোখে ঘুম নেই। অপরদিকে ২৫টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত রয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কাদা-পানি মাড়িয়ে স্কুলে যাচ্ছে। আবার অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীদের বাঁশের সাঁকো এবং নৌকাই হচ্ছে একমাত্র ভরসা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভবদহের স্থায়ী সমাধানসহ সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

যশোর-খুলনার দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহের সেই সøুইসগেট। যে গেট দিয়েই ভবদহের উত্তরের ২৭টি বিলের পানি বের হয়। বর্তমানে ৮০টির বেশি গ্রাম এখন স্থায়ী জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ভবদহের উত্তরের এ দুটি নদীতে আদৌ কোন স্রোত না থাকায় উজানের পানিতে মানুষের বসতবাড়ি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। যার ফলে ওইসব অঞ্চলের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, ভবদহের সমস্যার কারণে ওই অঞ্চলের ৮০টি গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের দায়ী করে বলেন, মানুষকে জিম্মি করে তারা ভবদহের সমস্যা সমাধানের নামে বড় বড় প্রকল্প তৈরি করে লুটপাট করে চলেছেন। যে কারণে যুগের পর যুগ ভবদহ পাড়ের মানুষের চোখের পানি ও নাকের পোটা পড়লেও ভবদহের মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ইতোমধ্যে সেচ প্রকল্পের নামে প্রকল্প তৈরি করে পানি অপসারণের কাজ চালিয়েছেন। অপরদিকে, লিকেজ দিয়েই আবার সেই পানি প্রবেশ করছে। ফলে ভবদহের স্থায়ী সমাধানের কোন সম্ভাবনাই দেখছেন না তিনি। তবে এই মুহূর্তে এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির মশিয়াহাটি আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষক উৎপল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ভবদহের সমস্যার স্থায়ী কোন সমাধান হচ্ছে না। সম্প্রতি অতি বৃষ্টিপাতের ফলে এলাকায় জল বেড়ে যাওয়ায় গ্রামের ভিতরে উজানের পানি ঢুকে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও মণিরামপুর অংশে ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দী হয়ে থাকায় সেখানে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। পানির সঙ্গে যেসব পরিবার যুদ্ধ করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন তাদের অধিকাংশ বাড়ি এবং রাস্তার সঙ্গে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে নিয়েছেন। স্থায়ী জলাবদ্ধ হয়ে পড়ার কারণে গবাদি পশুর যেমন গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে, তেমনি ভুক্তভোগী মানুষ চরম কষ্টে রয়েছেন খাদ্য এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে। অনেকের রান্নাঘরে পানি থাকায় শুকনা খাদ্য খেয়ে জীবনধারণ করতে হচ্ছে। তবে এ অবস্থায় জীবনযাপন করলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছেন না কেউ।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, পানিতে প্লাবিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে স্কুলের পাঠদানসহ সব কার্যক্রম চালাতে। এছাড়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন না হয় সেদিকে বেশি বেশি করে খোঁজখবর নিতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত অভিভাবক পরিবারের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে।