সমাধান ছাড়াই শেষ হলো ভারত-চীন বৈঠক

ভারত ও চীনের সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে ১৩তম বৈঠক শেষ হয়েছে কোনো সমাধান ছাড়াই। সীমান্ত সমস্যা সমাধানে এ বৈঠকের দিকে দেশ দুটি তাকিয়ে থাকলেও মূলত কোনো সমাধানে আসতে পারেনি কোন পক্ষই।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছেÑ তারা আশঙ্কা করছেন, চীন সেনাবাহিনী পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকা ও গোগরার কাছে এখনও সক্রিয়। অস্ত্রশস্ত্রও মজুত করে রাখা হয়েছে। চীনা সেনারা নতুন করে সীমা লঙ্ঘন করে ভারত নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যে হামলা চালাতে পারেন, সে ধরনের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না দিল্লি। এমনই প্রেক্ষাপটে ১৩তম সীমান্ত বৈঠক শুরু করেছে চীন ও ভারত।

তবে বৈঠকে সীমান্ত বিবাদ মেটানোর জন্য তারা গঠনমূলক পরামর্শ দিলেও চীন সে প্রস্তাবে সম্মত নয়, তারাও কোনো দূরদর্শী প্রস্তাব দিতে পারেনি। কিন্তু যোগাযোগ অব্যাহত রাখা ও সীমান্ত এলাকায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে। ভারতের প্রত্যাশা, চীন সেনা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় রাখবে এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও প্রটোকল সম্পূর্ণরূপে মেনে চলার সময় অন্য সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধানে কাজ করবে।

বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার দায়িত্বে থাকা লেহভিত্তিক ১৪ কোরের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল পি জি কে মেনন। অন্যদিকে চীনের পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন জিনজিয়াং সামরিক জেলার কমান্ডার মেজর জেনারেল লিউ লিন।

ভারত-চীন সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিভিন্ন স্থানে চীনের আগ্রাসনের ক্রমবর্ধমান রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। কিছুদিন আগে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ে ভারত ও চীনের টহলদারি সেনারা মুখোমুখি হয়েছিলেন। আগস্টের শেষে চীনের সৈন্যরা উত্তরাখ-ের বারাহোতির নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করেছিল। ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে গত শনিবার বলেন, চীন ওই অঞ্চলে থাকার জন্যই চীন সেখানে অবকাঠামো তৈরি করছে। গত বছরের মে মাসেই সীমান্ত থেকে সেনা সরানো নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক স্তরেও একাধিক আলোচনা হয়েছে। বারবার কর্পস কমান্ডার স্তরে বৈঠক হয়েছে। এত কিছুর পরও কোনো সমাধান বেরিয়ে আসেনি।

ভারতের সেনা সূত্র জানায়, এ দিন প্রায় সাড়ে আট ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয় দুই দেশের সামরিক স্তরে। ভারত আবারও সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে সেনা সরানোর জন্য চীনের ওপর চাপ তৈরি করে। মূলত প্যাট্রলিং পয়েন্ট ১৫ থেকে চীনা সেনাকে পুরোপুরি সরিয়ে নেয়ার ওপর জোর দেয় ভারত। তবে চীনা সেনারা বৈঠকে কী বলেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

ভারতীয় সেনাপ্রধান স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, পূর্ব লাদাখের সব স্পর্শকাতর এলাকা থেকে চীন এখনও সেনা সরায়নি। তিনি এটাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তখনই দুই দেশ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আসতে পারবেÑ যখন উভয়ের মধ্যে বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করা হবে। দিল্লির পক্ষ থেকে বলা হয়েছেÑ লাদাখ সীমান্তে কোনো ধরনের আগ্রাসন সহ্য করবে না ভারত। চীন আগ্রাসনের চেষ্টা করলে ভারতও তার উপযুক্ত জবাব দেবে। সীমান্ত সমস্যা সমাধানে এর আগে ভারত-চীন বৈঠক হয়েছিল ৩১ জুলাই। ওই সময়ে বৈঠকের পর গোগরা এলাকা থেকে লাল ফৌজ সরিয়ে নিয়েছিল চীন।

এখন বাকি এলাকা থেকেও যাতে চীনা সেনাদের সরিয়ে নেয়া হয়, তার ওপর জোর দিয়েছেন ভারতীয় সেনারা। এর আগেও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বিশ্ব সম্মেলনেও চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তখনও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা ও সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কথা বলেছিলেন তারা। মূলত গত বছর মে মাসে পূর্ব-লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার দখল নেয়া ঘিরে সংঘর্ষ বাধে। জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। ভারতের ২০ জন সেনা সদস্য তখন নিহত হন। চীনের তরফ থেকে প্রথমে এ ঘটনা অস্বীকার করলেও পরে জানানো হয়, গালওয়ানের সংঘর্ষে তাদেরও বেশ কিছু জওয়ান নিহত হয়েছিলেন। এরপর এক বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও দেশ দুটির সীমান্ত নিয়ে সমস্যা এখনও মেটেনি।

মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১ , ২৭ আশ্বিন ১৪২৮ ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সমাধান ছাড়াই শেষ হলো ভারত-চীন বৈঠক

image

সীমান্ত সমস্যা মেটাতে চুসুল-মালদো সীমান্তে ভারত-চীনের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয় -এনডিটিভি

ভারত ও চীনের সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে ১৩তম বৈঠক শেষ হয়েছে কোনো সমাধান ছাড়াই। সীমান্ত সমস্যা সমাধানে এ বৈঠকের দিকে দেশ দুটি তাকিয়ে থাকলেও মূলত কোনো সমাধানে আসতে পারেনি কোন পক্ষই।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছেÑ তারা আশঙ্কা করছেন, চীন সেনাবাহিনী পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকা ও গোগরার কাছে এখনও সক্রিয়। অস্ত্রশস্ত্রও মজুত করে রাখা হয়েছে। চীনা সেনারা নতুন করে সীমা লঙ্ঘন করে ভারত নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যে হামলা চালাতে পারেন, সে ধরনের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না দিল্লি। এমনই প্রেক্ষাপটে ১৩তম সীমান্ত বৈঠক শুরু করেছে চীন ও ভারত।

তবে বৈঠকে সীমান্ত বিবাদ মেটানোর জন্য তারা গঠনমূলক পরামর্শ দিলেও চীন সে প্রস্তাবে সম্মত নয়, তারাও কোনো দূরদর্শী প্রস্তাব দিতে পারেনি। কিন্তু যোগাযোগ অব্যাহত রাখা ও সীমান্ত এলাকায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে। ভারতের প্রত্যাশা, চীন সেনা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় রাখবে এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও প্রটোকল সম্পূর্ণরূপে মেনে চলার সময় অন্য সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধানে কাজ করবে।

বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার দায়িত্বে থাকা লেহভিত্তিক ১৪ কোরের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল পি জি কে মেনন। অন্যদিকে চীনের পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন জিনজিয়াং সামরিক জেলার কমান্ডার মেজর জেনারেল লিউ লিন।

ভারত-চীন সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিভিন্ন স্থানে চীনের আগ্রাসনের ক্রমবর্ধমান রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। কিছুদিন আগে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ে ভারত ও চীনের টহলদারি সেনারা মুখোমুখি হয়েছিলেন। আগস্টের শেষে চীনের সৈন্যরা উত্তরাখ-ের বারাহোতির নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করেছিল। ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে গত শনিবার বলেন, চীন ওই অঞ্চলে থাকার জন্যই চীন সেখানে অবকাঠামো তৈরি করছে। গত বছরের মে মাসেই সীমান্ত থেকে সেনা সরানো নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক স্তরেও একাধিক আলোচনা হয়েছে। বারবার কর্পস কমান্ডার স্তরে বৈঠক হয়েছে। এত কিছুর পরও কোনো সমাধান বেরিয়ে আসেনি।

ভারতের সেনা সূত্র জানায়, এ দিন প্রায় সাড়ে আট ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয় দুই দেশের সামরিক স্তরে। ভারত আবারও সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে সেনা সরানোর জন্য চীনের ওপর চাপ তৈরি করে। মূলত প্যাট্রলিং পয়েন্ট ১৫ থেকে চীনা সেনাকে পুরোপুরি সরিয়ে নেয়ার ওপর জোর দেয় ভারত। তবে চীনা সেনারা বৈঠকে কী বলেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

ভারতীয় সেনাপ্রধান স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, পূর্ব লাদাখের সব স্পর্শকাতর এলাকা থেকে চীন এখনও সেনা সরায়নি। তিনি এটাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তখনই দুই দেশ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আসতে পারবেÑ যখন উভয়ের মধ্যে বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করা হবে। দিল্লির পক্ষ থেকে বলা হয়েছেÑ লাদাখ সীমান্তে কোনো ধরনের আগ্রাসন সহ্য করবে না ভারত। চীন আগ্রাসনের চেষ্টা করলে ভারতও তার উপযুক্ত জবাব দেবে। সীমান্ত সমস্যা সমাধানে এর আগে ভারত-চীন বৈঠক হয়েছিল ৩১ জুলাই। ওই সময়ে বৈঠকের পর গোগরা এলাকা থেকে লাল ফৌজ সরিয়ে নিয়েছিল চীন।

এখন বাকি এলাকা থেকেও যাতে চীনা সেনাদের সরিয়ে নেয়া হয়, তার ওপর জোর দিয়েছেন ভারতীয় সেনারা। এর আগেও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বিশ্ব সম্মেলনেও চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তখনও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা ও সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কথা বলেছিলেন তারা। মূলত গত বছর মে মাসে পূর্ব-লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার দখল নেয়া ঘিরে সংঘর্ষ বাধে। জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। ভারতের ২০ জন সেনা সদস্য তখন নিহত হন। চীনের তরফ থেকে প্রথমে এ ঘটনা অস্বীকার করলেও পরে জানানো হয়, গালওয়ানের সংঘর্ষে তাদেরও বেশ কিছু জওয়ান নিহত হয়েছিলেন। এরপর এক বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও দেশ দুটির সীমান্ত নিয়ে সমস্যা এখনও মেটেনি।