অভিনেতা, নাট্যকার শিক্ষক ইনামুল হকের জীবনাবসান

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

না ফেরার দেশে চলে গেলেন স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা নাট্যকার ও নির্দেশক ড. ইনামুল হক। গতকাল রাজধানীর একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক সন্তপ্ত পরিবারকে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। নাট্যকার হিসেবে ড. ইনামুল হকের পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। তার প্রথম লেখা নাটকের নাম ‘অনেকদিনের একদিন’। টেলিভিশনের জন্য ৬০টি নাটক লিখেছিলেন তিনি।

তার লেখা আলোচিত টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘সেইসব দিনগুলি’ (মুক্তিযুদ্ধের নাটক), ‘নির্জন সৈকতে’ ও ‘কে বা আপন কে বা পর’।

উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে ড. ইনামুল হক অভিনয় জীবন শুরু করেন। তার প্রথম অভিনীত টেলিভিশন নাটক ছিল ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’। এটি প্রযোজনা করেছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার। মঞ্চের জন্য তার লেখা প্রথম নাটকের নাম ‘বিবাহ উৎসব’। এটি লিখেছিলেন উদীচীর জন্য। তার নিজ দল নাগরিক নাট্যাঙ্গনের জন্য প্রথম লেখা নাটকের নাম ‘গৃহবাসী’। ১৯৮৩ সালে লেখা হয় নাটকটি। ঢাকার মঞ্চে বেশ আলোচিত নাটক এটি।

ইনামুল হক ছিলেন একাধারে নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা, লেখক ও শিক্ষক। তিনি দীর্ঘকাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। স্ত্রী লাকী ইনাম দেশের স্বনামধন্য অভিনেত্রী এবং দুই মেয়ে হৃদি হক ও চৈতি হক, তারা ও তাদের স্বামী লিটু আনাম ও সাজু খাদেমও টিভি-মঞ্চে অভিনয় শিল্পী।

ইনামুল হক ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ওবায়দুল হক ও মাতার নাম রাজিয়া খাতুন। তিনি ফেনী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন

ইনামুল হক ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে ১৯৭০ সালে সহকারী অধ্যাপক, ১৯৭৯ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৮৭ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াসে বিভিন্ন আন্দোলনমুখী নাটকে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে সামরিক শাসনকে উপেক্ষা করে তৎকালীন অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন নাট্যচর্চাকে হাতিয়ার করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সৃজনীর ব্যানারে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাকে ট্রাকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পথ নাটক করেন। তার ১৮টি নাটক বিভিন্ন নাট্যপত্রে, বিশেষ ম্যাগাজিনে এবং বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ইনামুল হকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : নির্জন সৈকতে, গৃহবাসী, মুক্তিযুদ্ধ নাটকসমগ্র, স্ট্রিন্ডবার্গ এর দুটো নাটক, মহাকালের ঘোর সওয়ার, বাংলা আমার বাংলা ইত্যাদি।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ ভূমিকার জন্য ২০১২ সালে একুশে পদক ও ২০১৭ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার পান। এছাড়া টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ পুরস্কার আজীবন সম্মাননাও দেয়া হয় গুণী এই শিল্পীকে।

মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১ , ২৭ আশ্বিন ১৪২৮ ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

অভিনেতা, নাট্যকার শিক্ষক ইনামুল হকের জীবনাবসান

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

না ফেরার দেশে চলে গেলেন স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা নাট্যকার ও নির্দেশক ড. ইনামুল হক। গতকাল রাজধানীর একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক সন্তপ্ত পরিবারকে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। নাট্যকার হিসেবে ড. ইনামুল হকের পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। তার প্রথম লেখা নাটকের নাম ‘অনেকদিনের একদিন’। টেলিভিশনের জন্য ৬০টি নাটক লিখেছিলেন তিনি।

তার লেখা আলোচিত টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘সেইসব দিনগুলি’ (মুক্তিযুদ্ধের নাটক), ‘নির্জন সৈকতে’ ও ‘কে বা আপন কে বা পর’।

উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে ড. ইনামুল হক অভিনয় জীবন শুরু করেন। তার প্রথম অভিনীত টেলিভিশন নাটক ছিল ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’। এটি প্রযোজনা করেছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার। মঞ্চের জন্য তার লেখা প্রথম নাটকের নাম ‘বিবাহ উৎসব’। এটি লিখেছিলেন উদীচীর জন্য। তার নিজ দল নাগরিক নাট্যাঙ্গনের জন্য প্রথম লেখা নাটকের নাম ‘গৃহবাসী’। ১৯৮৩ সালে লেখা হয় নাটকটি। ঢাকার মঞ্চে বেশ আলোচিত নাটক এটি।

ইনামুল হক ছিলেন একাধারে নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা, লেখক ও শিক্ষক। তিনি দীর্ঘকাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। স্ত্রী লাকী ইনাম দেশের স্বনামধন্য অভিনেত্রী এবং দুই মেয়ে হৃদি হক ও চৈতি হক, তারা ও তাদের স্বামী লিটু আনাম ও সাজু খাদেমও টিভি-মঞ্চে অভিনয় শিল্পী।

ইনামুল হক ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ওবায়দুল হক ও মাতার নাম রাজিয়া খাতুন। তিনি ফেনী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন

ইনামুল হক ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে ১৯৭০ সালে সহকারী অধ্যাপক, ১৯৭৯ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৮৭ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াসে বিভিন্ন আন্দোলনমুখী নাটকে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে সামরিক শাসনকে উপেক্ষা করে তৎকালীন অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন নাট্যচর্চাকে হাতিয়ার করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সৃজনীর ব্যানারে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাকে ট্রাকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পথ নাটক করেন। তার ১৮টি নাটক বিভিন্ন নাট্যপত্রে, বিশেষ ম্যাগাজিনে এবং বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ইনামুল হকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : নির্জন সৈকতে, গৃহবাসী, মুক্তিযুদ্ধ নাটকসমগ্র, স্ট্রিন্ডবার্গ এর দুটো নাটক, মহাকালের ঘোর সওয়ার, বাংলা আমার বাংলা ইত্যাদি।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ ভূমিকার জন্য ২০১২ সালে একুশে পদক ও ২০১৭ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার পান। এছাড়া টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ পুরস্কার আজীবন সম্মাননাও দেয়া হয় গুণী এই শিল্পীকে।