জলপাই বাগান ও তুমি
আবদুর রাজ্জাক
তুমি ততটুকু, ততটুকুই নিজেকে নির্মাণ করেছ- যা
কারো পক্ষে অসত্য করা সম্ভব হয় না, তারা
প্রতিহিংসাপরায়ণ, তারা তোমার অগোচরে, তারা।
শরতের প্রথম প্রভাতে আমার মৃত্যু হয়েছে,
দ্বিতীয় প্রভাতে ফুটেছে রূপবতী শিউলি। আমি
বিশ্বাস করি, মৃত্যু তোমার নিকট পরাজিত হবে, আর
অসুস্থতাও পালিয়ে যাবে।
তুমি নিশ্চয়ই জানো, শরতের বৃষ্টি দীর্ঘায়ু হয় না।
কাশফুলের শরত বৃষ্টিকে শাসিয়েছে, বলেছে-
‘আমার শুভ্র ফুলগুলি ভিজিয়ে দিও না।’
এই শরতের একটি দুঃসংবাদ এই যে-তুমি অসুস্থ,
আমি তোমাকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করছি,
প্রার্থনা করছি, ভাই আমার-
তুমিই আমাকে শরতের সৌন্দর্য দেখতে শিখিয়েছিলে,
আঁকাবাঁকা নদী হওয়ার স্বপ্ন শিখিয়েছিলে।
অথচ আমি এখনও মানুষকে ভালোবাসতে শিখিনি,
কবিতাকে ভালোবাসতে শিখিনি। হায়!
তুমি আমার ভালোবাসার এক কোমর অশ্রুর ভেতর
নির্বাক দাঁড়িয়ে রয়েছ।
বিভ্রান্তি
আদিলা বকুল
আমার সবকিছুই বড়ই বিচিত্র, এই বিষয়টি আমাকেই বিচলিত করে বেশি- বড় সহজে আবেগ কাজ করে, অভিমানও কাজ করে। কিন্তু ক্রোধটা জমে ওঠে না। কী যে করি নিজেকে নিয়ে,
আমার সবকিছুই কেমন যেন ভুলভাল। নিজেই বুঝি না, যেনো অবোধ এক নাবালিকা। আমার সব চাওয়াগুলো পূরণ হয় না, এমন আহামরি কিছু চাই না, যৎসামান্য। আমার প্রতীক্ষা যেন গোডোর প্রতীক্ষা, আবার আমার কাছ থেকে কারো যাওয়া যেন অগস্ত মূনির যাত্রা। অপেক্ষায় অপেক্ষায় দিন যায়- বুকের ব্যথাগুলো মাঝে মাঝে চোখের পানি হয়ে ভাসে। মনটা আমার কিছুই মানতে চায় না, ইচ্ছে করে ডুব সাঁতারে পারাপার হয়ে যাই আর কষ্টগুলো পানির নিচে রেখে আসি, হাঁসেদের খাবার হোক-
সবকিছু সাধারণ অতি সাধারণ। তবুও কেউ কেউ ভুল বোঝে-
সামান্য অহংকারি এই আমি ওসব গ্রাহ্য করি কম। আত্মবিশ্বাস প্রবল তো, সততায় পথ চলি। যাক গে।
সমস্যা এখন একটাই জীবন তো সায়াহ্নে তবুও কেন ব্যথাগুলো, কষ্টগুলো এতো তীব্র হয়, ভালোবাসার মানুষেরা কি শেষ কষ্টটা দেবেই? যাকে আমি পরম ধৈর্য নিয়ে তিলে তিলে নির্মাণ করেছি, সে কি হাত বাড়াবে কখনো, আমি যে এতটুকু আশ্রয় চাই চোখ বন্ধ করে, নিঃশ্বাস বন্ধ করে, হৃদয় দরজাটা খুলে রেখেছি যে শুধুমাত্র তারই জন্যে- যদি পরাজিত হই, বিকল্প পথ কি সেই পবিত্র ফেরেশতার আগমনের অপেক্ষা?
সে ফেরেনি
সোহরাব পাশা
গোপন সুন্দর রেখে গেলো
রাত্রি
শরতের শিউলিতলায় গান ওড়ে
জীবনানন্দের-
শিশিরের ছায়া পড়ে ঘাসে
নুয়ে পড়ে বুনোফুল
রাত্রির চোখে হাসি দেখি না
বুকের ভেতর রাত্রি কাঁদে
কী যে আগুন-পাথররাত্রি
ওই কান্না শোনে না কেউ
পা’ফেলা শব্দের ঘ্রাণ নেই
দুঃসহ ক্লান্তি নিয়ে সন্ধ্যাগুলো একাকী
বাড়ি ফেরে
রাত্রিকে দেখেনি কেউ ভোরে
পিঁপড়ে অসুখ
রাহমান ওয়াহিদ
অসুখগুলো ছোট ছোট। কেয়ার করার মতো না।
দশটা লাল পিঁপড়ের মতো ছোট ছোট পায়ে
অসুখগুলো একের পর এক এসে এসে
হুল ফুটিয়ে যাচ্ছে;
জটলা পাকিয়ে শলা-পরামর্শ করে করে
স্বস্তি কেড়ে নিচ্ছে, দম কেড়ে নিচ্ছে
খাট থেকে দুমদাম নামিয়ে দিচ্ছে
বোধের ভেতর থেকে শাঁস খেয়ে নিচ্ছে
পরমাত্মায় লেপ্টে থাকা শিরিনের হাত থেকে
ছাড়িয়ে নিচ্ছে হাত, যেন হয়ে যাই কুপোকাত।
সেই কবে থেকে তাচ্ছিল্যে ফেলে আসা শিশিরগন্ধ
মেঘচোখ ডাকছে। মর্মর বৃক্ষের কুঁড়িরা ডাকছে।
প্রতœ প্রেমের ছায়ারা ডাকছে। বুড়িয়ে যাওয়া
হৃৎপদ্মও হিমপাঁজরে দিচ্ছে বেঘুম হাওয়া।
কী করে যাবো?
পায়ের আঙ্গুলে, অবারিত করতলজুড়ে
প্রতিটি রোমকূপে
লাল পিঁপড়ে, হলদে পিঁপড়ের ছোট ছোট অসুখ।
বাঘ ও হরিণ
আসিফ নূর
বাঘের লাফ বাইশ হাত, হরিণেরটা তেইশ।
স্বাভাবিক হিসাবে তাই বাঘ কখনও
হরিণকে তার হাতে কাছে পাওয়ার কথা নয়।
তবু পায়, থাবার নাগালেই বাঘ
হৃষ্টপুষ্ট হরিণকে পায়; তারপর খাবলে খায়।
হরিণটি লাফাতে লাফাতে বারবার পিছু ফিরে চায়,
পিছু ফিরে তাকাতে তাকাতেই পিছে পড়ে যায়;
এভাবেই সে হয়ে যায় ক্ষুধার্ত বাঘের খাবার।
বর্ণমালা কবিতা
দুপুর মিত্র
৫.
প তে পেয়েছি, পেয়েছি তো বটেই, তবু পেয়েছি কি সব?
ফ তে ফাল্গুন আসলেও পৃথিবীর সবখানে হয় না উৎসব।
ব তে বাস্তবতার চেয়ে আমাদের কষ্ট দেয় বেশি কল্পনা।
ভ তে ভাববে না তবে কি চাতক আকাশের দিকে চেয়ে, করবে না বৃষ্টিবন্দনা।
৬.
কাক কেন কা কা করে, কার কথা কয়, কথা কেন কড়া।
খেয়ালে খেয়ালে খেয়া খুঁজে খড়কুটা, খ্যাপানো খরা।
৭.
লজ্জায় লালমুখ,
লুকোচুরি লেখিকার।
শিল্পপ্রতিভায় শিহরন,
শিলীভূত শেফালিকার।
বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১ , ২৯ আশ্বিন ১৪২৮ ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩
জলপাই বাগান ও তুমি
আবদুর রাজ্জাক
তুমি ততটুকু, ততটুকুই নিজেকে নির্মাণ করেছ- যা
কারো পক্ষে অসত্য করা সম্ভব হয় না, তারা
প্রতিহিংসাপরায়ণ, তারা তোমার অগোচরে, তারা।
শরতের প্রথম প্রভাতে আমার মৃত্যু হয়েছে,
দ্বিতীয় প্রভাতে ফুটেছে রূপবতী শিউলি। আমি
বিশ্বাস করি, মৃত্যু তোমার নিকট পরাজিত হবে, আর
অসুস্থতাও পালিয়ে যাবে।
তুমি নিশ্চয়ই জানো, শরতের বৃষ্টি দীর্ঘায়ু হয় না।
কাশফুলের শরত বৃষ্টিকে শাসিয়েছে, বলেছে-
‘আমার শুভ্র ফুলগুলি ভিজিয়ে দিও না।’
এই শরতের একটি দুঃসংবাদ এই যে-তুমি অসুস্থ,
আমি তোমাকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করছি,
প্রার্থনা করছি, ভাই আমার-
তুমিই আমাকে শরতের সৌন্দর্য দেখতে শিখিয়েছিলে,
আঁকাবাঁকা নদী হওয়ার স্বপ্ন শিখিয়েছিলে।
অথচ আমি এখনও মানুষকে ভালোবাসতে শিখিনি,
কবিতাকে ভালোবাসতে শিখিনি। হায়!
তুমি আমার ভালোবাসার এক কোমর অশ্রুর ভেতর
নির্বাক দাঁড়িয়ে রয়েছ।
বিভ্রান্তি
আদিলা বকুল
আমার সবকিছুই বড়ই বিচিত্র, এই বিষয়টি আমাকেই বিচলিত করে বেশি- বড় সহজে আবেগ কাজ করে, অভিমানও কাজ করে। কিন্তু ক্রোধটা জমে ওঠে না। কী যে করি নিজেকে নিয়ে,
আমার সবকিছুই কেমন যেন ভুলভাল। নিজেই বুঝি না, যেনো অবোধ এক নাবালিকা। আমার সব চাওয়াগুলো পূরণ হয় না, এমন আহামরি কিছু চাই না, যৎসামান্য। আমার প্রতীক্ষা যেন গোডোর প্রতীক্ষা, আবার আমার কাছ থেকে কারো যাওয়া যেন অগস্ত মূনির যাত্রা। অপেক্ষায় অপেক্ষায় দিন যায়- বুকের ব্যথাগুলো মাঝে মাঝে চোখের পানি হয়ে ভাসে। মনটা আমার কিছুই মানতে চায় না, ইচ্ছে করে ডুব সাঁতারে পারাপার হয়ে যাই আর কষ্টগুলো পানির নিচে রেখে আসি, হাঁসেদের খাবার হোক-
সবকিছু সাধারণ অতি সাধারণ। তবুও কেউ কেউ ভুল বোঝে-
সামান্য অহংকারি এই আমি ওসব গ্রাহ্য করি কম। আত্মবিশ্বাস প্রবল তো, সততায় পথ চলি। যাক গে।
সমস্যা এখন একটাই জীবন তো সায়াহ্নে তবুও কেন ব্যথাগুলো, কষ্টগুলো এতো তীব্র হয়, ভালোবাসার মানুষেরা কি শেষ কষ্টটা দেবেই? যাকে আমি পরম ধৈর্য নিয়ে তিলে তিলে নির্মাণ করেছি, সে কি হাত বাড়াবে কখনো, আমি যে এতটুকু আশ্রয় চাই চোখ বন্ধ করে, নিঃশ্বাস বন্ধ করে, হৃদয় দরজাটা খুলে রেখেছি যে শুধুমাত্র তারই জন্যে- যদি পরাজিত হই, বিকল্প পথ কি সেই পবিত্র ফেরেশতার আগমনের অপেক্ষা?
সে ফেরেনি
সোহরাব পাশা
গোপন সুন্দর রেখে গেলো
রাত্রি
শরতের শিউলিতলায় গান ওড়ে
জীবনানন্দের-
শিশিরের ছায়া পড়ে ঘাসে
নুয়ে পড়ে বুনোফুল
রাত্রির চোখে হাসি দেখি না
বুকের ভেতর রাত্রি কাঁদে
কী যে আগুন-পাথররাত্রি
ওই কান্না শোনে না কেউ
পা’ফেলা শব্দের ঘ্রাণ নেই
দুঃসহ ক্লান্তি নিয়ে সন্ধ্যাগুলো একাকী
বাড়ি ফেরে
রাত্রিকে দেখেনি কেউ ভোরে
পিঁপড়ে অসুখ
রাহমান ওয়াহিদ
অসুখগুলো ছোট ছোট। কেয়ার করার মতো না।
দশটা লাল পিঁপড়ের মতো ছোট ছোট পায়ে
অসুখগুলো একের পর এক এসে এসে
হুল ফুটিয়ে যাচ্ছে;
জটলা পাকিয়ে শলা-পরামর্শ করে করে
স্বস্তি কেড়ে নিচ্ছে, দম কেড়ে নিচ্ছে
খাট থেকে দুমদাম নামিয়ে দিচ্ছে
বোধের ভেতর থেকে শাঁস খেয়ে নিচ্ছে
পরমাত্মায় লেপ্টে থাকা শিরিনের হাত থেকে
ছাড়িয়ে নিচ্ছে হাত, যেন হয়ে যাই কুপোকাত।
সেই কবে থেকে তাচ্ছিল্যে ফেলে আসা শিশিরগন্ধ
মেঘচোখ ডাকছে। মর্মর বৃক্ষের কুঁড়িরা ডাকছে।
প্রতœ প্রেমের ছায়ারা ডাকছে। বুড়িয়ে যাওয়া
হৃৎপদ্মও হিমপাঁজরে দিচ্ছে বেঘুম হাওয়া।
কী করে যাবো?
পায়ের আঙ্গুলে, অবারিত করতলজুড়ে
প্রতিটি রোমকূপে
লাল পিঁপড়ে, হলদে পিঁপড়ের ছোট ছোট অসুখ।
বাঘ ও হরিণ
আসিফ নূর
বাঘের লাফ বাইশ হাত, হরিণেরটা তেইশ।
স্বাভাবিক হিসাবে তাই বাঘ কখনও
হরিণকে তার হাতে কাছে পাওয়ার কথা নয়।
তবু পায়, থাবার নাগালেই বাঘ
হৃষ্টপুষ্ট হরিণকে পায়; তারপর খাবলে খায়।
হরিণটি লাফাতে লাফাতে বারবার পিছু ফিরে চায়,
পিছু ফিরে তাকাতে তাকাতেই পিছে পড়ে যায়;
এভাবেই সে হয়ে যায় ক্ষুধার্ত বাঘের খাবার।
বর্ণমালা কবিতা
দুপুর মিত্র
৫.
প তে পেয়েছি, পেয়েছি তো বটেই, তবু পেয়েছি কি সব?
ফ তে ফাল্গুন আসলেও পৃথিবীর সবখানে হয় না উৎসব।
ব তে বাস্তবতার চেয়ে আমাদের কষ্ট দেয় বেশি কল্পনা।
ভ তে ভাববে না তবে কি চাতক আকাশের দিকে চেয়ে, করবে না বৃষ্টিবন্দনা।
৬.
কাক কেন কা কা করে, কার কথা কয়, কথা কেন কড়া।
খেয়ালে খেয়ালে খেয়া খুঁজে খড়কুটা, খ্যাপানো খরা।
৭.
লজ্জায় লালমুখ,
লুকোচুরি লেখিকার।
শিল্পপ্রতিভায় শিহরন,
শিলীভূত শেফালিকার।