ইয়েমেনে সৌদি বিমান হামলায় নিহত ১৩৪

সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের বিমান হামলায় ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলের মারিব প্রদেশে হুথি বিদ্রোহীদের অন্তত ১৩৪ সদস্য নিহত হয়েছেন। জোটের এক বিবৃতিতে বিমান হামলায় হুথিদের এই প্রাণহানি ঘটেছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বিদ্রোহীরা কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিবের দক্ষিণের একটি জেলার ২৫ কিলোমিটার এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। গত মাসে মারিবে নতুন করে লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান সমর্থিত শত শত হুথি-বিদ্রোহী এবং সরকারের অনুগত বাহিনীর সদস্যের প্রাণহানি ঘটছে। তেলসমৃদ্ধ উত্তর ইয়েমেনের মারিব শহর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ ঘাঁটি। একদিন আগে মারিব প্রদেশের আবদিয়া জেলায় কয়েক ডজন বিমান হামলা চালিয়েছিল সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। ওই হামলায় দেড় শতাধিক বিদ্রোহী নিহত হয়। জোটের বিবৃতির বরাত দিয়ে সৌদির সরকারি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ?‘আমরা মারিবের আবদিয়ায় হুথি বিদ্রোহীদের ৯টি সামরিক যান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছি। এতে বিদ্রোহীদের ১৩৪ জনের প্রাণ গেছে।’ ইয়েমেনের সামরিক বাহিনীর একটি সূত্র এএফপিকে বলেছে, মারিব প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলের আল-জাওবাহ জেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা। হুথিদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষের পর আল-জাওবাহর চৌকি থেকে সরকারি সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা আল-জাওবাহ জেলায় হুথিদের প্রবেশের তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, তারা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে একবার মারিব দখলে অভিযান চালিয়েছিল হুথিরা, কিন্তু সেবার বিপুলসংখ্যক যোদ্ধার প্রাণহানি হওয়ায় কয়েকমাস স্থগিত ছিল তাদের সেই শহর দখল অভিযান। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের মারিবে অভ্যন্তরীণ বাস্ত্যুচুত হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এই মানুষরাই নতুন সংঘাতের কেন্দ্রে চলে এসেছেন। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।

ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ছায়াযুদ্ধ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং এক সময়ের সচ্ছল এই দেশ। জাতিসংঘ বলছে, ইয়েমেনের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন।

বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১ , ২৯ আশ্বিন ১৪২৮ ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ইয়েমেনে সৌদি বিমান হামলায় নিহত ১৩৪

সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের বিমান হামলায় ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলের মারিব প্রদেশে হুথি বিদ্রোহীদের অন্তত ১৩৪ সদস্য নিহত হয়েছেন। জোটের এক বিবৃতিতে বিমান হামলায় হুথিদের এই প্রাণহানি ঘটেছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বিদ্রোহীরা কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিবের দক্ষিণের একটি জেলার ২৫ কিলোমিটার এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। গত মাসে মারিবে নতুন করে লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান সমর্থিত শত শত হুথি-বিদ্রোহী এবং সরকারের অনুগত বাহিনীর সদস্যের প্রাণহানি ঘটছে। তেলসমৃদ্ধ উত্তর ইয়েমেনের মারিব শহর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ ঘাঁটি। একদিন আগে মারিব প্রদেশের আবদিয়া জেলায় কয়েক ডজন বিমান হামলা চালিয়েছিল সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। ওই হামলায় দেড় শতাধিক বিদ্রোহী নিহত হয়। জোটের বিবৃতির বরাত দিয়ে সৌদির সরকারি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ?‘আমরা মারিবের আবদিয়ায় হুথি বিদ্রোহীদের ৯টি সামরিক যান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছি। এতে বিদ্রোহীদের ১৩৪ জনের প্রাণ গেছে।’ ইয়েমেনের সামরিক বাহিনীর একটি সূত্র এএফপিকে বলেছে, মারিব প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলের আল-জাওবাহ জেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা। হুথিদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষের পর আল-জাওবাহর চৌকি থেকে সরকারি সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা আল-জাওবাহ জেলায় হুথিদের প্রবেশের তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, তারা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে একবার মারিব দখলে অভিযান চালিয়েছিল হুথিরা, কিন্তু সেবার বিপুলসংখ্যক যোদ্ধার প্রাণহানি হওয়ায় কয়েকমাস স্থগিত ছিল তাদের সেই শহর দখল অভিযান। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের মারিবে অভ্যন্তরীণ বাস্ত্যুচুত হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এই মানুষরাই নতুন সংঘাতের কেন্দ্রে চলে এসেছেন। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।

ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ছায়াযুদ্ধ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং এক সময়ের সচ্ছল এই দেশ। জাতিসংঘ বলছে, ইয়েমেনের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন।