গাজার ৯৭ শতাংশ পানি দূষিত, বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত প্যালেস্টাইনিরা

দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্যালেস্টাইনের গাজা উপত্যকাটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ উপত্যকায় বন্দি জীবনযাপন করছেন প্যালেস্টাইনিরা। অনেক মৌলিক অধিকারই নেই সেখানকার বাসিন্দাদের। এর মধ্যে উঠে এসেছে নতুন তথ্য। আর তা হচ্ছে- অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ৯৭ শতাংশ পানিই দূষিত, পানের অযোগ্য।

এর ফলে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন নারী ও শিশুসহ উপত্যকাটির ২০ লাখ মানুষ। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। গত সোমবার অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৪৮তম অধিবেশনে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ওয়াটার, এনভাইরনমেন্ট অ্যান্ড হেলথ এবং ইউরো-মেডিটেরিনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর জানায়, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার পানি পান করার অযোগ্য এবং সেটি ধীরে ধীরে মানুষকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত করছে। এক যৌথ বিবৃতিতে সংস্থা দু’টি জানিয়েছে, গাজা ভূখ-ে দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি অবরোধ জারি থাকায় উপত্যকাটির পানি ব্যবস্থাপনার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ফলে ভূখ-টির ৯৭ শতাংশ পানিই এখন দূষিত পানিতে পরিণত হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই পানি পান করতে এবং শিশু ও প্রিয়জনদেরকে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া প্রত্যক্ষ করতে কার্যত বাধ্য হচ্ছেন গাজার প্যালেস্টাইনিরা। এছাড়া মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বছরের পর বছর ধরে গাজার খাবার পানীয় পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আসছে। দীর্ঘ সময় ধরে লোডশেডিংয়ের কারণে গাজা পৌর কর্তৃপক্ষের কলগুলো দিনের লম্বা সময় ধরে অকার্যকরই থাকে। আবার এসব কল থেকে পানি আসলেও তা এতোটাই লবণাক্ত থাকে যে, সেই পানি কার্যত কেউই পান করতে পারেন না। আর তাই গাজার বহু বাসিন্দা বেসরকারি সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। গাজার প্রচ- দূষিত এই পানি উপত্যকাটির বাসিন্দাদের স্বাস্থের ওপরও মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনি শিশুরা গুরুতর পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। গাজার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সী নারী ফালিসতিন আবদেলকারিম আলজাজিরাকে জানান, তার এলাকার পানি পানের অযোগ্য। তিনি বলছেন, পানির স্বাদে মনে হয় এটি সমুদ্র থেকে আনা হয়েছে। আমরা এই পানি পান করা, রান্না করা এমনকি গোসলের কাজেও ব্যবহার করতে পারি না। পাঁচ সন্তানের জননী এই নারী আরও বলেন, শরণার্থী শিবিরে আমাদের জীবন খুবই দুর্দশাপূর্ণ। বাধ্য হয়ে আমাদের বিক্রেতাদের কাছ থেকে পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়। গাজার উত্তরাঞ্চলীয় আল-শেখ রেদওয়ান এলকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সালিম জানান, বাড়ির আঙিনায় বাগান তৈরি করতে কয়েকবার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু পানি খুব বেশি দূষিত হওয়ার কারণে তিনি বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলছেন, পানিতে লবণ ও ক্লোরাইডের পরিমাণ এতোটাই বেশি যে, আমার সব গাছই শুকিয়ে মরে যায়।

বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১ , ২৯ আশ্বিন ১৪২৮ ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

গাজার ৯৭ শতাংশ পানি দূষিত, বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত প্যালেস্টাইনিরা

দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্যালেস্টাইনের গাজা উপত্যকাটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ উপত্যকায় বন্দি জীবনযাপন করছেন প্যালেস্টাইনিরা। অনেক মৌলিক অধিকারই নেই সেখানকার বাসিন্দাদের। এর মধ্যে উঠে এসেছে নতুন তথ্য। আর তা হচ্ছে- অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ৯৭ শতাংশ পানিই দূষিত, পানের অযোগ্য।

এর ফলে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন নারী ও শিশুসহ উপত্যকাটির ২০ লাখ মানুষ। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। গত সোমবার অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৪৮তম অধিবেশনে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ওয়াটার, এনভাইরনমেন্ট অ্যান্ড হেলথ এবং ইউরো-মেডিটেরিনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর জানায়, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার পানি পান করার অযোগ্য এবং সেটি ধীরে ধীরে মানুষকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত করছে। এক যৌথ বিবৃতিতে সংস্থা দু’টি জানিয়েছে, গাজা ভূখ-ে দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি অবরোধ জারি থাকায় উপত্যকাটির পানি ব্যবস্থাপনার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ফলে ভূখ-টির ৯৭ শতাংশ পানিই এখন দূষিত পানিতে পরিণত হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই পানি পান করতে এবং শিশু ও প্রিয়জনদেরকে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া প্রত্যক্ষ করতে কার্যত বাধ্য হচ্ছেন গাজার প্যালেস্টাইনিরা। এছাড়া মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বছরের পর বছর ধরে গাজার খাবার পানীয় পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আসছে। দীর্ঘ সময় ধরে লোডশেডিংয়ের কারণে গাজা পৌর কর্তৃপক্ষের কলগুলো দিনের লম্বা সময় ধরে অকার্যকরই থাকে। আবার এসব কল থেকে পানি আসলেও তা এতোটাই লবণাক্ত থাকে যে, সেই পানি কার্যত কেউই পান করতে পারেন না। আর তাই গাজার বহু বাসিন্দা বেসরকারি সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। গাজার প্রচ- দূষিত এই পানি উপত্যকাটির বাসিন্দাদের স্বাস্থের ওপরও মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনি শিশুরা গুরুতর পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। গাজার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সী নারী ফালিসতিন আবদেলকারিম আলজাজিরাকে জানান, তার এলাকার পানি পানের অযোগ্য। তিনি বলছেন, পানির স্বাদে মনে হয় এটি সমুদ্র থেকে আনা হয়েছে। আমরা এই পানি পান করা, রান্না করা এমনকি গোসলের কাজেও ব্যবহার করতে পারি না। পাঁচ সন্তানের জননী এই নারী আরও বলেন, শরণার্থী শিবিরে আমাদের জীবন খুবই দুর্দশাপূর্ণ। বাধ্য হয়ে আমাদের বিক্রেতাদের কাছ থেকে পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়। গাজার উত্তরাঞ্চলীয় আল-শেখ রেদওয়ান এলকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সালিম জানান, বাড়ির আঙিনায় বাগান তৈরি করতে কয়েকবার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু পানি খুব বেশি দূষিত হওয়ার কারণে তিনি বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলছেন, পানিতে লবণ ও ক্লোরাইডের পরিমাণ এতোটাই বেশি যে, আমার সব গাছই শুকিয়ে মরে যায়।