দুর্গোৎসবের চতুর্থ দিন আজ। অষ্টমী পেরিয়ে আজ নবমী। নিয়ম অনুসারে সকালে দেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা শেষে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ করা হবে বলে জানান মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল।
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহানবমীর পূজা শেষে যথারীতি থাকবে অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ। তবে মণ্ডপে মণ্ডপে মা দুর্গাকে দেখার ভিড় থাকলেও এবার শুধুই পুজো হচ্ছে উৎসব নয় বলেন জানান রমেন মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘প্রতিটা মণ্ডপে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। আর এই স্বাস্থ্যবিধি মানেই দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পড়া। এভাবে আসলে উৎসব হয় না। তারপরও আমরা খুশি। আমরা মাকে দেখতে পারছি।’ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন ডা. রথীন্দ্রনাথ সরকার। তিনি বলেন, ‘পুজোর উৎসব যেমন হওয়ার কথা তেমন হচ্ছে না। মহামারী আমাদের উৎসবকেও সীমিত করে দিয়েছে। যেমন মুখর হওয়ার কথা ছিল পুরো দেশ। সেখানে একটু হলেও বাধা থাকছে। অনেক আনন্দই বাদ রাখা হয়েছে। তারপরও ভালো যে আমরা এটুকু আনন্দ করতে পারছি। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’- এই উৎসবে নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষের যেভাবে আগমন ঘটে এবার তা হচ্ছে না, যা আমরা মিস করছি।’
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সেবায়েত বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী জানান, নবমীতে সকাল ৭টা ৩৩ মিনিটে মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমীর বিহিত পুজা, সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দশমীর বিহিত পূজা ও দর্পণ নিরঞ্জন।
করোনার গতকাল শারদীয় দুর্গোৎসবে মহাষ্টমীর দিনে মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপে অনেক দর্শনার্থী এসেছিলেন কুমারী পূজা দেখতে। মানিকলাল সরকার স্ত্রী মাধুরী সরকারকে নিয়ে এসেছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনে এসে হতাশ হয়ে যান কুমারী পূজা না হওয়ায়। মানিকলাল বলেন, অষ্টমী ও এ মন্দিরের মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। গত বছর করোনার কারণে হয়নি, ভেবেছি এবার হবে। কিন্তু এবারও হলো না।’
করোনায় মানুষের ভিড় এড়াতে এবার কুমারী পূজা হয়নি জানিয়ে রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকার অধ্যক্ষ বলেন, ‘দুর্গাপূজার একটি বিশেষ অংশ হচ্ছে কুমারী পূজা। স্বাভাবিক সময়ে আমাদের এখানে অষ্টমীর দিনে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। করোনার কারণে শারীরিক দূরত্ব মানা কঠিন হবে, তাই দুই বছর ধরে কুমারী পূজা বন্ধ। আগামী বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কুমারী পূজা হবে আশা করি।’
তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার কুমারী পূজার আয়োজন না হওয়ায় একটু মনোকষ্ট থাকলেও তা মেনে নিয়েছেন ভক্ত অনুরাগীরা বলে জানান রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ।
এদিকে সবার চোখে এখন উৎসবের রেশ। আজই তো আনন্দের শেষ দিন। কারণ আগামীকাল বিজয়া দশমী। দিনের প্রথম ভাগে মা’কে বিদায় জানাতে হবে, এমন বাস্তবতাকে সামনে রেখে ভক্তি আর শ্রদ্ধায় আরতি, অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে চলছে মহানবমী। মহাঅষ্টমীর সন্ধ্যিপূজার পর মহানবমীর সূচনা হয়। শারদ-প্রভাতে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী দুর্গার দ্বারা মহিষাসুর বধের গীতি কবিতার সুরে চণ্ডীপাঠ ধ্বনিত হয়।
পুরাণ অনুযায়ী, এই তিথিতে দেবতাগণ ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে দেবীর আরাধনায় মেতে উঠেছিলেন। এই দিনটা বড় অদ্ভুত। একদিকে পুজোর আনন্দ। অন্যদিকে, মনের অচিনপুরে কেউ যেন বাজিয়ে দিয়ে যায় বিসর্জনের বাঁশি।
নবমী মানে পূজো শেষ। পূরান মতে এদিন লঙ্কা অধিপতি রাবণ বধের পর নবমী তিথিতে একশ আটটি নীলপদ্ম দিয়ে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন রামচন্দ্র। তাই আজকের এই মহানবমীতে ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে একশ আটটি নীলপদ্মে পূজিত হবেন মা দুর্গা। পুরাণ অনুযায়ী দেবী দুর্গা এবং মহিষাসুরের দীর্ঘ লড়াইয়ের চূড়ান্ত দিনটিকে চিহ্নিত করা হয় নবমীতে। রাবণ নিহিত হলে নবমীর দিনে ব্রহ্মা সব দেবতাকে সঙ্গে নিয়ে দেবীর বিশেষ পূজা করেন। নবমী বিহিত পূজা হয় নীলকন্ঠ, নীল অপরাজিতা ও যজ্ঞের মাধ্যমে। নবমী পূজার দেবী দুর্গার কাছে যজ্ঞের আহুতি দেয়া হয়। এই পূজার মাধ্যমে মানবকূলের সম্পদ লাভ হয় বলে ভক্তরা মনে করেন।
বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১ , ২৯ আশ্বিন ১৪২৮ ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
দুর্গোৎসবের চতুর্থ দিন আজ। অষ্টমী পেরিয়ে আজ নবমী। নিয়ম অনুসারে সকালে দেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা শেষে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ করা হবে বলে জানান মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল।
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহানবমীর পূজা শেষে যথারীতি থাকবে অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ। তবে মণ্ডপে মণ্ডপে মা দুর্গাকে দেখার ভিড় থাকলেও এবার শুধুই পুজো হচ্ছে উৎসব নয় বলেন জানান রমেন মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘প্রতিটা মণ্ডপে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। আর এই স্বাস্থ্যবিধি মানেই দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পড়া। এভাবে আসলে উৎসব হয় না। তারপরও আমরা খুশি। আমরা মাকে দেখতে পারছি।’ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন ডা. রথীন্দ্রনাথ সরকার। তিনি বলেন, ‘পুজোর উৎসব যেমন হওয়ার কথা তেমন হচ্ছে না। মহামারী আমাদের উৎসবকেও সীমিত করে দিয়েছে। যেমন মুখর হওয়ার কথা ছিল পুরো দেশ। সেখানে একটু হলেও বাধা থাকছে। অনেক আনন্দই বাদ রাখা হয়েছে। তারপরও ভালো যে আমরা এটুকু আনন্দ করতে পারছি। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’- এই উৎসবে নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষের যেভাবে আগমন ঘটে এবার তা হচ্ছে না, যা আমরা মিস করছি।’
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সেবায়েত বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী জানান, নবমীতে সকাল ৭টা ৩৩ মিনিটে মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমীর বিহিত পুজা, সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দশমীর বিহিত পূজা ও দর্পণ নিরঞ্জন।
করোনার গতকাল শারদীয় দুর্গোৎসবে মহাষ্টমীর দিনে মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপে অনেক দর্শনার্থী এসেছিলেন কুমারী পূজা দেখতে। মানিকলাল সরকার স্ত্রী মাধুরী সরকারকে নিয়ে এসেছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনে এসে হতাশ হয়ে যান কুমারী পূজা না হওয়ায়। মানিকলাল বলেন, অষ্টমী ও এ মন্দিরের মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। গত বছর করোনার কারণে হয়নি, ভেবেছি এবার হবে। কিন্তু এবারও হলো না।’
করোনায় মানুষের ভিড় এড়াতে এবার কুমারী পূজা হয়নি জানিয়ে রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকার অধ্যক্ষ বলেন, ‘দুর্গাপূজার একটি বিশেষ অংশ হচ্ছে কুমারী পূজা। স্বাভাবিক সময়ে আমাদের এখানে অষ্টমীর দিনে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। করোনার কারণে শারীরিক দূরত্ব মানা কঠিন হবে, তাই দুই বছর ধরে কুমারী পূজা বন্ধ। আগামী বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কুমারী পূজা হবে আশা করি।’
তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার কুমারী পূজার আয়োজন না হওয়ায় একটু মনোকষ্ট থাকলেও তা মেনে নিয়েছেন ভক্ত অনুরাগীরা বলে জানান রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ।
এদিকে সবার চোখে এখন উৎসবের রেশ। আজই তো আনন্দের শেষ দিন। কারণ আগামীকাল বিজয়া দশমী। দিনের প্রথম ভাগে মা’কে বিদায় জানাতে হবে, এমন বাস্তবতাকে সামনে রেখে ভক্তি আর শ্রদ্ধায় আরতি, অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে চলছে মহানবমী। মহাঅষ্টমীর সন্ধ্যিপূজার পর মহানবমীর সূচনা হয়। শারদ-প্রভাতে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী দুর্গার দ্বারা মহিষাসুর বধের গীতি কবিতার সুরে চণ্ডীপাঠ ধ্বনিত হয়।
পুরাণ অনুযায়ী, এই তিথিতে দেবতাগণ ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে দেবীর আরাধনায় মেতে উঠেছিলেন। এই দিনটা বড় অদ্ভুত। একদিকে পুজোর আনন্দ। অন্যদিকে, মনের অচিনপুরে কেউ যেন বাজিয়ে দিয়ে যায় বিসর্জনের বাঁশি।
নবমী মানে পূজো শেষ। পূরান মতে এদিন লঙ্কা অধিপতি রাবণ বধের পর নবমী তিথিতে একশ আটটি নীলপদ্ম দিয়ে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন রামচন্দ্র। তাই আজকের এই মহানবমীতে ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে একশ আটটি নীলপদ্মে পূজিত হবেন মা দুর্গা। পুরাণ অনুযায়ী দেবী দুর্গা এবং মহিষাসুরের দীর্ঘ লড়াইয়ের চূড়ান্ত দিনটিকে চিহ্নিত করা হয় নবমীতে। রাবণ নিহিত হলে নবমীর দিনে ব্রহ্মা সব দেবতাকে সঙ্গে নিয়ে দেবীর বিশেষ পূজা করেন। নবমী বিহিত পূজা হয় নীলকন্ঠ, নীল অপরাজিতা ও যজ্ঞের মাধ্যমে। নবমী পূজার দেবী দুর্গার কাছে যজ্ঞের আহুতি দেয়া হয়। এই পূজার মাধ্যমে মানবকূলের সম্পদ লাভ হয় বলে ভক্তরা মনে করেন।