বজ্রপাতের বিপদ মোকাবিলা করতে হবে

গত দুই বছরের তুলনায় চলতি বছর বজ্রপাতে বেশিসংখ্যক মানুষ মারা গেছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে ৩২৯ জন। ২০১৯ ও ২০২০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৯৮ ও ২৫৫। গত এক দশকের মধ্যে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ২০১৬ সালে, ৩৯১ জন। চলতি বছর শেষ হতে এখনও আড়াই মাস বাকি। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বছর শেষে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা একটা প্রশ্ন।

দেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক হিসাব অনুযায়ী, বজ্রপাতে গত ১১ বছরে মারা গেছে ২ হাজার ৮০০ জন। তবে এই সময়ের মধ্যে কত মানুষ আহত হয়েছে, গবাদি পশু মারা গেছে কতগুলো, কত গাছ ধ্বংস হয়েছে- সেই হিসাব জানা যায় না। বন্যা বা সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় দেশে এখন বজ্রপাতেই বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে।

বজ্রপাত প্রতিরোধে এক কোটি তালগাছ রোপণের লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় তালগাছ লাগাচ্ছে। তবে একাজে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তালগাছ লাগানোর স্থান নির্বাচন যথাযথ হয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। বজ্রপাতে সাধারণত মাঠে বা জলাশয়ের পাশে অবস্থানরত মানুষ মারা যায়। অথচ তালগাছ লাগানো হচ্ছে সড়কের পাশে। এসব তালগাছ বজ্রপাত রোধের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তালগাছ লাগাতে হবে বজ্রপাতপ্রবণ স্থানে।

একেকটি তালগাছের বজ্রপাতরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে কমবেশি ১০ বছর সময় লাগবে। এজন্য লাইটনিং অ্যারেস্টার বসানো বেশি জরুরি। দেশের ৮টি স্থানে লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর বসানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ ধরনের আরও যন্ত্র স্থাপন করতে হবে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে যথেষ্ট সংখ্যক লাইটনিং অ্যারেস্টার যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

কৃষি জমি, খোলা মাঠ, খেলার মাঠ বা উন্মুক্ত প্রান্তরে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। বৃষ্টিপাতের সময় এসব স্থানে আশ্রয় নেয়া সম্ভব হয় না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বজ্রপাতে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের সিংহভাগই খোলা মাঠ ও হাওরের মধ্যে কৃষিকাজ করছিলেন। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে বজ্রপাতপ্রতিরোধী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করার কথা আমরা এর আগে বলেছি। আশার কথা, সরকার বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করেছে। ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। আমরা আশা করব প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

মানুষের মধ্যে বজ্রপাত সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। বছরের কোন সময় কোন স্থানে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে, বজ্রপাতের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবেÑ সেসব বিষয়ে মানুষকে জানাতে হবে। বিশেষ করে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১ , ২৯ আশ্বিন ১৪২৮ ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বজ্রপাতের বিপদ মোকাবিলা করতে হবে

গত দুই বছরের তুলনায় চলতি বছর বজ্রপাতে বেশিসংখ্যক মানুষ মারা গেছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে ৩২৯ জন। ২০১৯ ও ২০২০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৯৮ ও ২৫৫। গত এক দশকের মধ্যে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ২০১৬ সালে, ৩৯১ জন। চলতি বছর শেষ হতে এখনও আড়াই মাস বাকি। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বছর শেষে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা একটা প্রশ্ন।

দেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক হিসাব অনুযায়ী, বজ্রপাতে গত ১১ বছরে মারা গেছে ২ হাজার ৮০০ জন। তবে এই সময়ের মধ্যে কত মানুষ আহত হয়েছে, গবাদি পশু মারা গেছে কতগুলো, কত গাছ ধ্বংস হয়েছে- সেই হিসাব জানা যায় না। বন্যা বা সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় দেশে এখন বজ্রপাতেই বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে।

বজ্রপাত প্রতিরোধে এক কোটি তালগাছ রোপণের লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় তালগাছ লাগাচ্ছে। তবে একাজে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তালগাছ লাগানোর স্থান নির্বাচন যথাযথ হয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। বজ্রপাতে সাধারণত মাঠে বা জলাশয়ের পাশে অবস্থানরত মানুষ মারা যায়। অথচ তালগাছ লাগানো হচ্ছে সড়কের পাশে। এসব তালগাছ বজ্রপাত রোধের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তালগাছ লাগাতে হবে বজ্রপাতপ্রবণ স্থানে।

একেকটি তালগাছের বজ্রপাতরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে কমবেশি ১০ বছর সময় লাগবে। এজন্য লাইটনিং অ্যারেস্টার বসানো বেশি জরুরি। দেশের ৮টি স্থানে লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর বসানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ ধরনের আরও যন্ত্র স্থাপন করতে হবে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে যথেষ্ট সংখ্যক লাইটনিং অ্যারেস্টার যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

কৃষি জমি, খোলা মাঠ, খেলার মাঠ বা উন্মুক্ত প্রান্তরে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। বৃষ্টিপাতের সময় এসব স্থানে আশ্রয় নেয়া সম্ভব হয় না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বজ্রপাতে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের সিংহভাগই খোলা মাঠ ও হাওরের মধ্যে কৃষিকাজ করছিলেন। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে বজ্রপাতপ্রতিরোধী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করার কথা আমরা এর আগে বলেছি। আশার কথা, সরকার বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করেছে। ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। আমরা আশা করব প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

মানুষের মধ্যে বজ্রপাত সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। বছরের কোন সময় কোন স্থানে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে, বজ্রপাতের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবেÑ সেসব বিষয়ে মানুষকে জানাতে হবে। বিশেষ করে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।