সবকিছু ছাপিয়ে চীনের রপ্তানিতে ২৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালে যখন সারা বিশ্ব ধুকছিল তখনও চীন তার বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি করেছিল। এরপর কিছুটা ধীর গতি নেমে আসে বাণিজ্যে। এরপর আবারও বাণিজ্য গতি বাড়তে শুরু করেছে। সেপ্টেম্বরেও দেশটির বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি আগের ধারায় ফিরে এসেছে। এপি।

এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বাধা সত্ত্বেও গত মাসে চীনের রপ্তানি ও আমদানি বাণিজ্যে পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। গতকাল প্রকাশিত দেশটির কাস্টম তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে চীনের রপ্তানি আয় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এ আয়ের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। গত মাসে চীনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আগস্টে ২৬ শতাংশ এবং অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এ সময়ে দেশটির আমদানিতে কিছুটা শ্লথগতি দেখা গেছে। গত মাসে চীনের আমদানি ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ২৪ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এ প্রবৃদ্ধি আগস্টে ৩৩ শতাংশের চেয়ে কম।

চীনা ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি ২০২০ সালের মার্চে কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয়। এর পরই দেশটির বাণিজ্যে রেকর্ড ভাঙা প্রবৃদ্ধি দেখা দেয়। এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো কোভিড-১৯ সংক্রমণে পর্যুদস্ত থাকায় ফুলেফেঁপে ওঠে চীনের রপ্তানি।

এদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর, জোরালো শিল্প চাহিদা এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাপক বিদ্যুৎ ঘাটতিতে পড়ে চীন। এ ঘাটতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে, গত মাসের শেষ দিকে অ্যাপল ও টেসলার মতো অনেক প্রতিষ্ঠান চীনজুড়ে অসংখ্য কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। দেশটির সাম্প্রতিক শিল্প উৎপাদনেও মন্দাভাব দেখা গেছে। উৎপাদন খাতে পিএমআই সেপ্টেম্বরে অপ্রত্যাশিতভাবে কমে গেছে।

জাপানি আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান নোমুরার প্রধান চীনা অর্থনীতিবিদ টিং লু বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া বিদ্যুৎ ঘাটতি এখনও রপ্তানিতে প্রভাব ফেলতে পারেনি বলেই মনে হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটির টেকসই পণ্যের চাহিদা কমে যাচ্ছে। আমরা মনে করছি, অক্টোবরে চীনের রপ্তানি মাঝারি আকারের ধীর হবে এবং ডিসেম্বরে প্রায় ১০ শতাংশ সংকুচিত হবে।’

সেপ্টেম্বরে চীনের বৈশ্বিক বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। যেখানে আগস্টেও উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আগস্টে ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার থেকে গত মাসে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। যদিও বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে শুল্কযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় শুরু হওয়া এ যুদ্ধ জো বাইডেনের সময়ে শিথিলেরও কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটাতে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। গত মাসে চীনের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে দেশগুলো চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বিস্তৃত করেছে।

শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১ , ৩১ আশ্বিন ১৪২৮ ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সবকিছু ছাপিয়ে চীনের রপ্তানিতে ২৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালে যখন সারা বিশ্ব ধুকছিল তখনও চীন তার বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি করেছিল। এরপর কিছুটা ধীর গতি নেমে আসে বাণিজ্যে। এরপর আবারও বাণিজ্য গতি বাড়তে শুরু করেছে। সেপ্টেম্বরেও দেশটির বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি আগের ধারায় ফিরে এসেছে। এপি।

এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বাধা সত্ত্বেও গত মাসে চীনের রপ্তানি ও আমদানি বাণিজ্যে পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। গতকাল প্রকাশিত দেশটির কাস্টম তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে চীনের রপ্তানি আয় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এ আয়ের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। গত মাসে চীনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আগস্টে ২৬ শতাংশ এবং অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এ সময়ে দেশটির আমদানিতে কিছুটা শ্লথগতি দেখা গেছে। গত মাসে চীনের আমদানি ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ২৪ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এ প্রবৃদ্ধি আগস্টে ৩৩ শতাংশের চেয়ে কম।

চীনা ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি ২০২০ সালের মার্চে কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয়। এর পরই দেশটির বাণিজ্যে রেকর্ড ভাঙা প্রবৃদ্ধি দেখা দেয়। এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো কোভিড-১৯ সংক্রমণে পর্যুদস্ত থাকায় ফুলেফেঁপে ওঠে চীনের রপ্তানি।

এদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর, জোরালো শিল্প চাহিদা এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাপক বিদ্যুৎ ঘাটতিতে পড়ে চীন। এ ঘাটতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে, গত মাসের শেষ দিকে অ্যাপল ও টেসলার মতো অনেক প্রতিষ্ঠান চীনজুড়ে অসংখ্য কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। দেশটির সাম্প্রতিক শিল্প উৎপাদনেও মন্দাভাব দেখা গেছে। উৎপাদন খাতে পিএমআই সেপ্টেম্বরে অপ্রত্যাশিতভাবে কমে গেছে।

জাপানি আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান নোমুরার প্রধান চীনা অর্থনীতিবিদ টিং লু বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া বিদ্যুৎ ঘাটতি এখনও রপ্তানিতে প্রভাব ফেলতে পারেনি বলেই মনে হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটির টেকসই পণ্যের চাহিদা কমে যাচ্ছে। আমরা মনে করছি, অক্টোবরে চীনের রপ্তানি মাঝারি আকারের ধীর হবে এবং ডিসেম্বরে প্রায় ১০ শতাংশ সংকুচিত হবে।’

সেপ্টেম্বরে চীনের বৈশ্বিক বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। যেখানে আগস্টেও উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আগস্টে ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার থেকে গত মাসে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। যদিও বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে শুল্কযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় শুরু হওয়া এ যুদ্ধ জো বাইডেনের সময়ে শিথিলেরও কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটাতে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। গত মাসে চীনের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে দেশগুলো চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বিস্তৃত করেছে।