কুমিল্লার ঘটনার জেরে রাজধানীতে রণক্ষেত্র

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপের ঘটনার অভিযোগে রাজধানীতে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল জুম্মার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে শুরু হওয়া মুসল্লিদের বিক্ষোভ মিছিল সংঘর্ষে রূপ নেয়। পল্টনের নাইটেংগেল মোড় ও কাকরাইলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। একপর্যায়ে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় ডিএমপির রমনা জোনের এসিসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে ৫ বিক্ষোভকারীকে। সংঘর্ষস্থলে পুলিশের এপিসি ও জলকামানের গাড়িও দেখা গেছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় কাকরাইল পল্টন সড়কে প্রায় এক ঘণ্টা পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে, জুম্মার নামাজের পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। এরআগে, জুমার নামাজের পরপরই বায়তুল মোকাররমের সামনে স্লোগান দিতে দেখা গেছে একদল মুসল্লিকে। নামাজের সালাম ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গে দৌঁড়ে গেটের সামনে চলে আসে এসব মুসল্লি। তাদের অনেককে ‘ইসলামের শত্রুরা হুঁশিয়ার, সাবধান’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর পাশের একটি কেঁচি গেট বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয় পুলিশ। ওই সময় একজন নিরাপত্তারক্ষী গেটটি বন্ধ করে দিলে নামাজ পড়তে আসা একদল মুসল্লি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ওই নিরাপত্তারক্ষীকে ধাওয়াও দেয় উত্তেজিত লোকজন। ইসলামী ফাউন্ডেশনের গেটের দিকে ছুটলে নিরাপত্তারক্ষীকে রক্ষা করেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। পরে বন্ধ করে দেয়া গেটের তালা ইট দিয়ে ভেঙে ফেলে বিক্ষোভকারীরা। নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই কয়েক’শ মুসল্লিদের একটি দল ‘মালিবাগ মুসলিম সমাজ’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পল্টন মোড় হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়। নাইটিঙ্গেল মোড়ের কাছে পুলিশ বাধা দিলে মিছিলকারীরা দুই ভাগ হয়ে যায়। তাদের একটি অংশ বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এতে কমপক্ষে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়। পুলিশ তখন বিভিন্ন গলির মুখে অবস্থান নেয় এবং টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় ৫ জনকে। এ সময় পল্টন, কাকরাইল, বিজয়নগর, ফকিরাপুল এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে বেশ কিছুক্ষণ দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের মিছিলটি মালিবাগের দিকে এগোতে থাকে। তখন পুলিশ তাদের নাইটিঙ্গেল মোড় ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। এরপর কাকরাইল ও বিজয়নগরের বিভিন্ন গলিতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। প্রধান সড়কে পুলিশের এপিসি ও জলকামানের গাড়িও দেখা গেছে।

সাধারণ মুসল্লিদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল হলেও এতে হেফাজতে ইসলামসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অংশ নিতে দেখা গেছে। বিক্ষোভ থেকে কোরআন অবমাননাকারীদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি হেফাজতের সাবেক নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ সংগঠনটির নেতাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগানও দেয়া হয়। এছাড়া সরকার ‘নাস্তিকদের’ হেফাজত করছে এমন অভিযোগ তুলে স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা। এই সময় বিক্ষোভকারীদের কেউ-কেউ উপস্থিত মিডিয়া কর্মীদের ওপর হামলা ও তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে।

পুলিশের একাধীক সূত্র জানায়, সাধারণত বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে যেসব বিক্ষোভ হয়, সেইগুলোর নেতৃত্ব কোন না কোন সংগঠন কিংবা রাজনৈতিক দল দিয়ে থাকে। কিন্তু গতকালের এই বিক্ষোভে প্রকাশ্যে কেউ নেতৃত্বে ছিল না। তাই মিছিলটি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গতকাল সকাল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবির টহল দেখা গেছে।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আবদুল আহাদ বলেন, পুলিশি বাধা অতিক্রম করতে বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেল ও লাঠি দিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। আক্রমণ প্রতিহত করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান ডিসি আবদুল আহাদ। পল্টন ও রমনা থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের সময় পুলিশের হাতে আটক হন তিনজন। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে দুজনকে আটক করে ডিবি। যাচাইবাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১ , ৩১ আশ্বিন ১৪২৮ ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

কুমিল্লার ঘটনার জেরে রাজধানীতে রণক্ষেত্র

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপের ঘটনার অভিযোগে রাজধানীতে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল জুম্মার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে শুরু হওয়া মুসল্লিদের বিক্ষোভ মিছিল সংঘর্ষে রূপ নেয়। পল্টনের নাইটেংগেল মোড় ও কাকরাইলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। একপর্যায়ে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় ডিএমপির রমনা জোনের এসিসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে ৫ বিক্ষোভকারীকে। সংঘর্ষস্থলে পুলিশের এপিসি ও জলকামানের গাড়িও দেখা গেছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় কাকরাইল পল্টন সড়কে প্রায় এক ঘণ্টা পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে, জুম্মার নামাজের পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। এরআগে, জুমার নামাজের পরপরই বায়তুল মোকাররমের সামনে স্লোগান দিতে দেখা গেছে একদল মুসল্লিকে। নামাজের সালাম ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গে দৌঁড়ে গেটের সামনে চলে আসে এসব মুসল্লি। তাদের অনেককে ‘ইসলামের শত্রুরা হুঁশিয়ার, সাবধান’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর পাশের একটি কেঁচি গেট বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয় পুলিশ। ওই সময় একজন নিরাপত্তারক্ষী গেটটি বন্ধ করে দিলে নামাজ পড়তে আসা একদল মুসল্লি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ওই নিরাপত্তারক্ষীকে ধাওয়াও দেয় উত্তেজিত লোকজন। ইসলামী ফাউন্ডেশনের গেটের দিকে ছুটলে নিরাপত্তারক্ষীকে রক্ষা করেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। পরে বন্ধ করে দেয়া গেটের তালা ইট দিয়ে ভেঙে ফেলে বিক্ষোভকারীরা। নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই কয়েক’শ মুসল্লিদের একটি দল ‘মালিবাগ মুসলিম সমাজ’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পল্টন মোড় হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়। নাইটিঙ্গেল মোড়ের কাছে পুলিশ বাধা দিলে মিছিলকারীরা দুই ভাগ হয়ে যায়। তাদের একটি অংশ বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এতে কমপক্ষে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়। পুলিশ তখন বিভিন্ন গলির মুখে অবস্থান নেয় এবং টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় ৫ জনকে। এ সময় পল্টন, কাকরাইল, বিজয়নগর, ফকিরাপুল এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে বেশ কিছুক্ষণ দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের মিছিলটি মালিবাগের দিকে এগোতে থাকে। তখন পুলিশ তাদের নাইটিঙ্গেল মোড় ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। এরপর কাকরাইল ও বিজয়নগরের বিভিন্ন গলিতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। প্রধান সড়কে পুলিশের এপিসি ও জলকামানের গাড়িও দেখা গেছে।

সাধারণ মুসল্লিদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল হলেও এতে হেফাজতে ইসলামসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অংশ নিতে দেখা গেছে। বিক্ষোভ থেকে কোরআন অবমাননাকারীদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি হেফাজতের সাবেক নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ সংগঠনটির নেতাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগানও দেয়া হয়। এছাড়া সরকার ‘নাস্তিকদের’ হেফাজত করছে এমন অভিযোগ তুলে স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা। এই সময় বিক্ষোভকারীদের কেউ-কেউ উপস্থিত মিডিয়া কর্মীদের ওপর হামলা ও তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে।

পুলিশের একাধীক সূত্র জানায়, সাধারণত বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে যেসব বিক্ষোভ হয়, সেইগুলোর নেতৃত্ব কোন না কোন সংগঠন কিংবা রাজনৈতিক দল দিয়ে থাকে। কিন্তু গতকালের এই বিক্ষোভে প্রকাশ্যে কেউ নেতৃত্বে ছিল না। তাই মিছিলটি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গতকাল সকাল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবির টহল দেখা গেছে।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আবদুল আহাদ বলেন, পুলিশি বাধা অতিক্রম করতে বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেল ও লাঠি দিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। আক্রমণ প্রতিহত করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান ডিসি আবদুল আহাদ। পল্টন ও রমনা থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের সময় পুলিশের হাতে আটক হন তিনজন। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে দুজনকে আটক করে ডিবি। যাচাইবাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।