উৎপাদনমূল্যের কমে পোশাকের অর্ডার না নেয়ার আহ্বান বিজিএমইএ’র

স্বাভাবিক উৎপাদনমূল্যের চেয়ে কম দামে তৈরি পোশাকের অর্ডার নেগোসিয়েশন (ক্রয়াদেশ নিয়ে দরকষাকষি) না করতে সদস্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মো. ফারুক হাসান। একই সঙ্গে জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে দেশে পুনর্র্নিধারণ বা সমন্বয় করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বিজিএমইএ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।

সম্প্রতি ইউরোপের তিন দেশ যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম ও স্কটল্যান্ড সফরের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা ও অর্জন সম্পর্কে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ফারুক হাসান বলেন, ‘বর্তমানে সারা বিশ্বে তৈরি পোশাকের যে চাহিদা তৈরি হয়েছে, সে রকম সুযোগ সবসময় আসে না। তৈরি পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যাকওয়ার্ড, ফরওয়ার্ড লিংকেজ খাতের শিল্পগুলো চাঙা হয়েছে। তাদের টার্নওভার বেড়েছে। আশা করি এ খাতে আগামীতে আরও বিনিয়োগ হবে এবং কাজগুলো আগামীতে আরও কস্ট কোয়ালিটি কম্পিটিটিভ হবে, তবে এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হলে আমাদের বর্তমান সংকট মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হবে।’

বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত পোশাক উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করব, আপনারা পণ্যের মূল্য নির্ধারণের বিষয়টিতে আরও সচেতন হবেন। কোনো অবস্থাতেই আমরা যেন স্বাভাবিক উৎপাদনমূল্যের চেয়ে কম দামে অর্ডার নেগোসিয়েট না করি। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা পোশাকের মূল্যের বিষয়টিতে আরও সংবেদনশীল হন। তুলা, সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামাল ও ফ্রেইট খরচ বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরবরাহকারীদের সঙ্গে ন্যায্যতার ভিত্তিতে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করুন। এই প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে ক্রেতাদের সহযোগিতা আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর সরবরাহকারীরা টিকে থাকলে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকবে।’

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি দেশে ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সেই অনুপাতে ট্রান্সপোর্টেশন, জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাঁচামাল এবং সেবার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পোশাকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে ৪ থেকে ৫ পার্সেন্ট। এই পরিস্থিতিতে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হলে প্রয়োজন ব্যবসা সহজীকরণ এবং নীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করেছে, তাই দেশে ও আন্তর্জাতিক মূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে যত দ্রুত সম্ভব দাম পুনর্র্নিধারণ করা হোক।’

করোনার সময় আমাদের অর্ডার কমেছিল, এখন প্রচুর অর্ডার আসছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘অর্ডার বাড়লেও পণ্যের দাম এখনও তেমন বাড়েনি। আমরা পোশাকের মূল্য বাড়াতে কাজ করছি। পাশাপাশি আমাদের সদস্যদের বলছি তারা যেন তুলা, সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামাল ও ফ্রেইট খরচ বাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরবরাহকারীদের সঙ্গে ন্যায্যতার ভিত্তিতে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেন। তারা যেন কোনভাবেই উৎপাদনের চেয়ে কম দামে পণ্যের অর্ডার না নেন।’

এক প্রশ্নের উত্তরে বিজিএমইএ সভাপতি জানান, আগের চেয়ে এখন আমরা কিছুটা বাড়তি মূল্য পাচ্ছি, তবে উৎপাদন খরচ যেভাবে বেড়েছে সেই তুলনায় দাম পাচ্ছি না।

বিজিএমইএ সভাপতি জানান, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের (আইএএফ) ৩৭তম সম্মেলন ঢাকায় হবে। একক খাতের আন্তর্জাতিক সম্মেলন এটাই দেশে প্রথম হবে। সেখানে ‘মেড ইন ব্যাংলাদেশ উইক’ ব্র্যান্ডিং তুলে ধরে সপ্তাহব্যাপী একটি আয়োজনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আগামী বছরের নভেম্বরে এ সম্মেলন করার জন্য প্রাথমিক তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজিএমইএ জানিয়েছে, পোশাক শিল্পের প্রসার, প্রচার এবং উন্নয়নে বিজিএমইএর প্রাণান্ত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ সফর করেন এবং সফরকালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সম্মেলনের (কপ২৬) ২৬তম অধিবেশনে যোগদান করেন।

সফরকালীন সময়ের বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে ও পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতেই বিজিএমইএ এই সংবাদ সম্মেলন।

রবিবার, ২১ নভেম্বর ২০২১ , ৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৩

উৎপাদনমূল্যের কমে পোশাকের অর্ডার না নেয়ার আহ্বান বিজিএমইএ’র

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

স্বাভাবিক উৎপাদনমূল্যের চেয়ে কম দামে তৈরি পোশাকের অর্ডার নেগোসিয়েশন (ক্রয়াদেশ নিয়ে দরকষাকষি) না করতে সদস্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মো. ফারুক হাসান। একই সঙ্গে জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে দেশে পুনর্র্নিধারণ বা সমন্বয় করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বিজিএমইএ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।

সম্প্রতি ইউরোপের তিন দেশ যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম ও স্কটল্যান্ড সফরের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা ও অর্জন সম্পর্কে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ফারুক হাসান বলেন, ‘বর্তমানে সারা বিশ্বে তৈরি পোশাকের যে চাহিদা তৈরি হয়েছে, সে রকম সুযোগ সবসময় আসে না। তৈরি পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যাকওয়ার্ড, ফরওয়ার্ড লিংকেজ খাতের শিল্পগুলো চাঙা হয়েছে। তাদের টার্নওভার বেড়েছে। আশা করি এ খাতে আগামীতে আরও বিনিয়োগ হবে এবং কাজগুলো আগামীতে আরও কস্ট কোয়ালিটি কম্পিটিটিভ হবে, তবে এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হলে আমাদের বর্তমান সংকট মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হবে।’

বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত পোশাক উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করব, আপনারা পণ্যের মূল্য নির্ধারণের বিষয়টিতে আরও সচেতন হবেন। কোনো অবস্থাতেই আমরা যেন স্বাভাবিক উৎপাদনমূল্যের চেয়ে কম দামে অর্ডার নেগোসিয়েট না করি। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা পোশাকের মূল্যের বিষয়টিতে আরও সংবেদনশীল হন। তুলা, সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামাল ও ফ্রেইট খরচ বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরবরাহকারীদের সঙ্গে ন্যায্যতার ভিত্তিতে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করুন। এই প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে ক্রেতাদের সহযোগিতা আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর সরবরাহকারীরা টিকে থাকলে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকবে।’

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি দেশে ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সেই অনুপাতে ট্রান্সপোর্টেশন, জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাঁচামাল এবং সেবার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পোশাকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে ৪ থেকে ৫ পার্সেন্ট। এই পরিস্থিতিতে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হলে প্রয়োজন ব্যবসা সহজীকরণ এবং নীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করেছে, তাই দেশে ও আন্তর্জাতিক মূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে যত দ্রুত সম্ভব দাম পুনর্র্নিধারণ করা হোক।’

করোনার সময় আমাদের অর্ডার কমেছিল, এখন প্রচুর অর্ডার আসছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘অর্ডার বাড়লেও পণ্যের দাম এখনও তেমন বাড়েনি। আমরা পোশাকের মূল্য বাড়াতে কাজ করছি। পাশাপাশি আমাদের সদস্যদের বলছি তারা যেন তুলা, সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামাল ও ফ্রেইট খরচ বাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরবরাহকারীদের সঙ্গে ন্যায্যতার ভিত্তিতে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেন। তারা যেন কোনভাবেই উৎপাদনের চেয়ে কম দামে পণ্যের অর্ডার না নেন।’

এক প্রশ্নের উত্তরে বিজিএমইএ সভাপতি জানান, আগের চেয়ে এখন আমরা কিছুটা বাড়তি মূল্য পাচ্ছি, তবে উৎপাদন খরচ যেভাবে বেড়েছে সেই তুলনায় দাম পাচ্ছি না।

বিজিএমইএ সভাপতি জানান, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের (আইএএফ) ৩৭তম সম্মেলন ঢাকায় হবে। একক খাতের আন্তর্জাতিক সম্মেলন এটাই দেশে প্রথম হবে। সেখানে ‘মেড ইন ব্যাংলাদেশ উইক’ ব্র্যান্ডিং তুলে ধরে সপ্তাহব্যাপী একটি আয়োজনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আগামী বছরের নভেম্বরে এ সম্মেলন করার জন্য প্রাথমিক তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজিএমইএ জানিয়েছে, পোশাক শিল্পের প্রসার, প্রচার এবং উন্নয়নে বিজিএমইএর প্রাণান্ত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ সফর করেন এবং সফরকালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সম্মেলনের (কপ২৬) ২৬তম অধিবেশনে যোগদান করেন।

সফরকালীন সময়ের বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে ও পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতেই বিজিএমইএ এই সংবাদ সম্মেলন।